ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক by গৌতম দাস
ভারত-আমেরিকার
সম্পর্কের মধ্যে কিছু নতুন ও উল্লেখযোগ্য বাঁক ঘটা শুরু হয়েছে। একালে
রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বিরোধ বা স্বার্থসঙ্ঘাতের ধরন কিছুটা নতুন। কারণ, এখন
বিরোধ বা সঙ্ঘাত হয় ইস্যুভিত্তিক। অর্থাৎ এক ইস্যুতে চরম বিরোধে সামরিক
সঙ্ঘাত লাগার অবস্থা, অথচ একই সময়ে আরেক ইস্যুতে গলাগলি সহযোগিতা অথবা আধা
সহযোগিতা, নিউট্রাল অথবা সুপ্ত বিরোধে আগানো ইত্যাদি নানা রূপ এখন দেখা
যায়। অবশ্যই এর কোনো কোনোটা দীর্ঘ সময় বা স্থায়ীভাবে মুখ্য বিরোধের অংশ হয়ে
থাকে। ভারতের পিঠে হাত রেখে আমেরিকার ‘চীন ঠেকাও’ পলিসি একটি ভিত্তি
প্রস্তুত করা অর্থে শুরু হয়েছিল মোটা দাগে ২০০৫ সাল থেকে। এরপর মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ওবামার দুই টার্মে সেটা আরো পোক্ত হয়েছিল, অ্যাকশনে গিয়েছিল।
আর সেটাই ট্রাম্পের আমলে এঁটে বসা পলিসি হিসেবে এখনো আছে, তবে প্রশাসনের
রুটিন গাইডলাইনের মতো। মানে অতিরিক্ত বা নতুন কোনো মাত্রা তাতে যোগ হয়নি।
তবে ট্রাম্পের অর্থনীতিতে বাজারে কাজ সৃষ্টি, কাজ ফেরানো, ‘আমেরিকা ফাস্ট’
ধরনের যেসব কথিত দেশী জোশের (অ্যান্টি-গ্লোবালাইজেশন) কর্মসূচি আছে তাতে
অর্থনৈতিকভাবে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আইটি খাতে ভারত বাজার ও
চাকরি হারিয়েছে; কিন্তু তা নিয়ে ট্রাম্প কোনো দয়ামায়া দেখাননি। এমনিতেই
আমেরিকার ‘চীন ঠেকাও’ পলিসি ভারতের দিক থেকে দেখা হয়েছে এভাবে যে, এর আসল
ঠেকা আমেরিকানদের। ফলে আমেরিকা ‘ভালো দাম ধরে দিলে’ তবেই ভারত খেদমত করতে
রাজি। ফলে ব্যাপারটা যেন এমন- আমেরিকা হলো তোয়াজকারী কাজদাতা আর ভারত
এক্সিকিউটর বা বাস্তবায়ক। ‘উপযুক্ত মূল্য দাও তো কাজ করে দেবো’। তবে ভারতের
অনুভূতি হলো, আমেরিকাকে তার দরকার, গভীরভাবে দরকার। এটা তার অন্তরের
অনুভব; অন্তত দু’টি প্রসঙ্গে। এক. আমেরিকা হলো ভারতের জন্য পারফেক্ট
অস্ত্রের সরবরাহকারী বা উৎস। কারণ, ভারতের দৃষ্টিতে তার নিজের সমস্যা
হচ্ছে, কখনো যদি কোনো সামরিক বিরোধে তাকে জড়াতে হয় তবে সম্ভাব্য সেই বিপক্ষ
হিসেবে চীনকে দেখতে পায়। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে চীন; কারণ,
পাকিস্তান বিষয়টা ভারত নিজেই ম্যানেজ করতে পারবে বলে মনে করে।
চীন-ভারত
বাণিজ্য সম্পর্ক প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে ৯০ শতাংশই চীনা রফতানি।
অন্য দিকে চীনা বিনিয়োগ আছে ভারতে। কিন্তু ভারতে চীনা অস্ত্র আমদানি এক
অসম্ভব কল্পনা। আর দ্বিতীয় প্রসঙ্গ হলো, যে পাড়ায় আপনি থাকেন সেখানে
সম্ভাব্য বিরোধের বিষয় থাকলে আপনি আগেই পাড়ার প্রভাবশালী ব্যক্তি, সালিস
বৈঠকের মধ্যস্থতাকারীর সাথে যোগাযোগ রাখা দরকার মনে করেন। ভারতের কাছে
আমেরিকার গভীর প্রয়োজন মূলত এখানেই। সম্প্রতি সম্ভবত ভারত মত ও নীতি
বদলিয়েছে বা বদলাচ্ছে। মানে, আমেরিকা যেসব সুযোগ সুবিধা ভারতকে দেয়ার জন্য
কমিটেড, যেসব বাড়তি বা ফাও সুবিধা ভারত পায়, সে বিষয়টি ভারত নতুন করে
সম্ভবত মূল্যায়ন করেছে। অনুমান হলো, ভারত চেষ্টা করলে আরো বেশি মূল্য আদায়
করতে পারে। ফলে সে আমেরিকার উদ্দেশ্যে নাক উঁচা করেছে। ঘটনা শুরু হয়েছিল
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায়। এ সভা মূলত
অর্থনীতিতে গ্লোবালাইজেশনের ইস্যু, সুবিধা-অসুবিধা বা বাধা নিয়ে এক ধরনের
সমন্বয় সভা। ফলে এর মূল ফোকাস হলো, গ্লোবালাইজেশন। ওদিকে, গত বছর ট্রাম্প
নির্বাচনে জিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে শপথ নেয়ার সময় থেকেই
অ্যান্টি-গ্লোবালাইজেশনের ধারণায় তথাকথিত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ জাতিবাদী নীতির
কথা বলতে শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ গ্লোবালাইজেশনের শুরুর দিকের এর সপক্ষে
মূল নেতা আমেরিকা এখন ট্রাম্পের আমলে এসে পারুক আর না-ই পারুক ‘উক্ত’
জাতিবাদী নীতির স্লোগান তুলেছিল। প্রতিবার এ ফোরামের সভা হয় জানুয়ারির
শেষে, মানে গত বছর তা ট্রাম্পের শপথ নেয়ার দিন ২০ জানুয়ারির পরে; তা হলেও
ট্রাম্প গতবার এই সভায় নিজে যোগ দেননি। ফলে এই সংরক্ষণবাদী নীতির বিরুদ্ধে
ক্ষুব্ধ সারা ইউরোপ শান দিয়ে বসে ছিল ট্রাম্পকে ‘ধোলাই দিতে’, কিন্তু
পারেনি। একটা জাতিবাদী গ্লোবাল অর্থনীতিকে গ্লোবালাইজেশনে নিয়ে যাওয়া অনেক
সহজ। একই গ্লোবে বিচ্ছিন্ন অর্থনীতিগুলোকে একবার একে অন্যের ওপর
নির্ভরশীলভাবে গড়ে তুলে এবং বাজার শেয়ারের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে সাজিয়ে দিলে
(যাকে আমরা গ্লোবালাইজেশন বলছি), এভাবে ঢুকে যাওয়ার পরে তাকে ফিরিয়ে আগের
জায়গায় আনা কঠিন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। আমেরিকার উদ্যোগে সাড়া দিয়েই
ইউরোপ একসাথে গ্লোবালাইজেশনের পথে এসেছিল। কারণ, গ্লোবালাইজেশনে একসাথেই
যেতে হয়, একসাথে করার বিষয় এটা। এখন একা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’Ñ জাতিবাদী ও
সংরক্ষণবাদী নীতি আওড়ানোর ফলে চীন ও ইউরোপের ক্ষোভ বেশি; এমনকি ভারতেরও।
তাই এবারই প্রথম ট্রাম্পকে পাওয়ার পর তাকে কঠোর সমালোচনার সামনে পড়তে হয়।
আর এবার মোদি সেখানে ছিলেন প্রথম বক্তা। তিনি নাম না ধরে ট্রাম্পের
সংরক্ষণবাদী নীতির কঠিন সমালোচনা করেছেন। জলবায়ু-পরিবেশ ইস্যু থেকে দায়িত্ব
না নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমেরিকার সমালোচনা করেন তিনি। এমনকি
প্রটেকশনিজম (সংরক্ষণবাদ) ‘সন্ত্রাসবাদের মতোই ভয়ঙ্কর’ (as dangerous as
terrorism) বলে দেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আরেক বৈশিষ্ট্য হলো, এটা
মূলত দুনিয়ার প্রভাবশালী সরকার এবং ব্যবসায় প্রভাবশালী বিনিয়োগকারীদের মিলে
এক ‘প্রাইভেট-পাবলিক জমায়েত’। ফলে সব দেশের সরকারপ্রধান প্রতিবার নিজে এ
ফোরামে যান না। তবে কেউ নিজেকে ব্যবসাবান্ধব বা ব্যবসা-উপযোগী রাষ্ট্র
হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটা একটা ভালো ফোরাম মনে করা হয়।
এ বিচারে গতবার
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথম গিয়েছিলেন, অনেকটা আমেরিকার কাছাকাছি
গ্লোবাল লিডার হয়েছে চীন সেটা জানান দিতে। আর এবার মোদি গেলেন ভারত নেতা
হয়েছে; না হলেও অনেক দূর এগিয়েছে, এটা জানাতে। কিন্তু এসব কিছুকে ছাপিয়ে
ওঠা এক ঘটনা হলো, ভারতের গ্লোবালাইজেশনের পক্ষে দাঁড়ানো ও আমেরিকার
সমালোচনাকে চীনের পররাষ্ট্র বিভাগের রেগুলার ব্রিফিংয়ে সরাসরি প্রশংসা করা
হলো। এমনকি চীনা পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের প্রথম পেজে মোদির ছবিসহ এ
প্রসঙ্গে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। ‘গ্লোবাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা’ এ ইস্যুতে
আমেরিকা হলো পুরনো নেতা; কিন্তু সূর্যের মতো ক্রমেই ডুবে যাওয়া বিরাট
শক্তি। এর বিপরীতে চীন নতুন নেতা, ভারতও উদীয়মান। এ বিচারে আমেরিকার
বিরুদ্ধে চীন ও ভারতের অভিন্ন অবস্থান আকাক্সিক্ষত, এমনই হওয়ার কথা অন্তত
ইকোনমিক ইস্যুতে। কিন্তু তা না হয়ে ভারত দুই নৌকায় পা দিয়ে গাছের আর তলার
দুই দিকে খামচা দিয়ে খাচ্ছে; যেন দুনিয়ার কোনো কিছুতে তার দায় নেই। আবার
ন্যূনতম ন্যায়নীতি বইবার মতো কাঁধই তার তৈরি হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ তার
কাছে এতই তুচ্ছ যে, তাদের ভোটাধিকার পর্যন্ত নষ্ট করে দিতে সে বেপরোয়া,
কোনো কিছুতে যার কমিটমেন্ট নেই। ওদিকে চীন খামাখা ধর্মবিরোধিতা করে
বেড়াচ্ছে আর মানুষের ‘রাজনৈতিক অধিকারের’ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই আমল
করার যোগ্য হয়নি বলে তার ধারণা। ফলে গ্লোবাল অর্জনগুলো রক্ষার জন্য অন্তত
মুখে সমর্থন করার যোগ্য, দুনিয়ার আগামী সম্ভাব্য নেতৃত্ব এরা কেউ নয়। এমনই
এক অবস্থায় সমগ্র দুনিয়া যেন ঝুলে আছে, পড়তে যাচ্ছে। এ দিকে আরেক ঘটনা হলো-
অস্থির সময়ে ‘পাগলা’ ট্রাম্পের আড়ালে আমেরিকার ড্রাইভিং সিটে ক্রমেই সাবেক
আর সিটিং জেনারেলরা সংগঠিত হয়ে উঠছেন। তাদের সামনে রেখে মূল আমেরিকান
স্বার্থ নানাভাবে দুনিয়ার নেতৃত্বে টিকে থাকা এবং একে দীর্ঘায়িত করার
চেষ্টা করছে। বুড়া ঘোড়াকে চাবকে আবার খাড়া করার চেষ্টা বলা যায় এটাকে।
তেমনি আরেক ঘটনার ক্ষেত্র হলো, থাইল্যান্ড। অর্থনৈতিক দিক থেকে থাইল্যান্ড
আমাদের চেয়ে অগ্রসর এবং এর সেনাবাহিনী আমেরিকার হাতে তৈরি। দেশটির
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও আমেরিকার সাথে ওঠাবসায় জন্ম নেয়া। স্থানীয় এলিটদের
পছন্দের গন্তব্য ইউরোপের কোনো শহর নয়, আমেরিকা। ব্যাংককের কালচারাল মডেল
হচ্ছে আমেরিকা। কিন্তু সেই ব্যাংকক ওয়াশিংটনের আজকের দুরবস্থা দেখে মুখ
ফিরিয়েছে, তাদের সম্পর্ক ঢিলা হয়ে গেছে। তবে ব্যাংককের সামরিক শাসনের ও
মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করেছিল আমেরিকা, এটাও কারণ। সেই স্থবিরতা
ঘোচাতে বহুদিন পরে আমেরিকান মেরিনের জয়েন্ট চিফ জেনারেল ডানফোর্ড ব্যাংকক
হাজির হয়েছেন। উদ্দেশ্য, পুরনো সামরিক সম্পর্কসহ রাজনৈতিক সম্পর্ক
পুনঃস্থাপন। কিন্তু তিনি বলছেন, আমেরিকা কোনো পড়তি শক্তি নয় (not a
declining power)। অর্থাৎ জেনারেলের মনে আসলে ভয় ঢুকেছে, তা বোঝা যাচ্ছে।
তবে বাস্তবতায় কে না ভয় পায়? ওবামাও ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ড সফরের সময়
পাবলিক মিটিংয়ে বলেছিলেন, ‘দুনিয়াকে আমেরিকাই আরো বহুদিন নেতৃত্ব দিয়ে
যাবে, চিন্তার কিছু নেই।’ আর এক ঘটনা হলো, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইরানি
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভারত সফর করে গেলেন। যখন ট্র্রাম্পের আমেরিকা
ইরানের সাথে করা নিউক্লিয়ার চুক্তি (এটা আমেরিকা-ইরান দ্বিপক্ষীয় চুক্তি
নয়, বরং পি৫+১; অর্থাৎ এর সাথে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ ভেটো
সদস্য ও জার্মানি মিলে একত্রে করা চুক্তি) বাতিল করে আবার কঠোর অবরোধ আরোপ
করতে চাইছে। এটা মূলত ইসরাইল ও সৌদি আরবের চাপ ও লবিতে। এর সারকথা হলো, চীন
ঠেকানো ইস্যুতে আমেরিকার দেয়া সুবিধা সব আদায় করে নিলেও ভারত ট্রাম্পের
মধ্যপ্রাচ্য নীতি অনুসরণ করতে পারছে না। অবশ্য ইরান আবার চীনের সাথেও বিশেষ
বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। তবে তাতে ভারত অথবা ইরান কারো পারস্পরিক সম্পর্ক
গড়তে সমস্যা নেই। এর প্রধান কারণ হলো পাকিস্তানের বিকল্প হিসেবে, ইরান হয়ে
আফগানিস্তান ঢোকার নতুন এক সড়ক-ট্রানজিট রুট তৈরি করেছে ওই জোট।
আনুষ্ঠানিকভাবে এটা ভারত, পাকিস্তানসহ সাত রাষ্ট্রীয় ‘আশগাবাত চুক্তি’ নামে
পরিচিত; আর আশগাবাত বা আশাকাবাদ তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী এবং তা ইরানি
সৈকতের চাবাহার নতুন পোর্টকে কেন্দ্র করে।
ফলে স্বভাবতই ইরান এখানে
গুরুত্বপূর্ণ ‘ট্রানজিট হাব’ হবে। এম ভদ্রকুমার ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত।
তার ভাষায়, এটা ভারতের আমেরিকান নীতিকে অমান্য ও উপেক্ষা করা। শুধু এটুকুই
নয়, ভারতের তৃতীয় তেল সরবরাহকারী দেশ এখন ইরান। এ ছাড়া পুতিনের রাশিয়ার এক
কোম্পানি ইরান থেকে ইন্ডিয়া- গ্যাস পাইপলাইনের প্রকল্পের দিকে এগোচ্ছে। সব
মিলিয়ে আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে ভারত নতুন ‘অরবিট’ তৈরি করছে। তবে
আমেরিকার জন্য ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক’ বিষয় এখানে আর একটা আছে; তা হলো- রাশিয়া,
ইরান ও ইন্ডিয়া এসব প্রকল্পে পরস্পরের দেনা-পাওনার মুদ্রা আমেরিকান ডলার
না করে নিজস্ব মুদ্রাকে করবে। বলা বাহুল্য, এটা হবে আমেরিকার জন্য বিরাট
‘বড় ঘুষি’ খাওয়া। চীন ঠেকানো নীতিতে ভারতের আবদার মেটাতে আমেরিকা
বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বন্ধক দিয়েছে- এটাই হলো মূল কথা। কিন্তু এ দিকে যত
দিন যাচ্ছে, নানান ধরনের অর্থনৈতিক স্বার্থজোট যত তৈরি হচ্ছে তাতে আমেরিকার
বা ভারতের স্বার্থ বেশির ভাগ সময় এক লাইনে মিলছে না বা থাকছে না। অর্থাৎ
ভারতের স্বার্থ, আমেরিকান স্বার্থের মুখোমুখি বিরোধী হয়ে যাচ্ছে। এর
জ্বলন্ত উদাহরণ হলো মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যু। আমেরিকা মিয়ানমার সরকারকে
জেনোসাইডের জন্য ধমকাচ্ছে আর ভারত মিয়ানমারের জেনোসাইডের পক্ষে সাফাই বয়ান
দিচ্ছে। বাস্তব পরিস্থিতিতে ভারতের ও আমেরিকান স্বার্থ এক জায়গায় থাকছে না।
তবে এ কথা ঠিক, ভারতের ও আমেরিকার স্বার্থবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠার পেছনে কিছু
অংশ ভারত তৈরি করছে আমেরিকার কাছ থেকে বেশি দাম আদায় করার জন্য। এর অর্থ,
এখানে আমেরিকানদের ঠেকা বেশি, তাই সেই সুযোগে ভারত বেশি মূল্য আদায় করতে
চাইছে। আর বাকি অংশ আমেরিকা বা ভারত না চাইলেও সেসব ক্ষেত্রে দুই দেশের
স্বার্থ উঠে আসছে, সেটা পরস্পরবিরোধী হয়ে। এই স্বার্থবিরোধ কি তাহলে কোন
চূড়ায় বা চরমে পৌঁছেছে? বিশেষ করে আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস
ম্যাটিস বলছেন, ‘টেররিজম নয়; আমাদের প্রধান হুমকি চীন ও রাশিয়া’। ফলে
ভারত-আমেরিকান ‘সহযোগিতা’র বেলায় যে অভিন্ন জায়গা বের করা হয়েছিল তা কি এখন
বন্ধ বা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে? আমাদের কি মুক্তি মিলবে? এ দিকে সতর্ক চোখ
রাখতে হবে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মড়ঁঃধসফধং১৯৫৮@যড়ঃসধরষ.পড়স
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মড়ঁঃধসফধং১৯৫৮@যড়ঃসধরষ.পড়স
No comments