বারবার কেন ব্যর্থ হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
গত কয়েক মাসে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে শক্তিমত্তা দেখানোর চেষ্টা করছে উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের হুমকি উপেক্ষা করে শনিবারও নতুন করে আরেকটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পিয়ংইয়ং। তবে সেটি ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের। এ নিয়ে পরপর চারটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ব্যর্থ হল উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে চলতি মাসেই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যর্থ হয়েছে দেশটির। বিশ্বের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালেও বারবার কেন তা ব্যর্থ হচ্ছে সেটিই এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যালকম রিফকিন্ড মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলার কারণেই উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ হয়ে থাকতে পারে। অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। শনিবার ভোরে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় দক্ষিণ পিয়ংগান এলাকার একটি সেনা ঘাঁটি থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এর আগে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দেশটির পূর্ব উপকূলে সিনপো এলাকা থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা বিস্ফোরিত হয়। রিফকিন্ড আরও বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো ব্যর্থ হচ্ছে, কারণ তা কাজ করার মতো যথোপযুক্ত ব্যবস্থা পিয়ংইয়ংয়ের ছিল না। তবে মার্কিন সাইবার হামলার ধারণাটিও যথেষ্ট পোক্ত। এর আগেও এমন হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকবার এ ধরনের পরীক্ষা ব্যর্থ করে দিয়েছে দেশটি।’
তবে সাইবার হামলার বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি উৎসাহিত হতে নিষেধ করেছেন রিফকিন্ড। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, উত্তর কোরিয়া এর আগে এমন বহু পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক পল বিভার বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে, এটা সম্ভব। তাদের সাইবার সক্ষমতা অনেক উচ্চপর্যায়ের। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) পক্ষে এটা সম্ভব। তারা যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড থেকেও ওই ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে।’ ডেইলি সানের খবরে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার হ্যাকারদের কাছে তার সংকেত চলে যায়। সংকেত পাওয়ামাত্র হ্যাকাররা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতরে থাকা ভাইরাসকে সক্রিয় করে তোলে। আর এতেই ধ্বংস হয়ে যায় ক্ষেপণাস্ত্রটি। নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়, এর আগে ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে পেন্টাগনকে সাইবার ও ইলেকট্রুনিক হামলা চালানোর প্রযুক্তি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিবিসির সাংবাদিক স্টিফেন ইভান্স বলেন, উত্তর কোরিয়ার এ ব্যর্থতার দ্বারা এটি আবারও বোঝা যাচ্ছে, পিয়ংইয়ংয়ের বিশাল সামরিক প্যারেড এবং সারি সারি ক্ষেপণাস্ত্রের অর্থ এই নয় যে, তাদের কাছে একটি কার্যকর পরমাণু অস্ত্রের বহর আছে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো উত্তর কোরিয়ার জন্য নতুন কিছু নয়। যদিও তাদের সফলতার হার আগের চেয়ে বেড়েছে, তবে তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো যথেষ্ট সফল এখনও নয়।
No comments