জাতিসংঘের তদন্ত দলকে ঢুকতে দেয়া হবে না
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘ কোনো দল পাঠালে তাদের মিয়ানমারে প্রবেশ করতে ভিসা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মিয়ানমার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। শুক্রবার রাজধানী নাইপিদোয় এক বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সেক্রেটারি কিয়াও জেয়া এ কথা জানান। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, জাতিসংঘের কোনো মিশনকে সহায়তা দেয়া হবে না। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। কিয়াও বলেন, ‘যদি তারা তদন্তের জন্য কোনো দল পাঠাতে চায় তবে তাদের মিয়ানমারে প্রবেশ করতে দেয়ার কোনো কারণ আমরা দেখছি না।’ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলা জান্তাশাসনের অবসান গঠিয়ে গত বছর নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি। গত বছর অক্টোবরে রোহিঙ্গা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের তিনটি পোস্টে হামলা চালিয়ে ৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। ওই হামলার পর রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সেনা অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় এক হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। প্রাণ ভয়ে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন করা হচ্ছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। সুচি সরকার বরাবরই ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পরিস্থিতি যাচাইয়ে সরকারি তদন্ত দল গঠন করেছে। জাতিসংঘ একটি তদন্ত দল পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চাইছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার শুরু থেকেই রাখাইন রাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং কোনো আন্তর্জাতিক দলকে সেখানে এমনকি ত্রাণ নিয়েও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে বিশ্বজুড়ে কঠোর সমালোচনা মুখে রয়েছেন সুচি। জুন মাসে সুইডেন সফর করেন তিনি। ওই সফরে জাতিসংঘের তদন্ত দল প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের তদন্ত দলের কারণে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরীভাব আরও বেড়ে যেতে পারে।’ ফেব্রুয়ারিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং এ ধরনের মানবাধিকার বিরোধী অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের কথা বলা হয়। সম্ভবত রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্মূল করতেই ওই সেনা অভিযান চলছে বলে ওই প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মার্চে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক রেজ্যুলেশনে রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের অভিযোগ এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে জাতিগত দাঙ্গার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত দলের নাম প্রস্তাব করা হয়। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংয়ের নেতৃত্বে ওই দলের বাকি দুই সদস্য শ্রীলংকার আইনজীবী রাধিকা কুমারাস্বামী এবং অস্ট্রেলিয়ার কনসালটেন্ট ক্রিস্টোফার ডোমিনিক। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে কিয়াও বলেন, ‘যেখানে আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এখনও শেষ হয়নি সেখানে কেন তারা অকারণ চাপ তৈরি করতে চাইছে? এটা এ ইস্যুটি সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টায় সহায়তা নয় বরং এটি হস্তক্ষেপ।’
No comments