দায়ী রাজনীতিকরাই by উৎপল রায়
রাজনৈতিক
কারণেই দেশের সিভিল সোসাইটি ভাগ হয়ে গেছে বলে মনে করেন সিভিল সোসাইটির
প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, জনগণ নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করলেও বিভক্তির কারণে
তারা সিভিল সোসাইটি সে ভূমিকা পালন করতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম
সংগঠক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ
আজ পরিপূর্ণভাবে বিভক্ত। এর কারণ, মূলত নিষ্কলুষভাবে তারা সম্পূর্ণরূপে
নির্দলীয় নয়। সুশীল সমাজ বলতে আমি শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, এবং
আইনজ্ঞদের মনে করি। এরা জ্ঞাত ও অজ্ঞাতে মনের গভীরে দেশের দুই শীর্ষ
নেতৃত্বের কাছে হয় বন্দি, না হয় অসহায়। এ বন্দিত্ব ও অসহায়ত্ব থেকে বেরিয়ে
আসতে যে সাহস ও প্রাপ্তি প্রত্যাশা বিবর্জিত মননশীলতা প্রয়োজন তা অনেক
ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। আর সুশীল সমাজের মধ্যে যারা সাহসের সঙ্গে অনাচারের
বিরুদ্ধে কথা বলতেন তাদের অনেকেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন অথবা পূর্বের সাহস
হারিয়ে ফেলেছেন। আমার মতে নির্যাতন নিগ্রহকে ভয় পেলে সাহসের অভাব হলে
দোটানা নাগরদোলায় দোল খাওয়া যায়, মানুষের আস্থার গভীরে আসন পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিলুপতার পরিবারতন্ত্র এবং রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই দুর্বিষহ পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় দুই শীর্ষ নেত্রীর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর দুটি সংগঠনের ভেতরে অথবা সমাজের অভ্যন্তরে কোথাও কোন বিকল্প শক্তি বা সাহসী সুশীল সমাজকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। কি সংগঠন, কি সংসদ কি সমাজের অভ্যন্তরে কোথাও গণতন্ত্রের চর্চার অনুশীলন বর্তমানে নেই। এমনকি দুটি জোটে বিপরীতমুখী নানা দল সংগঠিত হলেও তারা তাদের দলীয় চেতনা ও মননশীলতাকে শুধু জলাঞ্জলিই দেন নাই, তারা এখন নিতান্ত আজ্ঞাবহ ভূমিকা পালন করছে। সুশীল সমাজের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, দুই নেত্রীর করুণা ভিক্ষার জন্য যে স্তুতি, বন্দনা, অর্চনা হয় তা রাজনীতিকেই শুধু দূষিত করেনি, এই বাংলার যে জাগ্রত জনতা যারা একসময় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে উঠতো তাদেরকে সম্পূর্ণরুপে নিষ্পৃহ ও নির্বিকার করে দিয়েছে। প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ২০০১ এর পর থেকে। ক্রমে ক্রমে তা এমন পরিপূর্ণতা লাভ করে যে, সমস্ত বিচারিক ব্যবস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সংসদ এবং শাসনতন্ত্রকে বিকলাঙ্গ এবং দলকানা করেনি বরং সমস্ত জায়গায় একটি বিশৃঙ্খল আবহের ভয়াবহ উদগ্র রূপ প্রতিভাত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সুশীল সমাজের বিরাট একটি অংশ বিভাজিত ও বরাবরই দলকানা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল দল, নীল দল, সাংবাদিকদের মধ্যে প্রচণ্ড দল নির্ভরতা, আইনজ্ঞদের মধ্যে শুধু বিভাজনই নয়, দলের প্ররোচনায় প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ের দরজায় লাথি মারা, হাতাহাতি, মারামারি দলের প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশই শুধু হয়নি বিচার ব্যবস্থাকেও তা বাধাগ্রস্ত করেছে এবং জাতির কাছেও আমাদের মাথা হেট করেছে।
তিনি বলেন, আজকে রাজনীতির নিয়মই হলো অর্চনা, বন্দনা, স্তুতি ও স্তাবকতা। আমি বরাবরই মন্তব্য করি, গণতন্ত্র অর্থই হলো অনুশীলন ও চর্চা এবং তার জীবনীশক্তি হলো সহনশীলতা। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক সংগঠনেরতো বটেই শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ সকলেই আজ দলকানা। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী এ পরিবেশে মানুষ শুধু প্রচণ্ডভাবে অসহায়ই নয়, নির্বিকার ও নিস্পৃহ। অকুতোভয় সুশীল সমাজ নিঃস্বার্থ প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার ঊর্ধ্বে উঠে একটা তৃতীয় ঐক্য সুসংগঠিত থাকলে একটা গণবিক্ষোভ ঘটাতে না পারলেও জনগণের প্রত্যয়কে কিছুটা হলেও জাগ্রত করতে সাহায্য করতো। কিন্তু ব্যতিক্রমধর্মী কিছু প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব যারা জ্ঞানে প্রদীপ্ত কিন্তু সাহসের প্রশ্নে দরিদ্র। কেউ কেউ কিছুটা নিরপেক্ষতা অবলম্বন করলেও যে সাহস ও মানসিকতা জনগণকে উজ্জীবিত করতে পারতো তার এখন ভীষণ অভাব। নূরে আলম সিদ্দিকী আরও বলেন, রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্বের স্বৈরাচারী মনোভাব তো বটেই বিভাজিত সুশীল সমাজে অনৈক্য ও সাহসের দারিদ্রের কারণে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করলেও জনগণ ব্যথিত চিত্তে তা অবলোকন করে। কিন্তু প্রতিহত করতে কেউ এগিয়ে আসে না। এর দায়ভার আমাদের সকলকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, সুশীল সমাজের অনেকেই আমাকে বলেন, আমাদের সময়ের রাজনীতিতে মতপার্থক্য ছিল, কিন্তু গুম খুন ছিল না। আর গ্রেপ্তার হলেও আমরা রাজবন্দির মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু এখন গ্রেপ্তার হলে থানা থেকেই যে পাশবিক নির্যাতন করা হয় তা বর্ণনাতীত। সুশীল সমাজও এখন সেই আতঙ্কে অস্থির। তবুও আমি এটুকু বলবো আমাদের আমলে রাজনীতির মধ্যে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি লোভ লালসা ছিল না। রাজনীতি আমাদের জন্য ছিল আদর্শ, প্রত্যয়ের বিষয়। যেখানে আমাদের শক্তির উৎস ছিল জনগণের হৃদয় উৎসারিত সমর্থন। আর বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে সেই জনগণকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম। সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, অধিকার, অনুদানের বিষয় নয়, নয় সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে আমার অভিব্যক্তি অর্জনের বিষয়। নিজেদের নির্মোহ হতে হয়। তবেই জনগণের আস্থা ও সমর্থন মিলে। নেতৃত্বের সততা, সাহস, প্রত্যয় জনগণকে উজ্জীবিত করে। সুশীল সমাজকে সেটিই অনুধাবন করতে হবে।
অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বলা যায়, আমরা যাদের সুশীল সমাজ বা সিভিল সোসাইটি বলি তাদের অনেকেই শাসক দলের পদলেহনকারী। শাসক দলের প্রতি তারা অনুরক্ত থাকে। কেন তারা এমন করে তা সহজেই অনুমেয়। সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী চরিত্রের কারণেই তারা এমন করে। আবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে মিশে যায়। এরাই সুবিধাবাদী এবং সুবিধাভোগী। এদের বেশিরভাগ দালাল। এদের মধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী কমবেশি সবাই আছেন। তিনি বলেন, বিখ্যাত দার্শনিক কালমার্কসের উদ্ধৃতি দিয়ে যদি বলি তাহলে এটা বলা যায়, সিভিল সোসাইটির মানুষদের শ্রেণী চরিত্র হলো এরা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় বিশেষ সময়ে শাসক ও শোষক শ্রেণীর সঙ্গে মিশে যায়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে গুনগান গাওয়ার জন্য শাসক শ্রেণীরও চাটুকারের প্রয়োজন হয়। তখন সুশীল সমাজের একশ্রেণীর মানুষকে তারা কাছে টানে। তবে, কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের মানুষ আছে যারা এ ধরনের পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এ সংখ্যা খুবই কম। আবার কেউ কেউ আছে শাসকদলের সমর্থন করে কিন্তু তাদের পদলেহন করে না। যদি এ থেকে দূরে থাকা না যায় তাহলে সুশীল সমাজের মধ্যে দলবাজি, বিভক্তি, বিভাজন চলতেই থাকবে। যা দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
মোবাশ্বের হোসেন
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুশীল সমাজ যে ধাপে উঠার কথা ছিল সে ধাপে উঠেনি। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়েছে। যদি তা না হয়ে নয় বছরে হতো তাহলে বহু বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের হয়ে যেত। কারণ বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ বলে যাদের আমরা চিনি তারা এত ধৈর্যশীল নয়। এরা এক ধাপে এক ধরনের আচরণ করে আবার আরেক ধাপে গিয়েই নিজেকে পরিবর্তন করে অন্য দিকে চলে যায়। কেউ কেউ স্রোতের বিপরীতেও চলে। আসলে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে সুশীল সমাজ যে প্রক্রিয়ায় আসার কথা ছিল সে প্রক্রিয়ায় এখনও আসেনি। এখন যাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলা হয়, তারা আসলে সুশীল সমাজ নয়। সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে তারা মূলত দেশ ও জাতির ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, এখন সরকারে আছে আওয়ামী লীগ। স্বভাবতই সুশীল সমাজের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো পঁচাত্তরে যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তখন এই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কোথায় ছিল? এখন যারা আওয়ামী লীগের নামে গলা ফাটায় সেই নেতারাই বা ছিল কোথায়? অথচ এই সুশীল সমাজ নামধারীরা বঙ্গবন্ধুর আমলে তৎকালীন সরকারের সুবিধা যেমন নিয়েছে। তেমনি এই শেখ হাসিনার আমলেও নিচ্ছে। মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার পাশে সব চাটার দল। তিনি (বঙ্গবন্ধু) তখনকার সুবিধাবাদী সুশীল সমাজের উদ্দেশেই তা বলেছিলেন। কত দুঃখে তিনি একথা বলেছিলেন তা সহজেই অনুমেয়। তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, তাকে ছাড়া আর সবাইকে কেনা যায়। তিনিও সেই সুবিধাবাদীদের উদ্দেশেই একথা বলেছেন। তিনিও কত দুঃখে একথা বলেছেন। আসলে সুশীল সমাজ এখন চাটতে চাটতে গেলার দল আর গিলতে গিলতে রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। সরকার ও দলের ভেতরেই তারা ফ্রাঙ্কেস্টাইনে পরিণত হয়েছে। মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, শিশু সন্তান অপরিষ্কার হলেও মা বাবা যেমন তাকে ডাস্টবিনে ফেলে না, তেমনি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হচ্ছে একটি শিশুর মতো। যা দুর্বল হলেও কখনো ফেলা যায় না, সযত্নে রাখতে হয়। তাই, নাই গণতন্ত্রের চাইতে দুর্বল গণতন্ত্রও ভাল। দুর্বল হলেও আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। আর সঠিক গণতান্ত্রিক চর্চা যদি আমরা করতে পারি তাহলে সঠিক সুশীল সমাজ গড়ে উঠবে। সেজন্য আমি আশাহত নই। বর্তমান তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করবে বলে আমার আশা।
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা-জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে যে বিদ্যমান সুশীল সমাজ ব্যবস্থা ছিল তা এনজিওগুলোর দাপটের কারণে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এনজিওগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন আছে। সেহেতু সিভিল সোসাইটিও বিভাজিত ও বিভক্ত হয়ে গেছে। তাই দেশে চলমান এনজিওগুলোর অর্গানিক ভিত্তি থাকতে হবে। তিনি বলেন, কোন কিছুই রাজনীতি বিযুক্ত নয়। কিন্তু এখন যেভাবে সিভিল সোসাইটিকে রাজনীতি প্রভাবিত করছে তাতে সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে সিভিল সোসাইটির যতটুকু ভূমিকা রাখার দরকার তা আর হালে পানি পাচ্ছে না। তিনি বলেন, যারা রাজনীতির টুপুর মাথায় দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিষয়ে কথা বলা অতিশয়োক্তি হবে। তবে, নিকট অতীতে বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা বিভিন্নভাবে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।
ড. দিলারা চৌধুরী
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী সুশীল সমাজের বিভক্তির জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন রাজনীতিকে। তার মতে, আমাদের দেশের সিভিল সোসাইটি বিভক্ত হওয়ার একমাত্র কারণ রাজনীতি। এ জন্য দেশের বর্তমান সিভিল সোসাইটি কোন সংজ্ঞার মধেই পড়ে না। কেননা, রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেয়ার জন্য কিন্তু সিভিল সোসাইটি গড়ে উঠেনি। তিনি আরও বলেন, সিভিল সোসাইটির প্রথম শর্তই হলো তারা হবে অরাজনৈতিক। তারা সরকারের ভুলত্রুটি নিরসনে জাতীয় জনমত গঠন করবে, যাতে সরকার সঠিকভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেমন সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি, তেমনি সিভিল সোসাইটিও সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি। ফলে যারাই সরকারের মন্দ কাজের সমালোচনা করবে বা ভুল ধরিয়ে দেবে তাদেরকেই অপদস্থ করা হবে। এজন্য দেশে সুশীল সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ তার পূর্ব সম্মান হারিয়েছে। কেন হারিয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়। দেশের সুশীল সমাজ ভাব করে যেন তারা নিরপেক্ষ। তারা আসলে নিরপেক্ষ নন, বিভাজিত। নিজেদের সুবিধার জন্য যে কোন সরকারের সময় এরা সুবিধালাভের আশায় তৎপর হয়ে উঠে। কোন না কোন দল বা সরকারের পদলেহন করে। কিছুদিন আগে শত নাগরিক কমিটি ও সহস্র নাগরিক কমিটি নামে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আওয়ামী ও বিএনপি নামে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেল। এটা নির্লজ্জ দলবাজির উদাহরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুশীল সমাজের এখন যারা সক্রিয় তাদের মধ্যে সুবিধাবাদিতার বিষয়টি অত্যন্ত ষ্পষ্ট। তারা মূলত কাজ করে ব্যক্তিস্বার্থে। তিনি বলেন, আমরা যদি অতীতের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, সুশীল সমাজের অনেকেই অতীতেও বিভিন্ন সরকারের সময় অনেক ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। নিকট অতীতে ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়ও অনেকে নির্লজ্জভাবে বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় আছে। দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর গত ২৪ বছরে যে সরকারই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে তখনই সুশীল সমাজ ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। এদের অনেকে মন্ত্রী হওয়ার আশায় ছিলেন। অনেকে সেই সুযোগ পেয়েছেনও। রাজনৈতিকভাবেও অনেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন, পেয়েছেন। আর সিভিল সোসাইটির বিভাজন ও বিভক্তিটাও এ কারণেই।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিলুপতার পরিবারতন্ত্র এবং রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই দুর্বিষহ পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় দুই শীর্ষ নেত্রীর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর দুটি সংগঠনের ভেতরে অথবা সমাজের অভ্যন্তরে কোথাও কোন বিকল্প শক্তি বা সাহসী সুশীল সমাজকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। কি সংগঠন, কি সংসদ কি সমাজের অভ্যন্তরে কোথাও গণতন্ত্রের চর্চার অনুশীলন বর্তমানে নেই। এমনকি দুটি জোটে বিপরীতমুখী নানা দল সংগঠিত হলেও তারা তাদের দলীয় চেতনা ও মননশীলতাকে শুধু জলাঞ্জলিই দেন নাই, তারা এখন নিতান্ত আজ্ঞাবহ ভূমিকা পালন করছে। সুশীল সমাজের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, দুই নেত্রীর করুণা ভিক্ষার জন্য যে স্তুতি, বন্দনা, অর্চনা হয় তা রাজনীতিকেই শুধু দূষিত করেনি, এই বাংলার যে জাগ্রত জনতা যারা একসময় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে উঠতো তাদেরকে সম্পূর্ণরুপে নিষ্পৃহ ও নির্বিকার করে দিয়েছে। প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ২০০১ এর পর থেকে। ক্রমে ক্রমে তা এমন পরিপূর্ণতা লাভ করে যে, সমস্ত বিচারিক ব্যবস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সংসদ এবং শাসনতন্ত্রকে বিকলাঙ্গ এবং দলকানা করেনি বরং সমস্ত জায়গায় একটি বিশৃঙ্খল আবহের ভয়াবহ উদগ্র রূপ প্রতিভাত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সুশীল সমাজের বিরাট একটি অংশ বিভাজিত ও বরাবরই দলকানা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল দল, নীল দল, সাংবাদিকদের মধ্যে প্রচণ্ড দল নির্ভরতা, আইনজ্ঞদের মধ্যে শুধু বিভাজনই নয়, দলের প্ররোচনায় প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ের দরজায় লাথি মারা, হাতাহাতি, মারামারি দলের প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশই শুধু হয়নি বিচার ব্যবস্থাকেও তা বাধাগ্রস্ত করেছে এবং জাতির কাছেও আমাদের মাথা হেট করেছে।
তিনি বলেন, আজকে রাজনীতির নিয়মই হলো অর্চনা, বন্দনা, স্তুতি ও স্তাবকতা। আমি বরাবরই মন্তব্য করি, গণতন্ত্র অর্থই হলো অনুশীলন ও চর্চা এবং তার জীবনীশক্তি হলো সহনশীলতা। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক সংগঠনেরতো বটেই শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ সকলেই আজ দলকানা। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী এ পরিবেশে মানুষ শুধু প্রচণ্ডভাবে অসহায়ই নয়, নির্বিকার ও নিস্পৃহ। অকুতোভয় সুশীল সমাজ নিঃস্বার্থ প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার ঊর্ধ্বে উঠে একটা তৃতীয় ঐক্য সুসংগঠিত থাকলে একটা গণবিক্ষোভ ঘটাতে না পারলেও জনগণের প্রত্যয়কে কিছুটা হলেও জাগ্রত করতে সাহায্য করতো। কিন্তু ব্যতিক্রমধর্মী কিছু প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব যারা জ্ঞানে প্রদীপ্ত কিন্তু সাহসের প্রশ্নে দরিদ্র। কেউ কেউ কিছুটা নিরপেক্ষতা অবলম্বন করলেও যে সাহস ও মানসিকতা জনগণকে উজ্জীবিত করতে পারতো তার এখন ভীষণ অভাব। নূরে আলম সিদ্দিকী আরও বলেন, রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্বের স্বৈরাচারী মনোভাব তো বটেই বিভাজিত সুশীল সমাজে অনৈক্য ও সাহসের দারিদ্রের কারণে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করলেও জনগণ ব্যথিত চিত্তে তা অবলোকন করে। কিন্তু প্রতিহত করতে কেউ এগিয়ে আসে না। এর দায়ভার আমাদের সকলকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, সুশীল সমাজের অনেকেই আমাকে বলেন, আমাদের সময়ের রাজনীতিতে মতপার্থক্য ছিল, কিন্তু গুম খুন ছিল না। আর গ্রেপ্তার হলেও আমরা রাজবন্দির মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু এখন গ্রেপ্তার হলে থানা থেকেই যে পাশবিক নির্যাতন করা হয় তা বর্ণনাতীত। সুশীল সমাজও এখন সেই আতঙ্কে অস্থির। তবুও আমি এটুকু বলবো আমাদের আমলে রাজনীতির মধ্যে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি লোভ লালসা ছিল না। রাজনীতি আমাদের জন্য ছিল আদর্শ, প্রত্যয়ের বিষয়। যেখানে আমাদের শক্তির উৎস ছিল জনগণের হৃদয় উৎসারিত সমর্থন। আর বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে সেই জনগণকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম। সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, অধিকার, অনুদানের বিষয় নয়, নয় সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে আমার অভিব্যক্তি অর্জনের বিষয়। নিজেদের নির্মোহ হতে হয়। তবেই জনগণের আস্থা ও সমর্থন মিলে। নেতৃত্বের সততা, সাহস, প্রত্যয় জনগণকে উজ্জীবিত করে। সুশীল সমাজকে সেটিই অনুধাবন করতে হবে।
অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বলা যায়, আমরা যাদের সুশীল সমাজ বা সিভিল সোসাইটি বলি তাদের অনেকেই শাসক দলের পদলেহনকারী। শাসক দলের প্রতি তারা অনুরক্ত থাকে। কেন তারা এমন করে তা সহজেই অনুমেয়। সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী চরিত্রের কারণেই তারা এমন করে। আবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে মিশে যায়। এরাই সুবিধাবাদী এবং সুবিধাভোগী। এদের বেশিরভাগ দালাল। এদের মধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী কমবেশি সবাই আছেন। তিনি বলেন, বিখ্যাত দার্শনিক কালমার্কসের উদ্ধৃতি দিয়ে যদি বলি তাহলে এটা বলা যায়, সিভিল সোসাইটির মানুষদের শ্রেণী চরিত্র হলো এরা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় বিশেষ সময়ে শাসক ও শোষক শ্রেণীর সঙ্গে মিশে যায়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে গুনগান গাওয়ার জন্য শাসক শ্রেণীরও চাটুকারের প্রয়োজন হয়। তখন সুশীল সমাজের একশ্রেণীর মানুষকে তারা কাছে টানে। তবে, কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের মানুষ আছে যারা এ ধরনের পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এ সংখ্যা খুবই কম। আবার কেউ কেউ আছে শাসকদলের সমর্থন করে কিন্তু তাদের পদলেহন করে না। যদি এ থেকে দূরে থাকা না যায় তাহলে সুশীল সমাজের মধ্যে দলবাজি, বিভক্তি, বিভাজন চলতেই থাকবে। যা দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
মোবাশ্বের হোসেন
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুশীল সমাজ যে ধাপে উঠার কথা ছিল সে ধাপে উঠেনি। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়েছে। যদি তা না হয়ে নয় বছরে হতো তাহলে বহু বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের হয়ে যেত। কারণ বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ বলে যাদের আমরা চিনি তারা এত ধৈর্যশীল নয়। এরা এক ধাপে এক ধরনের আচরণ করে আবার আরেক ধাপে গিয়েই নিজেকে পরিবর্তন করে অন্য দিকে চলে যায়। কেউ কেউ স্রোতের বিপরীতেও চলে। আসলে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে সুশীল সমাজ যে প্রক্রিয়ায় আসার কথা ছিল সে প্রক্রিয়ায় এখনও আসেনি। এখন যাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলা হয়, তারা আসলে সুশীল সমাজ নয়। সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে তারা মূলত দেশ ও জাতির ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, এখন সরকারে আছে আওয়ামী লীগ। স্বভাবতই সুশীল সমাজের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো পঁচাত্তরে যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তখন এই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কোথায় ছিল? এখন যারা আওয়ামী লীগের নামে গলা ফাটায় সেই নেতারাই বা ছিল কোথায়? অথচ এই সুশীল সমাজ নামধারীরা বঙ্গবন্ধুর আমলে তৎকালীন সরকারের সুবিধা যেমন নিয়েছে। তেমনি এই শেখ হাসিনার আমলেও নিচ্ছে। মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার পাশে সব চাটার দল। তিনি (বঙ্গবন্ধু) তখনকার সুবিধাবাদী সুশীল সমাজের উদ্দেশেই তা বলেছিলেন। কত দুঃখে তিনি একথা বলেছিলেন তা সহজেই অনুমেয়। তার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, তাকে ছাড়া আর সবাইকে কেনা যায়। তিনিও সেই সুবিধাবাদীদের উদ্দেশেই একথা বলেছেন। তিনিও কত দুঃখে একথা বলেছেন। আসলে সুশীল সমাজ এখন চাটতে চাটতে গেলার দল আর গিলতে গিলতে রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। সরকার ও দলের ভেতরেই তারা ফ্রাঙ্কেস্টাইনে পরিণত হয়েছে। মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, শিশু সন্তান অপরিষ্কার হলেও মা বাবা যেমন তাকে ডাস্টবিনে ফেলে না, তেমনি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হচ্ছে একটি শিশুর মতো। যা দুর্বল হলেও কখনো ফেলা যায় না, সযত্নে রাখতে হয়। তাই, নাই গণতন্ত্রের চাইতে দুর্বল গণতন্ত্রও ভাল। দুর্বল হলেও আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। আর সঠিক গণতান্ত্রিক চর্চা যদি আমরা করতে পারি তাহলে সঠিক সুশীল সমাজ গড়ে উঠবে। সেজন্য আমি আশাহত নই। বর্তমান তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করবে বলে আমার আশা।
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা-জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে যে বিদ্যমান সুশীল সমাজ ব্যবস্থা ছিল তা এনজিওগুলোর দাপটের কারণে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এনজিওগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন আছে। সেহেতু সিভিল সোসাইটিও বিভাজিত ও বিভক্ত হয়ে গেছে। তাই দেশে চলমান এনজিওগুলোর অর্গানিক ভিত্তি থাকতে হবে। তিনি বলেন, কোন কিছুই রাজনীতি বিযুক্ত নয়। কিন্তু এখন যেভাবে সিভিল সোসাইটিকে রাজনীতি প্রভাবিত করছে তাতে সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে সিভিল সোসাইটির যতটুকু ভূমিকা রাখার দরকার তা আর হালে পানি পাচ্ছে না। তিনি বলেন, যারা রাজনীতির টুপুর মাথায় দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিষয়ে কথা বলা অতিশয়োক্তি হবে। তবে, নিকট অতীতে বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা বিভিন্নভাবে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।
ড. দিলারা চৌধুরী
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী সুশীল সমাজের বিভক্তির জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন রাজনীতিকে। তার মতে, আমাদের দেশের সিভিল সোসাইটি বিভক্ত হওয়ার একমাত্র কারণ রাজনীতি। এ জন্য দেশের বর্তমান সিভিল সোসাইটি কোন সংজ্ঞার মধেই পড়ে না। কেননা, রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেয়ার জন্য কিন্তু সিভিল সোসাইটি গড়ে উঠেনি। তিনি আরও বলেন, সিভিল সোসাইটির প্রথম শর্তই হলো তারা হবে অরাজনৈতিক। তারা সরকারের ভুলত্রুটি নিরসনে জাতীয় জনমত গঠন করবে, যাতে সরকার সঠিকভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেমন সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি, তেমনি সিভিল সোসাইটিও সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি। ফলে যারাই সরকারের মন্দ কাজের সমালোচনা করবে বা ভুল ধরিয়ে দেবে তাদেরকেই অপদস্থ করা হবে। এজন্য দেশে সুশীল সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ তার পূর্ব সম্মান হারিয়েছে। কেন হারিয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়। দেশের সুশীল সমাজ ভাব করে যেন তারা নিরপেক্ষ। তারা আসলে নিরপেক্ষ নন, বিভাজিত। নিজেদের সুবিধার জন্য যে কোন সরকারের সময় এরা সুবিধালাভের আশায় তৎপর হয়ে উঠে। কোন না কোন দল বা সরকারের পদলেহন করে। কিছুদিন আগে শত নাগরিক কমিটি ও সহস্র নাগরিক কমিটি নামে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আওয়ামী ও বিএনপি নামে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেল। এটা নির্লজ্জ দলবাজির উদাহরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুশীল সমাজের এখন যারা সক্রিয় তাদের মধ্যে সুবিধাবাদিতার বিষয়টি অত্যন্ত ষ্পষ্ট। তারা মূলত কাজ করে ব্যক্তিস্বার্থে। তিনি বলেন, আমরা যদি অতীতের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, সুশীল সমাজের অনেকেই অতীতেও বিভিন্ন সরকারের সময় অনেক ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। নিকট অতীতে ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়ও অনেকে নির্লজ্জভাবে বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় আছে। দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর গত ২৪ বছরে যে সরকারই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে তখনই সুশীল সমাজ ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। এদের অনেকে মন্ত্রী হওয়ার আশায় ছিলেন। অনেকে সেই সুযোগ পেয়েছেনও। রাজনৈতিকভাবেও অনেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন, পেয়েছেন। আর সিভিল সোসাইটির বিভাজন ও বিভক্তিটাও এ কারণেই।
No comments