বিলুপ্ত প্রায় বাংলাদেশের কবিগান
কাব্যে
কাব্যে যে গান, সেইতো কবিগান। তাৎক্ষণিকভাবে সূরের সাথে কথা বেঁধে মঞ্চেই
পরিবেশণ করা হয় এই গান। এই গানে দুটি আলাদা আলাদা দল থাকে। প্রতিটি দলে
থাকেন একজন করে প্রধান কবি এবং বাকিরা দোহার। কবিগানের কিছু সামাজিক,
ধর্মীয় বা বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয় থাকে। আসরের শুরুতেই দর্শক শ্রোতাদের
ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে বিষয় নির্বাচিত হয়। তারপর তার উপর আলোচনা হয়। একটি
প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। যেমন- রাধা-কৃষ্মের প্রেমে কার নিবেদন বেশি, রাধা
নাকি কৃষ্ম। দুটি দল আলাদা পক্ষ বেঁছে নেয় এবং শুরু হয় কবিদের কাব্যিক
লড়াই। প্রতিটি কথার পাল্টা জবাব ও গানে গানে এবং চন্দে কবিতায় দেওয়া হয়।
যাকে বলে স্বভাব কবিত্ব। এই আসরে সামাজিক এবং ধর্মীয় জ্ঞান নির্ভর বিষয়
নিয়েও আলোচনা করা হয় যা সমাজের জন্য ইতিবাচক। কবিগানের রয়েছে কিছু অসামান্য
ক্ষমতা। কবিরা সহজেই স্থান করে নিতে পারে মানুষের হৃদয়ে। সুতরাং তাঁদের
বক্তব্য এবং বার্তা উপস্থাপনের মাধ্যে তাঁরাই পারে সমাজ সংস্কারে অবদান
রাখতে। সাথে সাথে যোগ্যতার বিচারে এই কবিদের স্থান অনেক উপরে। অথচ এই
কবিদের রয়েছে কিছু সংকট। নেই কোন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। আজকাল যুগ পরিবর্তনের
সাথে সাথে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সহজলভ্যতায় কমে এসেছে কবিদের চাহিদা। তবে
যতই নতুন ধারার আবিষ্কার হোক, একটি শিল্পের বিকল্প কখনো অন্য একটি শিল্প
হয়ে ওঠেনা। আর গ্রামে গঞ্জে কবিগান যেভাবে সরাসরি জ্ঞান ও সাহিত্যের
বিস্তার ঘটায় তা অন্য মাধ্যমে সম্ভব নয়। তথাপিও কমে এসেছে এই চাহিদা। আর
তাই হারিয়ে যাচ্ছেন কবিগানের কবিরা। জীবিকার দায়ে তাঁরা বেঁছে নিচ্ছেন
ভিন্ন পেশা। নেই শিষ্য। আর এভাবেই বিলুপ্ত প্রায় বাংলাদেশের কবিগান। অথচ এই
গান বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব এবং এই অসামান্য শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখার
দায়ভার রয়েছে সরকারের। ঐতিহ্য, শিল্পী এবং শিল্পের ধ্বংস অবশ্যই কাম্য নয়।
মানবেতর জীবনযাপন এই কবিদের প্রাপ্য নয়।
No comments