উত্তর কোরিয়ায় আচমকা হামলা করতে পারেন ট্রাম্প
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কোনো সময় পিয়ংইয়ংয়ে হামলার নির্দেশ দিতে পারেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার পরেই দেশটির বিরুদ্ধে মিলিটারি অ্যাকশন নিতে চাইছেন ট্রাম্প। পুলিশি ভূমিকায় প্রয়োজনে আচমকা হামলা চালানোরও নির্দেশ দিতে পারেন তিনি। আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় আকস্মিক হামলা চালিয়ে ‘যে কোনো মুহূর্তে’ ট্রাম্প তার হামলা চালানোর স্বভাব বুঝিয়ে দিলেন বলে মন্তব্য করেন সামরিক বিশ্লেষকরা। তবে ট্রাম্প চান উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে সবার আগে ব্যবস্থা নেবে চীন। এনবিসি টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, উত্তর কোরিয়াকে দমাতে চীনের বিকল্প নেই। বড় বিপর্যয় এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে দেশটি। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় পরীক্ষা উত্তর কোরিয়া সংকট। তবে, এ ব্যাপারে ট্রাম্প ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন বলেই মনে করছেন ম্যাককেইন। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জেনারেল এইচআর ম্যাকমাস্টার বলেন, উত্তর কোরিয়ার ব্যবহারে রীতিমতো বিরক্ত যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার এ ধরনের আচরণ অব্যাহত থাকলে ট্রাম্পের যে কোনো নির্দেশের জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে। ম্যাকমাস্টার বলেন, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে যেভাবে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাতে ট্রাম্প যে আচমকা অভিযান চালাতে পছন্দ করেন সেটা অনেকটা স্পষ্ট। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের নৃশংসতার কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিম যেভাবে তার নিজের ভাই ও পরিবারের অন্যান্যদের খুন করেছে তাতে উত্তর কোরিয়া গোটা বিশ্বের কাছেই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ পরমাণু বোমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে উড়িয়ে দেয়ার হুমকির মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনায় কিম। এছাড়া সংখ্যার দিক থেকে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী অনেক বড় এবং খুবই কার্যক্ষম। কর্মক্ষমতার দিক থেকে এ সেনাবাহিনীর অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। পরিস্থিতি এমন যেন ‘যে কোনো সময়’ যুদ্ধ লেগে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য ধরার দিন শেষ -মাইক পেন্স : উত্তর কোরিয়ার সামরিক ‘উসকানির’ বিরুদ্ধে ধৈর্য ধরার দিন শেষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
সোমবার পেন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকির বিপরীতে মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন থেকেই কৌশলগত ধৈর্য দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু এ বিষয়ে ধৈর্য ধরার দিন শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগ্রহী। তবে প্রয়োজন হলে যে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিকল্প সব পন্থাই বিবেচনা করা হবে।’ উত্তর কোরিয়াকে হুশিয়ারি করে পেন্স বলেন, ‘আমাদের সামরিক শক্তির পরীক্ষা নিতে যেও না। এ প্রচেষ্টা সুফল বয়ে আনবে না।’ ১০ দিনের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সফরের অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছেন তিনি। রোববার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে নামেন পেন্স। সোমবার তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংলগ্ন পানমুনজমের একটি গ্রাম পরিদর্শনে যান। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে এ গ্রামেই দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি সই হয়েছিল। যা এখনও কার্যকর আছে। এ গ্রামে থেকেই কোরীয় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন পেন্সের বাবা। এর আগে দিনের শুরুতে তিনি দুই কোরিয়াকে বিভক্তকারী অসামরিকীকরণ অঞ্চলের (ডিএমজেড) কাছে যান। পরে হেলিকপ্টারে ডিএমজেডের মাত্র কয়েকশ’ মিটার দক্ষিণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘ কমান্ড কেন্দ্র ক্যাম্প বনিফাসে যান। এ সময় সিউলে থাড ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ব্যাপারে সম্মত হন পেন্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হায়াং কিয়ো-আহান। এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হায়াং বলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকি মোকাবেলায় সামরিক শক্তিতে প্রস্তুত থাকতে এ অঞ্চলে থাড মোতায়েনের আমরা সম্মত হয়েছি। এর আগে রোববার পেন্স মার্কিন সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পেন্সের সিউল সফরকে ঘিরে সোমবার থেকে যৌথ আকাশ মহড়া শুরু করেছে দু’দেশের বিমান বাহিনী। ক্ষমতা নেয়ার পরে প্রথম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সফরে বের হয়েছেন পেন্স। ১০ দিনের সফরে অংশ হিসেবে তিনি সিউল হয়ে জাপানের রাজধানী টোকিও, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ সফর করবেন। সিএনএন।
No comments