গ্যাস বিল পরিশোধে গ্রাহকের হয়রানি
কনকনে
শীত। দীর্ঘ লাইন। লাইনের সামনের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন ইনছান আলী। কখন থেকে
দাঁড়িয়ে আছেন, জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর: ফজর নামাজের পর থেকে। আরাফাত হোসেন
জানান, তিনিও ফজরের নামাজ পড়েই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বৃহস্পতিবারের এ চিত্র
পল্লবীর রূপালী ব্যাংকের সামনে। গ্যাস বিল পরিশোধে বিকল্প না থাকায় প্রতি
মাসের প্রথম থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের সামনে এমনইভাবে দাঁড়িয়ে
থাকে সাধারণ গ্রাহক। জানা গেছে, পল্লবী মিরপুরে প্রায় ১০ লাখ লোকের বাস।
মিরপুর ১০ গোলচত্বর থেকে পল্লবী পর্যন্ত প্রায় দেড় ডজন ব্যাংকের শাখা
থাকলেও বিল পরিশোধের সুযোগ রয়েছে কেবল রূপালী ব্যাংকে। তাও আবার এ এলাকায়
রূপালী ব্যাংকের কেবল একটি শাখা রয়েছে। ফলে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা
দাঁড়িয়ে থেকে গ্রাহকদের গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হয়। জাহাঙ্গীর হোসেন নামের
একজন গ্রাহক জানিয়েছেন, মিরপুর পল্লবীতে এমনিতেই গ্যাসসঙ্কট রয়েছে, এর ওপর
শীতে এ সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে। সারা দিনই বলা চলে গ্যাস থাকে না।
কোনো কোনো
এলাকায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পাইপ লাইনে গ্যাস থাকে না। এমনিতেই
গ্যাসসঙ্কটে মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর ওপর গ্যাস বিল পরিশোধ করতে
গিয়ে নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয়। তিনি জানান, পানি ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে
একাধিক ব্যাংক ও শাখা রয়েছে। কিন্তু একমাত্র গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হয়
রূপালী ব্যাংকের একটি শাখায়। এর ফলে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে গিয়ে দীর্ঘ
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সাধারণত ব্যাংক খোলে সকাল ১০টায়।
কিন্তু সকাল ৮টার মধ্যেই কয়েক শ’ গ্রাহকের লাইন পড়ে যায় ব্যাংকের সামনে।
শামসুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক জানান, ফজরের নামাজ পড়েই ব্যাংকের সামনে এসে
দেখেন ব্যাংকের সামনে ৩০ জনের লাইন। ফলে বাধ্য হয়েই তিনি ৩০ জনের পেছনে
দাঁড়িয়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রতি মাসের প্রথম থেকে ২০ তারিখ
পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া গ্যাস বিল দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এর পরে দিলেই জরিমানা
গুনতে হয়। অথচ কয়েক দিন চেষ্টা করে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হয়। তিনি জানান,
প্রতি মাসে গ্যাস বিল পরিশোধের জন্য কমপক্ষে পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা দাঁড়িয়ে
থাকতে হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কথা হয় ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী ইনছান আলীর সাথে।
তিনি জানান, পল্লবীতে বি ব্লকে তার বাসা। এই কনকনে শীত উপেক্ষা করে তিনি
ফজর নামাজ পড়েই গ্যাস বিল পরিশোধের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু করার
কিছু নেই। একটু দেরি হলেই শতাধিক গ্রাহকের পেছনে পড়ে যাবেন। এ কারণে তিনি এ
শীতের মাঝেও এ কষ্ট শিকার করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
তিনি জানান, বিদ্যুৎ ও
পানি বিলের মতো গ্যাস বিল পরিশোধে বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে তাদের এ কষ্টা
করতে হতো না। সরেজমিন দেখা যায়, শুধু রূপালী ব্যাংকের শাখার আশে পাশেই,
সোনালী, উত্তরা, পূবালী, মেঘনা, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও
ইসলামী ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এ ছাড়া মিরপুর ১০ থেকে পল্লবী পর্যন্ত আরো
প্রায় ডজন খানেক ব্যাংকের শাখা রয়েছে। কিন্তু গ্যাস বিল নেয়া হয় ওই মাত্র
একটি ব্যাংকের শাখায়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহকদের এ দুর্ভোগ
পোহাতে হচ্ছে। পল্লবী রূপালী ব্যাংকের শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না
করার শর্তে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এ এলাকায় গ্যাস বিল পরিশোধে বিকল্প
ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ গ্রাহকের সাথে ব্যাংক কর্মকর্তারাও দুর্ভোগে
পড়েছেন। কারণ দুপুরে খাওয়ার সময় পাওয়া যায় না। ব্যাংক লেনদেনের সময় শেষ
হওয়ার পরেও অনেক সময় গ্যাস বিল নিতে হয়। কারণ যখন দেখা যায় একজন বৃদ্ধলোক
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে আছেন, তখন মানবিক কারণে লেনদেন সময় শেষ হলেও গ্যাস বিল
নিতে হয়। একাধিক ব্যাংকের শাখায় গ্যাস বিল পরিশোধের সুযোগ থাকলে তাদের এ
অবস্থা পড়তে হতো না। সাধারণ গ্রাহকের মতে, গ্যাস নিয়ে তাদের এ দুর্ভোগ যেন
দেখার কেউ নেই। একে তো পাইপ লাইনে গ্যাস থাকে না। তাদের হোটেল থেকে কিনে
খেতে হচ্ছে, এর ওপর গ্যাস বিল পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে
হচ্ছে। গ্রাহক হয়রানি কমাতে কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা করবে বলে তারা
আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
No comments