রাজধানীর গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করুন : জাতীয় কমিটি
বাস-মিনিবাসের কথিত সিটিং সার্ভিসের (মোট আসনের সমসংখ্যক যাত্রী) বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে রাজধানীজুড়ে সৃষ্ট নৈরাজ্য ও জনভোগান্তি অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, ভাড়া আদায় ও বাস-মিনিবাস বন্ধ রেখে কৃত্রিম পরিবহন সংকট সৃষ্টিকারী মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে একটি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবিতে সোচ্চার বেসরকারি এই সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের উপদেষ্টা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান এবং সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতি এই আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পরামর্শে এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত রোববার থেকে কথিত সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু পূর্বঘোষিত এই অভিযান শুরুর দিন সকাল থেকেই রাজধানীর সড়ক পরিবহন খাতে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও জনদুর্ভোগ। জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির মালিক-শ্রমিকের খামখেয়ালীপনায় গত তিনদিন ধরে প্রায় ৪০ শতাংশ বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিদ্যমান গণপরিবহন সংকট আরো বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় চলাচলরত বাস-মিনিবাসগুলোতে নির্ধারিত আসনের দ্বিগুণ যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধসহ কর্মজীবী নারীরা অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিবৃতিদাতারা বলেন, চলমান অভিযানের কারণে সিটিং সার্ভিসগুলো ইতোমধ্যে লোকাল সার্ভিস হয়ে গেছে।
এসব বাস-মিনিবাসে প্রতিটি স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করছে; তবে আগের সিটিং সার্ভিসের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। অথচ অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করা হচ্ছে না। এতে একদিকে সাধারণ জনগণ প্রতারণার শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বাড়তি মুনাফা অর্জন করছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, মোটরযান চলাচল অধ্যাদেশে ইচ্ছাকৃত গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখলে রুট পারমিট বাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ যেসব মালিক গত তিনদিন যানবাহন বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিআরটিএ। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিধি লঙ্ঘনকারী অনেক যানবাহনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কারাদ-াদেশ দিলেও কোনো পরিবহন মালিককে সরাসরি শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। সাময়িক জনদুর্ভোগ সত্ত্বেও রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন জাতীয় কমিটির নেতারা। তবে গাড়ি বন্ধ রেখে কৃত্রিম পরিবহন সংকট সৃষ্টি এবং জোরপূর্বক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহনের রুট পারমিট বাতিলের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস যুক্ত করে রাষ্ট্রীয় এ বাণিজ্যিক সংস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার আহ্বান জানান বিবৃতিদাতারা।
No comments