স্মৃতি হাতড়ে সময় কাটছে ৩ বাংলাদেশি পরিবারের
গুলশানে অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশ কাঁপানো হামলায় নির্মমভাবে যে ২০ জনকে খুন করা হয় তাদের তিনজনই বাংলাদেশের অভিজাত পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তানও রয়েছে, তার নাম অবিন্তা কবির। বাকি দু’জন হচ্ছেন- ইশরাত আখন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সংঘটিত এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর তিন পরিবারের সময় কাটছে শোক আর স্মৃতিচারণে। স্বজনদের একটাই চাওয়া- বাংলার মাটিতে আর যেন হলি আর্টিজানের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। স্বাভাবিক হতে পারছেন না ইশরাতের মা : তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন ছিলেন ইশরাত আখন্দ (৪২)। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে ইশরাত ছিলেন সবার আদরের। কথা হয় ইশরাতের মামা হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে। ভাগ্নির স্মৃতিচারণ করে যুগান্তরকে বলেন, শিল্পকলার প্রতি অসম্ভব টান ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল ইশরাতের। তার ব্রত ছিল দিনে অন্তত একটি ভালো কাজ করার। পেশাগত জীবনে দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সবশেষ তিনি একটি গার্মেন্ট কারখানার মানবসম্পদ শাখার পরিচলক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি হোটেল ওয়েস্টিন, বিজিএমইএ, ব্র্যাকনেট ও গ্রামীণফোনে কাজ করেছেন। ইশরাতের ভাই আবদুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ যুগান্তরকে বলেন, ‘এক বছর আগের ঘটনা হলেও আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যেন গতকালের ঘটনা। ওকে আমরা ভীষণ মিস করি।
ইশরাতের কথা মনে হলেই ডুকরে কাঁদেন ৮৪ বছর বয়সী মা। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাই না। আর কোনো ভাই যেন তার বোনকে, কোনো মা যেন তার সন্তানকে এভাবে না হারায়।’ ইশরাতের বাবা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মের সাবেক সিনিয়র অ্যাকাউন্টেন্ট আবদুল মজিদ মারা গেছেন ১০ বছর আগে। ইশরাতের বড় ভাই মহাকাশ বিজ্ঞান ভবনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওমর হায়াৎ আখন্দও মারা গেছেন আগেই। ইশরাতের মেঝো ভাই আলী হাসান আখন্দ এক সময় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সরকারি চাকরি করলেও এখন ব্যবসা করছেন। ছোট ভাই আবদুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ইশরাতের ভাই আবদুল্লাহ ইউসুফ বলেন, মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাসের পর ইশরাত অস্ট্রেলিয়ায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ ঘটে নেত্রকোনার মেয়ে ইশরাতের। পরে দীর্ঘদিন গুলশানের একটি বাসায় একাই থাকতেন। কথা হয় ইশরাতের বান্ধবী নাদিরা ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, মানুষকে অনুপ্রাণিত করার অসম্ভব ক্ষমতা ছিল ইশরাতের। সে বলত, দেশের জন্য অনেক কিছু করার আছে। ইশরাতের বন্ধু শাখাওয়াত বলছিলেন, আবেগপ্রবণ ইশরাত সহজে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। নানার মতো হতে চেয়েছিলেন ফারাজ : দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ফারাজ আইয়াজ হোসেন (২০) যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন। ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজের বাবা ওয়াকার হোসেন ব্যবসায়ী। মা সিমিন হোসেন ট্রান্সকম গ্রুপের উচ্চ পদে রয়েছেন। বড় ভাই যারেফ আইয়াজ হোসেনও ট্রান্সকম গ্রুপে কর্মরত। রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ২০১৪ সালে ‘এ-লেভেল’ পাস করার পর পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমান। গ্রীষ্মের ছুটিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে ঢাকায় আসেন। ১ জুলাই বন্ধু অবিন্তা ও তারিশির সঙ্গে হলি আর্টিজানে নৈশভোজে গিয়েই জঙ্গি হানার মুখে পড়েন। তারিশি ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। কর্পোরেট জগতে অবদান রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন ছিল ফারাজের। বুধবার বিকালে কথা হয় ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক ফখরুজ্জামানের সঙ্গে। ফারাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ফারাজের বাবা দেশের বাইরে। মা বুধবার বাইরে থেকে দেশে এসেছেন। ফখরুজ্জামান জানান, ফারাজ প্রায়ই বলতেন ‘আমি বড় হয়ে নানাভাইয়ের মতো হব। বিশাল কর্পোরেট হাউস গড়ে তুলব।’ খেলাধুলার প্রতি ভীষণ অনুরাগ ছিল তার। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে লেখাপড়া করার সময় তিনি ভলিবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। ক্রিকেটের প্রতিও ছিল তার অসম্ভব ঝোঁক। ফারাজের স্মৃতিচারণ করে তার বন্ধু রিফাত মুরসালিন বলেন, অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী ফারাজ ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। সব সময় দায়িত্ব নিতে ভালোবাসতেন। সহসা কাউকে কষ্ট দিতে চাইতেন না।
দেশপ্রেমই কাল হল অবিন্তার : মা-বাবার একমাত্র সন্তান অবিন্তা কবির (১৮) ছিলেন বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক। বাবা এহসানুল কবির যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মা রুবা আহমেদ এলিগ্যান্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। আমেরিকার ইমোরি অক্সফোর্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অবিন্তা ঘটনার তিন দিন আগে ছুটিতে ঢাকায় আসেন। ১ জুলাই ইফতারের পর ফারাজ ও তারিশির সঙ্গে দেখা করতে হলি আর্টিজানে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হন। এলিগ্যান্ট গ্রুপের জিএম কর্নেল (অব.) আবদুল্লাহ হিল শামীম যুগান্তরকে জানান, অবিন্তাকে হারানোর পর থেকেই দৃশ্যত বাকরুদ্ধ তা মা রুবা আহমেদ। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালালেও নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া তার কণ্ঠস্বর শোনা যায় না। ‘ম্যাডামের’ (রুবার) এক সময়ের হাসিভরা মুখটি এখন সব সময়ই মলিন। কর্নেল (অব.) শামীম জানান, লেখাপড়া শেষে পারিবারিক ব্যবসায় মনোযোগী হতে চেয়েছিলেন অবিন্তা। বাংলাদেশকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। বিদেশে পড়ালেখা করলেও মন পড়ে থাকত দেশে। তার হোস্টেল কক্ষে লাল-সবুজের বিরাট পতাকা সেঁটে রাখতেন তিনি। সুযোগ পেলেই চলে আসতেন দেশে। হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের আগে তার মা আমেরিকা যান। অবিন্তাকে আনতে চাইছিলেন না। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে অবিন্তাকে নিয়ে দেশে ফেরেন। দেশে পা রাখার তিন দিনের মাথায় লাশ হতে হল অবিন্তাকে। দেশের প্রতি অস্বাভাবিক টানই কাল হল অবিন্তার। বাস্কেটবলের প্রতি তার ঝোঁক ছিল অসম্ভব। দেশে লেখাপড়া করার সময় তিনি তার প্রতিষ্ঠানের বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে দ্রুত দেশে ফিরে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ মানুষদের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন অবিন্তা। স্বপ্ন ছিল একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার। অবিন্তার খালা জিনাত ইকরামুল্লাহ জানান, মা রুবা আহমেদ ছিলেন অবিন্তার রোল মডেল। মায়ের কাছ থেকেই সে কঠোর পরিশ্রম আর নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে শিখেছিল। উদারতাকে উপহার হিসেবে দেখত অবিন্তা।
দেশপ্রেমই কাল হল অবিন্তার : মা-বাবার একমাত্র সন্তান অবিন্তা কবির (১৮) ছিলেন বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক। বাবা এহসানুল কবির যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মা রুবা আহমেদ এলিগ্যান্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। আমেরিকার ইমোরি অক্সফোর্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অবিন্তা ঘটনার তিন দিন আগে ছুটিতে ঢাকায় আসেন। ১ জুলাই ইফতারের পর ফারাজ ও তারিশির সঙ্গে দেখা করতে হলি আর্টিজানে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হন। এলিগ্যান্ট গ্রুপের জিএম কর্নেল (অব.) আবদুল্লাহ হিল শামীম যুগান্তরকে জানান, অবিন্তাকে হারানোর পর থেকেই দৃশ্যত বাকরুদ্ধ তা মা রুবা আহমেদ। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালালেও নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া তার কণ্ঠস্বর শোনা যায় না। ‘ম্যাডামের’ (রুবার) এক সময়ের হাসিভরা মুখটি এখন সব সময়ই মলিন। কর্নেল (অব.) শামীম জানান, লেখাপড়া শেষে পারিবারিক ব্যবসায় মনোযোগী হতে চেয়েছিলেন অবিন্তা। বাংলাদেশকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। বিদেশে পড়ালেখা করলেও মন পড়ে থাকত দেশে। তার হোস্টেল কক্ষে লাল-সবুজের বিরাট পতাকা সেঁটে রাখতেন তিনি। সুযোগ পেলেই চলে আসতেন দেশে। হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের আগে তার মা আমেরিকা যান। অবিন্তাকে আনতে চাইছিলেন না। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে অবিন্তাকে নিয়ে দেশে ফেরেন। দেশে পা রাখার তিন দিনের মাথায় লাশ হতে হল অবিন্তাকে। দেশের প্রতি অস্বাভাবিক টানই কাল হল অবিন্তার। বাস্কেটবলের প্রতি তার ঝোঁক ছিল অসম্ভব। দেশে লেখাপড়া করার সময় তিনি তার প্রতিষ্ঠানের বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে দ্রুত দেশে ফিরে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ মানুষদের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন অবিন্তা। স্বপ্ন ছিল একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার। অবিন্তার খালা জিনাত ইকরামুল্লাহ জানান, মা রুবা আহমেদ ছিলেন অবিন্তার রোল মডেল। মায়ের কাছ থেকেই সে কঠোর পরিশ্রম আর নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে শিখেছিল। উদারতাকে উপহার হিসেবে দেখত অবিন্তা।
No comments