সগৌরবে চলিতেছে, মণি সিংহের ‘বাঁশের দালান’ by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

ষাটের দশকে গ্রাম থেকে টাঙ্গাইল শহরে এলে দেখতাম, একজন লোক একটা রিকশায় মাইক লাগিয়ে টেনে টেনে কথা বলে কোনো সিনেমার প্রচার করছে। তার মাইকের মাউথপিসের ওপরে থাকত একটি রুমাল লাগানো। কেন, বলতে পারি না। মাইকটা থাকত রিকশার পেছন দিকে। পাদানির ওপরে থাকত একটা বড় আকারের ব্যাটারি। লোকটা অক্লান্তভাবে বলে যেত, ‘হ্যাঁ ভাই, রওশন টকিজে সগৌরবে চলিতেছে নাচে-গানে ভরপুর, সপরিবারে দেখার মতো ছবি বনবাসে রূপভান, বনবাসে রূপভান।’
আমি অবাক হয়ে শুনতাম। সিনেমা চলবে। তা আবার সগৌরবে কেন? বুঝতে পারতাম না। কিন্তু তার টেনে টেনে বলা কথাগুলো বেশ লাগত। একা একাই হাসতাম। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়, যখন মাইক লাগিয়ে টেনে টেনে কেউ বলবে, “হ্যাঁ ভাই। চুয়াডাঙ্গায় চলছে সাসপেন্সে ভরপুর সপরিবারে দেখার মতো ছবি মণি সিংহ পরিচালিত বাংলাদেশের অষ্টম আশ্চর্য ‘বাঁশের দালান’।” আমাদের অনেকের মধ্যে একটি বাজে মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। আর তা হলো আওয়ামী লীগকে সব সময় ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধী বলে গাল দেয়া। এটা কিছুতেই ঠিক নয়। আওয়ামী লীগের একেবারে শীর্ষপর্যায়ের দু-একজন নেতা ছাড়া নি¤œপর্যায়ের নেতারা বিশেষভাবে ঐতিহ্যমুখী। এর অমূল্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মণি সিংহ।
তার আগেও আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল খালেক ও জুয়েল মিয়াও একই কাজ করে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সে জন্য তারা নমস্য ব্যক্তি হতে পারেন। তাদের গলায় ফুলের মালা দিয়ে হাতিতে চড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরানো যেতে পারে। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোকে বাধ্য করা যেতে পারে এদের এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতে। এর আগেও আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মুন্সীগঞ্জে তাজমহলের কুশপুতুল নির্মাণ করে এখন টিকিটের বিনিময়ে হাজার হাজার লোককে তা প্রতিদিন দেখিয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের ঐতিহ্যবিমুখ বলা সঙ্গত হবে না। তার পরও আমাদের বলতে মুখে একটুও আটকায় না যে, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবিরোধী রাজনৈতিক দল। তার একটি অনন্যদষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মনি সিংহ। পেশায় হালে তিনি একজন ঠিকাদার। আওয়ামী আমলে ঠিকাদারি খুবই মজাদার ব্যবসা। যোগ্যতা লাগে না, অভিজ্ঞতা লাগে না। ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন অস্ত্রবাজ মাস্তান ভাড়া করতে পারলেই হলো। তারাও ভাড়া খাটার জন্য অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষায় আছে। আর কেউ যাতে টেন্ডার ফেলতেই না পারে, তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আছে।
চেয়েও মজার ব্যাপার হলো এই যে, টেন্ডার পেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কাজ করতে হয় না। বিল তুলে নেয়া যায়। এর চেয়ে মজার পেশা আর আছে! না, এমন কথা বলা অন্যায় হবে যে, এরা শুধু টাকার পেছনেই দৌড়াচ্ছে, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন আওয়ামী নেতা মণি সিংহ ও আবদুল খালেক। গাইবান্ধার মেঘডুমুর সরকারি প্রাইমারি স্কুলসহ আটটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শৌচাগারসহ নির্মাণকাজের টেন্ডার পেয়েছেন আবদুল খালেক। এ ক্ষেত্রে তারা বাংলার বিপ্লবী নেতা তিতুমীরের আদর্শ অনুসরণ করে ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ব্যবহার করে ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাতে সারা দেশে তার নামে আর আওয়ামী সরকারের নামে ধন্য ধন্য পড়ে গেছে। ইতিহাস-অচেতন কোনা কোনো বেকুব প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, এটা কী করে সম্ভব? যদি এই দেওয়াল বা ছাদ শিশুদের ওপর ভেঙে পড়ত। এসব লোকের কাণ্ডজ্ঞানের সত্যি অভাব রয়েছে। তাদের কি একবারও মনে হলো না যে, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা কী ভেঙে পড়েছিল?
তিতুমীর ১৭৮২ সালে ২৪ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর (মতান্তরে হায়দরপুর গ্রামে) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন সৈয়দ মীর হাসান আলী আর মাতা ছিলেন আবিদা রোকাইয়া খাতুন। তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন এবং ইসলামের চার খলিফার অন্যতম হজরত আলী রা:-এর বংশধর ছিলেন। তার পূর্বপুরুষেরা ইসলাম প্রচারের জন্য এ দেশে এসেছিলেন। তিতুমীরের প্রপিতামহ ছিলেন মুঘলদের আমলে জাফরপুরের কাজী। তার ন্যায়বিচারের জন্য মুঘল রাজদরবার থেকে তাকে ‘কাজী ইনসাফ’ খেতাব দেয়া হয়েছিল। তিতুমীরের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল স্থানীয় মক্তবে। তারপর তিনি লেখাপড়া করেন মাদরাসায়। সেখানে তিনি হয়েছিলেন কুরআনে হাফেজ। তিনি বাংলা, আরবি, ফারসি এই তিন ভাষা রপ্ত করেছিলেন। তিনি এ সময় আরবি ফারসি সাহিত্যেও প্রভূত জ্ঞানার্জন করেন। জ্ঞানার্জন করেন ইসলামের অন্তর্নিহিত বাণীর ওপর। শারীরিক শক্তিতেও তিনি ছিলেন একজন পাহলোয়ান। তিতুমীর ১৮২২ সালে হজব্রত পালনের জন্য মক্কা যান। সেখানে গিয়ে তার সাক্ষাৎ হয় বিখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ বেইরেলির সৈয়দ আহমদের সঙ্গে।
সৈয়দ আহমদ তাকে দেশে ফিরে তাঁতি ও কৃষকদের মধ্যে ধর্মপ্রচার ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৮২৭ সালে তিতুমীর দেশে ফিরে আসেন। স্বদেশে ফিরে তিনি ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলা এলাকার মুসলমানদের র্শিক ও বেদাত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাতে থাকেন। সংগঠিত করতে থাকেন অত্যাচারিত রায়ত, কৃষক আর তাঁতিদের। এই পর্যায়ে তার সঙ্ঘাতের শুরু হয় পুর্থার জমিদার কৃষ্ণদেব রাইয়ের সাথে। গোবর্ধনের ভূস্বামী গৌরীপ্রসাদ চৌধুরী, কামদাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সাথেও তার বিরোধ ও সংঘর্ষ বাধে। তারা দলবল নিয়ে তিতুমীরের আস্তানায় হামলা চালালে তিতুমীরের অনুসারীরা তাদের পিটিয়ে পিছু হটিয়ে দেন। এ সময় তিতুমীর হিন্দু জমিদারদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় না। ১৮৩১ সালের অক্টোবরে তিতুমীর নারকেলবাড়িয়ায় বাঁশ দিয়ে এক শক্তিশালী দুর্গ বা কেল্লা নির্মাণ করেন। 
সেখানে তিনি তার অনুসারী মুজাহিদদের লাঠিয়ালের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার অনুসারী লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যসংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তিনি নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা করেন এবং ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। শিগগিরই তিনি ২৪ পরগনা, নদিয়া ও ফরিদপুর জেলায় তার আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি টাকি ও গোবরডাঙ্গার জমিদারদের কাছে কর দাবি করেন। এই জমিদারেরা নিজেরা তিতুমীরের সাথে পেরে না উঠে তখন ইংরেজের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এরপর কলকাতা থেকে ইংরেজদের একটি বাহিনী তিতুমীরকে দমন করতে বশিরহাটে পাঠানো হয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় জমিদারদের বাহিনীও।
কিন্তু তিতুমীরের বাহিনী বেশ কয়েকবার তার বাহিনী দিয়ে হানাদারদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে নিপীড়ক জমিদারদের আহ্বানে উইলিয়াম বেনটিক লে. কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযানে ১০০ অশ্বারোহী, ৩০০ পদাতিক বাহিনী ও দু’টি কামান দিয়ে নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা এলাকায় পাঠান। এই বাহিনী ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ তিতুমীরের মুজাহিদ বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। মুজাহিদ বাহিনী বাঁশের কেল্লার ভেতর থেকে হামলার প্রতি উত্তর দিতে থাকেন। এর পরও কেবল লাঠি হাতে তিতুমীরের বাহিনী ছয় দিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। শেষে ব্রিটিশ বাহিনীর কামানের গোলায় বাঁশের কেল্লাটি ১৯ নভেম্বর ১৮৩১ ধ্বংস হয়ে যায়। তিতুমীরসহ প্রায় সাড়ে তিন শ’ মুজাহিদ এই যুদ্ধে শহীদ হন। তিতুমীরের মুজাহিদ বাহিনী প্রধান গোলাম মাসুমের ফাঁসি হয়। আর ১৪০ জন মুজাহিদকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার পরও কেন আওয়ামী নেতা মণি সিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে বোঝা মুশকিল।
চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা পৌরভবনের পাশে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কার্যালয়ের পাঁচতলা ভবন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় গত এপ্রিলে। পাঁচ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ পায় আওয়ামী নেতা মণি সিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঢালাই করতে দেখতে পান স্থানীয়রা। এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ঠিকাদারের লোকদের। পরে উত্তেজিত জনতা ঢালাই ও পিলার ভেঙে ফেলে। বন্ধ করে দেয়া হয় নির্মাণকাজ। এ নিয়ে যখন তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, তখন আরেক আওয়ামী ঐতিহ্যপ্রেমী ঠিকাদার আবদুল খালেক গাইবান্ধায় স্কুলের শৌচাগার নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করে বাঁশ ব্যবহারের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বসেন। ব্রিটিশ কামান-বন্দুকের বিরুদ্ধে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা যদি ছয় দিন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে মণি সিংহ রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করায় এত হইচই ফেলে দেয়ার কারণ কী? রডের বদলে বাঁশের এ ভবন তো ছয় শ’ বছর টেকার কথা। কারণ ব্রিটিশের মতো এখানে তো কেউ আর কামান বন্দুক নিয়ে লড়াই করতে আসছে না।
তার পরও এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক আওয়ামী নেতা মণি সিংহকে আটক করা হয়েছিল। জানি না ইতোমধ্যে তিনি ছাড়া পেয়ে আবার বাঁশের কারবার শুরু করেছেন কি না। এ ক্ষেত্রে চোরে চোরে মাসতুতো ভাইদের গল্পও আমরা শুনেছি। বাংলাদেশ ফাইটোস্যানিটেশন শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের অধীনে এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। তারা বলেছেন, মণি সিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের কোনো দায় তারা নেবে না। তাহলে তাদের দায়িত্বই বা কী? পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবদুস সাত্তার বলেছেন, ‘আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করতেই কোনো মহল এ ঘটনা ঘটাতে পারে। আমরা যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নয়, আমরা সরাসরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ীও করছি না। আবার আমরা ঠিকাদারের কোনো দায়ও নিচ্ছি না।’ সাত্তার বলেন, ‘১৭০ লুবারের মধ্যে তিনটিতে বাঁশ দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো ঠিক আছে।
যেটুকু অংশে বাঁশ দেয়া হয়েছে, তাতে রডের প্রয়োজন হতো পাঁচ কেজি। পাঁচ কেজি রডের জন্য কেউ বাঁশ দেয় না। পুরো ভবনে এমন ত্রুটি পাওয়া গেলে ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লিমিটেড সব দায় নেবে।’ একবার তিনি বলছেন, বাঁশের দায় নেবেন না। আবার বলছেন, মাত্র পাঁচ কেজি রড লাগত। আবার বলছেন, পুরো ভবনে যদি বাঁশ দেয়া হয়ে থাকে তবে দায় নেবেন। এখন তাহলে কি পুরো ভবন ভেঙে দেখতে হবে রড আছে নাকি বাঁশ দেয়া হয়েছে? চোরের এই মাসতুতো ভাইদের কে আইন ও বিচারের আওতায় আনবে? এমন ঘটনা একটা-দুটো নয়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটছে। আর সব ক্ষেত্রেই মাসতুতো ভাইয়েরাও সক্রিয় আছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কাথাচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন গত অর্থবছরে নির্মাণ করে এলজিইডি। ৩৭ লাখ টাকায় এই ভবন নির্মাণ করেছেন আওয়ামী ঠিকাদার জুয়েল মিয়া। ভবনটি উদ্বোধনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সময়সূচি পাওয়ার আগে থেকেই এর পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করে। উদ্বোধনের আগেই স্থানীয়রা ভবনটির দেয়াল, পিলার, ছাদ, মেঝেতে ফাটল দেখতে পান। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর খসে পড়তে শুরু করে পলেস্তারা।
নির্মাণকাজ যখন হচ্ছিল, তখন প্রধানশিক্ষক প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেছিলেন, কাজ নিম্নমানের হচ্ছে। কিন্তু মাসতুতো ভাই ওই প্রকৌশলী তা আমলে নেননি। ফলে ভবনটি মন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে ছ্যাপ দিয়ে ল্যাপ দেয়া হয়। গণতন্ত্র হত্যা করে সরকার উন্নয়নের যে জোয়ার দেখাতে চাইছে, তা যে সম্পূর্ণরূপে ক্ষণস্থায়ী, ভিত্তিহীন এবং তার পলেস্তারা যে খসে পড়তে শুরু করেছে, সরকার তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। উপলব্ধি করতে পারে জবাবদিহিতা ছাড়া এই সরকারেরও পলেস্তারা খসে পড়তে আর বেশি বাকি নেই। এ সম্পর্কে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, ‘এখন যেসব ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হচ্ছে, তাদের নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আর তারাই মনে করেন যে, নির্মাণকাজে রডের বদলে বাঁশ দিলে কোনো ক্ষতি নেই।
অথচ যেকোনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাজ সুপারভিশন হওয়ার কথা। ছোট কনট্রাক্টরেরা সাধারণত সবসময় এ কাজগুলোর তত্ত্বাবধান করেন। আর তার ওপরের কনট্রাক্টররা এ কাজগুলোর তত্ত্বাবধান করেন মাঝে মধ্যে। এখন সব লেভেলেই গাফিলতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কাজের তত্ত্বাবধান না থাকায় কিছু দিন পরই নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা অবকাঠামোগুলোর কংক্রিট খসে পড়তে শুরু করে। তখন এগুলো আবারো তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অথচ দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ ব্যাপারে যে ঠিকাদারেরা দায়িত্বে থাকেন, তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ এই জনপ্রতিনিধিত্বহীন জবাবদিহিতাহীন সরকারের পক্ষে তা কি আদৌ কখনো সম্ভব হবে?
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.