সবার চেয়ে আলাদা অনন্য আলী
দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী। দু’জনই আজ প্রয়াত ফাইল -ছবি |
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালি এক ভদ্রলোকের জন্যই কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী ঢাকায় এসেছিলেন। তখন বিশ্বজুড়ে সবাই এক নামে চেনে আলীকে। এমন একজন ক্রীড়া তারকাকে বাংলাদেশ সফরে রাজি করানোর পর নিউইয়র্ক প্রবাসী ওই ভদ্রলোক সহযোগিতা চাইলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তৎকালীন সরকার থেকে মিলল সবুজ সংকেত। ঢাকায় এলেন মোহাম্মদ আলী। বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখা তিনিই প্রথম বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের বড় তারকা। সালটা ছিল ১৯৭৮। ঢাকার মাটিতে মোহাম্মদ আলীর পা রাখার অনেক আগেই আমরা ছুটে গিয়েছিলাম বিমানবন্দরে। ক্রীড়া সাংবাদিকতা তখন আজকের মতো ছিল না। বেশির ভাগ পত্রিকাতেই খেলাধুলার জন্য আলাদা পাতা বরাদ্দ থাকত না। সাংবাদিক হিসেবে যারা সেদিন বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাদের বেশির ভাগই
কোনো না কোনো পত্রিকার সম্পাদক, কিংবা জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। আলীকে একনজর দেখার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে সেদিন জনতার ঢল নেমেছিল। কী রকম, সেটা এই প্রজন্মের ক্রীড়ামোদিদের বলে বোঝানো মুশকিল। আলীর আগমনের দিনও একই অবস্থা হয়েছিল ঢাকার। তাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তার দুই ধারে ঢল নেমেছিল মানুষের। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল ঢাকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছিল বড় বড় ব্যানার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বের করা হয়েছিল বিভিন্ন স্যুভেনির। ঢাকার পুরনো বিমানবন্দরে এক লাখ দর্শক তাকে যে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা জানায়- আলী আর কোথাও তা পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তার হোটেল ও অন্য স্থানে তার সংবাদ কভারের জন্য কোনো কোনো পত্রিকা চারজন থেকে ছয়জন সাংবাদিক নিয়োগ করে। বক্সার আলী বেছে বেছে প্রশ্নের উত্তর দেন। এত বড় মাপের একজন ক্রীড়াবিদকে সামনে পেয়ে কেউ কেউ সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। হাসির খোরাক জোগায়, এমন প্রশ্নও করা হলো তাকে, ‘মে আই নো, হাউ মেনি কাউস অ্যান্ড গোটস ইউ হ্যাভ ইটেন ইন ব্রেকফাস্ট।’ আমার স্পষ্ট মনে আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন আলী।
আমারও প্রশ্ন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সে সময় তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে প্রথম লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন। পরে টানা দুবার হারিয়েছিলেন ফ্রেজিয়ারকে।
: তুমি কি আবারও ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে রিংয়ে নামতে চাও?
: না। তার সঙ্গে আর কখনোই লড়ব না আমি। ঢাকায় আসার আগের দিন নিউইয়র্কে এক লড়াইয়ে রিংয়ে নেমেছিলেন আলী। প্রতিপক্ষ ছিলেন লিওন স্পিংকস। দুর্ভাগ্য, পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। সে লড়াইয়ের ছাপ ছিল মুখাবয়বে। কালচিটে দাগ ছিল কোথাও কোথাও। কিন্তু সেসব ছাপিয়েও ঢাকার আতিথেয়তায় মুগ্ধতা ফুটে উঠেছিল তার অভিব্যক্তিতে। পরদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হল মোহাম্মদ আলীকে। সেখানেও জনতার ঢল। সে সময়ের ঢাকার মেয়র ছিলেন ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত। তিনি সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে বরণ করে নেন অতিথিকে। পল্টনে আজ যে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম দেখতে পাই, সেটির উদ্বোধন করেন খোদ আলীই। সম্মান দেখিয়েই তার নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। বক্সিং স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের দিন গ্লাভস পরে রিংয়ে নেমেছিলেন আলী। প্রতিপক্ষ হিসেবে এক কিশোরকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল রিংয়ে। যতক্ষণ রিংয়ে ছিলেন আলী বেশ আনন্দ দিয়ে যাচ্ছিলেন দর্শকদের। কিশোর ওই বক্সারের পাঞ্চে একবার মেঝেতেও পড়ে গেলেন আলী! আলীকে ঘিরে ঢাকার দর্শকদের যে উন্মাদনা ও স্বতঃস্ফূর্ততা, তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতেই যেন পেশাদারির খোলস ভেঙে রিংয়ে আলীর ওই পড়ে যাওয়া। এখানেই আলী অনন্য, সবার চেয়ে আলাদা।
কোনো না কোনো পত্রিকার সম্পাদক, কিংবা জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। আলীকে একনজর দেখার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে সেদিন জনতার ঢল নেমেছিল। কী রকম, সেটা এই প্রজন্মের ক্রীড়ামোদিদের বলে বোঝানো মুশকিল। আলীর আগমনের দিনও একই অবস্থা হয়েছিল ঢাকার। তাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তার দুই ধারে ঢল নেমেছিল মানুষের। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল ঢাকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছিল বড় বড় ব্যানার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বের করা হয়েছিল বিভিন্ন স্যুভেনির। ঢাকার পুরনো বিমানবন্দরে এক লাখ দর্শক তাকে যে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা জানায়- আলী আর কোথাও তা পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তার হোটেল ও অন্য স্থানে তার সংবাদ কভারের জন্য কোনো কোনো পত্রিকা চারজন থেকে ছয়জন সাংবাদিক নিয়োগ করে। বক্সার আলী বেছে বেছে প্রশ্নের উত্তর দেন। এত বড় মাপের একজন ক্রীড়াবিদকে সামনে পেয়ে কেউ কেউ সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। হাসির খোরাক জোগায়, এমন প্রশ্নও করা হলো তাকে, ‘মে আই নো, হাউ মেনি কাউস অ্যান্ড গোটস ইউ হ্যাভ ইটেন ইন ব্রেকফাস্ট।’ আমার স্পষ্ট মনে আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন আলী।
আমারও প্রশ্ন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সে সময় তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে প্রথম লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন। পরে টানা দুবার হারিয়েছিলেন ফ্রেজিয়ারকে।
: তুমি কি আবারও ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে রিংয়ে নামতে চাও?
: না। তার সঙ্গে আর কখনোই লড়ব না আমি। ঢাকায় আসার আগের দিন নিউইয়র্কে এক লড়াইয়ে রিংয়ে নেমেছিলেন আলী। প্রতিপক্ষ ছিলেন লিওন স্পিংকস। দুর্ভাগ্য, পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। সে লড়াইয়ের ছাপ ছিল মুখাবয়বে। কালচিটে দাগ ছিল কোথাও কোথাও। কিন্তু সেসব ছাপিয়েও ঢাকার আতিথেয়তায় মুগ্ধতা ফুটে উঠেছিল তার অভিব্যক্তিতে। পরদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হল মোহাম্মদ আলীকে। সেখানেও জনতার ঢল। সে সময়ের ঢাকার মেয়র ছিলেন ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত। তিনি সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে বরণ করে নেন অতিথিকে। পল্টনে আজ যে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম দেখতে পাই, সেটির উদ্বোধন করেন খোদ আলীই। সম্মান দেখিয়েই তার নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। বক্সিং স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের দিন গ্লাভস পরে রিংয়ে নেমেছিলেন আলী। প্রতিপক্ষ হিসেবে এক কিশোরকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল রিংয়ে। যতক্ষণ রিংয়ে ছিলেন আলী বেশ আনন্দ দিয়ে যাচ্ছিলেন দর্শকদের। কিশোর ওই বক্সারের পাঞ্চে একবার মেঝেতেও পড়ে গেলেন আলী! আলীকে ঘিরে ঢাকার দর্শকদের যে উন্মাদনা ও স্বতঃস্ফূর্ততা, তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতেই যেন পেশাদারির খোলস ভেঙে রিংয়ে আলীর ওই পড়ে যাওয়া। এখানেই আলী অনন্য, সবার চেয়ে আলাদা।
No comments