সুন্দরবনে নেকড়ের সন্ধান!
প্রাণিবিজ্ঞানীমহলে এতদিন জানা ছিল, নেকড়ে নেই সুন্দরবনেও। কিন্তু এই প্রথমবার সেখানে নেকড়ের ছবি ক্যামেরাবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে নয়, ভারতীয় অংশে। কলকাতায় তিন প্রকৃতিপ্রেমী ঋদ্ধি মুখোপাধ্যায়, শুভায়ু পাল এবং অনুপম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে সুন্দরবন ব্যাঘ্রপ্রকল্পের সজনেখালি এলাকায় পাখির ছবি তুলতে গিয়ে গ্রাম-লাগোয়া ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে তারা নেকড়েটির দেখা পান। ভারতীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ খবর প্রকাশ করেছে। ঋদ্ধি সোমবার বলেন, ‘‘বিকেলের দিকে জটিরামপুর গ্রামের কাছে বাদাবনের ধারে প্রাণীটিকে দেখতে পেয়েছিলাম। প্রথমে শিয়াল বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু আকারে বড় হওয়ার খটকা লাগে।’’ অনুপম জানান, ছবিটি পেয়েই তারা প্রকৃতি সংসদের কর্ণধার কুশল মুখোপাধ্যায় এবং বন্যপ্রাণীপ্রেমী কণাদ বৈদ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কুশল বলেন, ‘‘ছবিটি দেখে আমার মনে হয়েছিল এটি নেকড়ে। দেহরাদূনের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (ডব্লিউআইআই) দুই বিশেষজ্ঞ বিলাল হাবিব এবং বিভাস পাণ্ডবের কাছে ছবিটি পাঠানো হয়েছিল। তারা জানান, এটি নেকড়েরই ছবি।’’
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক এদিন ‘এবেলা’কে বলেন, ‘‘ছবিটি দেখেছি। কিন্তু শুধু ওই ছবির ভিত্তিতে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি না। ওই গ্রামে আমরা কয়েকজন বনরক্ষীকে মোতায়েন করেছি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেছি। প্রাণীটির উপস্থিতি এবং গতিবিধি জানার জন্য ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ বসানো হয়েছে।’’ কুশল জানান, সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় এলাকায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমান এলাকায় নেকড়ের দেখা মিললেও বিগত কয়েক শ' বছরে সুন্দরবনে কখনওই এই প্রাণীটির অস্তিত্বের কথা জানা যায়নি। এমনকী, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলেও কখনও নেকড়ের উপস্থিতির কথা শোনা যায়নি। ঊনিশ শতক এবং বিশ শতকের গোড়ায় সুন্দরবন থেকে জাভার গণ্ডার, সোয়াম্প ডিয়ার (বারশিঙা), বুনো মহিষের মতো বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। এমনকী, কয়েক দশক আগে সুন্দরবনে বার্কিং ডিয়ারের (স্বর্ণমৃগ) অস্তিত্ব থাকলেও এখন তারা ‘লাপাত্তা’।
No comments