কিশোর প্রেম পরিণতি নির্মম by মহিউদ্দিন অদুল
বাপ্পীর
বয়স সবেমাত্র ১৭-এর কোঠায় পড়েছে। রাজধানীর বাড্ডার আলাতুন্নেছা উচ্চ
মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে পড়ছে। তারা তিন বন্ধু
বাপ্পী-রিমন ও কামাল নবম শ্রেণিতে থাকতে এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তো।
একই ব্যাচে পড়তো একই ক্লাসের আরো চার ছাত্রী। শ্রাবন্তী, রিমি, শিল্পা ও
রিনা। এর মধ্যে রিনা ছাড়া বাকি তিনজনই ওই তিন বন্ধুর সঙ্গে প্রেমের
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি।
মা-বাবার কাছে মিথ্যা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ডেটিং। রাত জেগে গোপনে ঘণ্টার
পর ঘণ্টা মোবাইল ফোনে কথা। ফেসবুকে রাতদিন চ্যাটিং। এভাবেই চলছিল ওই তিন
কিশোর-প্রেমিক প্রেমিকার দিনকাল। চলে এলো এসএসসি পরীক্ষা। ফেল করলো বাপ্পী ও
রিমন। তখন সে প্রেমিকাকে বুঝালো গুলশানেসহ কয়েক স্থানে আমাদের দোকান আছে।
আমি তো পড়াশুনা করবোই। তাছাড়া পড়াশুনা করে তো আমি এখনকার মতো বাবার ব্যবসাই
দেখবো। কিন্তু তা কিছুতেই শুনতে নারাজ মেয়ের পরিবার। আবার শ্রাবন্তীকেও
তার বাবা বারবার বুঝাতে না পেরে মেয়েকে বহুবার মারধর করেছে। মারাত্মকভাবে
আহতও করে। কিছুতেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনি। এক পর্যায়ে শাবন্তী
পরিবারের দোহাই দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে নেশার দিকে ঝুঁকে বাপ্পী।
তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সে। কিশোর প্রেমের স্মৃতি রোমন্থন করে
এখন বিমর্ষভাবে কাটছে সময়।
কিন্তু তার অপর বন্ধু রিমনের প্রেমের আত্মঘাতী নির্মমতা তার কাছেও ছিল অকল্পনীয়। রিমনের প্রেমিকা বাড্ডার স্থানীয় রিমি মোটরসাইকেলে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে চাইতো। রিমনের তা ছিল না। ফলে রিমি প্রায় সময় পরিচিতদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতো। তা রিমনের খুব খারাপ লাগাতো। এজন্য রিমন পরীক্ষায় পাস করলে বাবা-মার কাছে মোটরসাইকেল উপহার চায়। বাবা-মা এসএসসি পাস করলে তা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু সেও এসএসসিতে ফেল করে। রিমিও অন্যদের সঙ্গে মোটর সাইকেলে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এসব সইতে না পেরে গত বছরের মাঝামাঝিতে বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে বসে। এরপর তাকে উদ্ধার করে গুলশান লিংক রোডের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। তখনও জীবিত ছিল। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ততক্ষণে সব শেষ। কিশোর প্রেমের নির্মম বলি হলো রিমন। অপর জুটি কামাল ও শিল্পার সম্পর্ক অবশ্য এখনও টিকে আছে। দু’জন রাজধানীর দু’কলেজে পড়ছে।
কিন্তু বাপ্পীর অপর এক বন্ধু ফয়সালের নির্মম পরিণতি ঘটে প্রায় দু’বছর আগে। বাড্ডার ওই বন্ধু ষষ্ঠ শ্রেণিতেই প্রেমে পড়ে সহপাঠী সায়মার। প্রেমের নেশায় অষ্টম শ্রেণিতেই ফয়সাল পড়াশুনার পাঠ চুকায়। উভয় পরিবার নানা চেষ্টায় তাদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। কয়েক বছরেও এই অপরিণামদর্শী প্রেমের ছেদ ঘটাতে পারেনি দু’পরিবার। অগত্যা গত দু’বছর আগে তাদের প্রেমও মেনে নেয় দু’পরিবার। দু’জনের বাল্যবিয়ে দিয়ে সংসারে তোলে কিশোরী বউ সায়মাকে। কিন্তু নতুন সংসারে হাঁটতে বসতে শাশুড়ি-ফুফু শাশুড়ির খোঁচা। কয়েকদিনেই ধৈর্যহারা হয়ে অতীষ্ট হয়ে উঠে সায়মা। এক পর্যায়ে সে স্বামীকে বলে, ‘তুমি আমাকে এই নরক যন্ত্রণায় কেন এনেছো। তোমার পরিবার মেনে নিতে না পারলে তুমি আমাকে বলতে। আমি ঘর না বেঁধেই তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যেতাম। আমি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে তোমাকে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যেতাম। এখানে এভাবে আমি থাকতে পারবো না। আমি জীবন দিয়ে তোমার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যাবো। আত্মহত্যা করবো’। কিন্তু সায়মা নয়, প্রাণ দিয়েছে ফয়সাল। কিশোর প্রেমে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর এমন কথায় মারাত্মকভাবে মনোকষ্টে ভোগে ফয়সাল। এরপরই সে কাউকে তা বুঝতে না দিয়ে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যায়। বিয়ের পঞ্চম দিনই মা’কে বলে স্ত্রীকে তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আর নিজের মায়ের সব স্বর্ণালঙ্কার গোপনে নিয়ে স্ত্রীকে দিয়ে দেয়, যা তার নিজের কাছে রাখতে বলে। স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেয়ার পর নিজ কক্ষে ঢুকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণেও বের হওয়ার নাম নেই। এরপর বাপ্পী বাসায় গেলে ফয়সাল বের হচ্ছে না কেন তা দেখতে বলে মা। বাপ্পী নানাভাবে উঁকিঝুঁকি দিয়ে এক পর্যায়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে চিৎকার করে উঠে। তারপর দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল দুপুরে ফার্মগেট মোড়ের পার্কের এক বেঞ্চে অপর দুই বন্ধু ও দু’বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডারত বাপ্পীর কাছে প্রেমের কথা জানতে চাইতেই তার ও বন্ধুদের সাম্প্রতিক অতীতের এই করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন।
বাপ্পী বলেন, কিশোর বয়সে বন্ধু-বান্ধবী বা ছেলে-মেয়ের শুধু হাসি, চাহনি, চোখ, মুখ, চলাফেরা, পোশাক-আশাক ইত্যাদির ভাললাগা থেকেই আবেগের বশে প্রেম হয়ে যাচ্ছে। তখন ভালো-মন্দ বা পরিণাম না বুঝেই তাতে ঝুঁকে পড়েছি। আমি তো শুধু শ্রাবন্তীর হাসি ও গালের টোল দেখেই প্রেমে পড়ি। তারপর তার সবকিছুই আমার কাছে খুব ভালো লাগাতো। ফেসবুক মোবাইলে তার সঙ্গে ডুবে থাকতাম। সেও আমার জন্য প্রাণ দিতে পারতো। তার পরিবারের চাপে এক সময় ঝরে পড়লো। আত্মহত্যার চিন্তা এলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়েছি। কিন্তু কষ্টটা যায়নি। আর প্রেমের বলি দু’বন্ধুর কাহিনী সারাজীবন আমাকে কষ্ট দেবে।
একই পার্কে কিছুটা দূরে বসে কথা বলছিলেন অপর কিশোর জুটি শাকিল ও রাজিয়া। চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে রাজিয়া ইউনিফর্মসহ হাজির পার্কে। আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল তার প্রেমিক শাকিল। তাদের দু’জনের বাড়ি দু’জেলায় হলেও ফার্মগেটে কোচিংয়ের সূত্রে জানাশোনা। প্রেম। এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি এই প্রেমিক যুগল।
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসা অভিভাবক শায়লা খানম বলেন, টেলিভিশনের নাটক, সিনেমার প্রেম কাহিনী, ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদির কারণে স্কুলে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা প্রেমে জড়িয়ে যাচ্ছে। একবার জড়িয়ে গেলে তার প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। বাবা-মার সম্মান, ভবিষ্যতের ভাবনা চুলায় যাক। যেন প্রেমই সব। আর কিছুই নেই। এসব আতঙ্কে মেয়েকে প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেয়া করি।
জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন নিম্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজে পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টেলিভিশনের কল্যাণে দ্রুত বিস্তার ঘটছে কিশোর প্রেমের। ঘটছে প্রেম ঘটিত ঝগড়া-ঝাটিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। রাজধানীর পার্ক, রাস্তাঘাট, রেস্তরাঁ, হোটেলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের। বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ছে পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের পড়াশুনা ও ভবিষ্যৎ। অনেকে ঝরে পড়ছে পড়াশুনা থেকে। সমাজের পরিবর্তন ও অবক্ষয় এবং পরিবারের কাঠামো ভেঙে যাওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান একই অপরিণামদর্শী অপরিণত প্রেমের লাগাম এখনই টেনে ধরা না গেলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তানিয়া হক মানবজমিনকে বলেন, পরিবারে এখন বাবা-মা সন্তানদের সময় দিতে পারছে না। সুস্থ বিনোদন হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এখন শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। গ্লোবালাইজেশন ও তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেট সবার জন্য উন্মুক্ত। হাতের কাছেই ভালো-মন্দ সবকিছু। এত এত টিভি চ্যানেলে প্রেমের উপরই অধিকাংশ নাটক-সিনেমা-অনুষ্ঠান। তাহলে এখন এত উল্টো পথ তৈরি করে রেখে সোজা পথে হাঁটতে বললে কী হবে? শিশু-কিশোররা তো পথ হারাবেই। ১৮ বছরের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আইন করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এখনই নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
কিন্তু তার অপর বন্ধু রিমনের প্রেমের আত্মঘাতী নির্মমতা তার কাছেও ছিল অকল্পনীয়। রিমনের প্রেমিকা বাড্ডার স্থানীয় রিমি মোটরসাইকেলে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে চাইতো। রিমনের তা ছিল না। ফলে রিমি প্রায় সময় পরিচিতদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতো। তা রিমনের খুব খারাপ লাগাতো। এজন্য রিমন পরীক্ষায় পাস করলে বাবা-মার কাছে মোটরসাইকেল উপহার চায়। বাবা-মা এসএসসি পাস করলে তা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু সেও এসএসসিতে ফেল করে। রিমিও অন্যদের সঙ্গে মোটর সাইকেলে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এসব সইতে না পেরে গত বছরের মাঝামাঝিতে বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে বসে। এরপর তাকে উদ্ধার করে গুলশান লিংক রোডের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। তখনও জীবিত ছিল। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ততক্ষণে সব শেষ। কিশোর প্রেমের নির্মম বলি হলো রিমন। অপর জুটি কামাল ও শিল্পার সম্পর্ক অবশ্য এখনও টিকে আছে। দু’জন রাজধানীর দু’কলেজে পড়ছে।
কিন্তু বাপ্পীর অপর এক বন্ধু ফয়সালের নির্মম পরিণতি ঘটে প্রায় দু’বছর আগে। বাড্ডার ওই বন্ধু ষষ্ঠ শ্রেণিতেই প্রেমে পড়ে সহপাঠী সায়মার। প্রেমের নেশায় অষ্টম শ্রেণিতেই ফয়সাল পড়াশুনার পাঠ চুকায়। উভয় পরিবার নানা চেষ্টায় তাদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। কয়েক বছরেও এই অপরিণামদর্শী প্রেমের ছেদ ঘটাতে পারেনি দু’পরিবার। অগত্যা গত দু’বছর আগে তাদের প্রেমও মেনে নেয় দু’পরিবার। দু’জনের বাল্যবিয়ে দিয়ে সংসারে তোলে কিশোরী বউ সায়মাকে। কিন্তু নতুন সংসারে হাঁটতে বসতে শাশুড়ি-ফুফু শাশুড়ির খোঁচা। কয়েকদিনেই ধৈর্যহারা হয়ে অতীষ্ট হয়ে উঠে সায়মা। এক পর্যায়ে সে স্বামীকে বলে, ‘তুমি আমাকে এই নরক যন্ত্রণায় কেন এনেছো। তোমার পরিবার মেনে নিতে না পারলে তুমি আমাকে বলতে। আমি ঘর না বেঁধেই তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যেতাম। আমি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে তোমাকে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যেতাম। এখানে এভাবে আমি থাকতে পারবো না। আমি জীবন দিয়ে তোমার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যাবো। আত্মহত্যা করবো’। কিন্তু সায়মা নয়, প্রাণ দিয়েছে ফয়সাল। কিশোর প্রেমে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর এমন কথায় মারাত্মকভাবে মনোকষ্টে ভোগে ফয়সাল। এরপরই সে কাউকে তা বুঝতে না দিয়ে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যায়। বিয়ের পঞ্চম দিনই মা’কে বলে স্ত্রীকে তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আর নিজের মায়ের সব স্বর্ণালঙ্কার গোপনে নিয়ে স্ত্রীকে দিয়ে দেয়, যা তার নিজের কাছে রাখতে বলে। স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেয়ার পর নিজ কক্ষে ঢুকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণেও বের হওয়ার নাম নেই। এরপর বাপ্পী বাসায় গেলে ফয়সাল বের হচ্ছে না কেন তা দেখতে বলে মা। বাপ্পী নানাভাবে উঁকিঝুঁকি দিয়ে এক পর্যায়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে চিৎকার করে উঠে। তারপর দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল দুপুরে ফার্মগেট মোড়ের পার্কের এক বেঞ্চে অপর দুই বন্ধু ও দু’বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডারত বাপ্পীর কাছে প্রেমের কথা জানতে চাইতেই তার ও বন্ধুদের সাম্প্রতিক অতীতের এই করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন।
বাপ্পী বলেন, কিশোর বয়সে বন্ধু-বান্ধবী বা ছেলে-মেয়ের শুধু হাসি, চাহনি, চোখ, মুখ, চলাফেরা, পোশাক-আশাক ইত্যাদির ভাললাগা থেকেই আবেগের বশে প্রেম হয়ে যাচ্ছে। তখন ভালো-মন্দ বা পরিণাম না বুঝেই তাতে ঝুঁকে পড়েছি। আমি তো শুধু শ্রাবন্তীর হাসি ও গালের টোল দেখেই প্রেমে পড়ি। তারপর তার সবকিছুই আমার কাছে খুব ভালো লাগাতো। ফেসবুক মোবাইলে তার সঙ্গে ডুবে থাকতাম। সেও আমার জন্য প্রাণ দিতে পারতো। তার পরিবারের চাপে এক সময় ঝরে পড়লো। আত্মহত্যার চিন্তা এলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়েছি। কিন্তু কষ্টটা যায়নি। আর প্রেমের বলি দু’বন্ধুর কাহিনী সারাজীবন আমাকে কষ্ট দেবে।
একই পার্কে কিছুটা দূরে বসে কথা বলছিলেন অপর কিশোর জুটি শাকিল ও রাজিয়া। চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে রাজিয়া ইউনিফর্মসহ হাজির পার্কে। আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল তার প্রেমিক শাকিল। তাদের দু’জনের বাড়ি দু’জেলায় হলেও ফার্মগেটে কোচিংয়ের সূত্রে জানাশোনা। প্রেম। এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি এই প্রেমিক যুগল।
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসা অভিভাবক শায়লা খানম বলেন, টেলিভিশনের নাটক, সিনেমার প্রেম কাহিনী, ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদির কারণে স্কুলে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা প্রেমে জড়িয়ে যাচ্ছে। একবার জড়িয়ে গেলে তার প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। বাবা-মার সম্মান, ভবিষ্যতের ভাবনা চুলায় যাক। যেন প্রেমই সব। আর কিছুই নেই। এসব আতঙ্কে মেয়েকে প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেয়া করি।
জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন নিম্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজে পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টেলিভিশনের কল্যাণে দ্রুত বিস্তার ঘটছে কিশোর প্রেমের। ঘটছে প্রেম ঘটিত ঝগড়া-ঝাটিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। রাজধানীর পার্ক, রাস্তাঘাট, রেস্তরাঁ, হোটেলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের। বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ছে পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের পড়াশুনা ও ভবিষ্যৎ। অনেকে ঝরে পড়ছে পড়াশুনা থেকে। সমাজের পরিবর্তন ও অবক্ষয় এবং পরিবারের কাঠামো ভেঙে যাওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান একই অপরিণামদর্শী অপরিণত প্রেমের লাগাম এখনই টেনে ধরা না গেলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তানিয়া হক মানবজমিনকে বলেন, পরিবারে এখন বাবা-মা সন্তানদের সময় দিতে পারছে না। সুস্থ বিনোদন হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এখন শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। গ্লোবালাইজেশন ও তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেট সবার জন্য উন্মুক্ত। হাতের কাছেই ভালো-মন্দ সবকিছু। এত এত টিভি চ্যানেলে প্রেমের উপরই অধিকাংশ নাটক-সিনেমা-অনুষ্ঠান। তাহলে এখন এত উল্টো পথ তৈরি করে রেখে সোজা পথে হাঁটতে বললে কী হবে? শিশু-কিশোররা তো পথ হারাবেই। ১৮ বছরের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আইন করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এখনই নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
No comments