নির্বাচনের বছর আচরণ-উচ্চারণে সাবধানতা দরকার by ড. শেখ আবদুস সালাম

১০ জানুয়ারি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর শর্তহীন আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরিপূর্ণ এবং নিশ্চিতভাবে অর্জিত কিংবা প্রতিষ্ঠিত হলেও সেদিনের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের মধ্যে আরেকটি অপরিমেয় তৃষ্ণাবোধ রয়ে গিয়েছিল। সেটি হচ্ছে স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনও পাকিস্তানের কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছিলেন। এ সময় একদিকে বাঙালিদের হাতে বন্দি পাকিস্তানের তিরানব্বই হাজার সৈন্যের জীবনমৃত্যুর প্রশ্ন, অন্যদিকে বিশ্ব জনমতের চাপে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের তখন বাধ্য হতে হয় পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়ে তারা তাকে একটি প্লেনে চড়িয়ে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু লন্ডন-দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকার মাটিতে পা রাখেন। প্রায় প্রতিবছর ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এদিনটিতে পত্রপত্রিকায় একটি করে প্রবন্ধ লিখেন। তার প্রবন্ধে সব সময় তিনি ১৯৭২ সালের এ দিনটিকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষের বিজয়ের পরিপূর্ণতার’ দিন বলে উল্লেখ করেন। ইতিহাসের সত্যও তাই। জানুয়ারিতে শুধু বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন নয়, এই মাসে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগেরও জন্ম। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি খোদ বঙ্গবন্ধুর হাতেই এ সংগঠনের গোড়াপত্তন তথা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। এ দিনটিও বাংলা এবং বাঙালির ইতিহাসের একটি অন্যতম দিন। আমাদের ভাষা, স্বাধিকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে এ সংগঠনটির অবদান অনস্বীকার্য। গত কয়েকদিনে এ দুটি দিনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বেশকিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অনেক অনুষ্ঠান এবং কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু উজ্জ্বল এবং ইতিহাসের সাক্ষী এসব দিবস পালন অনুষ্ঠানের আগে-পরে আমরা পত্রপত্রিকার পাতা থেকে এমন কিছু খবর জানতে পেরেছি, যা অনভিপ্রেত এবং একেবারেই কাম্য নয়। ছাত্রলীগের এক সময়ের শীর্ষ এক নেতার সম্প্রতি একটি লেখায় তিনি ছাত্রলীগকে ‘মরুভূমির একটি নিষ্কলুষ সূর্যোদয়’ উল্লেখ করে ছাত্রলীগকে এদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রযাত্রী, উদ্ভাবক এবং সারথি বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ইতিহাসের অলঙ্ঘনীয় বিচারে বাংলাদেশ, শেখ মুজিব এবং ছাত্রলীগ একটি অন্যটির প্রতিশব্দ বা পরিপূরক। একই লেখায় তিনি আফসোস করে বলেছেন, আজকের ছাত্ররাজনীতি বিশেষ করে ছাত্রলীগের মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবশ্য তিনি এ কারণে ছাত্রলীগকে এককভাবে দায়ী না করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সার্বিক অবক্ষয়, নেতৃত্বের দুর্বলতা, দুর্নীতি, ক্ষমতার প্রতি লোভ- এসবকেও দায়ী করেছেন। তিনি এগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগকে সবরকম অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য, আসুরিক এবং স্বার্থকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে এসে অতীত গৌরবকে ধারণ করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংগঠন এবং তাদের সব কর্মীর কাছে আমাদের সবার প্রত্যাশাও এমনটিই। কিন্তু আসলে আমরা এমনটি দেখতে পারছি কি? এ প্রশ্নের সরল উত্তর ‘হ্যাঁ’ বলা আমাদের জন্য যেন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তারা নিজেরাই স্বার্থ-দ্বন্দ্বে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হানাহানি-মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে। ৭ জানুয়ারি সিলেটের টিলাগঞ্জে দু’পক্ষের সংঘর্ষের কারণে তাদেরই এক কর্মী নিহত হয়েছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে ৭১ জন গ্রেফতার হয়েছে, এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সঙ্গে জড়িত আছে ৩৫ জন। গ্রেফতারদের মধ্যে এমন অনেক নাম রয়েছে, যারা ছাত্রলীগের রাজনীতিক পরিচয়ে পরিচিত। অবশ্য এখানে একটি ভালো দিক রয়েছে, এ ধরনের ঘটনার পরপরই সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে। অনেকের ধারণা, ছাত্রলীগের ছায়ায় থেকে বা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ‘হাইব্রিড’রা এসব ঘটনা ঘটানোর প্রয়াস পাচ্ছে। কিন্তু এসবের দায় তো ছাত্রলীগের ওপরই বর্তাচ্ছে। ১০ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় এক ছাত্রীর ছবিসহ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : শীতের রাতে হল থেকে বের করে দিল ছাত্রলীগ’ খবরটি পড়ে আমাদের কারও ভালো লাগেনি। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে যায়নি বলে প্রচণ্ড এ শীতের রাতে এক ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া এবং পরদিন এ ঘটনার জের ধরে ‘ছাত্রলীগ কর্তৃক হল থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে আমরণ অনশন’ শিরোনামে প্লাকার্ড লাগিয়ে এক ছাত্রী-শিক্ষার্থীর ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার খবর ছাত্রলীগ তথা ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্যকে যেমন কালিমাযুক্ত করেছে, তেমনি এর প্রভাবও কিন্তু সুদূরপ্রসারী হতে পারে। ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে, এ বছর কিন্তু নির্বাচনী বছর। ছাত্রলীগ কেন? সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সরকার, আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন সবাইকেই কিন্তু হিসাব-নিকাশ করেই পা বাড়াতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আখেরে কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ঘাড়েই গড়িয়ে যায়। এসব কর্মকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর আত্মাই কিন্তু কষ্ট পায়।
২. ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে নৌকায় ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ জানুয়ারি মাসেই তার সরকারের মেয়াদ একটানা ৯ বছর পূর্ণ করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা বিরল। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী এবং নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হবে এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে বিষয়টি বেশি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেটি হল, তার সরকারের সময় দেশের বেশকিছু অভাবনীয় উন্নয়ন সূচক. যা বাংলাদেশের মানুষ এরই মধ্যে ভোগ করতে শুরু করেছে এবং মেগা প্রকল্পগুলো শেষ করা গেলে তা আরও অর্থবহ এবং কার্যকর হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্লোভ ও সৎ জীবনযাপন এবং মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ও বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান; তার সততা আর মানবিক বিষয়টি আজ বিশ্ব স্বীকৃত। বাংলাদেশের মানুষের আস্থার জায়গাটি আসলে তাকে ঘিরে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের মন্ত্রীদের কিছু কিছু অসাবধানতামূলক উচ্চারণ এতে কিন্তু চিড় ধরাচ্ছে। গণমাধ্যমে এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদে সামান্য রদবদলের ঘটনা ঘটেছে। এটি হয়তো একটি রুটিন ব্যাপার। এ রদবদলের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের একজন ঝানু রাজনীতিক শাহজাহান কামাল পর্যটন ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বরাবরই আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী এবং তৃণমূলের ফোঁড় খাওয়া রাজনীতিক। মন্ত্রী হয়েই তিনি তার মন্ত্রণালয়কে লাভজনক করার ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, এটি করতে তিনি প্রয়োজনে তার রক্ত দেবেন। সন্দেহ নেই, তিনি মাঠপর্যায়ের একজন তেজস্বী, দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ এবং কর্তব্যনিষ্ঠ নেতা। কিন্তু মনে হয়েছে মন্ত্রী হয়েই তিনি যেন প্রথম দিনেই একটি মেঠো বক্তৃতা করলেন। আর পত্রপত্রিকা যথার্থই লিখল- ‘মাননীয় মন্ত্রী, রক্ত দেয়ার দরকার নেই পারলে কাজ করুন’। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুখেও একই কথার উচ্চারণ হতে শুনেছি। এ ধরনের উচ্চারণে আসলে একজন মন্ত্রীর কী বলা উচিত, কী বলা উচিত নয়- এগুলো নিয়ে কথা উঠে। বড় বড় কথা না বলে উত্তেজনা এড়িয়ে নেতা-মন্ত্রীদের ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করে যাওয়াই ভালো। এ সময় টেকনোক্রেট কোটায় নবনিযুক্ত আরেকজন মন্ত্রী হয়েছেন মোস্তাফা জব্বার, অত্যন্ত পরিচিত নাম। আমরা তাকে চিনি একজন বিনয়ী, সদালাপী এবং কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ হিসেবে। তাকে দেয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ দফতর। পত্রপত্রিকায় পীর হাবিবুর রহমানের লেখায় তার জাসদ রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের একটি পরিচয় পেলাম। তার পারঙ্গমতার সঙ্গে মিলিয়ে তাকে এ দফতরের মন্ত্রী বানানো যথার্থই বলে মনে করি। রাজনীতি, প্রজ্ঞা এবং প্রযুক্তির মিলন তার একজন সফল মন্ত্রী হওয়ার পথে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। কিন্তু মন্ত্রী হয়েই ৬ জানুয়ারি তিনি যে মন্তব্যটি করলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী একটি ডুবন্ত নৌকাকে জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন’ এ কথাটি যদি সত্যিও ধরে নেই; কিন্তু কথাটি কি এভাবে বলা ঠিক হয়েছে? এর ফলে মানুষ প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছে যে, আসলে কি ‘নৌকা’ ডুবন্ত পর্যায়ে চলে গেছে? অথবা তার পূর্বসূরিরা কি মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে ডুবন্ত অবস্থায় নিয়ে গিয়েছেন? বিরোধীপক্ষ কিন্তু প্রচারণার সুযোগ পাবে যে, মন্ত্রীরাই বলছেন- নৌকা ‘ডুবন্ত’। আমার বিবেচনায় এ ধরনের অসাবধানতামূলক উচ্চারণ সরকার এবং নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে; অন্তত বিরোধীপক্ষের লোকজনের কথাবার্তা বলার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। সম্প্রতি একটি বড় অসাবধানতামূলক উচ্চারণ বেরিয়ে এসেছে আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর মুখ থেকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে জানি। তার সম্পর্কে আমার ধারণা উচ্চ। তিনি একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক, ভালো মানুষ। এমনকি খালেদা জিয়াও ২ থেকে ৩ বছর আগে এই একই কথা বলে তার এক বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রীর তারিফ করেছিলেন। অতিকথনের বশবর্তী হয়ে কিছুদিন আগে তিনিও বলে বসলেন যে, সব মন্ত্রী চোর, তিনি নিজেও চোর। কবে কোন্ দিনের কথা এবং প্রেক্ষিত টেনে সবাইকে তিনি সহনশীল মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার উপদেশ দিলেন। এসবের ফলে তার প্রাণান্ত চেষ্টায় শিক্ষা এবং তার নিজের যতটুকু সুনাম (প্রশ্ন ফাঁস ঘটনা ছাড়া) তৈরি হয়েছিল, সবই তো এখন প্রশ্নের মুখে দাঁড়াল। সরকারেরও কিন্তু ভবিষ্যতে বড় একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানোর অবস্থা তৈরি হল। শিক্ষামন্ত্রী এরই মধ্যে প্রেস কনফারেন্স করে তার বক্তব্য পরিষ্কার করতে চেয়েছেন; কিন্তু তা কতটা পরিষ্কার হয়েছে, সেটা বলা কঠিন। এ সম্পর্কে ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে পীর হাবিব একটা বড় লেখা লিখেছিলেন। কোথাও আজকাল চুরি, দুর্নীতির খবর হলে লোকজন এখন বলাবলি করছে- সব মন্ত্রীই তো চোর, তারা নিজেরা স্বীকার করছে, তাহলে অন্যরা করবে না কেন? শুনেছি সংসদেও এ নিয়ে কথা উঠেছে এবং শিক্ষামন্ত্রীকে দুঃখ প্রকাশ করা বা ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের উচ্চারণের ডালপালার বিস্তার এবং জের কিন্তু খুবই সুদূরপ্রসারী। ১৯৮৪-৮৫ সালে রাজীব গান্ধী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন আবদুর রহমান আন্তুলে ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর নামে ‘ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভা প্রতিষ্ঠান’ বলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। একসময় মহারাষ্ট্রের একটি জেলা পর্যায়ের পত্রিকা একটি খবর ছাপল যে, এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তা কংগ্রেসের নির্বাচনী তহবিলে জোগান দেয়া হচ্ছে। সম্ভবত দিল্লিতেও এমন দু-একটি ঘটনা ঘটেছিল। ফলে বিরোধীপক্ষ প্রচারণা শুরু করল- ‘সারা ভারতমে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ মহারাষ্ট্রেও স্লোগান উঠল ‘মহারাষ্ট্রমে শোর হ্যায়, আন্তুলেজী চোর হ্যায়।’ সেসময়ে কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণের মধ্যে এ ঘটনাটিকেও বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অসাবধানতামূলকভাবে নেতা-মন্ত্রীদের মুখ থেকে, বিশেষ করে নির্বাচনী বছরে এমন কিছু উচ্চারিত হওয়া উচিত নয়, যার কারণে বড় কোনো মাশুল গুনতে হতে পারে।
ড. শেখ আবদুস সালাম : অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
skasalam@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.