চরমপন্থা দমনে ব্রাদারহুডের ভূমিকা প্রকাশ করেনি ব্রিটেন by মোহাম্মদ হাসান শরীফ
মিসরে ‘আরব বসন্ত’ সাম্প্রতিক ইতিহাসের
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। একনায়কতান্ত্রিক, স্থবির একটি অঞ্চলে নতুন করে প্রাণের
সঞ্চার করেছিল গণ-আন্দোলনটি। কেবল মিসর কিংবা মুসলিম বিশ্বেই ঘটনাটি আলোড়ন
সৃষ্টি করেনি, পুরো দুনিয়াতেই তার ছোঁয়া লেগেছিল। তিউনিশিয়ায় এর সূত্রপাত
হলেও হোসনি মোবারকের পতনই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু সেই বসন্ত
স্থায়ী হয়নি। মিসরের ‘জানুয়ারি ২৫’ নামে পরিচিত বিপ্লবটিতে মূল ভূমিকা
পালন করেছিল মুসলিম ব্রাদারহুড। তাদের ওপরই চলে আধুনিক ইতিহাসের জঘন্যতম
স্ট্রিমরোলার।
দলটির শীর্ষপর্যায়ের সব নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। একটি
আদর্শের জন্য গঠিত আন্দোলনটিকে পুরোপুরি শেষ করে দেয়ার সব চেষ্টাই করা
হয়েছে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ব্রাদারহুডও হাল ছাড়েনি। তবে তারা এখন কী
ভাবছে? কিন্তু কোন পথে তারা ঘুরে দাঁড়াবে। এ নিয়ে আন্দোলনটির অন্যতম নেতা,
সাবেক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী আমর দারাগ সম্প্রতি
আল-মনিটর নামে একটি পত্রিকায় সাাৎকার দিয়েছেন। সাাৎকারটি নিয়েছিলেন আবদেল
রহমান ইউসুফ। বর্তমান সময়ের প্রোপটে সাাৎকারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা
করে এখানে তা অনুবাদ করা হলো। অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাসান শরীফ (গত সংখ্যার পর)
আল-মনিটর : রাবিয়া আল-আদবিয়ায় ছত্রভঙ্গ করার আগে ক্যাথেরিন অ্যাশটনের সাথে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে আপনি অন্যতম প্রথম অংশগ্রহণকারী ছিলেন। রাবিয়া আল-আদবিয়ার ছত্রভঙ্গ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? এবং কেন? আমর দারাগ : উভয় েেত্রই এর কাজকারবার খুবই হতাশাজনক। কারণ রাবিয়ায় ছত্রভঙ্গ করার আগে পর্যন্ত আলোচনা মূলত যেসব বিষয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিল সেগুলো হলো বর্তমান সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যাবে এবং কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘটের অবসান ঘটবে এবং একই সাথে রাজপথের ‘বিপ্লবী’দের দাবিও পূরণ হবে। কিন্তু অ্যাশটন এবং ইউরোপিয়ান ও মার্কিন অন্যান্য কর্মকর্তা যে বার্তা বহন করছিলেন তাতে বলা হয়েছিল, আমাদের বর্তমানে বিরাজমান (অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে) স্থিতাবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এমনকি জনগণের নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট এবং একটি সংবিধান থাকা সত্ত্বেও, সামরিক বাহিনী উভয়টিই বাতিল করে দিয়েছিল। এটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রমাণ করেছিল, অপরাধকারীদের কোনো ধরনের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ছাড়াই চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উল্টিয়ে দেয়ার বিষয়টি গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ছিল।
আল-মনিটর : রাবিয়া আল-আদবিয়ায় ছত্রভঙ্গ করার আগে ক্যাথেরিন অ্যাশটনের সাথে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে আপনি অন্যতম প্রথম অংশগ্রহণকারী ছিলেন। রাবিয়া আল-আদবিয়ার ছত্রভঙ্গ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? এবং কেন? আমর দারাগ : উভয় েেত্রই এর কাজকারবার খুবই হতাশাজনক। কারণ রাবিয়ায় ছত্রভঙ্গ করার আগে পর্যন্ত আলোচনা মূলত যেসব বিষয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিল সেগুলো হলো বর্তমান সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যাবে এবং কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘটের অবসান ঘটবে এবং একই সাথে রাজপথের ‘বিপ্লবী’দের দাবিও পূরণ হবে। কিন্তু অ্যাশটন এবং ইউরোপিয়ান ও মার্কিন অন্যান্য কর্মকর্তা যে বার্তা বহন করছিলেন তাতে বলা হয়েছিল, আমাদের বর্তমানে বিরাজমান (অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে) স্থিতাবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এমনকি জনগণের নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট এবং একটি সংবিধান থাকা সত্ত্বেও, সামরিক বাহিনী উভয়টিই বাতিল করে দিয়েছিল। এটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রমাণ করেছিল, অপরাধকারীদের কোনো ধরনের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ছাড়াই চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উল্টিয়ে দেয়ার বিষয়টি গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ছিল।
পরেও এটা চলতে থাকে। এমনকি অভ্যুত্থান চালানো সরকারকে
সরাসরি সমর্থন প্রদান এবং বৈধতাও দেয়া হয়। এখনো তা দেখা যায় এবং চলছে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সবধরনের
রীতিনীতির পুরোপুরি লঙ্ঘন এটা। অথচ বিরাজমান স্বার্থ রা, অস্ত্র বিক্রি
কিংবা অর্থনৈতিক চুক্তির সময় এসব মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপিয়ান
ইউনিয়ন সবসময় আহ্বান জানিয়ে আসছিল। এমনকি অভ্যুত্থানের দুই মাস পর
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মিসরে বিােভ দমনে ব্যবহার হতে পারে এমন অস্ত্র ও সরঞ্জাম
বিক্রি না করার যেসব বিধিনিষেধ ও সুপারিশ পেশ করেছিল, সেগুলোও বাস্তবায়িত
হয়নি। বাস্তবতা হলো, তারা যেসব কাগজ ছাপিয়েছিল, তারা নিজেরাই সেগুলোর
ন্যূনতম দামও দেয়নি। সাধারণ অবস্থান ছিল, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতিমালার
সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর বদলে অভ্যুত্থানের হোতাদের সমর্থন দেয়া।
এমনকি দমন কার্যক্রমের ফলে ইউরোপিয়ান নাগরিকদের পর্যন্ত, গুইলিও রেগেনি বা
এরিক লাঙ, আটকাবস্থায় এই ফরাসি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন, আঘাত হানছিল।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই নিপীড়নকারী সরকারের নির্মমতা থেকে তার নাগরিকদের রা
করতে দৃঢ় কোনো অবস্থান নিতে পারেনি। আল-মনিটর : ব্রাদারহুড নিয়ে হাউস
জুডিশিয়ারি কমিটির ব্রিটিশ রিপোর্ট ও সুপারিশমালা আমেরিকান কংগ্রেসে নিয়ে
যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে কিছু বলুন? আমর দারাগ : নীতিগতভাবে, রাজনৈতিক
পর্যায়ে দু’টি অবস্থার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে দু’টির মধ্যে অভিন্ন যে
রূপটি রয়েছে তা হলো, উভয় প্রতিবেদনই উপসাগরীয় দেশগুলো এবং বিশেষ করে
(সংযুক্ত আরব) আমিরাতের কাছ থেকে, আমেরিকায় তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা লবির
মাধ্যমে, চাপের ফসল। প্রতিবেদন দু’টির ভাষ্য কিংবা তাতে প্রতিফলিত
বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা থাকলেও আসল বিষয় সেটাই। আল-মনিটর : পার্থক্যটা বুঝিয়ে
বলবেন কি? আমর দারাগ : ব্রিটিশ প্রতিবেদনের েেত্র বলা যায়, প্রত্যেকেই
জানে, ব্রিটেনের অভ্যন্তরে আমিরাতের অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থের বিশাল
অবকাশ রয়েছে।
তারা সরাসরি চাপ প্রয়োগ করেছে, এর ফলেই ব্রিটেনে মুসলিম
ব্রাদারহুডের তথাকথিত পুনর্মূল্যায়ন শুরু হয়। অধিকন্তু, তদন্তের ঘটনাস্থল
ছিল খোদ ব্রিটেন এবং ব্রিটেনের ওপর স্থানীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব। এই
প্রতিবেদনের রাজনৈতিক দিক থেকে প্রাথমিক ল্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ
প্রয়োগকারী দেশগুলো। এ কারণেই তারা বছর দেড়েক প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ করে
কেবল হঠকারী সারাংশটুকু প্রকাশ করেছে। তারা মূলত মূল তদন্ত শেষ হওয়ার পর
এবং অন্য কাউকে নতুন করে তদন্ত শুরু করার সুযোগ না দিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর
নির্ভর করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই এটা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, বিশেষ করে মূল
প্রতিবেদনে মুসলিম ব্রাদারহুড-সম্পর্কিত ইতিবাচক দিকগুলো প্রকাশ না করাটা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চরমপন্থা মোকাবেলায় ব্রাদারহুড যে ইতিবাচক ভূমিকা
পালন করেছিল, তার বেশ কয়েকটি জোরালো প্রমাণ মূল প্রতিবেদনে থাকলেও তা
প্রকাশ করা হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে
(ব্রাদারহুডের) কিছু কার্যক্রম চরমপন্থার দিকে চালিত করতে পারে, যদিও এসবের
কোনো কিছুর জন্যই ব্রাদারহুডকে দায়ী করা হয়নি। (চলবে)
No comments