একটুখানি বৃষ্টি হলেই...by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
খোঁড়াখুঁড়িতে বেহাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন সড়ক। |
পল্লীকবি
জসীমউদদীন তাঁর বিখ্যাত ‘আসমানী’ কবিতায় লিখেছেন—‘বাড়ি তো নয় পাখির বাসা
ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি’। এই ছোট্ট
পঙক্তিতেই আসমানীদের দুর্ভোগ ধারালো খড়গের মতো দৃশ্যমান। ছাউনি জুতসই না
হলে যেমন আসমানীরা ভোগে, তেমনি সড়ক ভালো না হলে পথচারী তথা নগরবাসীর
দুর্ভোগের শেষ নেই। আর এই দুর্ভোগের ষোলোকলা পূর্ণ হয় একটুখানি বৃষ্টি
হলেই। গত শুকনো মৌসুমের পুরোটাজুড়েই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাড়ম্বরে
পানির পাইপ স্থাপনের কাজ হয়েছে। এতে দফায় দফায় বিভিন্ন রাস্তা ও গলিপথে
পথচারী এবং যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এর মথ্যে বিপত্তিকর ছিল বড় বড়
গর্ত। অনেক এলাকায় এসব গর্ত ভালোভাবে বোজানো হয়নি। রাবিশ আর ময়লা ফেলায়
সেগুলো বাড়তি বিড়ম্বনা তৈরি করেছে। আবার কোনো কোনো গর্ত রাস্তার চেয়ে উঁচু
স্ল্যাব দিয়ে এমনভাবে ঢাকা হয়েছে, রাতবিরেতে পথচারীর হোঁচট খেয়ে হাত-পা
ভাঙা বা নাক-মুখ ফাটানো বিচিত্র কিছু নয়। গাড়ি চলাচলের বেলায়ও এসব স্ল্যাব
বিপত্তিকর। পাইপ বসানোর সময় যেসব রাস্তা কেটে, খুবলে যাচ্ছেতাই করা হয়েছে,
এসব রাস্তার বেশির ভাগেই এখনো সংস্কারকাজই শুরু হয়নি। নাখালপাড়া,
রাজাবাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুর—এসব এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় একপাক ঘুরে
এলেই এর প্রমাণ মিলবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, এর মধ্যে
গ্যাসের পাইপ লাইনে আগুন লাগার ঘটনা সে প্রমাণ দিয়েছে। সড়কের পাশে থাকা
গর্ত যে মৃত্যুফাঁদ, কচি শিশুর প্রাণ বিসর্জনের ঘটনা এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
এমন আরও কত বিপদ যে ওঁৎ পেতে আছে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে নগদ যে বিপদ
সামনে খাড়া, তা হচ্ছে বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও চলাচলে দুর্ভোগ। দেখা
যাচ্ছে, এক পশলা জোরে বৃষ্টি হলেই নগরের বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে।
এতে পয়ঃনালির পানি মিশে যোগ করছে বাড়তি বিড়ম্বনা। তপ্ত দুপুরে শীতল মেঘ
দেখে নগরবাসী বৃষ্টির আশায় হাঁফ ছাড়েন, কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার পর আর স্বস্তি
অনুভব করেন না। বাসার সামনে জমে থাকা ময়লা পানির দুর্গন্ধ আর সেই পানি
মাড়িয়ে চলাচলের বিড়ম্বনা বৃষ্টিভেজা শীতল হাওয়ায় প্রাণ জুড়ানোর আশায় ছাই
ঢেলে দেয়। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বাসার সামনে আগুন বা পানি যা-ই থাকুক,
পেশাজীবী মানুষকে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বেরোতে হবেই। তখন নাকে রুমাল
চেপে, প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটুসমান ওই নোংরা জল মাড়িয়ে যেতে হবে গন্তব্যের
দিকে। এ সময় সামনে যদি গর্ত থাকে, তাহলে কী ঘটবে তা সহজেই অনুমেয়। রিকশায়
কেউ যাবে? এতেও নিস্তার নেই। ওই গর্তে রিকশার একটা চাকা পড়ে উল্টে যেতে
পারে সেটা। আর তখন কালো জলে হয়ে যাবে একটা কাক-গোসল। সঙ্গে নারী বা শিশু
থাকলে কী ঘটবে, সে কথা আর না-ই বা বললাম। এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে যাবে
কালবৈশাখী। এরপরই আসবে বৃষ্টির মৌসুম। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি
কম-বেশি থাকবেই। এ সময় বেহালে থাকা রাস্তা ও এর খানাখন্দ পথচারীদের জন্য
অশেষ দুর্ভোগ বয়ে আনবে। কাজেই বৃষ্টির মৌসুম পুরোদমে শুরু হওয়ার আগেই এসব
গর্ত ভরাট এবং রাস্তার সংস্কার করাটা জরুরি। এদিকে সিটি করপোরেশন নজর দিলে
নগরবাসীর দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।
No comments