আলু এখন গলার ফাঁস
আলু
নিয়ে আবার বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জেলা পর্যায়ের পাইকারি হাটগুলোতে প্রতি
কেজি আলুর দর নেমেছে ৫ থেকে ৮ টাকার মধ্যে, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম।
কৃষকেরা বলছেন, এখন আলু বিক্রি করে তাঁদের কোনো লাভ হচ্ছে না। শুধু কৃষক
নন, এই আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সবার গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। গত মৌসুমে
বিপুল উৎপাদনের কারণে আলুর দামে ধস নামে। বছর শেষে দাম ব্যাপকভাবে কমে
যাওয়ায় অনেক কৃষক ও ফড়িয়া হিমাগারে আলু তোলেননি। তাতে লোকসান দিয়ে হিমাগার
মালিকদের অনেকে ব্যাংকের অর্থ ফেরত দিতে পারছেন না। এখন ব্যাংক নতুন করে
তাঁদের ঋণ দিচ্ছে না। এখন যোগ হয়েছে ব্যাংকের তারল্যসংকটের বিষয়টিও।
সম্প্রতি বেশ কিছু ব্যাংক হাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকায় ব্যবসায়ীদের
নতুন করে ঋণ দেওয়া কমিয়েছে। এর পাশাপাশি বেড়ে গেছে সুদের হার। হিমাগার
মালিকেরা বলছেন, ব্যাংক ঋণ না দেওয়ায় এ মৌসুমে তাঁরা আলু কিনে হিমাগারে
রাখার জন্য কৃষক ও ফড়িয়াদের টাকা দিতে পারছেন না। এতে বাজারে নেতিবাচক
সংকেত যাচ্ছে। হিমাগার মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর চাহিদা বছরে ৮০
লাখ টনের মতো। উৎপাদিত হয়েছে চাহিদার চেয়ে ২০ লাখ টন বেশি। বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, পাঁচ বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে
প্রায় ৮৬ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১
কোটি ২ লাখ টন। আগের বছরের চেয়ে যা প্রায় ৭ লাখ টন বেশি। প্রতিবছর জুন
মাসের পর থেকে বাজারে হিমাগারের আলু বিক্রি শুরু হয়। তখন বাজারে দাম কিছুটা
বাড়ে। অক্টোবর, নভেম্বরে আলুর দাম আরও কিছু বাড়ে। গত বছর ঘটেছে বিপরীত
ঘটনা। বছরের শেষে আলুর দাম তলানিতে নামে। হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি
মোশারফ হোসেন বলেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে আলুতে লাভ হয়নি। তবে মূলধন টিকেছে। গত
বছর প্রায় সবাই লোকসান দিয়ে পুঁজি হারিয়েছে। এ কারণে এ বছর আলু কেনায়
আগ্রহ কম। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। তিনি বলেন, হিমাগারে রাখার জন্য আলু
কেনার মৌসুম ১ মার্চ থেকে শুরু হবে। কিন্তু অনেক হিমাগার মালিক ব্যাংকের
সঙ্গে ঋণ সমন্বয় করতে পারেননি। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর
রহমান প্রধান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, হিমাগার মালিকেরা গত বছরও ঋণ
সময়মতো ফেরত দিতে পারেননি। এ বছরও একই অবস্থা। তাঁদের ক্ষতির বিষয়টি
প্রকাশ্য। হিমাগার মালিকদের ঋণের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় ৭ টাকা ৪০ পয়সা। বাজারে এখন আলুর দর এর চেয়ে কম। বগুড়ার পাইকারি বাজার মহাস্থানহাটে খোঁজ নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানান, সেখানে গত রোববার প্রতি কেজি গ্রানুলা আলু সাড়ে ৫ টাকা, কার্ডিনাল ও স্ট্রিক জাতের আলু সাড়ে ৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মহাস্থানগড় এলাকার চাষি নূর ইসলাম বলেন, এবার আলু চাষ করে লোকসান হয়েছে। খরচই উঠছে না। বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রমপুর ভান্ডার নামের একটি আড়তে রোববার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১১ টাকা ও সর্বনিম্ন ৬ টাকায়। এই আলু উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আনতে কেজিতে ৩ টাকার বেশি পরিবহন ও অন্যান্য খরচ হয়। আড়তের ব্যবস্থাপক মো. সবুজ বলেন, কৃষকের খেত থেকে গ্রানুলা জাতের আলু কেনা হয়েছে সোয়া ৫ টাকা দরে। আর ডায়মন্ড জাতের আলুর দর পড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। ঢাকার খুচরা দোকানে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাস আগের তুলনায় আলুর দর ২২ শতাংশ কম।
ঋণ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা
প্রতিবছর মৌসুমের সময় যে আলু হয়, তার ৬০ শতাংশের মতো হিমাগারে রাখেন হিমাগার মালিক, ফড়িয়া ও কৃষকেরা। হিমাগার মালিকেরা তাঁদের হিমাগারে আলু রাখা নিশ্চিত করতে কৃষক ও ফড়িয়াদের ঋণ দেন। আবার নিজেরাও আলু কিনে রাখেন। এই অর্থ আসে ব্যাংক থেকে। উত্তরাঞ্চলে ৯টি হিমাগারের মালিক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত মৌসুমে প্রতি বস্তা আলুর (৮৫ কেজি) খরচ পড়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। শেষ দিকে তা ১৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে হয়েছে। ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘গত বছর ব্যাংকে আমার ঋণ ছিল ৬৫ কোটি টাকার মতো। আমি ২০ কোটি টাকা ফেরত দিতে পেরেছি। বেশির ভাগ হিমাগার মালিকই টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এ জন্য এখন ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে চাচ্ছে না।’
উপযোগী জাত চাষের পরামর্শ
বছর বছর ভালো দাম না পাওয়ার পরও কৃষকেরা কেন আলু আবাদ করেন, জানতে চাইলে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আলু একটু উঁচু জমিতে চাষ করা হয়। এ জমিতে কৃষকেরা বোরো ও আমন ধান আবাদ করেন। এক মৌসুমে আলু হয়। যে জমিতে আলু হয়, সেখানে ধান খুব ভালো হয়। তিনি বলেন, আলু না হলে এ জমিগুলো খালি থাকবে। হিমাগার মালিকেরা কৃষকদের রপ্তানি ও শিল্প খাতে ব্যবহার উপযোগী আলু চাষ করার পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারেরও উদ্যোগ দরকার। দেশে যে আলু হয়, তাতে পানির পরিমাণ বেশি। এই আলু চিপস বা স্টার্চ তৈরির উপযোগী নয়। হিমাগার মালিকেরা ক্যারেজ, লেডি রোজ ইত্যাদি জাতের আলু চাষের ওপর জোর দেন।
উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় ৭ টাকা ৪০ পয়সা। বাজারে এখন আলুর দর এর চেয়ে কম। বগুড়ার পাইকারি বাজার মহাস্থানহাটে খোঁজ নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানান, সেখানে গত রোববার প্রতি কেজি গ্রানুলা আলু সাড়ে ৫ টাকা, কার্ডিনাল ও স্ট্রিক জাতের আলু সাড়ে ৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মহাস্থানগড় এলাকার চাষি নূর ইসলাম বলেন, এবার আলু চাষ করে লোকসান হয়েছে। খরচই উঠছে না। বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রমপুর ভান্ডার নামের একটি আড়তে রোববার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১১ টাকা ও সর্বনিম্ন ৬ টাকায়। এই আলু উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আনতে কেজিতে ৩ টাকার বেশি পরিবহন ও অন্যান্য খরচ হয়। আড়তের ব্যবস্থাপক মো. সবুজ বলেন, কৃষকের খেত থেকে গ্রানুলা জাতের আলু কেনা হয়েছে সোয়া ৫ টাকা দরে। আর ডায়মন্ড জাতের আলুর দর পড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। ঢাকার খুচরা দোকানে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাস আগের তুলনায় আলুর দর ২২ শতাংশ কম।
ঋণ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা
প্রতিবছর মৌসুমের সময় যে আলু হয়, তার ৬০ শতাংশের মতো হিমাগারে রাখেন হিমাগার মালিক, ফড়িয়া ও কৃষকেরা। হিমাগার মালিকেরা তাঁদের হিমাগারে আলু রাখা নিশ্চিত করতে কৃষক ও ফড়িয়াদের ঋণ দেন। আবার নিজেরাও আলু কিনে রাখেন। এই অর্থ আসে ব্যাংক থেকে। উত্তরাঞ্চলে ৯টি হিমাগারের মালিক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত মৌসুমে প্রতি বস্তা আলুর (৮৫ কেজি) খরচ পড়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। শেষ দিকে তা ১৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে হয়েছে। ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘গত বছর ব্যাংকে আমার ঋণ ছিল ৬৫ কোটি টাকার মতো। আমি ২০ কোটি টাকা ফেরত দিতে পেরেছি। বেশির ভাগ হিমাগার মালিকই টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এ জন্য এখন ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে চাচ্ছে না।’
উপযোগী জাত চাষের পরামর্শ
বছর বছর ভালো দাম না পাওয়ার পরও কৃষকেরা কেন আলু আবাদ করেন, জানতে চাইলে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আলু একটু উঁচু জমিতে চাষ করা হয়। এ জমিতে কৃষকেরা বোরো ও আমন ধান আবাদ করেন। এক মৌসুমে আলু হয়। যে জমিতে আলু হয়, সেখানে ধান খুব ভালো হয়। তিনি বলেন, আলু না হলে এ জমিগুলো খালি থাকবে। হিমাগার মালিকেরা কৃষকদের রপ্তানি ও শিল্প খাতে ব্যবহার উপযোগী আলু চাষ করার পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারেরও উদ্যোগ দরকার। দেশে যে আলু হয়, তাতে পানির পরিমাণ বেশি। এই আলু চিপস বা স্টার্চ তৈরির উপযোগী নয়। হিমাগার মালিকেরা ক্যারেজ, লেডি রোজ ইত্যাদি জাতের আলু চাষের ওপর জোর দেন।
No comments