‘বুদ্ধিকে বানিয়ে প্রাণের ক্রীতদাস...’
আমি ‘এবাদতনামা’ সিরিজের কবিতা কখন লেখা শুরু করি ঠিক মনে নেই। তবে আশির দশকে কবিতা সম্পর্কে আমি নতুনভাবে ভাবনাচিন্তা শুরু করি। কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও ‘এবাদতনামা’র মূল বিষয় ছিল প্রেম বা আশেকি। স্নায়ুযুদ্ধের প্রবল প্রকোপে ধর্মপন্থীদের মধ্যে এ বিশ্বাস দৃঢ়মূল ছিল যে, কমিউনিস্ট মাত্রই নাস্তিক এবং কমিউনিজম নাস্তিকদের মতাদর্শ। এটা ঠিক যে ‘কমিউনিজম’ নামে বাংলাদেশে আসলে নাস্তিকতারই চর্চা হতো। দর্শন বা জ্ঞানগত তর্ক হিসেবে নাস্তিকতা/আস্তিকতার তর্ক অতি দীর্ঘ, বিস্তৃত ও নানামুখী। মার্কসেরও আগে ইমানুয়েল কান্ট দেখিয়েছিলেন, যুক্তিতর্ক দ্বারা ঈশ্বর আছে কী নাই প্রমাণ বা অপ্রমাণ মানে ভুল বিষয়ের ওপর বুদ্ধির ক্যাটাগরি খাটানোর চেষ্টা। ‘বিশুদ্ধ বুদ্ধির পর্যালোচনা’ (Critique of Pure Reason) ছাড়াও তার আরেকটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘নিছক বুদ্ধির সীমানার মধ্যে ধর্মের বিচার’ (Religion within the limit of Bare Reason)। বলাবাহুল্য, যেখানে মার্কসকেই ভালোভাবে পড়া হয়নি, সেক্ষেত্রে কান্ট কিংবা হেগেল পড়া তো বহু দূরের কথা। ওইগুলো বুর্জোয়া ভাবাদর্শ হিসেবে পরিত্যাজ্য। কান্টের কথা সরলভাবে বললে দাঁড়ায় এরকম যে, বুদ্ধির দ্বারা ঈশ্বর আছে কী নাই কখনই সাব্যস্ত করা না গেলেও নীতি-নৈতিকতা কিংবা কোনো পরম আদর্শ অনুমান করে ব্যক্তির সামাজিক ব্যবহার এবং মনুষ্য সমাজ পরিচালনার জন্য সমাজে ধর্মের নানা ভূমিকা থাকতেই পারে। ইমানুয়েল কান্টের বুদ্ধির সীমা ও বুদ্ধির বিপরীতে ঈশ্বরের ধারণার আদর্শিক প্রয়োজনীয়তা এবং ধর্মের ভূমিকা বিচারের মধ্য দিয়ে ধর্ম ব্যাপারে বুদ্ধির ক্ষেত্র থেকে বোঝাবুঝির বিস্তর নতুন সূত্র রয়েছে। যেমন নীতি-নৈতিকতা থেকে ধর্মের পার্থক্য, ভালোমন্দের ধারণা ইত্যাদি।
কিন্তু বাংলাদেশে এসব খবর হিসেবেও পৌঁছায়নি। অথচ ‘মুক্তবুদ্ধি’ নামে বুদ্ধির বিকট বিকার আমরা বাংলাদেশে দেখি। যার ফলে রাজনীতিতে আস্তিক/নাস্তিকের বিভাজন প্রকট ও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আছে, যাকে মোকাবেলা কঠিন হয়ে উঠেছে। এর পেছনে সত্যিকার অর্থে বুদ্ধি বা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বুদ্ধির বিকার বা চিন্তাহীনতা মারাত্মক অসুখ হিসেবে দেখা দিয়েছে সেটা একটা দিক; কিন্তু বিকৃত বুদ্ধি সমাজে ‘মুক্তচিন্তা’ হিসেবে সদর্পে হাজির হওয়াটাই বিপজ্জনক। যত দ্রুত সম্ভব এই বিকার কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাও আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। ‘এবাদতনামা’ সিরিজের কবিতা লেখার সময় কাব্যসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের বিকারগ্রস্ত বুদ্ধির বিপদ মাথায় ছিল সন্দেহ নাই। কবিতাগুলো ‘আল্লাহর মাশুক’কে উৎসর্গ করেছিলাম। ‘মোমিনের হাতে’ পদ্যগুলো পৌঁছে দিতে গিয়ে বলেছিলাম, এটা ‘মোমিনের কাছে কবির কর্জ শোধ’ করার একটা উসিলা। কিন্তু মোমিনের কাছে অভিযোগ ছিল, নাস্তিক তো বুর্জোয়াদের মধ্যে বিস্তর আছে, কিন্তু মোমিন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে এত ক্ষিপ্ত কেন? কমিউনিস্ট তো মানুষ ভালোবাসে, আর মানুষ যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসে তাহলে ঈশ্বরের সৃষ্টি সেই মানুষের উসিলায় মানুষের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের প্রেমে পড়া কমিউনিস্টের পক্ষেও সম্ভব। এগুলো অবশ্য কবিতার আকুতি। ফেলে দেয়া যায়, আবার আশেকানদের প্রাণে বিঁধে যেতেও পারে। কবিতার ভাষা এরকমই। কবিতা এভাবেই কথা বলে। বুদ্ধির কাছে কাব্যের আবেদন গৌণ, কবিতাকে হৃদয়ের কাছে পেশ করাই কবিদের রীতি; বিশেষত মানুষ, সাধারণ মানুষ, অতি সাধারণ মানুষই কবির কাছে মুখ্য। তাই লিখেছিলাম :
‘ফলে আমি লিখিয়াছি এই পদ্য প্রেমে ও আশেকে
লিখিয়াছি বুদ্ধিকে বানিয়ে প্রাণের ক্রীতদাস
দেখি ফুল ফোটে কিনা, দেখি ফল ধরে কি মুকুলে
মনুষ্যের ইঞ্জিনে দেখি সাফ হয় কি নিঃশ্বাস!’
‘এবাদতনামা’ ক্ষুদে পুস্তিকা হিসেবে বেরিয়েছিল ১৯৯০ সালে। ফুল ফুটল কিনা, কিংবা কোথাও ফল ধরল কিনা জানি না। কিন্তু আজ যে কারণে কথাটা মনে পড়ল সেটা কাব্য নয়, আইন ও রাজনীতি।
জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি (?)
অবাক হয়েছিলাম। ‘এবাদতনামা’ কবিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটায়। কিন্তু সম্ভবত কোনো এক জুন মাসের ভ্যাপসা গরমের মধ্যে যিনি হেঁটে এসে ‘এবাদতনামা’র জন্য আমাকে তারিফ করতে এসেছিলেন তিনি একজন সাবেক বিচারক, আইনবিদ ও লেখক। গাজী শামছুর রহমান। এরকম একজন মানুষ আমার কবিতার জন্য আমাকে তারিফ করতে বাসায় আসবেন সেটা ছিল আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। তখন অবশ্য আমি বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে পত্রিকায় কিছু লেখালেখি করছি। বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর তার ভাষ্য আমার কাছে ছিল। আমি প্রয়োজনে তা ব্যবহার করেছি। তিনি সেসব লেখার কিছু কিছু পড়েছেন বটে, কিন্তু তার আগ্রহ ছিল ‘এবাদতনামা’য়। হয়তো তার কাছে ‘এবাদতনামা’ নতুন ধরনের কবিতা মনে হয়েছে। ভাগ্য ভালো যে, গাজী শামছুর রহমান কবি ছিলেন না। ‘বুদ্ধিকে প্রাণের ক্রীতদাস’ বানানোর যে প্রস্তাব কাব্যে করেছিলাম, সেই সহজ কথা সহজভাবেই তিনি বুঝেছিলেন। সেটাই তাকে বিপুলভাবে আগ্রহী করে তুলেছে। আর, সত্য বলতে কী, ঠিক এটাকে কবি হিসেবে পাঠকের কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সংবিধান বা আইনের ক্ষেত্রে ‘বুদ্ধিকে প্রাণের ক্রীতদাস বানানোর’ কোনো বিশেষ অর্থ আছে কি? তা নিয়েই আজ ভাবছিলাম। বাংলাদেশের সংবিধানের ভাষ্য তৈরি করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘বিংশ শতাব্দীতে প্রায় সকল সভ্য দেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাইয়াছে যে নিরংকুশ ক্ষমতা কোনো একক ব্যক্তি বা একক সংস্থাকে দেওয়া যায় না। নির্বাহী কর্তৃত্বকে তো নয়ই, এমনকি জননির্বাচিত সংসদ বা পরম সম্মানিত বিচার বিভাগকেও সকল বাধামুক্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করা যায় না।
‘ফলে আমি লিখিয়াছি এই পদ্য প্রেমে ও আশেকে
লিখিয়াছি বুদ্ধিকে বানিয়ে প্রাণের ক্রীতদাস
দেখি ফুল ফোটে কিনা, দেখি ফল ধরে কি মুকুলে
মনুষ্যের ইঞ্জিনে দেখি সাফ হয় কি নিঃশ্বাস!’
‘এবাদতনামা’ ক্ষুদে পুস্তিকা হিসেবে বেরিয়েছিল ১৯৯০ সালে। ফুল ফুটল কিনা, কিংবা কোথাও ফল ধরল কিনা জানি না। কিন্তু আজ যে কারণে কথাটা মনে পড়ল সেটা কাব্য নয়, আইন ও রাজনীতি।
জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি (?)
অবাক হয়েছিলাম। ‘এবাদতনামা’ কবিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটায়। কিন্তু সম্ভবত কোনো এক জুন মাসের ভ্যাপসা গরমের মধ্যে যিনি হেঁটে এসে ‘এবাদতনামা’র জন্য আমাকে তারিফ করতে এসেছিলেন তিনি একজন সাবেক বিচারক, আইনবিদ ও লেখক। গাজী শামছুর রহমান। এরকম একজন মানুষ আমার কবিতার জন্য আমাকে তারিফ করতে বাসায় আসবেন সেটা ছিল আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। তখন অবশ্য আমি বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে পত্রিকায় কিছু লেখালেখি করছি। বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর তার ভাষ্য আমার কাছে ছিল। আমি প্রয়োজনে তা ব্যবহার করেছি। তিনি সেসব লেখার কিছু কিছু পড়েছেন বটে, কিন্তু তার আগ্রহ ছিল ‘এবাদতনামা’য়। হয়তো তার কাছে ‘এবাদতনামা’ নতুন ধরনের কবিতা মনে হয়েছে। ভাগ্য ভালো যে, গাজী শামছুর রহমান কবি ছিলেন না। ‘বুদ্ধিকে প্রাণের ক্রীতদাস’ বানানোর যে প্রস্তাব কাব্যে করেছিলাম, সেই সহজ কথা সহজভাবেই তিনি বুঝেছিলেন। সেটাই তাকে বিপুলভাবে আগ্রহী করে তুলেছে। আর, সত্য বলতে কী, ঠিক এটাকে কবি হিসেবে পাঠকের কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সংবিধান বা আইনের ক্ষেত্রে ‘বুদ্ধিকে প্রাণের ক্রীতদাস বানানোর’ কোনো বিশেষ অর্থ আছে কি? তা নিয়েই আজ ভাবছিলাম। বাংলাদেশের সংবিধানের ভাষ্য তৈরি করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘বিংশ শতাব্দীতে প্রায় সকল সভ্য দেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাইয়াছে যে নিরংকুশ ক্ষমতা কোনো একক ব্যক্তি বা একক সংস্থাকে দেওয়া যায় না। নির্বাহী কর্তৃত্বকে তো নয়ই, এমনকি জননির্বাচিত সংসদ বা পরম সম্মানিত বিচার বিভাগকেও সকল বাধামুক্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করা যায় না।
তাহাদের প্রত্যেকের হাতে যথেষ্ট অধিকার ও ক্ষমতা দিতে হইবেই। না হইলে তাহারা কাজ করিতে পারিবে না।’ বলা বাহুল্য, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেপারেশান অব পাওয়ার’ নীতিকেই আদর্শ জ্ঞান করেছেন। এটাও মানতেন যে, ‘কিন্তু কোনো স্থানে তাহাদের হাতকে সংযত করিবার অধিকার থাকা আবশ্যক।’ কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের হাত সংযত করার অধিকার কার থাকবে? তার উত্তর, ‘সেই অধিকার আছে সংবিধানের। সংবিধান যাহাকে যতখানি ক্ষমতা বা অধিকার দিয়াছে সেই ক্ষমতার মধ্য হইতেই কাজ করিতে হয়।’ এই যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে তিনি সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, ‘আমাদের দেশে তাই কেহ সার্বভৌম নয়, না সংসদ, না রাষ্ট্রপতি, না বিচার বিভাগ। সার্বভৌম হইতেছে একমাত্র সংবিধান। বস্তুত সকল রাষ্ট্রীয় অংশের জনক হইতেছে সংবিধান।’ ঠিক আছে, সংবিধানের কাছেই বিভিন্ন বিভাগকে সংযত করার অধিকার থাকল। কিন্তু সেই অধিকার বাস্তবে কে প্রয়োগ করবে? সংবিধান? কীভাবে? অধিকারের এই নীতি কার্যকর করার পথই বা কী? তাহলে বিভিন্ন বিভাগকে সংযত করার অধিকার সংবিধানের বললেও সংবিধান সেটা কীভাবে কার্যকর করবে সে ব্যাপারে তার কাছে কোনো সুদুত্তর ছিল না। তিনি আইনের শাসন বা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের ধারণা থেকে কথাগুলো লিখেছেন। এই ধারণাকে কার্যকর করতে হলে সংবিধানের প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক দিক নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে বিস্তর ভাবনার ব্যাপার রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বাহাত্তরের সংবিধানের সময় থেকেই এক ব্যক্তির হাতে নিরংকুশ ক্ষমতা তুলে দেয়ার যে বিধান প্রবর্তিত হয়েছে, তিনি তার সমালোচক ছিলেন। উদ্ধৃত মন্তব্যে আমরা তা খানিক আঁচ করতে পারি। বাংলাদেশের সংবিধানের ভাষ্য হিসেবে তিনি যে বই লিখেছেন সেখান থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
এখানে আমার উদ্দেশ্য তার চিন্তার সমালোচনা বা পর্যালোচনা নয়। বরং তার মধ্য দিয়ে সমাজে যে চিন্তা কম-বেশি হাজির রয়েছে তাকে বোঝার চেষ্টা করা। এ বইটি প্রচুর ব্যবহার হয়। সে কারণেই সংবিধান, আইন, রাষ্ট্র সম্পর্কে কী ধরনের চিন্তা আমাদের সমাজে জারি রয়েছে সেটা বোঝা দরকার। সংবিধান কীভাবে বিভিন্ন বিভাগকে সংযত রাখবে তার ব্যাখ্যা তিনি না দিলেও সংবিধান সার্বভৌম তার এ দাবির তাৎপর্য আছে। সংবিধানের দাবি হচ্ছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’; যেহেতু সংবিধানই জনগণের পরম অভিপ্রায়, অতএব সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন। অর্থাৎ সংবিধান শুধু সংবিধান হওয়ার কারণে ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন’ নয়, বরং জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি বলেই সংবিধান সবার জন্য মান্য। ‘জনগণের পরম অভিপ্রায়’ বলেই যুক্তি হিসেবে ‘সংবিধানই সার্বভৌম’ কথাটা শুনতে ভালো, কিন্তু জনগণের অভিপ্রায়ের প্রশ্ন বাদ দিলে কথাটা অর্থহীন হয়ে যায়। সংবিধানই সার্বভৌম, কিংবা ‘সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন’ কথাটিকে আইনি মনে হয়, অথচ মর্ম মোটেও আইনি নয়, বরং রাজনৈতিক। সংবিধান বা আইনের রাজনৈতিক মর্ম কথাটার অর্থ কী? যদি সংবিধান জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হয়ে থাকে, তাহলে সংবিধান কীভাবে সেই অভিপ্রায় ধারণ করল সেটা গুরুত্বপূর্ণ তর্কের বিষয়। সেটা সাংবিধানিক তর্ক নয় বরং রাজনৈতিক তর্ক। জনগণের অভিপ্রায় কীভাবে রাজনৈতিক হয়ে ওঠে সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বোঝার তর্ক। এই তর্ক সংবিধান বা আইন দ্বারা নিষ্পন্ন করা যায় না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(২), যেখানে এই বাক্যগুলো আছে, সেই জায়গাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বাক্যগুলোতে সংবিধান ও রাজনীতি একই সন্ধিবিন্দুতে এসে দাঁড়ায়। সংবিধান এরকম রাজনৈতিক সন্ধিবিন্দু ছাড়া দাঁড়াতে পারে না; সংবিধান নিজেই নিজেকে ন্যায্য দাবি করতে পারে না।
সংবিধান কীভাবে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ সেই পরীক্ষা সংবিধানকেও দিতে হয়। যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের অভিপ্রায় রাজনৈতিক রূপ না নেয়, তাহলে জনগণের সঙ্গে সংবিধানের বিরোধ অনিবার্য হবেই। এটাই জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে^র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা আইন বা সংবিধান দিয়ে মোকাবেলা করা যায় না। রাজনীতি, একমাত্র রাজনীতি দিয়েই ‘জনগণের অভিপ্রায়’ ধারণার সমাধান জরুরি হয়ে পড়ে। জনগণের অভিপ্রায় যদি সংবিধানে প্রতিফলিত না হয় তাহলে তা সর্বোচ্চ আইন হতে পারে না। গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও রাষ্ট্র গঠনের এটাই হচ্ছে গোড়ার কথা। অথচ শেকড় কেটে আমরা ওপর থেকে পানি ঢালি। সংবিধান নিজের গুণে সার্বভৌম নয়, জনগণই সার্বভৌম, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এটাই হচ্ছে গোড়ার কথা। অথচ সংবিধান সংক্রান্ত প্রতিটি তর্ক-বিতর্কে এই রাজনৈতিক দিকটি, অর্থাৎ বিদ্যমান সংবিধান আদৌ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি কিনা সেই অতিশয় গোড়ার রাজনৈতিক তর্ককে অস্বীকার করে শুরু হয়। জনগণের সত্যিকারের অভিপ্রায় নির্মাণের প্রক্রিয়া কী? এটাই গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি কথাটারই বা মানে কী? কীভাবে আমরা বুঝব কোন্ অভিপ্রায় পরম আর কোন্ অভিপ্রায় আর দশটা সাধারণ অভিপ্রায়ের মতো। তাছাড়া জনগণ একাট্টা একরকম নয়। ধর্ম, চিন্তা, মতাদর্শ, সংস্কৃতি ইত্যাদির বিভিন্নতা যেমন আছে তেমনি সমাজে শ্রেণি পার্থক্য, নারী-পুরুষ ভেদ, অভিজাত নিন্মবর্গের ফারাক আছে। সবার অভিপ্রায় একরকম হতে পারে না। তাহলে ‘জনগণ’ কথাটারই বা অর্থ কী? কারা জনগণ আর কারা জনগণ নয়? বাংলাদেশে এসব গোড়ার প্রশ্ন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নাই বললেই চলে।
জনগণের অভিপ্রায় শনাক্ত করার, বোঝার ও ধারণ করার কোনো প্রক্রিয়া সমাজ-রাজনীতি বা সংস্কৃতিতে নেই। ফলে সংবিধান একদিকে ক্ষমতাসীনদের হাতে জনগণকে দমন-নির্যাতন-শাসন-শোষণ ও লুটতরাজের স্রেফ আইনি হাতিয়ারের অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারেনি, অন্যদিকে রাজনীতি হচ্ছে কে এই হাতিয়ার ব্যবহার করবে তার প্রতিযোগিতা। ঔপনিবেশিক আমলে রাষ্ট্র, বিচার ব্যবস্থা, আইন ছিল জনগণকে শাসন ও শোষণের হাতিয়ার। জনগণ ছিল গোলাম। স্বাধীন দেশে সেই পরাধীনতা বরং আরও চেপে বসেছে। অনেকটা নিজের পায়ে নিজে শেকল বেঁধে আহাম্মকের মতো বসে থাকার মতো ব্যাপার। বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের দলিল বা ‘গঠনতন্ত্র’ নয়, যাকে নিদেনপক্ষে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায়। এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়? আমি মনে করি, এর কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। এ ক্ষেত্রে অন্যকে খামাখা দোষারোপ না করে নিজেরা কীভাবে একটি ইতিবাচক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ধারা গড়ে তুলতে পারি সেটাই আমাদের কাজ হওয়া উচিত। সেই কাজের সুযোগ তৈরির জন্য নাগরিক ও মানবিক অধিকার মোটামুটি মান্য করে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করে এ ধরনের একটি লিবারেল রাষ্ট্র সাময়িককালের জন্য প্রয়োজন হতে পারে। কিছু সময়ের জন্য নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দরকার। মুশকিল হচ্ছে, বাংলাদেশে উদার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার ধারা এতই দুর্বল যে এই ন্যূনতম আশাটুকুও অতিরিক্ত আশা মনে হয়। তবুও নাগরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের যে আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান গড়ে উঠেছে, তার ছায়ায় কিছুকাল টিকে থাকার একটা কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কোনো দেশই এখন বিচ্ছিন্ন নয়, ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। বুদ্ধিকে প্রাণের ক্রীতদাস বানানো... বুদ্ধিকে প্রাণের ক্রীতদাস বানানোর কথাটা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যদি চাই ‘জনগণ’ নামক রাজনৈতিক কর্তাশক্তির উদ্বোধন ঘটুক, তাহলে মানুষকে আগাম বিচার করা, অর্থাৎ মনের মধ্যে বদ্ধমূল গেঁথে রাখা গজ-ফিতা মানদণ্ড দিয়ে বিচার করার অভ্যাস আমাদের ত্যাগ করতে হবে। রাজনীতি একটি প্রক্রিয়া।
রাজনৈতিক দল ক্ষমতার জন্য প্রতিযোগিতা করে, কিন্তু সমাজের ‘রাজনৈতিক পরিসর’ হচ্ছে বিশেষ সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্র, যেখানে বিভিন্ন চিন্তা, মত, বিশ্বাস, পরিচয়, দল, গোষ্ঠি ইত্যাদি নির্বিশেষে মানুষজন একত্রিত হয়, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার মধ্য দিয়ে একসঙ্গে বাস করার সামষ্টিক নীতি নির্ধারণ করে এবং তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায়ের একটা রূপ খাড়া করে। নিজের বদ্ধমূল বিশ্বাস, মত, যুক্তি, বুদ্ধির বাধ্যবাধকতার বাইরে আসা যতটা না যুক্তির তাড়না, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাণের তাগিদ। সেই তাগিদটুকু সমাজ থেকে হারিয়ে গেলে এর পরিণতি ভয়ানক হতে বাধ্য। অপরের সঙ্গে কথা বলার সম্পর্ক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ ‘রাজনৈতিক’ কাজ; এমন একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া, যা অন্য কোনোভাবে নিষ্পন্ন করা অসম্ভব। ‘এবাদতনামা’ যখন লিখেছিলাম তখন এই তাগিদটাই কাজ করেছে যে, যাদের সঙ্গে বুদ্ধির বিচারে আমার ফারাক আছে, বুদ্ধির ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাদের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার পরিস্থিতি বাংলাদেশে অনুপস্থিত, সেক্ষেত্রে প্রাণের জায়গা থেকে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নির্মাণ আমার জন্য জরুরি। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের বোঝা এবং আমাকে বোঝানোর প্রক্রিয়া ছাড়া ‘রাজনৈতিক পরিসর’ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ‘আমি’ করে বললাম, কারণ শেষাবধি আমাদের নিজেদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটাই এখন আমার রাজনীতি। তার মানে এই নয় যে, বুদ্ধির পর্যালোচনা আমরা স্থগিত রাখব, মোটেও না। কিন্তু বুদ্ধি বা যুক্তিকে অতিরিক্ত মূল্য দিতে গিয়ে খোদ রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তোলার কাজ যদি ভেস্তে যায় তো ঘরে একা বসে বুদ্ধি চর্চার কোনো ফায়দা আছে বলে আমি মনে করি না। সেটা দরকার ‘মোমিনের সঙ্গে বুর্জোয়ার বগলে বগলে চলা’র বিপরীতে মানুষকে ভালোবাসার জায়গা থেকে মোমিনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্র তৈরির দরকারে। অর্থাৎ আমরা যারা মানুষ নিয়ে কারবার করি, মানুষকে ভালোবাসি, সেই আশেকানির জায়গা থেকে আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়া জরুরি। সেটা রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। এটাই এখনকার কাজ।
মানুষকে নিয়ে সবাই কতটা একসঙ্গে যেতে পারি তারই একটা চেষ্টা। ‘মানুষ’ ধারণাটি বেশ তর্কসাপেক্ষ ধারণা। এ দেশে সংবিধান ও আইনের ধারণার পেছনে ‘মানুষ’ সম্পর্কে যে অনুমান বিশেষভাবে কাজ করে আসছে সেটা গাজী শামছুর রহমান রচিত বাংলাদেশের সংবিধানের ভাষ্যে আমরা বেশ খোলামেলাভাবেই পাই। আমার ধারণা আমাদের উকিল, বারিস্টার, বিচারপতিদের ধারণা এ থেকে ভিন্ন কিছু নয়। এই ধারণার মোদ্দা কথা হচ্ছে মানুষ সংঘর্ষপ্রবণ। তারা ঝগড়া-ফ্যাসাদ করে। অতএব তাদের শাসন ও শৃংখলার জন্য আইনের দরকার। গাজী শামছুর রহমান বলছেন, ‘মানুষ যখন এক বিপুল ভূখণ্ডে একা থাকে তখন তাহার জন্য নিয়ম-শৃংখলার দরকার হয় না; সে যাহা খুশি তাহাই করিতে পারে, তাহাকে বাধা দিবার বা উৎসাহ দিবার কেহ নাই। কিন্তু এক হইতে মানুষ যদি একশত হয় এবং একশত হইতে হাজার এবং হাজার হইতে এক লক্ষ, এবং তখন যদি ভূমির উপাদান ঐ প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মিলাইয়া অবিরত বাড়িতে না থাকে, তবে সেই পরিস্থিতিতে যাহার যাহা খুশি সে যদি তাহা করে, তাহা হইলে অবস্থা আর ভালো থাকে না। তখন সংঘর্ষ বাধিয়া যায়।’ সংঘর্ষের কারণ যদিও মানুষের সংখ্যা এবং পৃথিবীতে সম্পদের সীমা, কিন্তু মানুষমাত্রই সংঘর্ষপ্রবণ জীব এবং এই জীবনকে শাসন ও শৃংখলার মধ্যে রাখার জন্যই সংবিধান ও আইনের দরকার আছে। গাজী শামছুর রহমান এরপর সংঘর্ষের আরও অনেক কারণ লিপিবদ্ধ করেছেন, কিন্তু মানুষ সম্পর্কে মূলসূত্র এটাই। মানুষ এমন এক জন্তু যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করাই তার চরিত্র বা স্বভাব। এই চিন্তার পেছনে পাশ্চাত্য চিন্তার প্রভাব রয়েছে। যেমন, বিধিবদ্ধ আইন বা রাষ্ট্র গঠনের আগে প্রকৃতিতে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করত। এমনই যুদ্ধ যে প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে জন হবসের এই অনুমান আধুনিক রাষ্ট্র ও সার্বভৌম ক্ষমতার ধারণার ভিত্তি। এ ধরণের মানুষ অধ্যুষিত সমাজে একজন সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন নিরঙ্কুশ শাসকের দরকার হয়। নইলে শাসন ও শৃংখলা আনা অসম্ভব। আমার ধারণা বাংলাদেশের ‘মানুষ’ সম্পর্কে জন হবসের এ অনুমানই রাষ্ট্র ও আইন সম্পর্কে চিন্তার প্রধান ধারা। হবসের এই চিন্তা সম্পর্কে বিস্তর সমালোচনা আছে। হবস আসলে উঠতি পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে স্বার্থপর বুর্জোয়ার সমাজে টিকে থাকার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে আধুনিক বুর্জোয়ার স্বভাবকেই মানুষের চিরায়ত স্বভাব ভেবে ভুল করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে এই গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনাটুকু আছে। তবে আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক দিক হল, আইন বা রাষ্ট্রের ধারণা ‘মানুষ’ বা ‘মানুষের চরিত্র’ সম্পর্কে অনুমান বা ধারণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ফলে মানুষকে ভালোবাসা বা আশেকানির মর্মকে সে ফ প্রেম-মহব্বতের ব্যাপার ভাবার কোনো কারণ নাই, মানুষকে ভালোবাসার কথা বলার অর্থ হচ্ছে, মানুষ যে পরস্পরকে ভালোবাসে এবং অপরকে ভালোবাসতে জানে এই গুণটিকে প্রাধান্য দেয়া। মানুষের এই গুণকে স্বীকার, প্রশ্রয় ও চর্চার দিক থেকে দেখলে রাজনীতি, আইন ও রাষ্ট্রের প্রশ্নকেও আমরা জন হবস বা পাশ্চাত্য চিন্তার বাইরে এসে নতুনভাবে ভাবতে শিখব। ‘এবাদতনামা’ যদি আশেকানির কথা বলে থাকে, তবে সেটা শুধু কবিতার দরকারে নয়, বরং নতুন ধরনের সমাজ, রাজনীতি ও সমাজ-শৃংখলার কথা ভাববার প্রণোদনা থেকেই লিখেছিলাম।মনে আছে, কবিতা ও আইনের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কথা প্রসঙ্গে তাকে বলেছিলাম, মানুষ যুদ্ধবাজ সংঘর্ষপরায়ণ প্রাণী, মানুষমাত্রই পাপী, এভিল, শয়তান, এই ধারণাগুলো একান্তই খ্রিস্টীয়। মানুষ পাপী বা খারাপ এটা কোনোভাবেই ইসলামের ধারণা নয়। যারা সুরা বাকারা আক্ষরিকভাবেও পড়েছেন, তারা জানেন আযাযিল আদমকে সেজদা দিতে অস্বীকার করার যুক্তি হিসেবে ঠিক এই কথাটাই বলেছিল যে, মাবুদ আপনি দুনিয়াতে যাদের পাঠাচ্ছেন তারা তো ঝগড়া-ফ্যাসাদ করবে, রক্তপাত ঘটাবে ইত্যাদি, কারণ তারা মাটি থেকে তৈরি। যদি কোরআন সাক্ষী মানি তাহলে মোমিনের কাছে কোনোভাবেই শয়তানের যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইসলাম তা বরদাশত করবে না।
ইসলাম যদি নীতি-নৈতিকতা, আইন, রাষ্ট্র নিয়ে ভাবতে চায়, তাহলে ইবলিসের যুক্তি পরিহার করেই আল্লাহতায়ালার ঘোষণাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে : ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না’। ইসলাম নতুন ধরনের সমাজ গঠনের কথা ভাবতে পারে, এটা ইসলামপন্থী বলি, কিংবা ইসলামবিরোধী- কেউই ভাবতে পারে না। ভাবলে ‘মানুষ’ সম্পর্কে যে অনুমানের ভিত্তিতে আধুনিক রাষ্ট্র, আইন ও সার্বভৌমত্বের ধারণা গড়ে উঠেছে, তার বিরোধিতা আমরা দেখতাম। বাংলাদেশে ইসলামপন্থার যে প্রথাগত ধারা আমরা দেখি তার মধ্যে কোরআনুল করিমের দার্শনিক প্রস্তাবনার ভিত্তিতে নতুন চিন্তার আবির্ভাব সম্ভব কিনা আমি জানি না। এ থেকে শুধু এতটুকুই বলতে পারি :
‘আমার এবাদত তুলে দিনু মোমিনের হাত
আমার কর্জ শোধ আল্লার মাশুকের সাথে’॥
৩০ জুন, ২০১৭; ১৬ আষাঢ় ১৪২৪; শ্যামলী
‘আমার এবাদত তুলে দিনু মোমিনের হাত
আমার কর্জ শোধ আল্লার মাশুকের সাথে’॥
৩০ জুন, ২০১৭; ১৬ আষাঢ় ১৪২৪; শ্যামলী
No comments