অবসরেও ব্যতিক্রমী জীবন ওবামার
কয়েক
বছরের মধ্যে একটা ভিন্নধর্মী ককটেল পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত মাসে অনুষ্ঠিত ওই আড্ডা-অনুষ্ঠানে তার সাবেক
প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চিফ অব স্টাফ ডেনিস ম্যাকডোনাফসহ
জুনিয়র অনেক কর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন। এটা এক ধরনের গেট-টুগেদারের মতো, তবে
ছোট্ট সেই হলঘরে পদমর্যাদার তোয়াজ ছিল না। একই পাত্র থেকে সবাই খাবার
নিচ্ছিলেন, পানীয় হাতবদল করছিলেন। হোয়াইট হাউসের সাবেক জনসংযোগবিষয়ক এক
কর্মকর্তা পিটার ভেলজ বলেন, এটা ছিল কিছুটা নিয়মভাঙা পার্টি। ভাইস
প্রেসিডেন্টের প্লেট থেকেই পনির তুলে খাওয়া যায়।’ তবে ডিনার শেষে যথারীতি
সেই পুরনো কৌতুক বলে ওবামা বিদায় নিয়েছিলেন, তা হচ্ছে- ‘আসি, তাড়াতাড়ি
মিশেলের কাছে না গেলে আমার খবর আছে!’ বারাক ওবামার সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা
ভ্যালেরি জারেট জানান, ওবামা সাধারণ জীবনযাপন করছেন। অবশ্য হোয়াইট হাউসেও
তিনি সাধারণ ছিলেন। ডেমোক্রেট দলের নানা চাপ সত্ত্বেও তিনি নিজের মতো
সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে আরামে বিশ্রাম নিচ্ছেন, ‘পরিবার ও
বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করছেন।’ সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে
বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পরবর্তী জীবনে ওবামা তার অবকাশ লম্বা করতে পারছেন না।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিলাসবহুল রিসোর্টে সময় কাটাচ্ছিলেন
তিনি। কিন্তু সেখান থেকেই এক বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছে, তার স্বাক্ষরিত
স্বাস্থ্যনীতি একতরফাভাবে বাতিল করা ঠিক হবে না। তার মানে রাজনৈতিক ও
জনজীবনে বারাক ওবামার উপস্থিতি বহালই থাকছে। ওবামা অবসরপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট
হলেও তাকে এখনও তরুণ বলা যায়। আর জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
তার ওয়াশিংটনে বসবাস। ছোট মেয়ের হাইস্কুল শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজধানী
ছাড়তে পারছেন না তিনি। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের নানা বিতর্কিত
পদক্ষেপ ওবামাকে আলোচনায় নিয়ে আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনিক
বিশৃংখলার জন্য পূর্বসূরি ওবামাকে দায়ী করেছেন। তার মতে, এই নৈরাজ্য তিনি
উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতির জন্য
আগের সরকারকে দুষছেন। নির্বাচনোত্তর ওবামা-ট্রাম্পের টুকটাক সৌজন্য আলাপ
হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের শপথের দু’মাস পার হলেও দুই নেতার আর কথা হয়নি।
যেটুকু ভদ্রতার আবরণ ছিল, সেটাও ছুড়ে ফেলেছেন ট্রাম্প। চলতি মাসের শুরুতে
কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি বলেছেন, ওবামা তার ট্রাম্প টাওয়ারে আড়ি পেতেছিলেন।
এই অভিযোগে ওবামা ব্যক্তিগতভাবে বিরক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিক্রিয়া
দেখাননি। কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা ও এফবিআই প্রধান ওই অভিযোগ নাকচ করেছেন।
সম্প্রতি ওবামাকেয়ারের বিকল্প স্বাস্থ্যনীতি ঠেকিয়ে দিয়েছেন খোদ
রিপাবলিকানরাই।
সাবেক প্রেসিডেন্টরা অবসর নেয়ার পর সাধারণত রাজনীতির
একেবারেই দূরে চলে যান। জর্জ ডব্লিউ বুশ সর্বনিম্ন রেটিং নিয়ে ক্ষমতা
ছেড়েছিলেন। তারপর মন দিয়েছিলেন আত্মজীবনী লেখা ও ছবি আঁকায়। বিল ক্লিনটন
নিউইয়র্ক পাড়ি দিয়ে তার স্ত্রী হিলারির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক
হয়েছিলেন। কিন্তু বারাক ওবামা একেবারেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন না।
তিনি নিজেই বলেছিলেন, দেশের প্রয়োজনে নাগরিক হিসেবে তিনি রাজনৈতিক
প্রতিক্রিয়া জানাবেন। এই মুহূর্তে বারাক ওবামা জনজীবন এড়িয়ে চলার চেষ্টা
করছেন। ফেব্রুয়ারিতেই তার বড় মেয়ে মালিয়াকে নিয়ে আর্থার মিলারের ‘দ্য
প্রাইস’ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। বসেছিলেন দর্শক সারির একপাশে। দর্শকরা
তার আগমনের খবর জানতেন না। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের এক সাংবাদিক তাকে দেখে
টুইট করেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষের আগেই ওবামা লাপাত্তা। জনসমাগম এড়াতেই ক্ষমতা
ছাড়ার পর থেকেই একের পর এক দ্বীপাঞ্চলে গেছেন অবকাশ কাটাতে। অন্যদিকে
মিশেল ওবামা ওয়াশিংটনে থাকলেও জনসম্মুখে খুব একটা আসছেন না। নারী দিবসে এক
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। তবে তাতে ট্রাম্পের
নাম নেননি। ওয়াশিংটনের এক অনুষ্ঠানে গেলেও ছবি তুলতে রাজি হননি। হোয়াইট
হাউসের সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত আট বছর ওবামা দম্পতি যে বিশাল চাপের
মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন, তারা দু’জনেই সেই অবস্থা থেকে মুক্তির চেষ্টা
করছেন। একজন জাতীয় নেতা হিসেবে রাজনৈতিক কাজকর্ম, চিন্তা-গবেষণা,
দায়িত্ব-কর্তব্য যেভাবে সামলেছেন- তার চাপ সুতীব্র।’ তবে ওবামা ও মিশেল
তাদের হোয়াইট হাউসের স্মৃতি নিয়ে আত্মজীবনী লিখতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আপাতত
তাই লেখালেখির প্রস্তুতিতে রয়েছেন তারা।
No comments