কোনো দল নির্বাচনে না এলে কিছু করার নেই -প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল না এলে কিছু করার নেই।
নির্বাচন যথাসময়েই হবে। তারা নির্বাচন করবে কী করবে না-সেটা তাদের নিজেদের
সিদ্ধান্ত। সংবিধানে যেভাবে আছে সেভাবে নির্বাচন হবে। সংবিধান ও জনগণের
প্রতি যাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। ২০১৪ সালে
বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি এবারও তারা তা পারবে না।
গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক ইতালি সফরের বিস্তারিত জানাতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাঙ্কুইট হলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। লিখিত বক্তব্যে সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা, প্রশ্নফাঁস, দ্রব্যমূল্য, রোহিঙ্গা ইস্যু ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়ার রায়ের পর তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিতে কি একটা নেতাও দেশে নেই যাকে চেয়ারম্যান করা যেতো।
রায়ের বিষয়টি আদালতের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রায় আদালত দিয়েছে এখানে সরকারের কিছু নেই। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এটি নতুন কিছু নয়, আগেও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন মন্ত্রী বা সচিব তো প্রশ্ন ফাঁস করেন না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কী আছে। সিন্ডিকেট ও মিডিয়ার সংবাদের কারণে চালের দাম বাড়ে বলে এক প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ আলোচনা করেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। যেহেতু সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছে এর সমাধানও তাদের করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনটি নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া রয়েছে। কেউ কোনো অপরাধ না করলে এ আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এরপর তিনটি সুসংবাদ দিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের সূচনা করেন। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের পর একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার একটা সুসংবাদ দিয়ে শুরু করি। পরে তিনি আরো দুটি সুসংবাদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজ থেকেই দেশে মোবাইলফোনে ফোর-জি সেবা চালু হচ্ছে। এছাড়া আগামী মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। আর বাংলাদেশ থেকে আকাশ পথ দিয়ে যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহনে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য সুখবর।
খালেদা জিয়ার রায়ের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় তো আমি দিইনি, রায় দিয়েছেন আদালত। তাদের নিজেদের লোকেরাই তো মামলা দিয়েছেন। সেখানে মামলা করেছে দুদক। দশ বছর এই মামলা চলেছে। যার কার্যদিবস প্রায় ২৬১ দিন। সেখানে ৮০ বারের বেশি সময় নেয়া হয়েছে। তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয়েছে। সময় চাওয়া হয়েছে ১০৯ বার। খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, মামলাটি যখন শুরু হয়, তখন রফিক-উল হক সাহেব তার আইনজীবী ছিলেন। তখন রফিক-উল হক বলেছিলেন, টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আর মামলা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। সেই টাকা এতিমেরা আর চোখে দেখে নি। কত হাত ঘুরে এই টাকা তার কাছে চলে আসে। কোরআনেও শাস্তির কথা বলা আছে। এতিমের টাকা খেলে আদালত শাস্তি দেয়, আল্লাহও শাস্তি দেন।
খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে, ব্যক্তিবিশেষে দুর্নীতি করলে কোনো কথা হয় না। আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের রায়ের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে জমা দিয়েছে। তারা যখন একেকজনকে নিয়োগ করে, তখন দেখবেন গঠনতন্ত্রের ধার ধারে না। যাকে যখন খুশি পদ দিয়ে যাচ্ছে। যিনি চেয়ারপারসন, তার হাতে সব ক্ষমতা। যেটা আমার হাতে নেই। আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে সকল ক্ষমতা। তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যিনি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেন, তাকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল। যিনি ফেরারি আসামি। দেশে নেই। বিএনপিতে এখন খুব কর্মঠ নেতা দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত করা গেল না? নাকি বিএনপির চেয়ারপারসনের দলের কারও ওপর ভরসা নেই। তাদের এমন দৈন্যদশা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাকে যখন জেলে নিয়ে গেল আমি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করলাম। আমি আমার বোনকে বা ছেলেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে তার গৃহপরিচারিকাকে দেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে আছেন শুধু দিতেই পারে। আর কেউ কেউ আছেন, শুধু নিতেই জানেন। আমরা দুই বোন, আমাদের একটা মাত্র বাড়ি। আমার আব্বা সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছেন, ওই বাড়িটি তাই জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট করে ১৭০০ থেকে ১৮০০ জনকে সহায়তা করি। আমরা এটা নিয়ে খুব একটা প্রচারও করি না। আর কেউ যদি এতিমের টাকা আসার পরও এর মায়া ত্যাগ করতে না পারে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এতিমখানার টাকা এখন ব্যক্তিগত তহবিলে। আমরা তো আর ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা নিতে পারি না। রায় অনুযায়ী যা করার আদালত করবেন। এর বাইরে কিছু সম্ভব নয়। ১/১১-এর সময় জেল জীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাকে শ্যাওলা ধরা একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, খাট ছিল ভাঙা। তাকে (খালেদা জিয়া) রাখা হয়েছিল বর্তমান স্পিকারের বাড়িতে, তার সঙ্গে এই ফাতেমাকেও দেয়া হয়েছিল। এটা গোপন ছিল। ডিআইজি হায়দার (সামছুল হায়দার সিদ্দিকী) সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় দেশের বাইরে থেকে অনেক ফোন পেলেও এবার খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো টেলিফোন পাননি বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার রায়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেউ ফোনও করেনি, কেউ কোনো প্রশ্নও করেনি। কিছু জানতেও চান নি। সেদিক থেকে এটি একটি ভালো লক্ষণ। দুর্নীতিবাজদের পক্ষে কেউ কিছু বলে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। কখনো সামনে চলে আসে, কখনো আসে না। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ তৈরি করে দেয়, আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার আগের দিন তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। ফাঁস হয় পরীক্ষার ২০ মিনিট আগে। কার এমন ‘ফটোজেনিক মেমোরি’ আছে যে প্রশ্ন দেখে ২০ মিনিটে সবকিছু মুখস্থ করে লিখে ফেলে? এমন কাউকে বের করে আনার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এমন প্রশ্ন আমার মাথায় আসছে, এমন টেলেন্ট কে আছে যে ২০ মিনিটে সব মুখস্থ করে এসে লিখে দিতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে একটি সুর তুলে দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে সুর তুলে একবার মন্ত্রী, সচিব আবার সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। দয়া করে একটু খুঁজে দিন, কে প্রশ্নফাঁস করলো তার শাস্তি দেবো আমরা। মন্ত্রী-সচিবকে চলে যেতে হবে কেনো?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম একটি বিরাট সমস্যা। এ দেশসহ সারা বিশ্বে এ সমস্যা আছে। কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হবে। ফৌজদারি আইন (সিআরপিসি) অনুযায়ী কেউ অপকর্ম না করলে সেখানে অপপ্রয়োগ কেন হবে। যদি কেউ কিছু না করেন তাহলে কিছু হবে না। কোনো আশঙ্কা নেই। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আবাসন সুবিধা নির্মাণের কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বালুখালী-কুতুপালংয়ে এখন রোহিঙ্গারা আছে। তাদের জন্য একটি দ্বীপে ঘরবাড়ি করা হচ্ছে। যত দ্রুত পারা যায়, তাদের স্থানান্তর করা হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিতে মিয়ানমার টালবাহানা করছে, এটা তাদের চরিত্র। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক ভাবেও চাপ আসছে প্রচুর। একবার যদি রোহিঙ্গারা যাওয়া শুরু করে তাহলে স্রোতের মতো করে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এক কোটি শরণার্থী ছিল। তারা কীভাবে চলে এসেছিল যুদ্ধ শেষে? শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বলছি, সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, সমাধান তাদেরই করতে হবে। এজন্য আমাকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। যখন ঢোকা শুরু হলো, তখনই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা দিয়ে তালিকা, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করেছি। যারাই ঢুকেছে, তাদের ছবি নিয়ে তাদের আইডি কার্ড করিয়ে রেখেছি। এখন মিয়ানমার অস্বীকার করতে পারবে না যে এরা তাদের না। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট ও গণমাধ্যমকে দুষলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ানোয় মিডিয়ারও একটু অবদান আছে। ব্যবসায়ীরা যখন চালের দাম বাড়ায়, তখন আপনারা এটা প্রচার করেন। তাতে অন্য ব্যবসায়ীরা আরেকটু দাম বাড়িয়ে নেয়। চালের দাম সিন্ডিকেটের জন্যও বাড়ে, আবার মিডিয়ার প্রচারের জন্যও বাড়ে।
লিখিত বক্তব্যে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট অবসানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে ক্যাথলিক ধর্মগুরুকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক ইতালি সফরের বিস্তারিত জানাতে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাঙ্কুইট হলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। লিখিত বক্তব্যে সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা, প্রশ্নফাঁস, দ্রব্যমূল্য, রোহিঙ্গা ইস্যু ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়ার রায়ের পর তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিতে কি একটা নেতাও দেশে নেই যাকে চেয়ারম্যান করা যেতো।
রায়ের বিষয়টি আদালতের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রায় আদালত দিয়েছে এখানে সরকারের কিছু নেই। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এটি নতুন কিছু নয়, আগেও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন মন্ত্রী বা সচিব তো প্রশ্ন ফাঁস করেন না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কী আছে। সিন্ডিকেট ও মিডিয়ার সংবাদের কারণে চালের দাম বাড়ে বলে এক প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ আলোচনা করেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। যেহেতু সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছে এর সমাধানও তাদের করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনটি নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া রয়েছে। কেউ কোনো অপরাধ না করলে এ আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এরপর তিনটি সুসংবাদ দিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের সূচনা করেন। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের পর একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার একটা সুসংবাদ দিয়ে শুরু করি। পরে তিনি আরো দুটি সুসংবাদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আজ থেকেই দেশে মোবাইলফোনে ফোর-জি সেবা চালু হচ্ছে। এছাড়া আগামী মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। আর বাংলাদেশ থেকে আকাশ পথ দিয়ে যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহনে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য সুখবর।
খালেদা জিয়ার রায়ের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় তো আমি দিইনি, রায় দিয়েছেন আদালত। তাদের নিজেদের লোকেরাই তো মামলা দিয়েছেন। সেখানে মামলা করেছে দুদক। দশ বছর এই মামলা চলেছে। যার কার্যদিবস প্রায় ২৬১ দিন। সেখানে ৮০ বারের বেশি সময় নেয়া হয়েছে। তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয়েছে। সময় চাওয়া হয়েছে ১০৯ বার। খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, মামলাটি যখন শুরু হয়, তখন রফিক-উল হক সাহেব তার আইনজীবী ছিলেন। তখন রফিক-উল হক বলেছিলেন, টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আর মামলা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। সেই টাকা এতিমেরা আর চোখে দেখে নি। কত হাত ঘুরে এই টাকা তার কাছে চলে আসে। কোরআনেও শাস্তির কথা বলা আছে। এতিমের টাকা খেলে আদালত শাস্তি দেয়, আল্লাহও শাস্তি দেন।
খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে, ব্যক্তিবিশেষে দুর্নীতি করলে কোনো কথা হয় না। আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের রায়ের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে জমা দিয়েছে। তারা যখন একেকজনকে নিয়োগ করে, তখন দেখবেন গঠনতন্ত্রের ধার ধারে না। যাকে যখন খুশি পদ দিয়ে যাচ্ছে। যিনি চেয়ারপারসন, তার হাতে সব ক্ষমতা। যেটা আমার হাতে নেই। আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে সকল ক্ষমতা। তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যিনি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেন, তাকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল। যিনি ফেরারি আসামি। দেশে নেই। বিএনপিতে এখন খুব কর্মঠ নেতা দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত করা গেল না? নাকি বিএনপির চেয়ারপারসনের দলের কারও ওপর ভরসা নেই। তাদের এমন দৈন্যদশা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাকে যখন জেলে নিয়ে গেল আমি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করলাম। আমি আমার বোনকে বা ছেলেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে তার গৃহপরিচারিকাকে দেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে আছেন শুধু দিতেই পারে। আর কেউ কেউ আছেন, শুধু নিতেই জানেন। আমরা দুই বোন, আমাদের একটা মাত্র বাড়ি। আমার আব্বা সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছেন, ওই বাড়িটি তাই জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট করে ১৭০০ থেকে ১৮০০ জনকে সহায়তা করি। আমরা এটা নিয়ে খুব একটা প্রচারও করি না। আর কেউ যদি এতিমের টাকা আসার পরও এর মায়া ত্যাগ করতে না পারে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এতিমখানার টাকা এখন ব্যক্তিগত তহবিলে। আমরা তো আর ব্যক্তিগত তহবিলের টাকা নিতে পারি না। রায় অনুযায়ী যা করার আদালত করবেন। এর বাইরে কিছু সম্ভব নয়। ১/১১-এর সময় জেল জীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাকে শ্যাওলা ধরা একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, খাট ছিল ভাঙা। তাকে (খালেদা জিয়া) রাখা হয়েছিল বর্তমান স্পিকারের বাড়িতে, তার সঙ্গে এই ফাতেমাকেও দেয়া হয়েছিল। এটা গোপন ছিল। ডিআইজি হায়দার (সামছুল হায়দার সিদ্দিকী) সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় দেশের বাইরে থেকে অনেক ফোন পেলেও এবার খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো টেলিফোন পাননি বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার রায়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেউ ফোনও করেনি, কেউ কোনো প্রশ্নও করেনি। কিছু জানতেও চান নি। সেদিক থেকে এটি একটি ভালো লক্ষণ। দুর্নীতিবাজদের পক্ষে কেউ কিছু বলে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। কখনো সামনে চলে আসে, কখনো আসে না। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ তৈরি করে দেয়, আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার আগের দিন তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। ফাঁস হয় পরীক্ষার ২০ মিনিট আগে। কার এমন ‘ফটোজেনিক মেমোরি’ আছে যে প্রশ্ন দেখে ২০ মিনিটে সবকিছু মুখস্থ করে লিখে ফেলে? এমন কাউকে বের করে আনার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এমন প্রশ্ন আমার মাথায় আসছে, এমন টেলেন্ট কে আছে যে ২০ মিনিটে সব মুখস্থ করে এসে লিখে দিতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে একটি সুর তুলে দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে সুর তুলে একবার মন্ত্রী, সচিব আবার সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। দয়া করে একটু খুঁজে দিন, কে প্রশ্নফাঁস করলো তার শাস্তি দেবো আমরা। মন্ত্রী-সচিবকে চলে যেতে হবে কেনো?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম একটি বিরাট সমস্যা। এ দেশসহ সারা বিশ্বে এ সমস্যা আছে। কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হবে। ফৌজদারি আইন (সিআরপিসি) অনুযায়ী কেউ অপকর্ম না করলে সেখানে অপপ্রয়োগ কেন হবে। যদি কেউ কিছু না করেন তাহলে কিছু হবে না। কোনো আশঙ্কা নেই। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আবাসন সুবিধা নির্মাণের কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বালুখালী-কুতুপালংয়ে এখন রোহিঙ্গারা আছে। তাদের জন্য একটি দ্বীপে ঘরবাড়ি করা হচ্ছে। যত দ্রুত পারা যায়, তাদের স্থানান্তর করা হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিতে মিয়ানমার টালবাহানা করছে, এটা তাদের চরিত্র। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক ভাবেও চাপ আসছে প্রচুর। একবার যদি রোহিঙ্গারা যাওয়া শুরু করে তাহলে স্রোতের মতো করে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এক কোটি শরণার্থী ছিল। তারা কীভাবে চলে এসেছিল যুদ্ধ শেষে? শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বলছি, সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, সমাধান তাদেরই করতে হবে। এজন্য আমাকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। যখন ঢোকা শুরু হলো, তখনই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা দিয়ে তালিকা, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করেছি। যারাই ঢুকেছে, তাদের ছবি নিয়ে তাদের আইডি কার্ড করিয়ে রেখেছি। এখন মিয়ানমার অস্বীকার করতে পারবে না যে এরা তাদের না। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট ও গণমাধ্যমকে দুষলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ানোয় মিডিয়ারও একটু অবদান আছে। ব্যবসায়ীরা যখন চালের দাম বাড়ায়, তখন আপনারা এটা প্রচার করেন। তাতে অন্য ব্যবসায়ীরা আরেকটু দাম বাড়িয়ে নেয়। চালের দাম সিন্ডিকেটের জন্যও বাড়ে, আবার মিডিয়ার প্রচারের জন্যও বাড়ে।
লিখিত বক্তব্যে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট অবসানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে ক্যাথলিক ধর্মগুরুকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
No comments