এক বছরেও কান্না থামেনি সাইফুলের পরিবারের
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হন রেস্তোরাঁর পিজার শেফ সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ করার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- পরিবারের সঙ্গে ঈদ তো দূরের কথা, বাপ-দাদার বাড়ির মাটিটুকুও তার ভাগ্যে জোটেনি। নিহত সাইফুলের লাশ শনাক্ত হওয়ার আগেই পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী বিভিন্ন মিডিয়াতে সাইফুলকে জঙ্গি বলে প্রচার করা হয়। পরে তদন্ত হলেও সাইফুলের লাশ আর পরিবারকে ফেরত দেয়া হয়নি। ওই ঘটনার পর দীর্ঘ এক বছরেও তার পরিবারের কান্না থামেনি। তিন সন্তানকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তার স্ত্রী সোনিয়ার। জানা গেছে, সাইফুলের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে। তার বাবা মৃত আবুল হাসেম চৌকিদার। নিহত হওয়ার মাত্র দেড় বছর আগে হলি আর্টিজানে কাজে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রেস্তোরাঁয় পোশাক পরিহিত অবস্থায় জঙ্গি হামলায় নিহত হন তিনি। নিহত হওয়ার পর থেকে পুলিশ সাইফুলকে জঙ্গি বলে চিহ্নিত করে। পুলিশের তথ্যমতে বিভিন্ন মিডিয়াও তাকে জঙ্গি দলের সদস্য বলে প্রচার করে। পরে পরিবারের লোকজন ঢাকায় গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করে এবং দাবি করে সাইফুল জঙ্গি নয়, সে রেস্তোরাঁর পিজার সেফ। এরপর শুরু হয় নানা তদন্ত। ডিএনএ টেস্টও করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নড়িয়া থানা থেকে সাইফুলের জন্য প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়।
কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। ৩ মাস তদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সাইফুলের লাশ নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে দাফন করা হয়। সেই থেকে পরিবারের আহজারি আরও বেড়ে যায়। ঈদে সরেজমিন সাইফুলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সোনিয়া তার দুই মেয়ে সামিয়া (১০) ও ইমলি (৮) এবং ৮ মাসের শিশু পুত্র হাসানকে নিয়ে আহজারি করছেন। ঈদে সন্তানদের নতুন জামা-কাপড় দিতে পারেননি। কেউ দেয়নি সেমাই-চিনিও। অনাহারে-অর্ধাহারে কোনোভাবে দিন কাটছে তাদের। এদিকে কান্না থামেনি সাইফুলের মা সমেরা বেগমেরও (৭০)। তার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। লাশ ফেরত না পাওয়ার আক্ষেপ করতে থাকেন তিনি। সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া জানান, ১ জুলাই শুক্রবার বিকালে তার সঙ্গে শেষ কথা হয় সাইফুলের। এরপর শুনতে পান তিনি মারা গেছেন। সোনিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখন সন্তানরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? আমি পরের ওপর ভর করে কতদিন চলব? কি করে বাঁচবো? সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে কোনো সহায়তা করা হচ্ছে না।’ সাইফুলের মা সমেরা বেগম বলেন, ‘আমার সাইফুল নিরপরাধ। সে রেস্তোরাঁর পোশাক পরিহিত অবস্থায় মারা গেছে। ডিএনএ টেস্ট করা হয়, তারপরও তারা আমার ছেলের লাশ ফেরত দেয়নি।’
No comments