পাঁচ বছরেও খোলেনি আরব আমিরাতের শ্রমবাজার
সংযুক্ত
আরব আমিরাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার। কিন্তু এ শ্রমবাজারটি গত
পাঁচ বছর ধরেই বন্ধ হয়ে আছে। যেখানে লাখ লাখ কর্মী যেত প্রতি বছর সেখানে
এখন হাতেগোনা শ্রমিক যাচ্ছে। কী কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে
‘গড়িমসি’ করছেন সে ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে
মন্ত্রণালয় ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্টরা সম্ভাবনাময়
দেশটিতে কর্মী পাঠাতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল রোববার প্রবাসী
কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি বদরুল
আরেফিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে
অপারগতা প্রকাশ করেন। এ দিকে সম্প্রতি গালফ নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদন
সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কর্মসংস্থান বা কর্মী ভিসা
পেতে হলে বিদেশী শ্রমিকদের দাখিল করতে হবে সনদ। বিগত পাঁচ বছরে তারা ভালো
আচরণ করেছেন কি-না তার খতিয়ান থাকবে এতে। নিরাপত্তার খাতিরে ইউএই সরকার
আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশী শ্রমিকদের আগেকার তথ্য পর্যবেক্ষণ ও
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করবে। ইউএই সরকারের বরাত দিয়ে গালফ নিউজ আরো
জানিয়েছে, কাজপ্রত্যাশী প্রত্যেক বিদেশী শ্রমিককে তাদের নিজ নিজ দেশ, আগের
কর্মক্ষেত্র অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চারিত্র্যিক প্রত্যয়নপত্র নিতে
হবে। আর তা দাখিল করলেই নতুন কাজের ভিসা দেয়া হবে। এ ব্যাপারে গালফ নিউজের
প্রশ্নের উত্তরে ইউএইতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান
বলেছেন, ‘আমরা এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কারণ আমরা আশা করছি, কাজপ্রত্যাশী
বাংলাদেশী শ্রমিকদের ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ থেকে থাকলে তা এর মধ্যে দিয়ে
দূর হবে।’ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা
যায়, ২০১৭ সালে দেশটিতে নারী কর্মী গেছেন তিন হাজার ২৭২ জন।
অন্য দিকে
পুরুষ কর্মী গেছেন চার হাজার ১৩৫ জন, যা খুবই কম বলে মনে করছেন অভিবাসন
বিশেষজ্ঞরা। গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বশীল এক
কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, ইউএই তে বর্তমানে মাসে পাঁচ-ছয়জন করে কর্মী
যাচ্ছে। দূতাবাসের সত্যায়িত করা থাকলে তখনই তাদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া
হচ্ছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ওই দেশ থেকে এমপ্লয়মেন্ট ভিসা দিয়ে
তারা প্রথম আমাদের মেইল করে। সব ঠিক থাকলে তখনই আমরা ছাড়পত্র দিচ্ছি। গতকাল
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সাথে
যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা
জানান, স্যার ১৪ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপ
দেশ মরিশাসসহ দু’টি দেশ সফরে রয়েছেন। সাথে রয়েছেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
মুহা: মুহসীন চৌধুরী ও উপসচিব জাহিদ হোসেন। পরে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও
প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করে এ প্রসঙ্গে
জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারও বক্তব্য নেয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ২০১২ সাল
থেকেই দেশটিতে শ্রমিক যাওয়া বন্ধ রয়েছে। একটানা দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর গত
বছর কিছু নারী ও পুরুষ শ্রমিক যেতে শুরু করে। তবে পুরোদমে দেশটির সরকার
বাংলাদেশ থেকে কবে নাগাদ কর্মী নেয়ার কাজ শুরু করবে তা নিয়ে মন্ত্রণালয় এবং
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাধারণ সদস্যরাও সন্দিহান। এর আগে
অবশ্য দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমরান নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন,
ইউএই সরকারের যৌথ একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ট্রেনিং সেন্টার
পরিদর্শন ও বৈঠক করেন। তখন তারা বলেছিলেন, তারা ফিরে যাওয়ার পর মার্কেটটা
দ্রুত খুলে যাবে। এরপরও এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত দেশটির সরকারের
শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে প্রায়ই শ্রমবাজার খুলে দেয়ার জন্য কখনো
টেলিফোনে আবার কখনো বৈঠক করে অনুরোধ জানানোর কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
No comments