তবু মাটিতে পা কিউইদের
টুর্নামেন্টের
আগে তাদের ফেবারিট বলা লোকের সংখ্যা কমই ছিল। কয়েক বছর ধরে দলের
‘নিউক্লিয়াস’ হয়ে থাকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কদিন আগেই বিদায় নিয়েছেন। তাঁর
অভাব নিয়ে নিউজিল্যান্ড কতটা কী করতে পারবে, এ নিয়ে সংশয় ছিল। অথচ সেই
নিউজিল্যান্ডই কিনা একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে উঠে এসেছে টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে! আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে ম্যাচের সঙ্গে
ক্রিকেটপ্রেমীদের মনও জিতে নিয়েছে দলটা। সব মিলিয়ে আজ দিল্লিতে ইংল্যান্ডের
সঙ্গে সেমিফাইনালে কিউইদেরই বলা হচ্ছে ফেবারিট। কেন উইলিয়ামসনের অবশ্য ওসব
‘ফেবারিট-তত্ত্বে’ ভীষণ আপত্তি। এত বড় ম্যাচের আগেও পা মাটিতে রাখার
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। এর আগে মাত্র একবারই
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকায়
অনুষ্ঠিত ২০০৭-এর আসরে। নয় বছর পর আরও একবার সেমিফাইনালের বড় মঞ্চে। তবে
উইলিয়ামসন অত হিসাবে যেতে রাজি নন, ‘আগামীকাল (আজ) অনেক বড়, রোমাঞ্চকর একটা
ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। তবে আমাদের পা মাটিতেই আছে। যতটা সম্ভব ভালোভাবে
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’ বড় ম্যাচের আগে স্নায়ুচাপ দূর করতে
একটা মন্ত্র নাকি বেশ কাজে দেয়। ম্যাচটাকে ভাবতে হবে ‘অন্য যেকোনো ম্যাচের
মতো।’ ২০০০ সালের আইসিসি নক আউট ট্রফি ছাড়া আর কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিততে
না পারা কিউইদের জন্য এই সূত্রটা মেনে চলা আরও বেশি জরুরি। সর্বশেষ গত বছর
ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও হেরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
মনস্তাত্ত্বিক চাপ তো নিউজিল্যান্ডের ওপরই বেশি আজ! কিন্তু উইলিয়ামসনের
কথায় মনে হলো চাপটাপ আপাতত মনেই আনছেন না তাঁরা, ‘আমরা খুব বেশি দূরে
তাকাতে চাইছি না। টি-টোয়েন্টি নিয়ে আসলে কিছুই বলা যায় না। আপনি জিততে
পারেন, হারতেও পারেন। মাঠে নামুন, ভয়ডরহীন বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট খেলুন।’
টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত এই ক্রিকেট খেলেই ম্যাচের পর ম্যাচ জয় তুলে
নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ব্যাট-বলের পাশাপাশি মস্তিষ্কের খেলায়ও হারিয়ে আসছে
প্রতিপক্ষকে। সব ম্যাচের একাদশ দেখেই মনে হয়েছে, এটাই ওই দিনের উইকেটের
জন্য সেরা দল। সাউদি-বোল্টদের মতো বোলাররাই টুর্নামেন্টে এখনো মাঠে নামতে
পারেননি! কিউইদের বেশি ভরসা স্পিনারদের ওপর। তার প্রতিদানও দিয়েছেন
স্যান্টনার-সোধিরা। টুর্নামেন্টে ২০ উইকেট নিয়েছেন কিউই স্পিনাররা। আর
কোনো দলের স্পিনারদেরই এত উইকেট নেই। তবে একটা জায়গায় কিছুটা এগিয়ে
ইংল্যান্ড। ফিরোজ শাহ কোটলায় এরই মধ্যে দুই ম্যাচ খেলে ফেলেছে ইংলিশরা।
অন্যদিকে কিউইরা গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচ খেলেছে চার ভেন্যুতে। তবু
ভ্রমণক্লান্তির প্রশ্নে উইলিয়ামসনের হাসিমাখা উত্তর, ‘ভালোই তো, আমরা অন্য
দলগুলোর চেয়ে ভারতে বেশি ঘুরতে পেরেছি। অবশ্যই ব্যাপারটা কাকতালীয়। তবে
ছেলেরা এই চ্যালেঞ্জে ভালোই মানিয়ে নিয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইট আর হোটেল
বেশ ভালোই উপভোগ করেছে।’ ব্ল্যাক ক্যাপ জার্সি ছাপিয়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে
উপভোগের মন্ত্রটাই এই নিউজিল্যান্ডের পরিচয়।
No comments