রোহিঙ্গা ফেরাতে অ্যারেঞ্জমেন্ট- সময়সীমার ইঙ্গিত নেই
রাখাইনে
বর্বর নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমে
ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সই করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপি’ডতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল
হাসান মাহমুদ আলী ও দেশটির স্টেট কাউন্সেলর দপ্তরের মন্ত্রী চাও থিন সোয়ে
নিজ নিজ দেশের পক্ষে ওই দলিলে (ইন্সট্রুমেন্ট) সই করেন। ঢাকা ও নেপি’ডর
তরফে প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিপক্ষীয় ওই অ্যারেঞ্জমেন্ট বা
ইন্সটু্রমেন্টে সইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এতে রোহিঙ্গাদের
কতদিনের মধ্যে ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সে সংক্রান্ত কোনো সময়সীমা
নেই। যদিও ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, একটি সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে তারা
তাদের সর্বোচ্চ অ্যাফোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু মিয়ানমারকে রাজি করানো যায়নি।
দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের এটি প্রথম পদক্ষেপ বা ফার্স্ট স্টেপ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় দলিল প্রশ্নে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। তা হলো-রোহিঙ্গাদের ফেরানোর সংক্রান্ত বাস্তব পদক্ষেপের নিমিত্তে আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ কার্যকরী দল (জয়েন্ট ওয়ার্কিং) গ্রুপ গঠিত হবে। তবে এটির নেতৃত্বে কোনো লেভেল বা কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি থাকবেন তা জানানো হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দ্বিপক্ষীয় ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও বলা হয়েছে- আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন ধরে নেপি’ডতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-সচিবসহ সফররত বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মিয়ানমারের মন্ত্রী, সচিবসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। সেখানে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির সঙ্গেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দীর্ঘ বৈঠক হয়। সিরিজ সেই আলোচনা শেষে দ্বিপক্ষীয় দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়। ওই দলিলের বিস্তারিত প্রকাশ না হলেও ঢাকা ও নেপি’ডর সূত্রে যে খবরাখবর বেরিয়েছে তাতে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে বিশেষ করে সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার তাতে রাজি হয়নি। তারা ১৯৯২ সালে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার চেতনায় অনেকটা সেই আদলেই নতুন দলিলটি সই করেছে। সেখানে জাতিসংঘের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা রাখা হয়নি। তবে দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনায় ‘প্রয়োজনে ইউএনএইচসিআরকে কাজে লাগানো’র বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক বছরের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার দাবি তুলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে শুধু তাদের ফেরানোর কথা বলেছে মিয়ানমার। কিন্তু এখানে আগে থেকে যে ৪ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের কি হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংকট সমাধানে দ্বিপক্ষীয় যে ব্যবস্থা বা অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হলো তা কোনো পক্ষ না মানলে কি হবে? বা এটি মানার বাধ্যবাধকতার বিষয়েও সেখানে স্পষ্ট কোনো ধারা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সই হওয়া দলিল সংক্রান্ত রিপোর্টে বিবিসি বাংলা বলছে, দ্বিপক্ষীয় ওই অ্যারেঞ্জমেন্টের ফলে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আগামী দু’মাসের মধ্যে শুরু হবে। রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দুই দেশের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে যে আলোচনা চলছে এটি তারই ফল। ওই দলিলকে ঢাকা ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অফ ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ বলে আখ্যা দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতায় গত আড়াই মাসে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে আগে থেকে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।
দ্বিপক্ষীয় দলিল সইয়ের বিষয়ে নেপি’ডর বিবৃতিতে বলা হয়- বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঘটবে তাদের পরিচয় যথাযথভাবে যাচাই করার পর। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালে দুই দেশের তরফে যে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা এবং নীতিমালা ছিল। রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধিতা করে মিয়ানমারের গতকালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সমস্যা শান্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ সই হওয়া সমঝোতাকে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ বা দু’পক্ষের বিজয় বলে বর্ণনা করেছে।
মন্ত্রী বললেন এখন পরের স্টেপে আমাদের যেতে হবে: দলিল সইয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নেপি’ডতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বলেন, এটি আমাদের ফার্স্ট স্টেপ বা প্রথম পদক্ষেপ। এখন দুই দেশকে ‘পরের স্টেপে’ যেতে হবে। মন্ত্রী বলেন- কাজটা শুরু করতে হবে। বিস্তারিত ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’-এর মধ্যে আছে। আমরা ঢাকায় ফিরে বিস্তারিত জানাবো। কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ হবে সেই সময়সীমা পাওয়া যায়নি মন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, এখন কাজটা শুরু করতে হবে। ওখানে বাড়িঘরগুলো জ্বালিয়ে সমান করে দিয়েছে। সেখানে বাড়িঘর তৈরি করতে হবে।’ এদিকে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক দপ্তরের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট চিং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “বাংলাদেশে ফরম (রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিবন্ধন ফরম) পূরণ করে আমাদের ফেরত পাঠালে যত দ্রুত সম্ভব আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে আনতে চাই।” মিয়ারমারের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিন্ট কিয়েংয়ের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার। তবে প্রত্যাবাসনের আগে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নাম তালিকাসহ নিবন্ধন সম্পন্ন হতে হবে। ইয়াঙ্গুনস্থ আল জাজিজার সাংবাদিক স্কট হেইল্ডারের মতে, দ্বিপক্ষীয় ওই দলিলটি আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই সই করেছে মিয়ানমার। যে চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে ‘কিছুটা উন্নতি’ প্রদর্শন করার এটিই সুযোগ। আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ পুরো বিষয়টি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ ঠিক কি পরিমাণ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। রোহিঙ্গাদের কয়েকশ’ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ওই সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে। এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় দেশের সরকার বলছে, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারের ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনী পাল্টা প্রমাণ হাজির করতে পারে।
রাখাইনের জন্য বাংলাদেশের ৩ অ্যাম্বুলেন্স উপহার: এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মন্ত্রী মাহমুদ আলীর দ্বিপক্ষীয় সফরে মিয়ানমারের সঙ্গে আরো ডকুমেন্ট সই ও হস্তান্তর হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ১৯৯৮ সালে সই হওয়া নাফ নদের উত্তরের বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্থল সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তির অনুমোদন সংক্রান্ত ইন্সট্রুমেন্ট। দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা ওই ‘ইন্ট্রুমেন্ট অব রেটিফিকেশন’ মিয়ানমারের মন্ত্রী চাও থিন সোয়ের সঙ্গে বিনিময় করেন মন্ত্রী মাহমুদ আলী। সেখানে নাফ নদের সীমানা নির্দিষ্টকরণে ২০০৭ সালে সই হওয়া চুক্তির অধীন একটি প্রটোকলও সই হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- ২৩শে নভেম্বর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির সঙ্গে মন্ত্রী মাহমুদ আলীর সাক্ষাৎ হয়েছে। যেখানে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি এবং বিসিআইএম’র আওতায় যোগাযোগ কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া ওই দিনের শুরুতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উ উইন মিন্ট আয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের তরফে উপহার হিসেবে রাখাইন রাজ্যের জন্য ৩টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন।
দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের এটি প্রথম পদক্ষেপ বা ফার্স্ট স্টেপ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় দলিল প্রশ্নে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। তা হলো-রোহিঙ্গাদের ফেরানোর সংক্রান্ত বাস্তব পদক্ষেপের নিমিত্তে আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ কার্যকরী দল (জয়েন্ট ওয়ার্কিং) গ্রুপ গঠিত হবে। তবে এটির নেতৃত্বে কোনো লেভেল বা কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি থাকবেন তা জানানো হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দ্বিপক্ষীয় ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও বলা হয়েছে- আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন ধরে নেপি’ডতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-সচিবসহ সফররত বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মিয়ানমারের মন্ত্রী, সচিবসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। সেখানে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির সঙ্গেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দীর্ঘ বৈঠক হয়। সিরিজ সেই আলোচনা শেষে দ্বিপক্ষীয় দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়। ওই দলিলের বিস্তারিত প্রকাশ না হলেও ঢাকা ও নেপি’ডর সূত্রে যে খবরাখবর বেরিয়েছে তাতে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে বিশেষ করে সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার তাতে রাজি হয়নি। তারা ১৯৯২ সালে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার চেতনায় অনেকটা সেই আদলেই নতুন দলিলটি সই করেছে। সেখানে জাতিসংঘের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা রাখা হয়নি। তবে দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনায় ‘প্রয়োজনে ইউএনএইচসিআরকে কাজে লাগানো’র বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক বছরের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার দাবি তুলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে শুধু তাদের ফেরানোর কথা বলেছে মিয়ানমার। কিন্তু এখানে আগে থেকে যে ৪ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের কি হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংকট সমাধানে দ্বিপক্ষীয় যে ব্যবস্থা বা অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হলো তা কোনো পক্ষ না মানলে কি হবে? বা এটি মানার বাধ্যবাধকতার বিষয়েও সেখানে স্পষ্ট কোনো ধারা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সই হওয়া দলিল সংক্রান্ত রিপোর্টে বিবিসি বাংলা বলছে, দ্বিপক্ষীয় ওই অ্যারেঞ্জমেন্টের ফলে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আগামী দু’মাসের মধ্যে শুরু হবে। রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দুই দেশের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে যে আলোচনা চলছে এটি তারই ফল। ওই দলিলকে ঢাকা ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অফ ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ বলে আখ্যা দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতায় গত আড়াই মাসে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে আগে থেকে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।
দ্বিপক্ষীয় দলিল সইয়ের বিষয়ে নেপি’ডর বিবৃতিতে বলা হয়- বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঘটবে তাদের পরিচয় যথাযথভাবে যাচাই করার পর। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালে দুই দেশের তরফে যে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা এবং নীতিমালা ছিল। রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধিতা করে মিয়ানমারের গতকালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সমস্যা শান্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ সই হওয়া সমঝোতাকে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ বা দু’পক্ষের বিজয় বলে বর্ণনা করেছে।
মন্ত্রী বললেন এখন পরের স্টেপে আমাদের যেতে হবে: দলিল সইয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নেপি’ডতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বলেন, এটি আমাদের ফার্স্ট স্টেপ বা প্রথম পদক্ষেপ। এখন দুই দেশকে ‘পরের স্টেপে’ যেতে হবে। মন্ত্রী বলেন- কাজটা শুরু করতে হবে। বিস্তারিত ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’-এর মধ্যে আছে। আমরা ঢাকায় ফিরে বিস্তারিত জানাবো। কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ হবে সেই সময়সীমা পাওয়া যায়নি মন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, এখন কাজটা শুরু করতে হবে। ওখানে বাড়িঘরগুলো জ্বালিয়ে সমান করে দিয়েছে। সেখানে বাড়িঘর তৈরি করতে হবে।’ এদিকে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক দপ্তরের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট চিং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “বাংলাদেশে ফরম (রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিবন্ধন ফরম) পূরণ করে আমাদের ফেরত পাঠালে যত দ্রুত সম্ভব আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে আনতে চাই।” মিয়ারমারের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিন্ট কিয়েংয়ের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার। তবে প্রত্যাবাসনের আগে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নাম তালিকাসহ নিবন্ধন সম্পন্ন হতে হবে। ইয়াঙ্গুনস্থ আল জাজিজার সাংবাদিক স্কট হেইল্ডারের মতে, দ্বিপক্ষীয় ওই দলিলটি আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই সই করেছে মিয়ানমার। যে চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে ‘কিছুটা উন্নতি’ প্রদর্শন করার এটিই সুযোগ। আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ পুরো বিষয়টি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ ঠিক কি পরিমাণ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। রোহিঙ্গাদের কয়েকশ’ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ওই সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে। এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় দেশের সরকার বলছে, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারের ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনী পাল্টা প্রমাণ হাজির করতে পারে।
রাখাইনের জন্য বাংলাদেশের ৩ অ্যাম্বুলেন্স উপহার: এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মন্ত্রী মাহমুদ আলীর দ্বিপক্ষীয় সফরে মিয়ানমারের সঙ্গে আরো ডকুমেন্ট সই ও হস্তান্তর হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ১৯৯৮ সালে সই হওয়া নাফ নদের উত্তরের বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্থল সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তির অনুমোদন সংক্রান্ত ইন্সট্রুমেন্ট। দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা ওই ‘ইন্ট্রুমেন্ট অব রেটিফিকেশন’ মিয়ানমারের মন্ত্রী চাও থিন সোয়ের সঙ্গে বিনিময় করেন মন্ত্রী মাহমুদ আলী। সেখানে নাফ নদের সীমানা নির্দিষ্টকরণে ২০০৭ সালে সই হওয়া চুক্তির অধীন একটি প্রটোকলও সই হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- ২৩শে নভেম্বর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির সঙ্গে মন্ত্রী মাহমুদ আলীর সাক্ষাৎ হয়েছে। যেখানে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি এবং বিসিআইএম’র আওতায় যোগাযোগ কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া ওই দিনের শুরুতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উ উইন মিন্ট আয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের তরফে উপহার হিসেবে রাখাইন রাজ্যের জন্য ৩টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন।
No comments