১১ মাস ধরে বেতন নেই ১৪ শিক্ষকের
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেতনের চাহিদা না পাঠানোয় তাঁরা বেতন পাননি। দীর্ঘদিন বেতন বন্ধ থাকায় তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ার ভয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। গত রোববার বিকেলে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভুক্তভোগী ওই ১৪ শিক্ষক তাঁদের বেতন ছাড়ের জন্য আসেন। সেখানে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, পুল শিক্ষক হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময় যোগ দিয়ে মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছিলেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি শিক্ষক হিসেবে নতুন করে যোগ দেন। এর আগে গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত নয় মাস তাঁদের বেতন দেওয়া হয়নি। আবার ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বেতন পাননি। নতুন-পুরোনো মিলে মোট সাড়ে ১১ মাস তাঁরা চাকরি করছেন। তবে কোনো বেতন-ভাতা পাননি। এ সময় তাঁরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বেতন পেতে নানা সময় শিক্ষা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে বেতনের পরিবর্তে কপালে দুর্ব্যবহার জুটেছে। নতুনভাবে সরকারি হওয়ার পর ‘বেতন নির্ধারণের’ সময় মিষ্টি খাওয়ার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের উৎকোচ নেওয়া হয়েছে। এখন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, ‘বেতন নির্ধারণে’ নানা ধরনের ত্রুটি রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসের প্রধান হিসাবরক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, যথা সময়ে চাহিদা পাঠাতে গিয়ে ভুলে ১৪ জন পুল শিক্ষকের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়নি। তবে ভুল ধরা পড়ার পর থেকে নিয়মিত চাহিদা পাঠানো হচ্ছে। ঢাকায়ও যোগাযোগ করা হচ্ছে। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে বরাদ্দ চলে আসতে পারে।
অপর অফিস সহকারী মনছুর রহমান বলেন, ‘প্রথম বেতন নির্ধারণের সময় ভুল হতে পারে। আর আমরা কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে “দাবি” করে কিছু নিই না। তাঁরা “খুশি” হয়ে দুই-পাঁচ টাকা দিলে তা নিই।’ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা অফিসের করা ফিক্সেশন যাচাই করতে গিয়ে প্রথমেই ভুল ধরা পড়ায় সতর্কতার সঙ্গে সব যাচাই করতে সময় লাগছে। তিনি বলেন, যোগে ভুল, আবার বড়াইগ্রামের পরিবর্তে বাগাতিপাড়া উপজেলায় ফিক্সেশন পোস্টিংসহ বিভিন্ন ভুল ধরা পড়ায় বেতন ছাড় করতে দেরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা অফিস অযথা প্রায় আড়াই মাস সময় নিয়েছে। এরপরও ভুলে ভরা। যাচাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন ছাড় করা সম্ভব হবে। আর নতুন বরাদ্দ না এলে বকেয়া অপর নয় মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকলিমা খানমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। তাই সবকিছু এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। তবে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
No comments