হিন্দি ফিল্ম বোঝেন, উর্দু শেরও তবে বাংলা বোঝেন না by জয়া ফারহানা
বিশ্বের
অন্য কোনো ভাষার অভিধানে পণ্ডিত মূর্খ বলে কোনো শব্দবন্ধ নেই। কিন্তু
বাংলায় আছে। বাংলা অঞ্চলের একশ্রেণীর অত্যুৎসাহী পণ্ডিত ভাষা নিয়ে যতটা
পাণ্ডিত্য দেখিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি দেখিয়েছেন শুকনো পণ্ডিতি। যে কারণে
বাংলা অভিধানে ‘পণ্ডিত মূর্খ’ শব্দবন্ধটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিয়েছে।
ভাষা নিয়ে দুই দল পণ্ডিতের কূটতর্ক বাঙালি দেখেছে যুগ যুগ ধরে। বাঙালি
দেখেছে ভাষা নিয়ে দু’দল পণ্ডিতের যথেচ্ছ রাজনীতি। একদিকে ফোর্ট
উইলিয়ামপন্থী সংস্কৃত পণ্ডিত। অন্যদিকে বাংলাকে মুসলমান মোহাজিরদের ভাষা
বানানোর পণ্ডিত। পণ্ডিতি করতে গিয়ে তারা পাণ্ডিত্য নয়, দেখিয়েছেন মূর্খতা।
‘শাহনামা’ মুসলিম মহাকবি ফেরদৌসীর লেখা বলে একপক্ষের পণ্ডিত শাহনামাকে
মুসলমানদের জাতীয় সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ
শাহনামার মূল দুই চরিত্র সোহরাব-রুস্তমের কেউ মুসলমান নয়। তবু তা
মুসলমানেরই সম্পদ, কেবল এর রচয়িতা মুসলিম বলে। এদের কল্যাণে বাংলার বহু
নিজস্ব শব্দ যা সাধারণের শব্দ, দৈনন্দিনের শব্দ বদলে গেল। উদাহরণ দিই।
রাজস্ব হয়ে গেল খাজনা, এমনি ভাবে- প্রজা হল রায়ৎ, মহাপাত্র উজির,
ধর্মাধিকারী কাজী, নিশিপতি কোটাল, ভৃত্য নফর, দোষী আসামি, দাস খেদমতগার,
বিচারালয় আদালত, রাজসভা দরবার, প্রভু হুজুর ইত্যাদি। ঠিক যে, এতদিন বাদে এর
প্রত্যেকটি শব্দ এমনভাবে মিশে গেছে যে বাংলা ভাষার জন্য তা হয়েছে শাপে বর।
জনগণ ততটুকুই গ্রহণ করে যা গ্রহণ করার উপযোগী। বাংলা ভাষা প্রচুর
আরবি-ফারসি-উর্দু শব্দ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাই বলে ফোর্ট উইলিয়ামপন্থীদের
ভাষাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে যেসব মুন্সী মৌলভী ‘মঞ্জিল মঞ্জিল রাহা গুজরিয়া
যায়’ জাতীয় বাক্য লেখা শুরু করলেন, এ জাতীয় বাক্য সাধারণ মানুষ গ্রহণ
করেনি। এ পণ্ডিতদের বোঝানো যায়নি যে, আরবিকে তেরশ’ বছর ধরে ইরান এবং
তুরস্কের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মরিয়া চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে
ফোর্ট উইলিয়ামপন্থীরা বাংলার ওপর অপ্রয়োজনীয় সংস্কৃত শব্দের বোঝা চাপিয়ে
একে এতটাই কৃত্রিম করে তুললেন যে, বাংলা চলে গেল সাধারণ মানুষের বোঝার
বাইরে। ‘ললিত-লবঙ্গলতা পরিশীলন কোমল মলয়-সমীরের’ মতো বাক্যও সাধারণের পক্ষে
কিছুতেই বোঝা সম্ভব নয়। যে ভাষায় কেবল ব্রাহ্মণ্য ধর্মের শাস্ত্রানুশীলনই
চলবে এবং যে ভাষায় সাধারণের অধিকার নেই বলে ঘোষণা দেয়া হয়, সেই ভাষা যে
সাধারণের হবে না তা কিছুতেই বোঝেননি ফোর্ট উইলিয়ামপন্থী পণ্ডিতরা। যে ভাষা
দীর্ঘদিন কেবল ব্রাহ্মণের অধিকার ও চর্চা হয়ে থেকেছে এবং ব্রাহ্মণ যা বলেন
তাই বেদবাক্য, সেই ভাষাকে সাধারণ গ্রহণ করবেই বা কেন? ফোর্ট
উইলিয়ামপন্থীদের সংস্কৃতবহুল বাংলা প্রচলনের চেষ্টার ফল হল এই যে-
উচ্চশিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্য থেকে গ্রামের কৃষক দরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা
বঞ্চিত থেকে গেল। প্রচারণা এতদূর গড়িয়েছিল যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো
বিচক্ষণ স্থিতধী পণ্ডিতজনকে পর্যন্ত মুখ খুলতে হল। তিনি বললেন একপক্ষ বাংলা
ভাষাকে কামারের বলি করেছে অন্যপক্ষ করেছে মোল্লার ছুরির কোরবানি। যেসব
বাক্য এবং শব্দ বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার হয় না, তা গ্রহণ করা
সাধারণের জন্য কষ্টকর। কৃত্রিমভাবে বাংলাকে সংস্কৃত করে তোলার চেষ্টা যেমন
ফোর্ট উইলয়ামপন্থীদের অপরাধ ছিল, ঠিক সমান অপরাধ ছিল বাংলাকে উর্দু ভাষায়
পরিণত করার চেষ্টাও। বাংলা ভাষার দুর্ভাগ্যের একটা বড় কারণ এ দুই পন্থী
পণ্ডিতদের বিতর্ক।
দুই মোগল পাঠান এবং পাল শাসনামলে শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা হলেও কোনো শাসকই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেননি। পাল ও সেন শাসকদের যুগে রাষ্ট্রভাষা ছিল সংস্কৃত। মোগল পাঠান আমলে ফারসি। ব্রিটিশ যুগে ইংরেজি। পাকিস্তান শাসনামলে পাকিস্তান শাসক চেষ্টা করেছে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে। পাকিস্তান শাসকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল নানা কুযুক্তি। এক. ভাষা ও লিপি এক নয়। বাংলা হরফ বর্জন করে রোমান হরফে বাংলা লিখলে বাংলা ভাষার এমন কোনো ক্ষতি হবে না। দুই. রোমান হরফ বিজ্ঞানভিত্তিক। বাংলা হরফ তেমন নয়। তিন. রোমান হরফে বাংলা ও উর্দু লিখলে পৃথকভাবে ইংরেজি, উর্দু ও বাংলার জন্য আলাদা হরফ শেখার প্রয়োজন হবে না। এক হরফেই পাকিস্তানিরা এ তিনটি ভাষা শিখতে পারবে। চার. বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষা রোমান হরফে লিখলে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যকার ব্যবধান কমে আসবে; ফলে একটি জাতি গড়ে তোলার পথ সুগম হবে। পাঁচ. রোমান হরফে পৃথিবীর বহু ভাষা লেখা হয়। এবং অধুনা চীন, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশও রোমান হরফ গ্রহণ করেছে। তুরস্ক তো বহু আগেই করেছে। এবং ধীরে ধীরে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই রোমান হরফ গ্রহণ করবে। ছয়. অল্প কিছুদিন বাদেই পশ্চিম বাংলাসহ সমগ্র ভারতের বিবিধ ভাষা দেব নাগরী হরফে লেখা হবে। সবার আগে আমরা যদি রোমান হরফে বাংলা লেখা আরম্ভ না করি, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোথাও বাংলা হরফের অস্তিত্ব থাকবে না। সাত. পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা পনেরো জনের বেশি মানুষ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয়। বাংলা হরফ জটিল বলে শতকরা পঁচাশি জনই তা বুঝতে পারে না। রোমান হরফ সোজা। এ হরফে বাংলা লেখা হলে পূর্ব পাকিস্তানে আর কেউ অশিক্ষিত থাকবে না। উদাহরণ তুরস্ক। আট. রোমান হরফে বাংলা লিখলে বিদেশিদের পক্ষে বাংলা শেখা সহজ হবে। নয়. বাংলা হরফ টাইপ রাইটিংয়ের জন্য সুবিধাজনক নয়। রোমান হরফে বাংলা লিখলে সুবিধাজনক হবে এবং সরকারি হিসেবে বাংলার প্রচলন সহজতর হবে। শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হল উর্দু এমন এক ভাষা যা ভারতের সর্বত্র, এমনকি আরব, ইরান, আফগানিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসীরা পর্যন্ত সহজে বুঝতে পারে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বললেন তাহলে তো আরবিকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। এটা কোরআন-হাদিসের ভাষা। আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত সব মুসলমানের কাছে পরিচিত এবং পবিত্র।
তিন বাংলা নিয়ে এখনও এক শ্রেণীর উচ্চবিত্তের দুর্বিনয় মনোভাব রয়েছে। তাদের কাছে এখনও বাংলা গৌরবের ভাষা নয়। সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা। সরকারি ভাষা বাংলা। মূলধারার শিক্ষার মাধ্যমও বাংলা। আরবি হরফে বাংলা লিখতে এখন আর কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন না বটে, তবে বাংলা ভাষার বানান, শব্দসম্ভার এবং বাক্য গঠনে কোনো প্রমিত রীতি অনুসরণের নিয়ম এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। যে যার মতো নিয়মে বাংলা লেখেন। এটা তাচ্ছিল্য ছাড়া কিছু নয়। বাংলা বানানে এখনও সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করা হয়। এখনও বাংলার নিজস্ব ব্যাকরণ নেই। অথচ বাংলা উচ্চারণ সংস্কৃত থেকে একেবারে আলাদা। লেখা হয় ভিক্ষা=ভিক্্ষা, পড়া হয় ভিক্ষা। লেখা হয় অশ্ব=অশ্্ ও অ। পড়া হয় অশ্্শ। লেখা হয় লক্ষ্মী=লক্্ষমী। পড়া হয় লখ্্খী। লেখা হয় পদ্ম=পদ্ম। পড়া হয় পদ্দ। এমন অসঙ্গতির সংখ্যা এত বেশি যে তা লিখতে গেলে কাগজ লাগবে দিস্তা দিস্তা, কলম গোটা ছয়। বাংলার প্রতি তাচ্ছিল্য দেখানোর কারণ বাংলা এখনও অর্থ উপার্জন এবং সম্মান লাভের ভাষা নয়। ভালো বাংলা বলা এবং লেখার না আছে কোনো বাজার মূল্য, না আছে সম্মান। বাংলা ভাষা যারা চর্চা করেন তারা এ ভাষার প্রতি একান্ত অনুরাগবশত করেন। নয়তো বাংলা ভাষার একনিষ্ঠ চর্চায় ফল এবং লাভ প্রায় কিছুই নেই। যখন দেখি উর্দুতে একটি অশ্লীল প্রেমের গান শুনেও এক শ্রেণীর বাঙালি মোহিত হচ্ছে কেবল একে ইসলামী ভাষার গান ভেবে আর বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের একটি উৎকৃষ্ট ব্রহ্ম সংগীত হারাম হিসেবে নিন্দিত হয়, তখন এই অনুভূতিকে অন্ধ এবং অবোধ মোহ ছাড়া আর কিছু ভাবার সুযোগ নেই। একই রকম মোহ দেখি হিন্দি ভাষার ক্ষেত্রেও।
চার ‘প্রথমে মাতৃভাষা পরভাষা পরে’ এ ধরনের বাক্য কেবল ফেব্র“য়ারি মাসেই শোনা যায়।
জয়া ফারহানা : গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
দুই মোগল পাঠান এবং পাল শাসনামলে শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা হলেও কোনো শাসকই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেননি। পাল ও সেন শাসকদের যুগে রাষ্ট্রভাষা ছিল সংস্কৃত। মোগল পাঠান আমলে ফারসি। ব্রিটিশ যুগে ইংরেজি। পাকিস্তান শাসনামলে পাকিস্তান শাসক চেষ্টা করেছে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে। পাকিস্তান শাসকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল নানা কুযুক্তি। এক. ভাষা ও লিপি এক নয়। বাংলা হরফ বর্জন করে রোমান হরফে বাংলা লিখলে বাংলা ভাষার এমন কোনো ক্ষতি হবে না। দুই. রোমান হরফ বিজ্ঞানভিত্তিক। বাংলা হরফ তেমন নয়। তিন. রোমান হরফে বাংলা ও উর্দু লিখলে পৃথকভাবে ইংরেজি, উর্দু ও বাংলার জন্য আলাদা হরফ শেখার প্রয়োজন হবে না। এক হরফেই পাকিস্তানিরা এ তিনটি ভাষা শিখতে পারবে। চার. বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষা রোমান হরফে লিখলে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যকার ব্যবধান কমে আসবে; ফলে একটি জাতি গড়ে তোলার পথ সুগম হবে। পাঁচ. রোমান হরফে পৃথিবীর বহু ভাষা লেখা হয়। এবং অধুনা চীন, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশও রোমান হরফ গ্রহণ করেছে। তুরস্ক তো বহু আগেই করেছে। এবং ধীরে ধীরে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই রোমান হরফ গ্রহণ করবে। ছয়. অল্প কিছুদিন বাদেই পশ্চিম বাংলাসহ সমগ্র ভারতের বিবিধ ভাষা দেব নাগরী হরফে লেখা হবে। সবার আগে আমরা যদি রোমান হরফে বাংলা লেখা আরম্ভ না করি, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোথাও বাংলা হরফের অস্তিত্ব থাকবে না। সাত. পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা পনেরো জনের বেশি মানুষ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয়। বাংলা হরফ জটিল বলে শতকরা পঁচাশি জনই তা বুঝতে পারে না। রোমান হরফ সোজা। এ হরফে বাংলা লেখা হলে পূর্ব পাকিস্তানে আর কেউ অশিক্ষিত থাকবে না। উদাহরণ তুরস্ক। আট. রোমান হরফে বাংলা লিখলে বিদেশিদের পক্ষে বাংলা শেখা সহজ হবে। নয়. বাংলা হরফ টাইপ রাইটিংয়ের জন্য সুবিধাজনক নয়। রোমান হরফে বাংলা লিখলে সুবিধাজনক হবে এবং সরকারি হিসেবে বাংলার প্রচলন সহজতর হবে। শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হল উর্দু এমন এক ভাষা যা ভারতের সর্বত্র, এমনকি আরব, ইরান, আফগানিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসীরা পর্যন্ত সহজে বুঝতে পারে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বললেন তাহলে তো আরবিকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। এটা কোরআন-হাদিসের ভাষা। আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত সব মুসলমানের কাছে পরিচিত এবং পবিত্র।
তিন বাংলা নিয়ে এখনও এক শ্রেণীর উচ্চবিত্তের দুর্বিনয় মনোভাব রয়েছে। তাদের কাছে এখনও বাংলা গৌরবের ভাষা নয়। সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা। সরকারি ভাষা বাংলা। মূলধারার শিক্ষার মাধ্যমও বাংলা। আরবি হরফে বাংলা লিখতে এখন আর কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন না বটে, তবে বাংলা ভাষার বানান, শব্দসম্ভার এবং বাক্য গঠনে কোনো প্রমিত রীতি অনুসরণের নিয়ম এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। যে যার মতো নিয়মে বাংলা লেখেন। এটা তাচ্ছিল্য ছাড়া কিছু নয়। বাংলা বানানে এখনও সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করা হয়। এখনও বাংলার নিজস্ব ব্যাকরণ নেই। অথচ বাংলা উচ্চারণ সংস্কৃত থেকে একেবারে আলাদা। লেখা হয় ভিক্ষা=ভিক্্ষা, পড়া হয় ভিক্ষা। লেখা হয় অশ্ব=অশ্্ ও অ। পড়া হয় অশ্্শ। লেখা হয় লক্ষ্মী=লক্্ষমী। পড়া হয় লখ্্খী। লেখা হয় পদ্ম=পদ্ম। পড়া হয় পদ্দ। এমন অসঙ্গতির সংখ্যা এত বেশি যে তা লিখতে গেলে কাগজ লাগবে দিস্তা দিস্তা, কলম গোটা ছয়। বাংলার প্রতি তাচ্ছিল্য দেখানোর কারণ বাংলা এখনও অর্থ উপার্জন এবং সম্মান লাভের ভাষা নয়। ভালো বাংলা বলা এবং লেখার না আছে কোনো বাজার মূল্য, না আছে সম্মান। বাংলা ভাষা যারা চর্চা করেন তারা এ ভাষার প্রতি একান্ত অনুরাগবশত করেন। নয়তো বাংলা ভাষার একনিষ্ঠ চর্চায় ফল এবং লাভ প্রায় কিছুই নেই। যখন দেখি উর্দুতে একটি অশ্লীল প্রেমের গান শুনেও এক শ্রেণীর বাঙালি মোহিত হচ্ছে কেবল একে ইসলামী ভাষার গান ভেবে আর বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের একটি উৎকৃষ্ট ব্রহ্ম সংগীত হারাম হিসেবে নিন্দিত হয়, তখন এই অনুভূতিকে অন্ধ এবং অবোধ মোহ ছাড়া আর কিছু ভাবার সুযোগ নেই। একই রকম মোহ দেখি হিন্দি ভাষার ক্ষেত্রেও।
চার ‘প্রথমে মাতৃভাষা পরভাষা পরে’ এ ধরনের বাক্য কেবল ফেব্র“য়ারি মাসেই শোনা যায়।
জয়া ফারহানা : গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
No comments