সু চির অভাবিত জয়- পরাজয় মেনে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল by সোহরাব হাসান
অং সান সু চি: ইয়াঙ্গুনে গতকাল দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে l রয়টার্স |
মিয়ানমারের
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল
ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পথে। গত
রোববার ভোট গ্রহণের পর গতকাল সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া
গেছে, তা এমনই আভাস দেয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, নিম্নকক্ষের যে ৩৩০টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ৫৪টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে এনএলডি পেয়েছে ৪৯টি।
দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে প্রতীক্ষার এই নির্বাচনে সু চি জয়ী হলেও ক্ষমতার সমীকরণটি নির্ভর করছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর কী ধরনের সমঝোতা হয়, তার ওপর। জানুয়ারিতে নতুন পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। সে পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও সেনানিয়ন্ত্রিত ইউনাইটেড সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিই (ইউএসডিপি) ক্ষমতায় থাকছে।
মিয়ানমারে গণতন্ত্রায়ণের পথে যে তিনটি চ্যালেঞ্জ ছিল, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তার দুটিতে দেশটি জয়ী হয়েছে। এক. নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। দুই. সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারও ফলাফল মেনে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন অনেকটা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলেছেন, ‘আমরা ঐতিহাসিক নির্বাচনের ফলকে সম্মান জানাব।’ তিন. বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।
মিয়ানমারের পার্লামেন্টের ৪৪০ আসনের নিম্নকক্ষের মধ্যে ৩৩০ এবং ২২৪ আসনের উচ্চকক্ষের মধ্যে ১৬৮টিতে ভোট হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী উভয় পরিষদে বাকি আসনগুলো পূরণ করবেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের মনোনয়ন দেবেন সেনাবাহিনী প্রধান। সে ক্ষেত্রে এনএলডিকে সরকার গঠন করতে হলে দুই পরিষদ মিলে ৩৩০টি আসন পেতে হবে, যার চেয়ে অনেক বেশি আসন তারা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটির সংবিধানের ৬৯ ধারায় আছে, কেউ বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলে কিংবা তাঁর সন্তান অন্য কোনো দেশের নাগরিক হলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদে সু চি প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারছেন না।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনজন। নিম্নকক্ষের একজন, উচ্চকক্ষের একজন এবং সেনাবাহিনীর মনোনীত একজন প্রতিনিধির মধ্য থেকে পার্লামেন্ট একজনকে প্রেসিডেন্ট এবং বাকি দুজনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করবে।
নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল ইউএসডিপি প্রচার চালিয়েছিল যে এনএলডিকে ভোট দিলে কোনো লাভ হবে না। সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। জবাবে সু চি নির্বাচনের দুই দিন আগে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন যে প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও তাঁর অবস্থান প্রেসিডেন্টের ওপরে থাকবে। একই সঙ্গে জয়ী হলে সমঝোতার সরকার গঠন করার কথাও বলেছেন তিনি।
মিয়ানমারের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন এমন একাধিক কূটনীতিক বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কী ধরনের সমঝোতা বা আপসরফা হয়, তার ওপরই সু চি ও তাঁর দলের ভাগ্য নির্ভর করছে। তাঁদের মতে, উভয় পক্ষকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। না হলে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে।
সেনাবাহিনীর সম্মতি ছাড়া সংবিধান সংশোধন করে সু চির জন্য নতুন কোনো পদও সৃষ্টি করা যাবে না। তবে সু চি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে অনায়াসে সংসদের নেতার পদ অলংকৃত করতে পারবেন।
এই নির্বাচনে ১০ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ১ হাজার বিদেশি। তাঁদের অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কোরেশি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন—এমন একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো হইহুল্লোড় ছিল না। নির্বাচনের পর কোনো পক্ষ মিছিল বের করেনি। কেবল এনএলডির সদর দপ্তরের সামনে কয়েক হাজার লোক সমবেত হয়েছে সু চিকে অভিনন্দন জানাতে। এনএলডি নেত্রী সমর্থকদের উল্লাস করতে না করেছেন এই যুক্তিতে যে তাতে পরাজিত পক্ষ মনে কষ্ট পেতে পারে। তিনি ক্ষমতাসীনদের সাহসিকতার সঙ্গে পরাজয় মেনে নিতে এবং এনএলডিকে নমনীয়তার সঙ্গে বিজয়কে বরণ করতে বলেছেন।
সারা দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভোট দেওয়ার সুযোগই ছিল না। তারা ছিল কার্যত গৃহবন্দী।
মিয়ানমারে দায়িত্বরত একাধিক কূটনীতিক বলেছেন, গণতন্ত্রায়ণের পথে এই নির্বাচন সূচনা মাত্র। কীভাবে পূর্ণতা আসবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে এবং তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কী ধরনের সমঝোতা হয়, তার ওপর। সু চির দল দুই কক্ষ মিলে ৩৩০টি আসন পেলেই সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু সেনাবাহিনী যদি মনে করে তাদের কর্তৃত্ব অনেকখানি খর্ব হবে, তাহলে তারা সমঝোতায় না-ও আসতে পারে। অবশ্য তাঁরা এও মনে করেন, নব্বইয়ের মতো নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি নাকচ করা সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব হবে না। কেননা, তখন মিয়ানমার বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। খোলা দরজা ফের বন্ধ করা কঠিন হবে।
একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক আশা করছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের যে সমস্যা আছে, সু চির দল ক্ষমতায় গেলে তা নিয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু করা যাবে। তাঁর মতে, সু চি সবার মানবিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়েছেন।
মিয়ানমারে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যান্ড্রু পেট্রিক এশিয়ান নিউজকে বলেন, মিয়ানমার সরকার এবারের নির্বাচনে যে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানিয়েছে, সেটি ছিল ব্যতিক্রমী ঘটনা। বার্মা ক্যাম্পেইন, ইউকের পরিচালক মার্ক ফারমানার মনে করেন, সেনাবাহিনী এনএলডিকে সরকার গঠনে অনুমতি দেবে, কিন্তু সেই সরকারের ক্ষমতা হবে সীমিত। সেটি সেনাবাহিনীর জন্য মোটেই হুমকি হবে না।
২০১২ সালে নজিরবিহীনভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছেড়ে দেওয়া ৪৫টি আসনে উপনির্বাচনে এনএলডি ৪৩টিতে জয়ী হয়। পার্লামেন্টে সু চি বিরোধী দলের নেত্রী হন। সেটি ছিল সমঝোতার সূচনা। শেষটা দেখার জন্য হয়তো আগামী জানুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সু চিকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন: মিয়ানমারের নির্বাচনে এনএলডির বিজয়ে দলটির নেত্রী অং সান সু চিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে এক অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এনএলডির নিরঙ্কুশ বিজয়ে আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আপনার প্রতি মিয়ানমারের জনগণের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। আপনার অনুপ্রাণিত নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ সফল হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সুযোগে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধন ও একে অপরের দেশের জনগণের ও সংস্কৃতির বন্ধন পারস্পরিক স্বার্থে জোরদার করতে চাই।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, নিম্নকক্ষের যে ৩৩০টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ৫৪টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে এনএলডি পেয়েছে ৪৯টি।
দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে প্রতীক্ষার এই নির্বাচনে সু চি জয়ী হলেও ক্ষমতার সমীকরণটি নির্ভর করছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর কী ধরনের সমঝোতা হয়, তার ওপর। জানুয়ারিতে নতুন পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। সে পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও সেনানিয়ন্ত্রিত ইউনাইটেড সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিই (ইউএসডিপি) ক্ষমতায় থাকছে।
মিয়ানমারে গণতন্ত্রায়ণের পথে যে তিনটি চ্যালেঞ্জ ছিল, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তার দুটিতে দেশটি জয়ী হয়েছে। এক. নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। দুই. সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারও ফলাফল মেনে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন অনেকটা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলেছেন, ‘আমরা ঐতিহাসিক নির্বাচনের ফলকে সম্মান জানাব।’ তিন. বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।
মিয়ানমারের পার্লামেন্টের ৪৪০ আসনের নিম্নকক্ষের মধ্যে ৩৩০ এবং ২২৪ আসনের উচ্চকক্ষের মধ্যে ১৬৮টিতে ভোট হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী উভয় পরিষদে বাকি আসনগুলো পূরণ করবেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের মনোনয়ন দেবেন সেনাবাহিনী প্রধান। সে ক্ষেত্রে এনএলডিকে সরকার গঠন করতে হলে দুই পরিষদ মিলে ৩৩০টি আসন পেতে হবে, যার চেয়ে অনেক বেশি আসন তারা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটির সংবিধানের ৬৯ ধারায় আছে, কেউ বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলে কিংবা তাঁর সন্তান অন্য কোনো দেশের নাগরিক হলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদে সু চি প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারছেন না।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনজন। নিম্নকক্ষের একজন, উচ্চকক্ষের একজন এবং সেনাবাহিনীর মনোনীত একজন প্রতিনিধির মধ্য থেকে পার্লামেন্ট একজনকে প্রেসিডেন্ট এবং বাকি দুজনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করবে।
নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল ইউএসডিপি প্রচার চালিয়েছিল যে এনএলডিকে ভোট দিলে কোনো লাভ হবে না। সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। জবাবে সু চি নির্বাচনের দুই দিন আগে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন যে প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও তাঁর অবস্থান প্রেসিডেন্টের ওপরে থাকবে। একই সঙ্গে জয়ী হলে সমঝোতার সরকার গঠন করার কথাও বলেছেন তিনি।
মিয়ানমারের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন এমন একাধিক কূটনীতিক বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কী ধরনের সমঝোতা বা আপসরফা হয়, তার ওপরই সু চি ও তাঁর দলের ভাগ্য নির্ভর করছে। তাঁদের মতে, উভয় পক্ষকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। না হলে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে।
সেনাবাহিনীর সম্মতি ছাড়া সংবিধান সংশোধন করে সু চির জন্য নতুন কোনো পদও সৃষ্টি করা যাবে না। তবে সু চি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে অনায়াসে সংসদের নেতার পদ অলংকৃত করতে পারবেন।
এই নির্বাচনে ১০ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ১ হাজার বিদেশি। তাঁদের অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কোরেশি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন—এমন একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো হইহুল্লোড় ছিল না। নির্বাচনের পর কোনো পক্ষ মিছিল বের করেনি। কেবল এনএলডির সদর দপ্তরের সামনে কয়েক হাজার লোক সমবেত হয়েছে সু চিকে অভিনন্দন জানাতে। এনএলডি নেত্রী সমর্থকদের উল্লাস করতে না করেছেন এই যুক্তিতে যে তাতে পরাজিত পক্ষ মনে কষ্ট পেতে পারে। তিনি ক্ষমতাসীনদের সাহসিকতার সঙ্গে পরাজয় মেনে নিতে এবং এনএলডিকে নমনীয়তার সঙ্গে বিজয়কে বরণ করতে বলেছেন।
সারা দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভোট দেওয়ার সুযোগই ছিল না। তারা ছিল কার্যত গৃহবন্দী।
মিয়ানমারে দায়িত্বরত একাধিক কূটনীতিক বলেছেন, গণতন্ত্রায়ণের পথে এই নির্বাচন সূচনা মাত্র। কীভাবে পূর্ণতা আসবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে এবং তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কী ধরনের সমঝোতা হয়, তার ওপর। সু চির দল দুই কক্ষ মিলে ৩৩০টি আসন পেলেই সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু সেনাবাহিনী যদি মনে করে তাদের কর্তৃত্ব অনেকখানি খর্ব হবে, তাহলে তারা সমঝোতায় না-ও আসতে পারে। অবশ্য তাঁরা এও মনে করেন, নব্বইয়ের মতো নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি নাকচ করা সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব হবে না। কেননা, তখন মিয়ানমার বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। খোলা দরজা ফের বন্ধ করা কঠিন হবে।
একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক আশা করছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারের যে সমস্যা আছে, সু চির দল ক্ষমতায় গেলে তা নিয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু করা যাবে। তাঁর মতে, সু চি সবার মানবিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিয়েছেন।
মিয়ানমারে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যান্ড্রু পেট্রিক এশিয়ান নিউজকে বলেন, মিয়ানমার সরকার এবারের নির্বাচনে যে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানিয়েছে, সেটি ছিল ব্যতিক্রমী ঘটনা। বার্মা ক্যাম্পেইন, ইউকের পরিচালক মার্ক ফারমানার মনে করেন, সেনাবাহিনী এনএলডিকে সরকার গঠনে অনুমতি দেবে, কিন্তু সেই সরকারের ক্ষমতা হবে সীমিত। সেটি সেনাবাহিনীর জন্য মোটেই হুমকি হবে না।
২০১২ সালে নজিরবিহীনভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছেড়ে দেওয়া ৪৫টি আসনে উপনির্বাচনে এনএলডি ৪৩টিতে জয়ী হয়। পার্লামেন্টে সু চি বিরোধী দলের নেত্রী হন। সেটি ছিল সমঝোতার সূচনা। শেষটা দেখার জন্য হয়তো আগামী জানুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সু চিকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন: মিয়ানমারের নির্বাচনে এনএলডির বিজয়ে দলটির নেত্রী অং সান সু চিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে এক অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এনএলডির নিরঙ্কুশ বিজয়ে আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আপনার প্রতি মিয়ানমারের জনগণের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। আপনার অনুপ্রাণিত নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ সফল হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সুযোগে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধন ও একে অপরের দেশের জনগণের ও সংস্কৃতির বন্ধন পারস্পরিক স্বার্থে জোরদার করতে চাই।’
No comments