রামপাল প্রকল্পের কারণে পুরো বাংলাদেশই অরক্ষিত হবে : আনু মুহাম্মদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘সকল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী অপতৎপরতায় পুরো বাংলাদেশই অরক্ষিত হবে, ভয়াবহ মাত্রায় বিপদাপন্ন হবে। তবে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশালসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ হবে সবচাইতে বেশি। এই ক্ষতি নদীর পানি ও বায়ু দূষণের মাধ্যমে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তীব্রতর করবার মাধ্যমে দেশের আরও বহু অঞ্চলে আঘাত করবে।’ সুন্দরবন রক্ষায় আগামী ২০ এপ্রিল খুলনায় উপকূলীয় মহাসমাবেশকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষের জীবন ও সম্পদের জন্য হুমকি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল এবং সুন্দরবনবিনাশী অপতৎপরতা বন্ধ, পাটশিল্পের বিকাশ, মৎস্যজীবী ও বনজীবীদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি বান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, গ্যাস রফতানির চুক্তি বাতিলসহ জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে ২০ এপ্রিল বেলা সাড়ে তিনটায় খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে এ মহাসমাবেশ হবে। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, সরকার একদিকে ঋণের বোঝা জনগণের কাঁধে ফেলে অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নামে, অন্যদিকে আরও ঋণের বোঝা জনগণের কাঁধে ফেলে বাংলাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুন্দরবন ধ্বংসের চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এগুলো জনগণের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা ও নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। আর্থিক বোঝা, বেশি দামে বিদ্যুৎ সর্বোপরি সুন্দরবন বিনাশ করেও রামপাল প্রকল্প নিয়ে সরকারের এই ভূমিকা অবিশ্বাস্য মাত্রায় জাতীয় স্বার্থবিরোধী। আমরা সরকারের এই ভূমিকায় আবারও ধিক্কার জানাই। বাংলাদেশের মানুষ এই দেশের প্রধান প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুন্দরবন ও নদী বিনাশ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’ পুরানা পল্টস্থ মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে টিপু বিশ্বাস,
রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকী, সাইফুল হক, শুভাংশু চক্রবর্তী, মোশারেফ হোসেন নান্নু, শহিদুল ইসলাম সবুজ, নাসির উদ্দিন নাসু, মাহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, প্রকৌশলী মাহবুব সুমন প্রমুখ। সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের মুখোশ দিয়েই এ্ সর্বনাশা প্রকল্প জায়েজ করবার চেষ্টা চলছে। অথচ এরচাইতে কম দামে পরিবেশসম্মতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক পথ আছে। যেমন, বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ আগামি কয়েক দশকে প্রধান অবলম্বন হতে পারে। এই সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারের যথাযথ নীতি গ্রহণ করলে সুন্দরবিনাশী বা দেশধ্বংসী কোনো প্রকল্পের যৌক্তিকতা দেখানো যায় না। বরং গ্যাসসম্পদের ব্যবহার করে সুলভে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোও সম্ভব হয়, উৎপাদনশীল খাতও ব্যাপক গতি পেতে পারে। অথচ সরকার উল্টোযাত্রা করছে। নিজস্ব সম্পদ দেশের কাজে শতভাগ ব্যবহারের নীতিমালা গ্রহণ না করে উচ্চ দামে এবং রফতানিমুখি ধারা রেখে বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হচ্ছে। এতে এই সম্পদ দেশের কাজে লাগানো সম্ভব হবে না বরং এই চুক্তির কারণে দেশের ওপর আরো আর্থিক বোঝা বাড়বে। সম্পদও হারাবে দেশ।’
No comments