পদ্মাপারের তিন লড়াকু by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পেট্রলপাম্পে কাজ করছে আতিকুল ইসলাম l প্রথম আলো |
বর্ষার বাবা নেই। ভাই ছিল, তা-ও কারাগারে। একমাত্র ভরসা মা। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আতিকুলের বাবা থেকেও নেই। সংসার দেখেন না। আতিক পেট্রলপাম্পে কাজ নিয়েছে। রীতার বাবা রিকশা চালান, কিন্তু এখন চোখে কম দেখেন। তাই আগের মতো রিকশা চালাতে পারছেন না। সংসারে টান।
বর্ষা, রীতা ও আতিকুল—তিনজনই ইউসেপ-রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভর্তি হয়েছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। শিক্ষকদের বিবেচনায় তারা তিনজনই তুখোড় মেধাবী। তবে ভয়—তারা আদৌ আর পড়াশোনা চালাতে পারবে কি না। অভাব-অনটন আর সাংসারিক জটিলতায় পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে তাদের ভবিষ্যৎ।
বর্ষা খাতুনের বাড়ি রাজশাহী নগরের কেশবপুর বস্তিতে। বাবার নাম আবদুল আজিজ। মারা গেছেন। মা নাজমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। একমাত্র ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ভাইয়ের স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। শ্বশুরবাড়ির মামলায় ভাই এখন হাজতে। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে মেজো বোন রাশিদা খাতুন ও মায়ের সঙ্গে থাকে বর্ষা। কয়েক দিন আগে বর্ষাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘর থেকে বড়জোর এক পা ফেলার জায়গা। দুই পা ফেলতে গেলেই পদ্মা নদী। কোনো জানালা নেই। ঘরের চালাও মাথায় বাধে। মাথা নিচু না করে ভেতরে ঢোকার উপায় নেই। বর্ষা জানায়, তার বোনও খুব মেধাবী। কিন্তু এসএসসি পাসের পর আর পড়াশোনা হয়নি। একটি ক্লিনিকে কাজ নিয়েছিলেন। সে কাজও কিছুদিন থেকে বন্ধ। বর্ষা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জেনারেল মেকানিক্যাল ট্রেডে ভর্তি হয়েছে। তার ভয়, তার পরিণতিও বোনের মতো হতে পারে। বর্ষার মা নাজমা বেগম বলেন, মেজো মেয়েটার মেধা থাকা সত্ত্বেও পড়াতে পারেননি। ছোট মেয়েটা আরও মেধাবী। তাকে পড়ানোর খুব ইচ্ছা। কিন্তু কীভাবে পড়াবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।
আতিকুল ইসলামের বাড়ি নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায়। নিজেদের বাড়িঘর নেই। নানার বাড়ির একটি খুপরি ঘরে থাকে তারা। বাবা মামুনুর রশিদ মাঝেমধ্যে একটি হোটেলে কাজ করেন। আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সংসার দেখাশোনা করেন না। তাই মাকে ঝিয়ের কাজ করতে হয়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আতিক সবার বড়।
বর্ষা, রীতা ও আতিকুল—তিনজনই ইউসেপ-রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভর্তি হয়েছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। শিক্ষকদের বিবেচনায় তারা তিনজনই তুখোড় মেধাবী। তবে ভয়—তারা আদৌ আর পড়াশোনা চালাতে পারবে কি না। অভাব-অনটন আর সাংসারিক জটিলতায় পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে তাদের ভবিষ্যৎ।
বর্ষা খাতুনের বাড়ি রাজশাহী নগরের কেশবপুর বস্তিতে। বাবার নাম আবদুল আজিজ। মারা গেছেন। মা নাজমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। একমাত্র ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ভাইয়ের স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। শ্বশুরবাড়ির মামলায় ভাই এখন হাজতে। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে মেজো বোন রাশিদা খাতুন ও মায়ের সঙ্গে থাকে বর্ষা। কয়েক দিন আগে বর্ষাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘর থেকে বড়জোর এক পা ফেলার জায়গা। দুই পা ফেলতে গেলেই পদ্মা নদী। কোনো জানালা নেই। ঘরের চালাও মাথায় বাধে। মাথা নিচু না করে ভেতরে ঢোকার উপায় নেই। বর্ষা জানায়, তার বোনও খুব মেধাবী। কিন্তু এসএসসি পাসের পর আর পড়াশোনা হয়নি। একটি ক্লিনিকে কাজ নিয়েছিলেন। সে কাজও কিছুদিন থেকে বন্ধ। বর্ষা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জেনারেল মেকানিক্যাল ট্রেডে ভর্তি হয়েছে। তার ভয়, তার পরিণতিও বোনের মতো হতে পারে। বর্ষার মা নাজমা বেগম বলেন, মেজো মেয়েটার মেধা থাকা সত্ত্বেও পড়াতে পারেননি। ছোট মেয়েটা আরও মেধাবী। তাকে পড়ানোর খুব ইচ্ছা। কিন্তু কীভাবে পড়াবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।
আতিকুল ইসলামের বাড়ি নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায়। নিজেদের বাড়িঘর নেই। নানার বাড়ির একটি খুপরি ঘরে থাকে তারা। বাবা মামুনুর রশিদ মাঝেমধ্যে একটি হোটেলে কাজ করেন। আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সংসার দেখাশোনা করেন না। তাই মাকে ঝিয়ের কাজ করতে হয়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আতিক সবার বড়।
বর্ষা খাতুন ও রীতা খাতুন |
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রিক্যাল
ট্রেডে ভর্তি হয়েছে আতিক। তার পড়াশোনার খরচ চালানোর কোনো উপায় নেই। তাই
পেট্রলপাম্পে কাজ নিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা
এলাকায় মেসার্স আমিন ফিলিং স্টেশনে গিয়ে তাকে কাজ করতে দেখা যায়। সে
জানায়, পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য পাম্পে কাজ নিয়েছে। বুঝতে পারছে না এই
কাজ করে আদৌ পড়াশোনা চালাতে পারবে কি না।
রীতা খাতুনের বাড়ি নগরের গুড়িপাড়া বস্তিতে। বাবা শরিফুল ইসলাম রিকশা চালান। রীতা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার ট্রেডে ভর্তি হয়েছে। তার মা সাদেরা বেগম জানান, সম্প্রতি রিতার বাবা চোখে ঠিকমতো দেখছেন না। মাথায়ও সমস্যা। আগের মতো রিকশা নিয়ে বের হতে পারেন না। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে ছোট ছেলে নাইম একটা হোটেলে কাজ নিয়েছে। সে ওই কাজ করেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। রীতা পড়াশোনায় খুবই ভালো। কিন্তু এখন পড়াশোনা কীভাবে চলবে, সেটা নিয়েই যত চিন্তা।
ইউসেপ-রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে এই তিন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছে। খেয়ে না খেয়ে স্কুলে আসত। কোনো দিন পড়ায় ফাঁকি দেয়নি। তিনজনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। একটু সহযোগিতা পেলে ওরা যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে।
রীতা খাতুনের বাড়ি নগরের গুড়িপাড়া বস্তিতে। বাবা শরিফুল ইসলাম রিকশা চালান। রীতা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার ট্রেডে ভর্তি হয়েছে। তার মা সাদেরা বেগম জানান, সম্প্রতি রিতার বাবা চোখে ঠিকমতো দেখছেন না। মাথায়ও সমস্যা। আগের মতো রিকশা নিয়ে বের হতে পারেন না। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে ছোট ছেলে নাইম একটা হোটেলে কাজ নিয়েছে। সে ওই কাজ করেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। রীতা পড়াশোনায় খুবই ভালো। কিন্তু এখন পড়াশোনা কীভাবে চলবে, সেটা নিয়েই যত চিন্তা।
ইউসেপ-রাজশাহী টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে এই তিন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছে। খেয়ে না খেয়ে স্কুলে আসত। কোনো দিন পড়ায় ফাঁকি দেয়নি। তিনজনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। একটু সহযোগিতা পেলে ওরা যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে।
No comments