ট্রেনে ঢিল ছোড়া রোধে মাঠে পুলিশ
স্বাধীনতার
চেতনা ও জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রং বহন করে বর্তমানে ২২টি আন্তঃনগর ট্রেন
চলাচল করছে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা ২৭০টি নতুন বগি এসব ট্রেনে
সংযুক্ত করা হয়েছে। উদ্বেগের বিষয়, চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছুড়ে গ্লাস ভেঙে দেয়া
হচ্ছে। এসব ঢিল জানালার গ্লাস ভেদ করে ঢুকে প্রায়ই সাধারণ যাত্রীরা আহত
হচ্ছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে এর যথাযথ প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা
নেয়া হলেও ঢিল ছোড়া বন্ধ হচ্ছে না। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহ
উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, পারিবারিক শিক্ষা, সচেতনতাই কেবল পারে এমন
ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দেশের সম্পদ বাঁচাতে। নতুন আসা লাল-সবুজ রঙের
যাত্রীবাহী বগিগুলো খুবই সুন্দর ও আরামদায়ক। চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ঢিল
প্রতিরোধ করতে সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে রেলপথ
মন্ত্রণালয় থেকে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে। ট্রেনে ঢিল ছোড়া ও রেলওয়ে সম্পদ
নষ্ট করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এমন বার্তা ও সচেতনতার লক্ষ্যে লাইন সংলগ্ন
জেলার বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা ও গ্রামগুলোয় উঠান বৈঠক হচ্ছে।
জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে পুলিশ
মাঠে নেমেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ট্রাফিক ও অপারেশন বিভাগ সূত্রে জানা
গেছে, বেশিরভাগ ট্রেনেই কোনো না কোনো বগিতে গ্লাস ভাঙা রয়েছে।
পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলে চলা এসব ট্রেনগুলোয় রাতে সবচেয়ে বেশি ঢিল ছোড়া হচ্ছে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসি বগি ও কেবিনে অতিরিক্ত টাকায় টিকিট
কিনে আরাম করে যেতেও ভয় পান তারা। কখন জানি ঢিল এসে পড়বে, ভাঙা গ্লাসের
অংশ এসে চোখে-মুখে পড়বে। সিট ও হাতলও ভেঙে ফেলছে কেউ কেউ।
কয়েকজন রেল
কর্মকর্তা ও টিটি জানান, বিনা টিকিটে কিংবা সিটবিহীন টিকিট কাটা যাত্রীরা
বিভিন্ন ট্রেনে বগির সিটের হাতলে বসছে। টি-টেবিলে শিশুদের বসাচ্ছে। ফলে
টি-টেবিলগুলো ভেঙে পড়ছে। হাতলে কিংবা টি-টেবিলে বসা যাত্রী ও শিশুদের বাধা
দিলে ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম
বলেন, এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আমাদের সীমিত পুলিশ সদস্য দিয়ে
রাত-দিনই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রেলওয়ে পুলিশ, স্থানীয় পুলিশ ও
জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি স্টেশন ও সংলগ্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রসা,
হাটবাজারে সচেতনতামূলক বৈঠক হচ্ছে। ট্রেনে ঢিল ছোড়া, রেললাইনের যন্ত্রাংশ
চুরিসহ রেলওয়ে সম্পদ নষ্ট ও ধ্বংস করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। রেলওয়ে সম্পদ
রক্ষার্থে রেলপুলিশের উদ্যোগে স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার
চালানো হচ্ছে। রেলওয়ে আইনে ১২৭, ১২৮ ও ১২৯ ধারায় বলা হয়েছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক
কেউ ঢিল ছুড়লে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে সমপরিমাণ কখনও আবার দ্বিগুণ
জরিমানা আদায় করা হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ ঢিল ছুড়লে জরিমানাসহ ৩ মাস থেকে ১
বছরের জেল-জরিমানার বিধান আছে। রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্টেশন ও
ট্রেনে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,
ট্রেনের ভেতরের টয়লেটের সাবান, টিস্যু এবং ব্যবহারের সামগ্রী চুরি হয়ে
যাচ্ছে। অনেক সময় কেবিন থেকে চাদরও নিয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে অতিরিক্ত
মহাপরিচালক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, যেসব শিশু কিংবা
প্রাপ্তবয়স্ক লোক ট্রেনে ঢিল ছুড়ছে তাদের শনাক্তে পুলিশ মাঠপর্যায়ে কাজ
করছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া
রয়েছে।
No comments