ভুল রক্ত সঞ্চালনে এক তরুণের জীবন বিপন্ন
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভুল করে রোগীর দেহে ‘এ’ গ্রুপের পরিবর্তে ‘বি’ গ্রুপের রক্ত সঞ্চালন করায় এক তরুণের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবন বিশ্বাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানে চিকিৎসক আইসিইউ ইউনিটে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে অবন বিশ্বাসের শরীরে ভুল রক্ত সঞ্চালন করা হয়। ঝিনাইদহের মোড়ালিদাহ গ্রামের রবীন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে অবন বিশ্বাস (৩০)। রোগীর তত্ত্বাবধায়নে থাকা খালাতো ভাই সুমন বিশ্বাসের অভিযোগ, ২৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানাধীন বাড়াদী গ্রামে একটি টিনশেড থেকে টিন পড়ে অবনের পায়ের আর্টারি কেটে জখম হন। এতে রক্তক্ষরণজনিত কারণে গুরুতর আহত অবস্থায় রোগীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করে দ্রুত রক্ত দেয়ার পরামর্শ দেন। এরপর হাসপাতালের ব্লাডব্যাংক থেকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে সংগীয় এক আত্মীয়ের ব্লাড গ্রুপ ‘বি’ পজেটিভ হওয়ায় সেই রক্ত সংগ্রহ করে অবনের দেহে প্রয়োগ করেন। হাসপাতালে অবস্থানকালীন এক ব্যাগ রক্ত যাওয়ার পরও রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোগীকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সেইমতে, রোগীকে ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে ভর্তি হতে না পেরে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডস্থ মক্কা মদীনা জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানেও রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় ওই ক্লিনিকে রক্তের গ্রুপ ক্রস চেক করতে গিয়ে প্রথমে ধরা পড়ে অবনের দেহের রক্তে কিছু গরমিল। এরপর কলেজ গেটে হুমায়ুন রোডের ফেমাস ব্লাডব্যাংক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করলে সেখানেও রক্তে গরমিল পাওয়া যায়। এ সময় তারা পপুলার হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় সঠিকভাবে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পপুলারেও রক্ত পরীক্ষা করে একই চিত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল অথবা স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। অবশেষে ২৬ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে স্কয়ার হাসপাতলে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে সেখানকার চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন রোগী অবনের দেহের রক্ত প্রকৃতপক্ষে ‘এ’ পজেটিভ। কিন্তু ভুল করে তার দেহে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত প্রয়োগ করা হয়েছে।
স্কয়ারের চিকিৎসকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সূত্রে জানা গেছে, রোগীর দেহে বিদ্যমান রক্তে ২ ভাগ ‘এ’ পজেটিভ এবং ২ ভাগ ‘বি’ পজেটিভের উপস্থিতি আছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে ২৫ এপ্রিল থেকে। সেখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শে ডিএমসি এইচের মেডিসিন বিভাগে ডা. বেনজির আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। সুমন আরও বলেন, এখানকার চিকিৎসকরা এরই মধ্যে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন রোগীর দেহে অন্য গ্রুপের রক্ত প্রয়োগ করায় তার কিডনি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সুমন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল। এখানে যদি ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে উঠে, তাহলে এর দায় কে নেবে? কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, ২৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টায় অবন বিশ্বাস নামে ভর্তিকৃত রোগীর দেহে রক্ত দেয়া হয়েছিল বলে শুনেছি। কিন্তু সেটা সঠিক গ্রুপিং বা ক্রস চেক সঠিক ছিল কিনা, সেটা না জেনে বলতে পারছি না। কারণ রোগী তো এখন আমাদের কাছে নেই। ফলে আসলেই কী হয়েছিল, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষ ব্যাপার। ঘটনার দিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ব্লাডব্যাংকে কর্তব্যরত ইকবাল হোসেন জানান, রোগীর রক্ত প্রয়োজন হওয়ায় ওয়ার্ড থেকে সিস্টাররা ব্লাড স্যাম্পল দিয়ে রিকুজিশন দিয়েছিলেন। ওই স্যাম্পল ধরেই ব্লাড গ্রুপিং এবং ক্রস চেক করে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে ভুল হল, সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
No comments