এখনো ভরসা বাঁশের সাঁকো
নড়াইল
সদরের মরা চিত্রা খালের ওপর এত দিনেও একটি পাকা সেতু হলো না কেন, তা
সত্যিই এক বড় প্রশ্ন। সদরের দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে কাজের
প্রয়োজনে এই খালটি পার হতে হয়। প্রতিনিয়ত তারা কী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তা
সহজেই অনুমেয়। স্থানীয়ভাবে তৈরি নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা।
স্বাধীনতার পর ৪৬ বছর ধরে এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে
চলাচল করছে।
সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মরা চিত্রা খালের দুই
পারে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। এসব
গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বাস। এ ছাড়া রয়েছে চারটি বাজার, একটি কলেজ,
তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খাল পারাপার করতে
গিয়ে ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সবাইকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে
হয়। বাঁশের সাঁকোর বিকল্প হিসেবে আছে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের মাইজপাড়া ও
শাহাবাদ বাজারের সেতু। তবে সেই ঘুরপথে যেতে সময় যেমন বেশি লাগে, যাতায়াতের
খরচও গুনতে হয় বেশি। আর স্কুলপড়ুয়া শিশুদের প্রতিদিন সাঁকো পার হওয়া ছাড়া
অন্য কোনো বিকল্প নেই। সাঁকো পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে শিশুদের পা পিছলে
পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এলাকার লোকজন অনেক দিন ধরেই এ খালের ওপর
একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু তাদের দাবি পূরণ হয়নি।
এই যে দিনের পর দিন এভাবে চলছে, তাতে এই প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক যে স্থানীয়
প্রশাসন বলে আদৌ কিছু আছে সেখানে? স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৬ বছরে অনেক সাংসদ ও
উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরাই বা কী করেছেন? এলাকার উন্নয়ন ও
লোকজনের চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তো তাঁদেরই। এলাকাবাসীর
প্রয়োজনীয়তা বা চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি যদি শুরু থেকেই প্রশাসন ও
জনপ্রতিনিধিদের কাছে গুরুত্ব পেত তবে এখনো তাদের বাঁশের সাঁকোর ওপর
নির্ভরশীল থাকার কথা নয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নড়াইল
সদর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদের সূত্রে জানা গেছে, মরা
চিত্রা খালের ওপর একটি পায়ে চলার সেতু নির্মাণের জন্য খুলনায় স্থানীয় সরকার
বিভাগের উপপরিচালকের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদন পেলেই
সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করব, সেতু নির্মাণের কাজ যাতে দ্রুত
শুরু হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন তাদের চেষ্টা ও উদ্যোগ অব্যাহত
রাখবে।
No comments