অবসরে ভাবি কী ভুল হলো
প্রচণ্ড
ব্যস্ত যাদের জীবন। তাদেরও থাকে অবসর। সেই অবসর তাদের কিভাবে কাটে তা
জানতেই এ আয়োজন। এবার কথা বলেছেন দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব
আবুল হায়াত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাকিবুল হাসান আবুল হায়াত। দেশীয়
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় নাম। প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করলেও তিনি
ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন অভিনয়কে। নাট্যকার, নাট্যপরিচালক হিসেবেও তিনি
সফল। লিখেন কলামও। পূর্বপুরুষের বাড়ি মুর্শিবাদ।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময়
তাদের পরিবার এ দেশে চলে আসে। তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের কিয়দাংশ কেটেছে
চট্টগ্রামে। আর এখন রাজধানী ঢাকায়। গুণী এই মানুষটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম
অবসর কিভাবে কাটে? কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দিলেন, অবসর কই, সারক্ষণই তো
ব্যস্ত থাকতে হয় নানা কাজ নিয়ে। যখন ঘুমাতে যাই, মনে হয় একটা বই পড়ি, না হয়
গান শুনি। আর অন্য সময় রুটিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই বলার মতো কোনো
অবসর আমার নেই। তাহলে ব্যস্ত এই সময় থেকে একটু অবসর খুঁজে নেয়ার ভাবনা কি
কখনো চিন্তায় আসে না? চিন্তা তো সব সময়ই আসে। ইচ্ছে করলে সময় বেরও করা যায়,
কিন্তু আমার কাছে অবসরে ‘নিজেকে বেকার’ মনে হয়। তাই ওই সময়টা ইচ্ছে করেই
খুঁজতে যাই না। তবে হ্যাঁ, সামান্য অবসর পেলে ভাবি কী ভুল হলো সেটা নিয়ে।
আবুল হায়াত বলেন, ভুল করে অনেকে পার পেয়ে যান, আবার অনেককে গুনতে হয় ভারী
মাশুল।
আবার কিছু মানুষ আছেন, যারা অন্যের ভুলের ফসল অনায়াসে নিজের ঘরে
তুলতে ওস্তাদ। প্রকৃতির প্রতিশোধের কারণে আবার কখনো তাদের এ অন্যায়ের ফলও
ভোগ করতে হয়। গুণী এই অভিনেতা বলেন, ছোটবেলায় স্কুলে একটা ভুল করেছিলাম এবং
হাতে হাতে তার শাস্তি পেয়েছিলাম এভাবেÑ পণ্ডিত স্যারের কাসে ভুল বানান
লিখেছিলাম ভুল। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তখন আমি।
অবশ্য এ ভুলটা তখন আমি একা করিনি। সঙ্গী ছিল আরো কয়েকজন। হাতে হাতে শাস্তি।
স্যার বোর্ডে একটা বাক্য লিখে দিলেন এবং নির্দেশ দিলেন ওই বাক্যটা দশবার
লিখে দেখাতে হবে তাকে। বাক্যটা ছিল এমনÑ ‘ভুল বানান লিখিতে জীবনে কোনো দিন
ভুল করিয়াও ভুল করিব না।’ তারপর মনে হয় না আর কোনো দিন এ ভুল করেছি আমি।
তবে নানা ভুল তো হরদম হয়েই থাকে। ইদানীং একই ভুল আমার নিয়মিত হচ্ছে। সকালে
বাসা থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর মনে পড়ে হয় মোবাইল ফেলে এসেছি না হয়
হাতঘড়ি না হয় নাটকের স্ক্রিপ্ট। এগুলো নাকি বুড়ো হওয়ার লণ। তা বুড়ো তো
হয়েছিই। একাত্তর চলছে না।
তবে ভুলের সাথে বয়সকে মেলাতে চান না। আমি যখন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার এক বন্ধু খুলনায় থাকত। তাকে চিঠি লিখে জিপিওতে
গিয়ে খাম কিনে ঠিকানা লেখে পোস্ট করে রাস্তায় বেরিয়ে এসে পকেট হাতড়ে দেখি,
বাবার সদ্য পাঠানো এক শ’ টাকার নোটটা চিঠির সাথে বন্ধুর কাছে পোস্ট করে
দিয়েছি। তার পরের ঘটনা আর কী বলব! পোস্ট অফিসে ফিরে গিয়ে তাদের হাতে-পায়ে
ধরে মেলা রকম প্রমাণ দিয়ে বের করতে পেরেছিলাম টাকাটি। আসলে নিরুপায় ছিলাম
আমি, কারণ ওই এক শ’ টাকা ছিল সারা মাসের খরচ। তিনি কথার শেষ প্রান্তে এসে
জানান, ছুটির দিনে বাসায় যদি মেয়েরা নাতি-নাতনীদের নিয়ে আসে তা হলে সময়টা
অনেক উপভোগ্য হয়। তা ছাড়া নাটকের সেটে সময় কাটাতেও ভালো লাগে তার।
No comments