স্মরণ : সাংবাদিক মাহবুবুল হক

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মাহবুবুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। মাহবুবুল হক ছিলেন শ্রমিক নেতা ও সংবাদপত্র ব্যবস্থাপকও। স্থানীয় আমিরাবাদ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৩৯ সালে। এরপর তদানীন্তন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েতে টালিকার্ক পদে চাকরি নেন। অচিরেই রেলওয়ে শ্রমিক-আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিত হন। তিনি ১৯৫০ সালের সিরাজগঞ্জ রেলকর্মী সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা। এ সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগ’ গঠিত হলে এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৫৫-৭১ সময়ে এ সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষক-শ্রমিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফেনী থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টের সরকারবিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন দেশপ্রেম, সাহস ও বাগ্মিতার সাথে।

১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ১৯৬৫ ও ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই প্রথিতযশা সাংবাদিক ফেনী থেকে ১৯৫৭ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক পল্লীবার্তা। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় কমার্শিয়াল ম্যানেজার পদে যোগ দেন। পল্লীবার্তা ফেনী থেকে ঢাকায় অবজারভার অফিসে স্থানান্তরিত হলে অবজারভার গ্রুপের পত্রিকা হিসেবে এটি সাপ্তাহিক পূর্বদেশ নামে তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬২ সালে অবজারভার গ্রুপের ম্যানেজিং এডিটর নিযুক্ত হন।

১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট তার উদ্যোগে পূর্বদেশ সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রূপান্তর হয়েছিল। এ পত্রিকার একাধারে সম্পাদক ও ব্যবস্থাপক পরিচালক (১৯৬৯-১৯৭১) ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা পালনের অভিযোগে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে পূর্বদেশের সম্পাদকের পদ থেকে অপসারিত ও গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৭৩ সালের জুন পর্যন্ত জেলে থাকায় স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক জনপদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। সাংবাদিকতাসহ ও রেলওয়ে শ্রমিক আন্দোলন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকে পূর্ব বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন তার বিরাট অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৬০ সালের প্রথম দিকে জাতীয় পরিষদের বক্তৃতায় এবং পত্রিকায় লেখনীর মাধ্যমে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের শোষণ ও শাসন চালানোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। মৃত্যু ঢাকায় ৫ জুন, ১৯৭৪ সালে।