বাংলাদেশ সম্পূর্ণ পালটে গেছে by জ্যাশন বার্ক
বিশৃঙ্খল
রাজধানী ঢাকার কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে জীবনের গতি কিছুটা শান্ত।
আশুলিয়া শিল্প এলাকার কাছে বরইপাড়া চেক পয়েন্টে কিছু দোকানে চা ও স্ন্যাক্স
খেতে পারে স্থানীয় শ্রমিক ও পাসের সরকারি পার্কটির দর্শনার্থীরা। ৪ঠা
নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটায় চেক পয়েন্টে ৫ পুলিশ সদস্যকে নামিয়ে দেয়া হয় সারা
দিনের জন্য। তারা চা পান করতে বসে গেলেন বিশাল লম্বা শাল গাছের নিচের
কয়েকটি বেঞ্চে। হামলাটি এত অকস্মাৎ ছিল, তারা তেমন প্রতিরোধই দেখাতে পারলেন
না। তাদের হামলাকারীরা মোটরবাইকে চড়ে আবির্ভূত হয়, এরপর চাপাতি দিয়ে
কোপাতে থাকে। তৎক্ষণাৎ দুই পুলিশ সদস্য গুরুতরভাবে আহত হন। ধূলোমাখা
রাস্তার পাশে কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যু হয় একজনের।
বরইপাড়ায় আর চা বিক্রি হয় না এখন। একটি চা দোকানের মালিক শামসুল আলম বলেন, আমরা ভয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। আমি এখনও শঙ্কিত। যদি পুলিশকেই খুন করা যায়, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কি হবে, কে জানে? আলম একা নন। বরইপাড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে দুই বিদেশীকে হত্যার পর। এদের একজন ইতালির, অপরজন জাপানের নাগরিক। উভয় হত্যার দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), যে সংগঠনটি গত সপ্তাহান্তেই মিশরে রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানে বোমা হামলার দায়ে সন্দেহভাজন। এছাড়াও ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী, ব্লগার ও প্রকাশকরাও খুন হয়েছে বাংলাদেশে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আল কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) স্থানীয় শাখা এসব হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
১৬ কোটি মানুষেরও বেশি জনসংখ্যা-বিশিষ্ট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের অনেকেই এখন শঙ্কিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও এক্টিভিস্ট শান্তনু মজুমদার বলেন, আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করি। আমার সব বন্ধুই রীতিমতো আতঙ্কিত। কেউই জানে না কি ঘটবে, কখন ঘটবে। বাংলাদেশ সমপূর্ণ পাল্টে গেছে। এটা আমাদের সাধারণ, গতানুগতিক জীবন নয়। গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়তো নয় চরমপন্থিরা, কিন্তু হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য তাদের আছে।
এ নিয়ে কোন সন্দেহই নেই, এ ধরনের উদ্বেগ বাস্তব ও যৌক্তিক। আল কায়দা ও আইএস এভাবেই সব জঙ্গি সংগঠনের যে সাধারণ লক্ষ্য থাকে, তা অর্জনে সফল হয়েছে। সেটি হলো, শত্রুকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে দেয়া, সমর্থকদের কাজে লাগানো এবং সমাজের বিভিন্ন সমপ্রদায়ের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করা যাতে চরমপন্থার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে এ দুই জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রবেশ তুলনামূলকভাবে সামপ্রতিক। কিন্তু তাদের ভয়ানক সহিংস ত্রাসের ভিত্তি প্রস্তুত হয়ে আসছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনেক প্রভাবকের দ্বারা, কম করে হলেও ৫০ বছর আগ থেকে।
বর্তমান বাংলাদেশের সীমান্ত নির্ধারিত হয় ১৯৪৭ সালে, যখন বৃটিশরা তাদের দক্ষিণ এশিয়ান সাম্রাজ্য বিভাজিত করে দেয়। বেশিরভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্তানের অংশে পরিণত হয়। ওই পাকিস্তান নিজেই বিভাজিত ছিল পূর্ব ও পশ্চিমে। ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, তারা স্থানীয় বাংলা ভাষায় কথা বলতেন। তারা চেয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক ঘরানায় অর্থনৈতিক নীতি কায়েম করতে। তারা নিজেদের নতুন দেশের জন্য চেয়েছিলেন উদারপন্থি ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিকাঠামো। কিন্তু যারা স্বাধীনতা চায়নি, বরং পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই ছিল ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে রক্ষণশীল।
এ দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত সংঘাত ছিল নির্মম। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। সবচেয়ে নৃশংস কিছু ঘটনা ঘটায় পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়োগ দেয়া মিলিশিয়ারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশটি স্বাধীন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। তবুও ক্ষত কখনই পুরোপুরি উপশম হয়নি। বরং, স্থায়ী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজনে রূপ নেয়। এ বিভাজনই বাংলাদেশের সামপ্রতিক ইতিহাসের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে।
বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। শেখ মুজিব সবচেয়ে প্রখ্যাত স্বাধীনতাপন্থি নেতা। তাকে ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ দলটি কিছুটা রক্ষণশীল শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া এক সামরিক শাসকের স্ত্রী। ওই সামরিক শাসক শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর কিছুকাল পরে ক্ষমতায় আসেন। তাকেও ১৯৮১ সালে হত্যা করা হয়। এ দুই নারী (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) নিজেদের মধ্যকার ঘৃণা লুকানোর তেমন একটা চেষ্টা করেননি। এরপর আছে জামায়াতে ইসলামী। ইসলামী এ রাজনৈতিক দলটি স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপক্ষে লড়াই করেছিল। এমনকি সে সময়কার সবচেয়ে নৃশংস কিছু ঘটনায় দলটি জড়িত। সবগুলো দল গত কয়েক বছরে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছে ব্যালট বাক্সে, রাজনৈতিক মহড়ায়, রাস্তায় কিংবা স্বল্প মেয়াদে জোট গঠনের মাধ্যমে। কিন্তু ইতিহাস যদি একটি ঝঞ্ঝাটময় উত্তরাধিকার ফেলে যায়, অর্থনৈতিক পরিবর্তনও একই কাজ করে।
প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি সেতু থেকে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে তাকালে যেন অনেক কিছু বোঝা যায়। নদীর পানি ভীষণ কালো। মারাত্মকভাবে দূষিত। এরও দূরে অবস্থিত কামরাঙ্গীর চর। বিশাল এ বস্তির জ্বলন্ত আবর্জনার ঝাঁঝালো ধোঁয়ার মেঘ সেখানকার ক্ষীণকায় পুরুষ, উদ্বিগ্ন নারী ও অনবরত কাশতে থাকা শিশুদের বসতিগুলোকে আড়াল করে রেখেছে। কিন্তু কামরাঙ্গীর চর একটি উঠতি সমপ্রদায়, অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। ঢাকা ও আশেপাশের এ ধরনের বস্তিগুলোতে প্রতি বছর লাখো মানুষ আশ্রয় নেয়। এদের বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, অতি-আবাদ ও বেকারত্বে জর্জরিত গ্রাম্য এলাকা থেকে বস্তিতে পাড়ি জমিয়েছেন। এ বস্তিগুলো অথবা সাধারণ অর্থে বাংলাদেশের কোলাহলপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো ওই মানুষদের জন্য অধিকতর ভালো জীবনের একটি প্লাটফরম। এ জীবন হয়তো প্রত্যন্ত গ্রামে তারা কখনই যাপন করতে পারতেন না।
সামপ্রতিক বছরে বাংলাদেশ অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে। আয় ও স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে। শিশু অপুষ্টি ও মাতৃমৃত্যু কমেছে। বড় নিয়ামক হলো, ২৫০০ কোটি ডলারের গার্মেন্ট শিল্প। এ শিল্পেই পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য সস্তা দামে পোশাক উৎপাদিত হয়। এ খাতে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। ২০১৩ সালে একটি গার্মেন্ট কারখানা ধসে পড়ায় ১ হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এ খাতের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছিল। কিন্তু বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলার দিন অনেক আগেই শেষ। কিন্তু অন্য ইসলামিক দেশের মতো, বাংলাদেশেও উন্নয়ন উগ্রপন্থার হুমকি ঠেকাতে পারেনি। বরং, অনেকের ধারণা, উন্নয়নের ফলে উগ্রপন্থার বিস্তার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে!
এ অঞ্চলে কাজ করেন, এমন একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত অগ্রগতিতে যারা তেমন তাল মেলাতে পারছেন না, এদের অনেকেই তরুণ। যাদের জন্ম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হলেও, বেড়ে ওঠা বড় শহরে। দুর্বল শিক্ষা এবং দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের অভাব চাকরি, অর্থ, মর্যাদা ও বিয়ের সঙ্গিনী পাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় তাদের বড় সীমাবদ্ধতা। ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর লোককে সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা। আরও বড় পরিসরে কাজটি হচ্ছে ইসলামী বিশ্বে। এটি কিন্তু কাকতালীয় বিষয় নয়।
অবশ্য অনেকে এ সংযোগ অস্বীকার করেন। ঢাকাভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, সামগ্রিকভাবে অগ্রগতি থেকে সবাই উপকৃত হন। এটা বিস্তৃত একটি বিষয়। সামপ্রতিক বছরগুলোতে কোন ইসলামী দেশই উগ্রপন্থার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
অন্য দেশগুলোর মতো, বাংলাদেশের নব্য বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগও এখন একটি নিয়ামক। কাতার, সৌদি আরবের মতো অনেক দেশে লাখো বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী কাজ করেন। সেখানে ইসলামের যে অবস্থান, তা বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি-প্রেমের সংস্কৃতির চেয়ে পৃথক। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ধর্মীয় বিভিন্ন সেমিনার আয়োজনে ও স্থাপনা নির্মাণে উপসাগরীয় দেশ থেকে নগদ অর্থ প্রবাহিত হয়েছে। কামরাঙ্গীর চরের এমন একটি মাদরাসার শিক্ষক ২ বছর আগে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন যে, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে ভিনদেশী (পশ্চিমা) সংস্কৃতির প্রবেশ বন্ধ করা। সামপ্রতিক জঙ্গি হামলার দায়ে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের অনেকেই এ ধরনের ছাত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা ইসলামী বিশ্বে প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা সংঘর্ষ, দখলদারিত্বেরও একটা প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। কলামনিস্ট শুপ্রভা তাসনিমের মতে, এ বিষয়টি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার পশ্চিমা মতবাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস জন্ম নেয়ার জন্য দায়ী। এখানে ধারণা করা হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা এমন এক আদর্শ, যা শুধু রাষ্ট্রীয় বিষয়-আশয়ের সঙ্গে ধর্মের সংযোগই বিচ্ছিন্ন করে না, একই সঙ্গে এটি ব্যক্তিগত জীবনেও ধর্মের প্রভাব বিনষ্টের একটি প্রচেষ্টা।
উদীয়মান উগ্রপন্থার লক্ষণ অনেক আগ থেকেই দেখা যাচ্ছিল। খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসে, বাংলাদেশের সংখ্যায় অল্প শিয়া সমপ্রদায়, যাদের উপসাগরীয় দেশে ধর্মদ্রোহী ভাবা হয়, তাদের ওপর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বোমা হামলা হয়েছে। এর দায় স্বীকার করে নিয়েছে আইএস। যারা সহিংসতা বন্ধ করতে চান বলে দাবি করেন, নতুন করে এ সহিংসতার মূলে তারাই থাকতে পারেন।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আরোহণের কিছুকাল পরই নতুন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭১ সালে নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের লক্ষ্যে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। দলটি বলে আসছে, বিচারের মাধ্যমে সব গুছিয়ে আনছে তারা। সবাই না হলেও এ ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই জ্যেষ্ঠ ইসলামিক রাজনীতিক। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এ বিচারের তীব্র সমালোচক। এ আদালতের দেয়া অনেকগুলো রায়ের কারণে পক্ষের ও বিপক্ষের লোকদের ব্যাপক বিক্ষোভ, প্রতি-বিক্ষোভের জন্ম নেয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শান্তনু মজুমদার বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারই এর মূল কারণ। এর পর থেকেই যত সমস্যার সৃষ্টি।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন, যেটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল, তা বর্জন করে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেছে। কিন্তু ওই নির্বাচনের ফলে মারাত্মক সহিংসতার জন্ম নেয়। বিরোধী দল সরকার উৎখাতের চেষ্টা চালায়, শত শত মানুষ পেট্রলবোমা ও দাঙ্গায় নিহত বা আহত হয়। বিরোধী দলের বহু নেতা আটক হয় কিংবা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপিকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একই হাল ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীরও। ফলাফল দাঁড়াল, কোন বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল নেই, নেই বিরোধিতা প্রকাশের কোন গণতান্ত্রিক পন্থা। ওয়াশিংটন ডিসির উইড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ওই ধরপাকড় এতটা কঠিন ছিল, এটি চরমপন্থার ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি অস্বীকার করেছেন। চরমপন্থার বিস্তৃত সমস্যা ও সামপ্রতিক হত্যাযজ্ঞ- উভয়ের জন্যই তিনি বিরোধী দলকে দায়ী করেছেন। কুগেলম্যান বলেন, এ বক্তব্য এক ধরনের আত্মপ্রসাদের ইঙ্গিত দেয়, যা ছিল হিতে-বিপরীত।
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়দার বলিষ্ঠ উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের খুব ক্ষুদ্র অংশকে আকর্ষণ করার পরিবর্তে এদের উভয়েরই দৃশ্যত বহু অনুসারী আছে। এর ফলে এরা উভয়েই চলমান সহিংস কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে কিংবা বৃদ্ধি করবে।
বুধবার হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যের নাম মুকুল হোসেন। বগুড়ায় নিজ গ্রামের বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তার একজন সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু কথা বলেন। তার কথাগুলোতে বর্তমান পরিস্থিতির তীব্রতা কিছুটা খর্ব করা হয়েছে বটে, কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষের মনের কথা এটিই। তিনি বলেন, আমাদের দেশ সব সময় শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু সমপ্রতি এ দেশটি কিছুটা সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
বরইপাড়ায় আর চা বিক্রি হয় না এখন। একটি চা দোকানের মালিক শামসুল আলম বলেন, আমরা ভয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। আমি এখনও শঙ্কিত। যদি পুলিশকেই খুন করা যায়, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কি হবে, কে জানে? আলম একা নন। বরইপাড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে দুই বিদেশীকে হত্যার পর। এদের একজন ইতালির, অপরজন জাপানের নাগরিক। উভয় হত্যার দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), যে সংগঠনটি গত সপ্তাহান্তেই মিশরে রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানে বোমা হামলার দায়ে সন্দেহভাজন। এছাড়াও ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী, ব্লগার ও প্রকাশকরাও খুন হয়েছে বাংলাদেশে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আল কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) স্থানীয় শাখা এসব হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
১৬ কোটি মানুষেরও বেশি জনসংখ্যা-বিশিষ্ট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের অনেকেই এখন শঙ্কিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও এক্টিভিস্ট শান্তনু মজুমদার বলেন, আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করি। আমার সব বন্ধুই রীতিমতো আতঙ্কিত। কেউই জানে না কি ঘটবে, কখন ঘটবে। বাংলাদেশ সমপূর্ণ পাল্টে গেছে। এটা আমাদের সাধারণ, গতানুগতিক জীবন নয়। গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়তো নয় চরমপন্থিরা, কিন্তু হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য তাদের আছে।
এ নিয়ে কোন সন্দেহই নেই, এ ধরনের উদ্বেগ বাস্তব ও যৌক্তিক। আল কায়দা ও আইএস এভাবেই সব জঙ্গি সংগঠনের যে সাধারণ লক্ষ্য থাকে, তা অর্জনে সফল হয়েছে। সেটি হলো, শত্রুকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে দেয়া, সমর্থকদের কাজে লাগানো এবং সমাজের বিভিন্ন সমপ্রদায়ের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করা যাতে চরমপন্থার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে এ দুই জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রবেশ তুলনামূলকভাবে সামপ্রতিক। কিন্তু তাদের ভয়ানক সহিংস ত্রাসের ভিত্তি প্রস্তুত হয়ে আসছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনেক প্রভাবকের দ্বারা, কম করে হলেও ৫০ বছর আগ থেকে।
বর্তমান বাংলাদেশের সীমান্ত নির্ধারিত হয় ১৯৪৭ সালে, যখন বৃটিশরা তাদের দক্ষিণ এশিয়ান সাম্রাজ্য বিভাজিত করে দেয়। বেশিরভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্তানের অংশে পরিণত হয়। ওই পাকিস্তান নিজেই বিভাজিত ছিল পূর্ব ও পশ্চিমে। ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, তারা স্থানীয় বাংলা ভাষায় কথা বলতেন। তারা চেয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক ঘরানায় অর্থনৈতিক নীতি কায়েম করতে। তারা নিজেদের নতুন দেশের জন্য চেয়েছিলেন উদারপন্থি ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিকাঠামো। কিন্তু যারা স্বাধীনতা চায়নি, বরং পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই ছিল ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে রক্ষণশীল।
এ দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত সংঘাত ছিল নির্মম। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। সবচেয়ে নৃশংস কিছু ঘটনা ঘটায় পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়োগ দেয়া মিলিশিয়ারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশটি স্বাধীন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। তবুও ক্ষত কখনই পুরোপুরি উপশম হয়নি। বরং, স্থায়ী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজনে রূপ নেয়। এ বিভাজনই বাংলাদেশের সামপ্রতিক ইতিহাসের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে।
বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। শেখ মুজিব সবচেয়ে প্রখ্যাত স্বাধীনতাপন্থি নেতা। তাকে ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ দলটি কিছুটা রক্ষণশীল শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া এক সামরিক শাসকের স্ত্রী। ওই সামরিক শাসক শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর কিছুকাল পরে ক্ষমতায় আসেন। তাকেও ১৯৮১ সালে হত্যা করা হয়। এ দুই নারী (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) নিজেদের মধ্যকার ঘৃণা লুকানোর তেমন একটা চেষ্টা করেননি। এরপর আছে জামায়াতে ইসলামী। ইসলামী এ রাজনৈতিক দলটি স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপক্ষে লড়াই করেছিল। এমনকি সে সময়কার সবচেয়ে নৃশংস কিছু ঘটনায় দলটি জড়িত। সবগুলো দল গত কয়েক বছরে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছে ব্যালট বাক্সে, রাজনৈতিক মহড়ায়, রাস্তায় কিংবা স্বল্প মেয়াদে জোট গঠনের মাধ্যমে। কিন্তু ইতিহাস যদি একটি ঝঞ্ঝাটময় উত্তরাধিকার ফেলে যায়, অর্থনৈতিক পরিবর্তনও একই কাজ করে।
প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি সেতু থেকে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে তাকালে যেন অনেক কিছু বোঝা যায়। নদীর পানি ভীষণ কালো। মারাত্মকভাবে দূষিত। এরও দূরে অবস্থিত কামরাঙ্গীর চর। বিশাল এ বস্তির জ্বলন্ত আবর্জনার ঝাঁঝালো ধোঁয়ার মেঘ সেখানকার ক্ষীণকায় পুরুষ, উদ্বিগ্ন নারী ও অনবরত কাশতে থাকা শিশুদের বসতিগুলোকে আড়াল করে রেখেছে। কিন্তু কামরাঙ্গীর চর একটি উঠতি সমপ্রদায়, অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। ঢাকা ও আশেপাশের এ ধরনের বস্তিগুলোতে প্রতি বছর লাখো মানুষ আশ্রয় নেয়। এদের বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, অতি-আবাদ ও বেকারত্বে জর্জরিত গ্রাম্য এলাকা থেকে বস্তিতে পাড়ি জমিয়েছেন। এ বস্তিগুলো অথবা সাধারণ অর্থে বাংলাদেশের কোলাহলপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো ওই মানুষদের জন্য অধিকতর ভালো জীবনের একটি প্লাটফরম। এ জীবন হয়তো প্রত্যন্ত গ্রামে তারা কখনই যাপন করতে পারতেন না।
সামপ্রতিক বছরে বাংলাদেশ অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে। আয় ও স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে। শিশু অপুষ্টি ও মাতৃমৃত্যু কমেছে। বড় নিয়ামক হলো, ২৫০০ কোটি ডলারের গার্মেন্ট শিল্প। এ শিল্পেই পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য সস্তা দামে পোশাক উৎপাদিত হয়। এ খাতে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। ২০১৩ সালে একটি গার্মেন্ট কারখানা ধসে পড়ায় ১ হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এ খাতের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছিল। কিন্তু বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলার দিন অনেক আগেই শেষ। কিন্তু অন্য ইসলামিক দেশের মতো, বাংলাদেশেও উন্নয়ন উগ্রপন্থার হুমকি ঠেকাতে পারেনি। বরং, অনেকের ধারণা, উন্নয়নের ফলে উগ্রপন্থার বিস্তার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে!
এ অঞ্চলে কাজ করেন, এমন একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত অগ্রগতিতে যারা তেমন তাল মেলাতে পারছেন না, এদের অনেকেই তরুণ। যাদের জন্ম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হলেও, বেড়ে ওঠা বড় শহরে। দুর্বল শিক্ষা এবং দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের অভাব চাকরি, অর্থ, মর্যাদা ও বিয়ের সঙ্গিনী পাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় তাদের বড় সীমাবদ্ধতা। ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর লোককে সংগ্রহ করছে জঙ্গিরা। আরও বড় পরিসরে কাজটি হচ্ছে ইসলামী বিশ্বে। এটি কিন্তু কাকতালীয় বিষয় নয়।
অবশ্য অনেকে এ সংযোগ অস্বীকার করেন। ঢাকাভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, সামগ্রিকভাবে অগ্রগতি থেকে সবাই উপকৃত হন। এটা বিস্তৃত একটি বিষয়। সামপ্রতিক বছরগুলোতে কোন ইসলামী দেশই উগ্রপন্থার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
অন্য দেশগুলোর মতো, বাংলাদেশের নব্য বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগও এখন একটি নিয়ামক। কাতার, সৌদি আরবের মতো অনেক দেশে লাখো বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী কাজ করেন। সেখানে ইসলামের যে অবস্থান, তা বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি-প্রেমের সংস্কৃতির চেয়ে পৃথক। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ধর্মীয় বিভিন্ন সেমিনার আয়োজনে ও স্থাপনা নির্মাণে উপসাগরীয় দেশ থেকে নগদ অর্থ প্রবাহিত হয়েছে। কামরাঙ্গীর চরের এমন একটি মাদরাসার শিক্ষক ২ বছর আগে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন যে, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে ভিনদেশী (পশ্চিমা) সংস্কৃতির প্রবেশ বন্ধ করা। সামপ্রতিক জঙ্গি হামলার দায়ে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের অনেকেই এ ধরনের ছাত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা ইসলামী বিশ্বে প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা সংঘর্ষ, দখলদারিত্বেরও একটা প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। কলামনিস্ট শুপ্রভা তাসনিমের মতে, এ বিষয়টি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার পশ্চিমা মতবাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস জন্ম নেয়ার জন্য দায়ী। এখানে ধারণা করা হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা এমন এক আদর্শ, যা শুধু রাষ্ট্রীয় বিষয়-আশয়ের সঙ্গে ধর্মের সংযোগই বিচ্ছিন্ন করে না, একই সঙ্গে এটি ব্যক্তিগত জীবনেও ধর্মের প্রভাব বিনষ্টের একটি প্রচেষ্টা।
উদীয়মান উগ্রপন্থার লক্ষণ অনেক আগ থেকেই দেখা যাচ্ছিল। খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসে, বাংলাদেশের সংখ্যায় অল্প শিয়া সমপ্রদায়, যাদের উপসাগরীয় দেশে ধর্মদ্রোহী ভাবা হয়, তাদের ওপর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বোমা হামলা হয়েছে। এর দায় স্বীকার করে নিয়েছে আইএস। যারা সহিংসতা বন্ধ করতে চান বলে দাবি করেন, নতুন করে এ সহিংসতার মূলে তারাই থাকতে পারেন।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আরোহণের কিছুকাল পরই নতুন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭১ সালে নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের লক্ষ্যে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। দলটি বলে আসছে, বিচারের মাধ্যমে সব গুছিয়ে আনছে তারা। সবাই না হলেও এ ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই জ্যেষ্ঠ ইসলামিক রাজনীতিক। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এ বিচারের তীব্র সমালোচক। এ আদালতের দেয়া অনেকগুলো রায়ের কারণে পক্ষের ও বিপক্ষের লোকদের ব্যাপক বিক্ষোভ, প্রতি-বিক্ষোভের জন্ম নেয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শান্তনু মজুমদার বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারই এর মূল কারণ। এর পর থেকেই যত সমস্যার সৃষ্টি।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন, যেটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল, তা বর্জন করে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেছে। কিন্তু ওই নির্বাচনের ফলে মারাত্মক সহিংসতার জন্ম নেয়। বিরোধী দল সরকার উৎখাতের চেষ্টা চালায়, শত শত মানুষ পেট্রলবোমা ও দাঙ্গায় নিহত বা আহত হয়। বিরোধী দলের বহু নেতা আটক হয় কিংবা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপিকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একই হাল ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীরও। ফলাফল দাঁড়াল, কোন বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল নেই, নেই বিরোধিতা প্রকাশের কোন গণতান্ত্রিক পন্থা। ওয়াশিংটন ডিসির উইড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ওই ধরপাকড় এতটা কঠিন ছিল, এটি চরমপন্থার ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি অস্বীকার করেছেন। চরমপন্থার বিস্তৃত সমস্যা ও সামপ্রতিক হত্যাযজ্ঞ- উভয়ের জন্যই তিনি বিরোধী দলকে দায়ী করেছেন। কুগেলম্যান বলেন, এ বক্তব্য এক ধরনের আত্মপ্রসাদের ইঙ্গিত দেয়, যা ছিল হিতে-বিপরীত।
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়দার বলিষ্ঠ উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের খুব ক্ষুদ্র অংশকে আকর্ষণ করার পরিবর্তে এদের উভয়েরই দৃশ্যত বহু অনুসারী আছে। এর ফলে এরা উভয়েই চলমান সহিংস কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে কিংবা বৃদ্ধি করবে।
বুধবার হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যের নাম মুকুল হোসেন। বগুড়ায় নিজ গ্রামের বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তার একজন সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু কথা বলেন। তার কথাগুলোতে বর্তমান পরিস্থিতির তীব্রতা কিছুটা খর্ব করা হয়েছে বটে, কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষের মনের কথা এটিই। তিনি বলেন, আমাদের দেশ সব সময় শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু সমপ্রতি এ দেশটি কিছুটা সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
(দ্যা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন নাজমুল আহসান) |
No comments