পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ ‘বাংলাদেশ ধাঁধা’ by শিশির মোড়ল
স্বাস্থ্যের
কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্যের
তথ্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশনায় উদ্ধৃত হচ্ছে। একই
সঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে যে স্বাস্থ্যে সাফল্য অর্জন করলেও পুষ্টিতে বাংলাদেশ
বেশ পিছিয়ে আছে। এই পিছিয়ে থাকাটাও বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। কারণ,
আফ্রিকার ক্ষুধাপীড়িত কয়েকটি দেশের চেয়েও বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি
খারাপ। উদাহরণ দিয়ে বলা হচ্ছে, খর্বকায় শিশুর হার আফ্রিকার সাব সাহারা
এলাকার চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। আবার গর্ভবতী নারীর ওজন আফ্রিকায় গড়ে ১০ কেজি
বৃদ্ধি পায়, বাংলাদেশে পাঁচ কেজি। খর্বাকৃতি ও গর্ভবতী নারীর ওজন বৃদ্ধি
পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে অথচ পুষ্টিতে পিছিয়ে থাকার এই পরিস্থিতিকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ এনিগমা’ বা ‘বাংলাদেশ ধাঁধা’। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির কারণ বিশ্লেষণ ও এখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে। পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের আরও কিছু দেশে এই ‘ধাঁধা’ আছে। এটা প্রথম ধরা পড়ে ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের তৎকালীন পরিচালক ভুলিমিরি রামলিঙ্গস্বামীর গবেষণায় ১৯৯৬ সালে। এরপর থেকে জনস্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটলেও কেন সমানতালে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না। কেন পুষ্টির উন্নতি স্বাস্থ্যের উন্নতির সমান্তরাল হয় না।
পুষ্টিতে পিছিয়ে আছে—এ রকম ৫৭টি দেশ চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। দেশগুলোর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১০ সালে, নাম ‘সান মুভমেন্ট’ বা ‘স্কেলিং আপ নিউট্রিশন’। বিশ্বের ২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন। তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের নাম আছে।
২০ থেকে ২২ অক্টোবর ইতালির মিলান শহরে সানের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৫৭টি দেশের সাংসদ, সরকারি, বেসরকারি, একাডেমিক, সাংবাদিক প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। এর বাইরে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থা ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। নিজ নিজ দেশের এবং বিশ্বের পুষ্টি পরিস্থিতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিরা মিলানে জড়ো হয়েছিলেন। মূল সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ছিল পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর সরকারগুলোকে পুষ্টি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব জোরদার করার পাশাপাশি জবাবদিহি বাড়াতে হবে, পুষ্টি কর্মকাণ্ডে দাতানির্ভরতা কমাতে হবে এবং পুষ্টির যাবতীয় কর্মকাণ্ডে রাজনীতিক, গণমাধ্যমসহ নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুষ্টিকে প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না, দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কর্মকাণ্ডে পরিণত করতে হবে।
স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে অথচ পুষ্টিতে পিছিয়ে থাকার এই পরিস্থিতিকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ এনিগমা’ বা ‘বাংলাদেশ ধাঁধা’। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির কারণ বিশ্লেষণ ও এখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে তিন দিনের সম্মেলনে একটি অধিবেশন ছিল পুষ্টি ইস্যুতে গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা নিয়ে। এই অধিবেশনে সাংবাদিকেরা বলেন, পাঠকের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম বলে সংবাদপত্রের মালিক ও ব্যবস্থাপকদের কাছে পুষ্টি তেমন গুরুত্ব পায় না। তা ছাড়া, পুষ্টি নিয়ে নাগরিক সমাজে ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা বিতর্ক কম হয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, অপরাধ, দুর্নীতি, কূটনীতি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ নিয়ে নির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিপোর্টার থাকলেও পুষ্টির ক্ষেত্রে থাকে না।
২০১০ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশে ‘সান’ আন্দোলন সাড়া ফেলতে পারেনি। এই আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল মূলত এনজিওগুলো। কিন্তু এনজিওগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে নেতৃত্ব নিয়ে। কেউ কেউ আদর্শিক কারণে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়নি। সম্মেলনে যোগ দেওয়া একাধিক বিদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপের সময় জানা গেল, বাংলাদেশের এই দ্বন্দ্বের খবরটি তাঁরাও জানেন। সরকারের জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে যোগ্য লোক না থাকার কারণে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনাগ্রহের কারণে সরকারও এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়নি বা হতে পারেনি।
সম্মেলনের মূল সুর ছিল, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে একক কোনো প্রকল্প (প্রজেক্ট), কর্মকাণ্ড (অ্যাকটিভিটি) বা কর্মসূচি (প্রোগ্রাম) পুষ্টির উন্নতি করতে পারে না, কোথাও পারেনি। পুষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিলে ভুল হবে। দায়িত্ব যদি শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয় নেয় তাহলেও পুষ্টির উন্নতি হবে না। এ কাজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের না হলেও তারও দায়িত্ব আছে। পুষ্টিকে এগিয়ে নিতে বহু খাতভিত্তিক উদ্যোগ (মাল্টি স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচ) প্রয়োজন। এর অর্থ এই উদ্যোগের সঙ্গে স্বাস্থ্য, খাদ্য, কৃষি, পানি, শিক্ষা, তথ্য, অর্থ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজকে সচেতন ও পুষ্টির পক্ষে সক্রিয় করতে হবে। ধারণা, তাহলেই ধাঁধা দূর হবে।
শিশির মোড়ল: সাংবাদিক।
স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে অথচ পুষ্টিতে পিছিয়ে থাকার এই পরিস্থিতিকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ এনিগমা’ বা ‘বাংলাদেশ ধাঁধা’। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির কারণ বিশ্লেষণ ও এখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে। পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের আরও কিছু দেশে এই ‘ধাঁধা’ আছে। এটা প্রথম ধরা পড়ে ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের তৎকালীন পরিচালক ভুলিমিরি রামলিঙ্গস্বামীর গবেষণায় ১৯৯৬ সালে। এরপর থেকে জনস্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটলেও কেন সমানতালে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না। কেন পুষ্টির উন্নতি স্বাস্থ্যের উন্নতির সমান্তরাল হয় না।
পুষ্টিতে পিছিয়ে আছে—এ রকম ৫৭টি দেশ চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। দেশগুলোর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১০ সালে, নাম ‘সান মুভমেন্ট’ বা ‘স্কেলিং আপ নিউট্রিশন’। বিশ্বের ২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন। তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের নাম আছে।
২০ থেকে ২২ অক্টোবর ইতালির মিলান শহরে সানের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৫৭টি দেশের সাংসদ, সরকারি, বেসরকারি, একাডেমিক, সাংবাদিক প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। এর বাইরে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থা ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। নিজ নিজ দেশের এবং বিশ্বের পুষ্টি পরিস্থিতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিরা মিলানে জড়ো হয়েছিলেন। মূল সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ছিল পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর সরকারগুলোকে পুষ্টি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব জোরদার করার পাশাপাশি জবাবদিহি বাড়াতে হবে, পুষ্টি কর্মকাণ্ডে দাতানির্ভরতা কমাতে হবে এবং পুষ্টির যাবতীয় কর্মকাণ্ডে রাজনীতিক, গণমাধ্যমসহ নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুষ্টিকে প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না, দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কর্মকাণ্ডে পরিণত করতে হবে।
স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে অথচ পুষ্টিতে পিছিয়ে থাকার এই পরিস্থিতিকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ এনিগমা’ বা ‘বাংলাদেশ ধাঁধা’। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির কারণ বিশ্লেষণ ও এখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে তিন দিনের সম্মেলনে একটি অধিবেশন ছিল পুষ্টি ইস্যুতে গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা নিয়ে। এই অধিবেশনে সাংবাদিকেরা বলেন, পাঠকের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম বলে সংবাদপত্রের মালিক ও ব্যবস্থাপকদের কাছে পুষ্টি তেমন গুরুত্ব পায় না। তা ছাড়া, পুষ্টি নিয়ে নাগরিক সমাজে ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা বিতর্ক কম হয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, অপরাধ, দুর্নীতি, কূটনীতি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ নিয়ে নির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিপোর্টার থাকলেও পুষ্টির ক্ষেত্রে থাকে না।
২০১০ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশে ‘সান’ আন্দোলন সাড়া ফেলতে পারেনি। এই আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল মূলত এনজিওগুলো। কিন্তু এনজিওগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে নেতৃত্ব নিয়ে। কেউ কেউ আদর্শিক কারণে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়নি। সম্মেলনে যোগ দেওয়া একাধিক বিদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপের সময় জানা গেল, বাংলাদেশের এই দ্বন্দ্বের খবরটি তাঁরাও জানেন। সরকারের জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানে যোগ্য লোক না থাকার কারণে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনাগ্রহের কারণে সরকারও এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়নি বা হতে পারেনি।
সম্মেলনের মূল সুর ছিল, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে একক কোনো প্রকল্প (প্রজেক্ট), কর্মকাণ্ড (অ্যাকটিভিটি) বা কর্মসূচি (প্রোগ্রাম) পুষ্টির উন্নতি করতে পারে না, কোথাও পারেনি। পুষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিলে ভুল হবে। দায়িত্ব যদি শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয় নেয় তাহলেও পুষ্টির উন্নতি হবে না। এ কাজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের না হলেও তারও দায়িত্ব আছে। পুষ্টিকে এগিয়ে নিতে বহু খাতভিত্তিক উদ্যোগ (মাল্টি স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচ) প্রয়োজন। এর অর্থ এই উদ্যোগের সঙ্গে স্বাস্থ্য, খাদ্য, কৃষি, পানি, শিক্ষা, তথ্য, অর্থ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজকে সচেতন ও পুষ্টির পক্ষে সক্রিয় করতে হবে। ধারণা, তাহলেই ধাঁধা দূর হবে।
শিশির মোড়ল: সাংবাদিক।
No comments