লাশ হস্তান্তরে ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ
হযরত
শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে গোলচত্বর এলাকায়
‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণে নিহত যুবকের লাশ হস্তান্তরে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার
আপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। সোমবার যুগান্তরে ‘বিমানবন্দরে আত্মঘাতী জঙ্গি ৭ মাস
ধরে নিখোঁজ আয়াদ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিকালে আয়াদের মা মুনমুন
আহমেদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় পুলিশ। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়
সংশ্লিষ্ট ল্যাবেও। কিন্তু ল্যাব থেকে জানানো হয়, এর আগে চট্টগ্রামের
সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে শিশুসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মুনমুনের
ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছে। একজনের ডিএনএ নমুনা দু’বার নেয়ার নিয়ম নেই। তাই
নতুন করে আর মুনমুনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি
সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর নেয়া ডিএনএ
আলামত পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়া শুক্রবার বিমানবন্দরে
‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণের পর নিহত যুবকের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ দুটি
ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর যুবকের লাশের বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া
হবে। আপাতত লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেই থাকবে। শুক্রবার
সন্ধ্যায় ঢাকার বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বরে আয়াদ নিহত হয়। তবে মঙ্গলবার
পর্যন্ত পুলিশের কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে আয়াদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি।
কিন্তু পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে
রোববার আয়াদের মায়ের বরাত দিয়ে বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন। আয়াদের মা
মুনমুন আহমেদও যুগান্তরকে জানান, বিমানবন্দর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত
যুবক তার ছেলে আয়াদ। পারিবারিকভাবে ছেলের লাশ দাফন করবেন বলেও তিনি পুলিশকে
জানান। পুলিশ তার ডিএনএ নমুনা চাইলে তিনি সোমবার তা দিতে রাজি হন। কিন্তু
আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তার ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়নি। পুলিশের উত্তরা
বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরা যুগান্তরকে বলেন, কেউ লাশ দাবি
করলেই আমরা তাকে তা দিতে পারি না। এক্ষেত্রে অনেক নিয়মকানুন আছে। আদালতের
অনুমতি, ডিএনএ রিপোর্টের মতো বিষয়গুলো আছে। সেসব ফলো করে লাশ হস্তান্তর করা
হবে। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার আগেই পুলিশের যে কর্মকর্তা এ বিষয়ে সংবাদ
মাধ্যমকে তথ্য দিয়েছেন তিনি ঠিক করেননি, পেশাধারিত্বের পরিচয় দেননি।
এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য ইস্যুর চেয়ে জঙ্গি ইস্যুটি খুবই
শক্তিশালী ইস্যু। এছাড়া বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে
না। পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নূরুল আলম
যুগান্তরকে বলেন, মুনমুন আহমেদ যে দাবি করেছেন, তা সত্য হতে পারে। কিন্তু
নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তো লাশ কারও কাছে হস্তান্তর করা যায় না। বিষয়টি
নিশ্চিত হতে পুলিশ ঘটনার পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, নিহত
যুবক ও মুনমুন আহমেদের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তা মিলয়ে দেখা
হবে। মিল পাওয়া গেলে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করছেন
এডিসি রাফিউল আলম। তাই এ নিয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে এডিসি রাফিউল
আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশের বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রুহুল আমিন সাগর জানান, এ
ধরনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা সময়সাপেক্ষ। লাশের দাবিদারকে প্রথমে
ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হয়। সন্দেহ হলে পুলিশ তদন্তের জন্য
অধিকতর সময় চায়। আদালতের অনুমতি নিয়ে নিহত ও নিহতের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা
করা হয়। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের সামনে বিস্ফোরণে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনার
তদন্ত কর্মকর্তা আমি না। তাই এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে
পুলিশ আইনের ধারা অনুযায়ীই কাজ করছে। যাতে কোনো সন্দেহ বা বিতর্ক না থাকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক এজাজ শফি বলেন, এ মামলার
বিষয়ে মিডিয়ায় কোনো তথ্য দিতে উচ্চপর্যায় থেকে বারণ আছে। তাই অপনাদের যদি
কিছু জানার থাকে তবে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। ডিএমপি
মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, ডিএনএ রিপোর্ট
হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে পরিষ্কার করে
কিছু বলা যাচ্ছে না।
No comments