তুলা রাশি ও সম্মুখবর্তী কাঁসা by রাসেল আহমেদ
প্রচণ্ড গরম পড়েছে এ বছর। উঠোনে ভিড় করে দাঁড়ানো মানুষগুলো তিরতির করে ঘামছে, যার ফলে তাদের থমথমে মুখ আরও স্পষ্ট এবং প্রকটভাবে চোখে পড়ছে। একেকজনের মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে তারা কতটা কৌতূহলী ও আগ্রহী। কিছু নিস্পৃহ এবং ভাবলেশহীন মুখও দেখা যাচ্ছে। আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বিশু কবিরাজ। আজ তাঁর মাথায় শক্ত করে জড়ানো লাল কাপড়—ময়লা জমে জমে কালচে রং ধারণ করেছে। অর্থাৎ আজ এ বাড়িতে তিনি এসেছেন ওঝা হিসেবে। গ্রামের সবাই জানে, ঝাড়ফুঁক, তন্ত্র-মন্ত্রের কাজ হলেই তিনি মাথায় পট্টি বেঁধে আসেন। এই মুহূর্তে তাঁর চোখ গাঢ় লাল কেন—সে রহস্য ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বিশু কবিরাজের সামনে তোফাজ্জল মাস্টারের বাড়ি থেকে আনা একটা কাঁসার বাটি। আগে প্রতি বাড়িতে এমন বাটি পাওয়া যেত। আজকাল দু-একটি বনেদি বাড়ি ছাড়া আর কাঁসার বাটি খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশু কবিরাজ কাঁসার বাটিটা সযত্নে নেড়েচেড়ে সামনে রাখলেন। উদ্যত ছুরির মতো সূর্যের আলোয় ঝিকঝিক করতে লাগল কাঁসা। মনে হচ্ছে যেন আহত কোনো বয়স্ক মোগল সম্রাটের ঢাল উল্টে পড়ে আছে। বিশু কবিরাজকে ডাব কেটে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছেন তিনি। অভিব্যক্তিতে তৃপ্তির একটা ছায়া। তাঁর চোখ কাঁসার বাটির দিকে। আশপাশে তীব্র নীরবতা প্রথমে ভাঙলেন তিনিই, ‘এই বাটিতে হইব না। পুরাতন বাটি লাগব। আর কোনো পুরাতন কাঁসার বাটি নাই? পুরাতন থাল হইলেও চলব।’ তোফাজ্জল মাস্টার বললেন, ‘আছে, আছে। পুরাতন কাঁসার বাটিই আছে। আনতেছি, খাড়ান।’ কাছেই কামাল দাঁড়িয়ে ছিল। সে এই মাস্টারবাড়ির ফাই-ফরমাশ খাটে। তাকে মায়ের ব্যবহার করা কাঁসার বাটিটা নিয়ে আসতে বললেন তোফাজ্জল মাস্টার। বাটি আনতে ছুটল কামাল।
সপ্তাহ খানেক পরে তোফাজ্জল মাস্টারের ছোট মেয়ের বিয়ে। ছেলেপক্ষের সবাই বিদেশে থাকে। বিয়েতে এখনো আসেনি, কিন্তু গয়না কেনার টাকা আগেই পাঠিয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে সবাই এসেও যাবে। এর মধ্যে ঘটল অঘটন। ছোট মেয়ে তিতলির তিন ভরি ওজনের সোনার নেকলেস চুরি গেল। বিয়ে উপলক্ষে অনেকেই আসছে-যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন আছে, তিতলির বান্ধবীরা আছে, তোফাজ্জলের দুই ছেলের বন্ধুরাও এসেছে কয়েকজন। হয়তো স্রেফ হারিয়েই গেছে, কিংবা এদের মধ্যে কেউ একজন সত্যিই নিয়েছে। কিন্তু কাকে ধরবেন তিনি? আলাদা করে কার ওপরেই বা সন্দেহ করা যায়? সবাই কাছের মানুষ। প্রায় সবাইকেই তিনি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন, গুটি কয়েককে বিশ্বাস করার ভান করতে হয়। শেষমেশ বিশু কবিরাজকে ডাকা হলো। পরিবার-প্রতিবেশী সবাই এই বুদ্ধি দিয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধা মায়েরই চাপ বেশি। মা থানা-পুলিশ করতে রাজি নন। তোফাজ্জল মাস্টার নিজে ঝাড়ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। মায়ের চাপাচাপিতেই ওঝা আনায় মত দিয়েছেন তিনি। বিশু কবিরাজ বাটি চালান দেবেন। বাটি দৌড়ে গিয়ে উঠবে চোরের গায়ে। কিংবা চোরের ঘরে গিয়ে উঠবে। সোজা বের করে দেবে চুরি করা জিনিস। কবিরাজ পরিচয়ে খ্যাত হলেও বিশু বিশ্বাস এ গ্রামের প্রসিদ্ধ ওঝা। এমনকি গ্রামের আশপাশেও মাঝেমধ্যে তাঁর ডাক পড়ে। তন্ত্রমন্ত্রে মাস্টারসাহেবের পুরোপুরি অবিশ্বাস থাকলেও বিশুকে তিনি যে কারণে বিশ্বাস করেন তা হলো ওঝাগিরিতে বিশু কোনো ধরনের অর্থ নেয় না। গুরুর নাকি নিষেধ আছে। অবশ্য এটা তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধিও হতে পারে—ওঝা খ্যাতির কারণেই সম্ভবত তাঁর কবিরাজি ব্যবসা রমরমা। কামাল এক দৌড়ে কাঁসার বাটি নিয়ে এল। এসেই সরাসরি কবিরাজের হাতে তুলে না দিয়ে বাটিটাকে প্রথমে গলায় জড়ানো গামছা দিয়ে মুছল ভালোভাবে। তারপর সেটিকে যে ভঙ্গিতে সে বিশু কবিরাজের হাতে তুলে দিল, সেই ভঙ্গিই বলে দেয় কবিরাজকে কতটা সমীহ করে সে।
হাত বাড়িয়ে বাটির দিকে অল্পক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন কবিরাজ। তারপর যত্ন নিয়ে সেটিকে রাখলেন মাটিতে। এবার নিজের চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে আনলেন একবার। নারী-পুরুষ সবাই কেমন যেন ভয় পেয়ে জড়সড় হলো আরেকটু। লালচে চোখ মেলে বিশু কবিরাজ হাঁক দিলেন, ‘আপনেগো মইধ্যে তুলা রাশির জাতক কে আছেন? তুলা রাশি! কে আছেন? আমার কাছে আসেন। আছেন কেউ?...সিংহ রাশি হইলেও চলব। কে আছেন?’
কেউ সাহস করে এগিয়ে আসছে না।
আবার বিশু কবিরাজ হাঁক দিলেন, ‘কেউ নাই আপনেগো ভেতরে তুলা রাশির জাতক?...জাতিকাও নাই কেউ?’
হঠাৎ ভিড় ঠেলে যে যুবক বিশু কবিরাজের সামনে এসে দাঁড়াল, সে সুলতান। তাকে সামনে বসতে বললেন বিশু কবিরাজ। সুলতান বসল। কবিরাজ চোখ বন্ধ করে বাম হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনী এক করে সুলতানের কপালে রাখল। আধমিনিট চোখ বন্ধ রেখে যখন তার দিকে তাকালেন, তখন তাঁর চোখ টকটকে লাল। প্রশ্নের ভঙ্গিতে প্রায় গর্জন করলেন, ‘তুলা রাশি?’
মাথা ঝাঁকাল সুলতান। কবিরাজ বললেন, ‘আপনে বাটির সামনে গিয়া বসেন। তারপর দুই হাতের মুঠা দিয়া বাটিটা শক্ত কইরা ধরবেন। চোউখ বন্ধ কইরা থাকবেন। বাটি নিজে নিজে নড়ার আগে চোউখ খুলবেন না।’ সুলতান হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়িয়ে কাঁসার বাটির সামনে বসল। তারপর দুহাতে শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার কপালে ঘাম জমে আছে বড় বড় ফোঁটায়।
২. জাহিদ এ গ্রামে এসেছে বছর দুয়েক হবে। সে এখানকার একমাত্র সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। ছাত্রদের প্রিয়। গ্রামবাসীও তাকে পছন্দ করে। তবুও তার বন্ধুসংখ্যা সীমিত। ঘনিষ্ঠ বলতে গেলে একমাত্র সুলতান। প্রয়োজনের খাতিরেই মানুষ এমন দু-একজন বন্ধুবান্ধব বানিয়ে নেয়, যাদের কাছে অকপটে সবকিছু বলা যায়—সুলতান তেমন বন্ধু। গল্প-কবিতাসহ বিচিত্র ধরনের বই পড়ার অভ্যাস জাহিদের। সুলতানেরও তা-ই। সম্ভবত দুজনের বন্ধুত্ব জমে ওঠার এটাই একমাত্র কারণ। শামুকভাঙা নদীর পাশে বড় বাজারটিতে সবচেয়ে চালু কাপড়ের দোকান সুলতানের। তার দুজন কর্মচারী আছে—তারাই দোকান চালায়। সুলতান মাঝেমধ্যে গিয়ে হিসাবপত্র দেখে। শহর থেকে বিএ পাস করে আবার গ্রামে ফিরে এসে এই ব্যবসা ধরেছে সে। কেবল মায়ের চাপাচাপিতে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামে আসা। মা তাকে ছাড়া থাকতে পারেন না, আবার স্বামীর ভিটে ছেড়ে শহরেও তিনি যাবেন না। শুধু কান্নাকাটি করেন। শেষমেশ বাধ্য হয়েই মানিয়ে নিয়েছে সে। ব্যবসাও জমিয়ে তুলেছে দারুণভাবে। যেখানেই থাকুক, প্রতিদিন বিকেলে দুজনের আড্ডা হয় শামুকভাঙার তীরে। পুরোনো স্মৃতিচারণা করে। শেয়ার করে নিজেদের সারা দিনের জমানো বিষাদ, বেদনা ও আনন্দের গল্প। এভাবেই কথায় কথায় জাহিদ একদিন হুট করে বলে বসে ফাহিমার কথা। ফাহিমাকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা, প্রেমের কথা, ‘বেতনটা আরেকটু বাড়ুক। সামান্য কিছু টাকা জমলেই দেখিস, একদিন আমরা বিয়ে করে ফেলব। ফাহিমার বাড়ি থেকে খুব চাপ দিচ্ছে।’ সব শুনে সুলতান খেপে যাওয়ার ভান করল। কপট রাগে চোখ কুঁচকাল। এবং অবশেষে নিখাদ আনন্দে অভিনন্দন জানাল বন্ধুকে। কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে সে অবাক হয়ে টের পেল, সত্যি সত্যি আনন্দ নয়, বরং তার শরীরে একধরনের জ্বলুনি হচ্ছে—ঈর্ষার জ্বলুনি। অহেতুক ঈর্ষায় সারা শরীর কাঁপতে লাগল তার। ফাহিমার সৌন্দর্য সাদামাটা ধরনের। আফসোস করার মতো শিক্ষিতও সে নয়। আর গ্রামে ফাহিমার বাবার প্রভাবও তেমন নয়। কিন্তু অকস্মাৎ এ কেমন অনুভূতি হলো তার? ফাহিমার প্রতি সামান্যতর দুর্বলতাও সুলতান এর আগে অনুভব করেনি। তবে জাহিদের ওপর হঠাৎ ঈর্ষা কেন জেগে উঠল? একধরনের অপরাধবোধে ভুগতে লাগল সে, কিন্তু ঈর্ষার তীব্র টানে সে অপরাধবোধ ভেসেই উঠতে পারল না; বরং গভীরে তলিয়ে যেতে লাগল। উল্টো ক্রমাগত আরও তীব্র হতে লাগল ঈর্ষা, বাড়তে লাগল জ্বলুনি। যেন তীব্র আক্রোশ নিয়ে শামুকভাঙা নদী তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল বেশির চেয়ে বেশি—অধিকতর অন্ধকার তলানিতে।
৩. ভিড়টা একটু বিস্তৃত হয়ে গেল আচমকা। সবাইই দেখেছে যে বাটিটা নড়ে উঠল। সুলতান চোখ খুলতেই কাঁসার বাটি তাকে নিয়ে রওনা দিল উত্তরে। ভিড়ের উত্তর দিক ফাঁকা হয়ে তাকে জায়গা করে দিতে লাগল। সবার চোখে তীব্র ভয় এবং বিস্ময়। দু-পায়েই চলছে সুলতান। তার ভঙ্গি অনেকটা ছোটখাটো গরিলার মতো—নুয়ে দু-হাতে বাটি ধরে আছে। বাটি এখন দক্ষিণ দিকে চলছে—মন্থর গতি। সুলতানের পেছনে পেছনে হাঁটছে বিশু কবিরাজ, তার পেছনে তোফাজ্জল মাস্টার, পেছনে অন্যরা। ধীরে ধীরে গতি বাড়ছে বাটির। দুমড়ে যাওয়া সবুজ ঘাস ধরে রাখছে একদল কৌতূহলী মানুষের স্মৃতিচিহ্ন। দক্ষিণে যেতে যেতে পুকুরের পাশ ঘেঁষে শামুকভাঙার দিকের রাস্তায় উঠল সুলতান। এবার পুবদিকে যে রাস্তাটি বাঁক নিয়েছে সেই রাস্তা ধরে ছুটতে লাগল...
একটা কুৎসিত প্ল্যান করেছে সুলতান। হ্যাঁ, জাহিদের বাড়িতে গিয়ে উঠবে সে। জাহিদকেই চোর সাব্যস্ত করবে। এতেই হয়তো তার তৃপ্তি মিলবে। হয়তো এটিই এই অসহ্য জ্বলুনির নিরাময়। এই মুহূর্তে এই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া তার কাছে জরুরি। গতি বাড়িয়ে দিল সুলতান। পুবের রাস্তা ছেড়ে এবার বাগানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সরু পথটা ধরল সে। মৃধাবাড়ির সাদামাটা ঘোয়ো কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করতে করতে ছুটে আসছিল তার দিকে, অন্যরা তাড়িয়ে দিল। দু-চারজন বড় বড় মাটির ঢেলা ছুড়ে মারল কুকুরের গায়ে। ফলে কেঁউ কেঁউ করতে করতে আবার মৃধাবাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল সে। ওই বাড়ি থেকে অনেকগুলো মুখ তখন তাকিয়ে আছে সুলতানের দিকে। মৃধাবাড়ি ছাড়িয়ে এসেছে অনেকক্ষণ। টপটপ করে ঘাম ঝরছে সুলতানের গা বেয়ে। সারা মুখের ঘাম নাক হয়ে পড়ছে বাটিতে। কপাল বেয়ে সামান্য ঘাম চোখে যেতেই ছ্যাঁৎ করে উঠল চোখ। জ্বলছে। বাটিতে ঘাম পড়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না কে জানে, আচমকা যেন নিজেকে অদ্ভুতদর্শন একটি প্রাণী হিসেবে দেখতে পেল সুলতান—প্রাণীটি অন্য আরেকটি কুকুরের মতোই চার পায়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। অপরাধবোধ এবার যেন-বা বাতাস পেল; তলানি থেকে আবার ভেসে উঠল জলের ওপরে। ঈর্ষা পাতলা হয়ে আসছে। এবং তৎক্ষণাৎ নিজের প্রতি একধরনের ঘৃণা বোধ হতে লাগল সুলতানের। এ কী করছে সে? নিজের বন্ধুকে চোর সাজাচ্ছে! তা-ও এমন ভিত্তিহীনভাবে? জাহিদকে ঈর্ষা করার যৌক্তিক কারণই বা কী? ফাহিমার সঙ্গে তার মাখো-মাখো প্রেম কোনো দিন ছিল না, যেখানে অবাঞ্ছিত আগন্তুকের মতো ঢুকে পড়েছে জাহিদ। সামান্যতমও দুর্বলতা ছিল না ফাহিমার প্রতি। সম্পূর্ণ নিরপরাধ একটা মানুষের প্রতি অমূলক ঈর্ষায় এতখানি নিচে নেমে এল সে!
হঠাৎ জেগে ওঠা অপরাধবোধ সুলতানের পায়ে মাটির ঢেলা হয়ে পড়তে লাগল। নিজেকে তার মনে হতে লাগল মৃধাবাড়ির হাড়সর্বস্ব কুকুর। জাহিদের বাড়ি আর বেশি দূরে নয়। পেছনের ভিড় থেকে দু-চারজন জাহিদকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, জাহিদ চোর। সে তোফাজ্জল মাস্টারের নাতি মামুনকে বাড়িতে গিয়ে পড়ায়। তার পক্ষে তো নেকলেস চুরি করা আসলেই সহজ। ছিঃ ছিঃ মাস্টারসাব চোর! সে কই এখন? স্কুলে? এই টাইমে স্কুলেই থাকার কথা। ছিঃ ছিঃ!
আচমকা সুলতান থমকে দাঁড়াল। সবাই চুপ হয়ে গিয়েছিল, হঠাৎ শোনা গেল শোরগোল। সুলতান ঘুরে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে মুখ ঘুরে গেছে তার। অন্য পথ নিচ্ছে। আর এ সময়ই অলৌকিক ব্যাপারটা ঘটল। জারুলগাছের দিকে মুখ ঘুরিয়েই সুলতান টের পেল, বাটি ঘুরছে না। থামছেও না। সে জাহিদের বাড়ির দিকেই যেতে চাইছে। শক্তি দিয়ে টান দিল সুলতান। বাটি নড়ছে না; বরং তার তুমুল আগ্রহ ও আকর্ষণ যেন জাহিদের বাড়ির দিকে। বাটিটা সুলতান শক্ত করে ধরল। বাটির ভেতর থেকেও অদৃশ্য কেউ যেন তাকে টানছে জাহিদের একলা দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটির দিকে। ওই তো, তাকালেই দেখা যাচ্ছে রোদে চকমক সার্কাসের তাঁবুর মতো বাড়ি। সুলতান বাটি ছেড়ে দিতে চাইল। নাহ, সে বাটি ছেড়েও দিতে পারছে না। অদৃশ্য জগতের কেউ যেন শক্ত করে চেপে ধরে আছে তার হাত। হ্যাঁচকা এক টানে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো তার, কোনোমতে ঠিক রাখল ভারসাম্য। টান বাড়ছে। দু-পা এগোতে বাধ্য হলো সে। রাবারের চটি জুতো খুলে গেল এক পাটি। অন্য পাটিও খুলে ফেলল সুলতান। যেভাবেই হোক, বাটি আটকাতে হবে তাকে। যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। কিন্তু জাহিদকে চোর প্রমাণ হতে দেবে না সে। ভাঙা শামুকে পা কেটে গেল তার। কাটুক। ফালি ফালি হয়ে যাক। তবু সামনে এগোবে না আর এক পা-ও। অন্য কোথাও ঘুরিয়ে নিতে হবে বাটি। কিন্তু নেবেই বা কোথায়! আটকে রাখতেই বা পারবে কি? সুলতান বাটিটার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। তার কান বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল অদ্ভুত এ দৃশ্য।
সপ্তাহ খানেক পরে তোফাজ্জল মাস্টারের ছোট মেয়ের বিয়ে। ছেলেপক্ষের সবাই বিদেশে থাকে। বিয়েতে এখনো আসেনি, কিন্তু গয়না কেনার টাকা আগেই পাঠিয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে সবাই এসেও যাবে। এর মধ্যে ঘটল অঘটন। ছোট মেয়ে তিতলির তিন ভরি ওজনের সোনার নেকলেস চুরি গেল। বিয়ে উপলক্ষে অনেকেই আসছে-যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন আছে, তিতলির বান্ধবীরা আছে, তোফাজ্জলের দুই ছেলের বন্ধুরাও এসেছে কয়েকজন। হয়তো স্রেফ হারিয়েই গেছে, কিংবা এদের মধ্যে কেউ একজন সত্যিই নিয়েছে। কিন্তু কাকে ধরবেন তিনি? আলাদা করে কার ওপরেই বা সন্দেহ করা যায়? সবাই কাছের মানুষ। প্রায় সবাইকেই তিনি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন, গুটি কয়েককে বিশ্বাস করার ভান করতে হয়। শেষমেশ বিশু কবিরাজকে ডাকা হলো। পরিবার-প্রতিবেশী সবাই এই বুদ্ধি দিয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধা মায়েরই চাপ বেশি। মা থানা-পুলিশ করতে রাজি নন। তোফাজ্জল মাস্টার নিজে ঝাড়ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। মায়ের চাপাচাপিতেই ওঝা আনায় মত দিয়েছেন তিনি। বিশু কবিরাজ বাটি চালান দেবেন। বাটি দৌড়ে গিয়ে উঠবে চোরের গায়ে। কিংবা চোরের ঘরে গিয়ে উঠবে। সোজা বের করে দেবে চুরি করা জিনিস। কবিরাজ পরিচয়ে খ্যাত হলেও বিশু বিশ্বাস এ গ্রামের প্রসিদ্ধ ওঝা। এমনকি গ্রামের আশপাশেও মাঝেমধ্যে তাঁর ডাক পড়ে। তন্ত্রমন্ত্রে মাস্টারসাহেবের পুরোপুরি অবিশ্বাস থাকলেও বিশুকে তিনি যে কারণে বিশ্বাস করেন তা হলো ওঝাগিরিতে বিশু কোনো ধরনের অর্থ নেয় না। গুরুর নাকি নিষেধ আছে। অবশ্য এটা তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধিও হতে পারে—ওঝা খ্যাতির কারণেই সম্ভবত তাঁর কবিরাজি ব্যবসা রমরমা। কামাল এক দৌড়ে কাঁসার বাটি নিয়ে এল। এসেই সরাসরি কবিরাজের হাতে তুলে না দিয়ে বাটিটাকে প্রথমে গলায় জড়ানো গামছা দিয়ে মুছল ভালোভাবে। তারপর সেটিকে যে ভঙ্গিতে সে বিশু কবিরাজের হাতে তুলে দিল, সেই ভঙ্গিই বলে দেয় কবিরাজকে কতটা সমীহ করে সে।
হাত বাড়িয়ে বাটির দিকে অল্পক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন কবিরাজ। তারপর যত্ন নিয়ে সেটিকে রাখলেন মাটিতে। এবার নিজের চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে আনলেন একবার। নারী-পুরুষ সবাই কেমন যেন ভয় পেয়ে জড়সড় হলো আরেকটু। লালচে চোখ মেলে বিশু কবিরাজ হাঁক দিলেন, ‘আপনেগো মইধ্যে তুলা রাশির জাতক কে আছেন? তুলা রাশি! কে আছেন? আমার কাছে আসেন। আছেন কেউ?...সিংহ রাশি হইলেও চলব। কে আছেন?’
কেউ সাহস করে এগিয়ে আসছে না।
আবার বিশু কবিরাজ হাঁক দিলেন, ‘কেউ নাই আপনেগো ভেতরে তুলা রাশির জাতক?...জাতিকাও নাই কেউ?’
হঠাৎ ভিড় ঠেলে যে যুবক বিশু কবিরাজের সামনে এসে দাঁড়াল, সে সুলতান। তাকে সামনে বসতে বললেন বিশু কবিরাজ। সুলতান বসল। কবিরাজ চোখ বন্ধ করে বাম হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনী এক করে সুলতানের কপালে রাখল। আধমিনিট চোখ বন্ধ রেখে যখন তার দিকে তাকালেন, তখন তাঁর চোখ টকটকে লাল। প্রশ্নের ভঙ্গিতে প্রায় গর্জন করলেন, ‘তুলা রাশি?’
মাথা ঝাঁকাল সুলতান। কবিরাজ বললেন, ‘আপনে বাটির সামনে গিয়া বসেন। তারপর দুই হাতের মুঠা দিয়া বাটিটা শক্ত কইরা ধরবেন। চোউখ বন্ধ কইরা থাকবেন। বাটি নিজে নিজে নড়ার আগে চোউখ খুলবেন না।’ সুলতান হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়িয়ে কাঁসার বাটির সামনে বসল। তারপর দুহাতে শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার কপালে ঘাম জমে আছে বড় বড় ফোঁটায়।
২. জাহিদ এ গ্রামে এসেছে বছর দুয়েক হবে। সে এখানকার একমাত্র সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। ছাত্রদের প্রিয়। গ্রামবাসীও তাকে পছন্দ করে। তবুও তার বন্ধুসংখ্যা সীমিত। ঘনিষ্ঠ বলতে গেলে একমাত্র সুলতান। প্রয়োজনের খাতিরেই মানুষ এমন দু-একজন বন্ধুবান্ধব বানিয়ে নেয়, যাদের কাছে অকপটে সবকিছু বলা যায়—সুলতান তেমন বন্ধু। গল্প-কবিতাসহ বিচিত্র ধরনের বই পড়ার অভ্যাস জাহিদের। সুলতানেরও তা-ই। সম্ভবত দুজনের বন্ধুত্ব জমে ওঠার এটাই একমাত্র কারণ। শামুকভাঙা নদীর পাশে বড় বাজারটিতে সবচেয়ে চালু কাপড়ের দোকান সুলতানের। তার দুজন কর্মচারী আছে—তারাই দোকান চালায়। সুলতান মাঝেমধ্যে গিয়ে হিসাবপত্র দেখে। শহর থেকে বিএ পাস করে আবার গ্রামে ফিরে এসে এই ব্যবসা ধরেছে সে। কেবল মায়ের চাপাচাপিতে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামে আসা। মা তাকে ছাড়া থাকতে পারেন না, আবার স্বামীর ভিটে ছেড়ে শহরেও তিনি যাবেন না। শুধু কান্নাকাটি করেন। শেষমেশ বাধ্য হয়েই মানিয়ে নিয়েছে সে। ব্যবসাও জমিয়ে তুলেছে দারুণভাবে। যেখানেই থাকুক, প্রতিদিন বিকেলে দুজনের আড্ডা হয় শামুকভাঙার তীরে। পুরোনো স্মৃতিচারণা করে। শেয়ার করে নিজেদের সারা দিনের জমানো বিষাদ, বেদনা ও আনন্দের গল্প। এভাবেই কথায় কথায় জাহিদ একদিন হুট করে বলে বসে ফাহিমার কথা। ফাহিমাকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা, প্রেমের কথা, ‘বেতনটা আরেকটু বাড়ুক। সামান্য কিছু টাকা জমলেই দেখিস, একদিন আমরা বিয়ে করে ফেলব। ফাহিমার বাড়ি থেকে খুব চাপ দিচ্ছে।’ সব শুনে সুলতান খেপে যাওয়ার ভান করল। কপট রাগে চোখ কুঁচকাল। এবং অবশেষে নিখাদ আনন্দে অভিনন্দন জানাল বন্ধুকে। কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে সে অবাক হয়ে টের পেল, সত্যি সত্যি আনন্দ নয়, বরং তার শরীরে একধরনের জ্বলুনি হচ্ছে—ঈর্ষার জ্বলুনি। অহেতুক ঈর্ষায় সারা শরীর কাঁপতে লাগল তার। ফাহিমার সৌন্দর্য সাদামাটা ধরনের। আফসোস করার মতো শিক্ষিতও সে নয়। আর গ্রামে ফাহিমার বাবার প্রভাবও তেমন নয়। কিন্তু অকস্মাৎ এ কেমন অনুভূতি হলো তার? ফাহিমার প্রতি সামান্যতর দুর্বলতাও সুলতান এর আগে অনুভব করেনি। তবে জাহিদের ওপর হঠাৎ ঈর্ষা কেন জেগে উঠল? একধরনের অপরাধবোধে ভুগতে লাগল সে, কিন্তু ঈর্ষার তীব্র টানে সে অপরাধবোধ ভেসেই উঠতে পারল না; বরং গভীরে তলিয়ে যেতে লাগল। উল্টো ক্রমাগত আরও তীব্র হতে লাগল ঈর্ষা, বাড়তে লাগল জ্বলুনি। যেন তীব্র আক্রোশ নিয়ে শামুকভাঙা নদী তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল বেশির চেয়ে বেশি—অধিকতর অন্ধকার তলানিতে।
৩. ভিড়টা একটু বিস্তৃত হয়ে গেল আচমকা। সবাইই দেখেছে যে বাটিটা নড়ে উঠল। সুলতান চোখ খুলতেই কাঁসার বাটি তাকে নিয়ে রওনা দিল উত্তরে। ভিড়ের উত্তর দিক ফাঁকা হয়ে তাকে জায়গা করে দিতে লাগল। সবার চোখে তীব্র ভয় এবং বিস্ময়। দু-পায়েই চলছে সুলতান। তার ভঙ্গি অনেকটা ছোটখাটো গরিলার মতো—নুয়ে দু-হাতে বাটি ধরে আছে। বাটি এখন দক্ষিণ দিকে চলছে—মন্থর গতি। সুলতানের পেছনে পেছনে হাঁটছে বিশু কবিরাজ, তার পেছনে তোফাজ্জল মাস্টার, পেছনে অন্যরা। ধীরে ধীরে গতি বাড়ছে বাটির। দুমড়ে যাওয়া সবুজ ঘাস ধরে রাখছে একদল কৌতূহলী মানুষের স্মৃতিচিহ্ন। দক্ষিণে যেতে যেতে পুকুরের পাশ ঘেঁষে শামুকভাঙার দিকের রাস্তায় উঠল সুলতান। এবার পুবদিকে যে রাস্তাটি বাঁক নিয়েছে সেই রাস্তা ধরে ছুটতে লাগল...
একটা কুৎসিত প্ল্যান করেছে সুলতান। হ্যাঁ, জাহিদের বাড়িতে গিয়ে উঠবে সে। জাহিদকেই চোর সাব্যস্ত করবে। এতেই হয়তো তার তৃপ্তি মিলবে। হয়তো এটিই এই অসহ্য জ্বলুনির নিরাময়। এই মুহূর্তে এই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া তার কাছে জরুরি। গতি বাড়িয়ে দিল সুলতান। পুবের রাস্তা ছেড়ে এবার বাগানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সরু পথটা ধরল সে। মৃধাবাড়ির সাদামাটা ঘোয়ো কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করতে করতে ছুটে আসছিল তার দিকে, অন্যরা তাড়িয়ে দিল। দু-চারজন বড় বড় মাটির ঢেলা ছুড়ে মারল কুকুরের গায়ে। ফলে কেঁউ কেঁউ করতে করতে আবার মৃধাবাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল সে। ওই বাড়ি থেকে অনেকগুলো মুখ তখন তাকিয়ে আছে সুলতানের দিকে। মৃধাবাড়ি ছাড়িয়ে এসেছে অনেকক্ষণ। টপটপ করে ঘাম ঝরছে সুলতানের গা বেয়ে। সারা মুখের ঘাম নাক হয়ে পড়ছে বাটিতে। কপাল বেয়ে সামান্য ঘাম চোখে যেতেই ছ্যাঁৎ করে উঠল চোখ। জ্বলছে। বাটিতে ঘাম পড়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না কে জানে, আচমকা যেন নিজেকে অদ্ভুতদর্শন একটি প্রাণী হিসেবে দেখতে পেল সুলতান—প্রাণীটি অন্য আরেকটি কুকুরের মতোই চার পায়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। অপরাধবোধ এবার যেন-বা বাতাস পেল; তলানি থেকে আবার ভেসে উঠল জলের ওপরে। ঈর্ষা পাতলা হয়ে আসছে। এবং তৎক্ষণাৎ নিজের প্রতি একধরনের ঘৃণা বোধ হতে লাগল সুলতানের। এ কী করছে সে? নিজের বন্ধুকে চোর সাজাচ্ছে! তা-ও এমন ভিত্তিহীনভাবে? জাহিদকে ঈর্ষা করার যৌক্তিক কারণই বা কী? ফাহিমার সঙ্গে তার মাখো-মাখো প্রেম কোনো দিন ছিল না, যেখানে অবাঞ্ছিত আগন্তুকের মতো ঢুকে পড়েছে জাহিদ। সামান্যতমও দুর্বলতা ছিল না ফাহিমার প্রতি। সম্পূর্ণ নিরপরাধ একটা মানুষের প্রতি অমূলক ঈর্ষায় এতখানি নিচে নেমে এল সে!
হঠাৎ জেগে ওঠা অপরাধবোধ সুলতানের পায়ে মাটির ঢেলা হয়ে পড়তে লাগল। নিজেকে তার মনে হতে লাগল মৃধাবাড়ির হাড়সর্বস্ব কুকুর। জাহিদের বাড়ি আর বেশি দূরে নয়। পেছনের ভিড় থেকে দু-চারজন জাহিদকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, জাহিদ চোর। সে তোফাজ্জল মাস্টারের নাতি মামুনকে বাড়িতে গিয়ে পড়ায়। তার পক্ষে তো নেকলেস চুরি করা আসলেই সহজ। ছিঃ ছিঃ মাস্টারসাব চোর! সে কই এখন? স্কুলে? এই টাইমে স্কুলেই থাকার কথা। ছিঃ ছিঃ!
আচমকা সুলতান থমকে দাঁড়াল। সবাই চুপ হয়ে গিয়েছিল, হঠাৎ শোনা গেল শোরগোল। সুলতান ঘুরে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে মুখ ঘুরে গেছে তার। অন্য পথ নিচ্ছে। আর এ সময়ই অলৌকিক ব্যাপারটা ঘটল। জারুলগাছের দিকে মুখ ঘুরিয়েই সুলতান টের পেল, বাটি ঘুরছে না। থামছেও না। সে জাহিদের বাড়ির দিকেই যেতে চাইছে। শক্তি দিয়ে টান দিল সুলতান। বাটি নড়ছে না; বরং তার তুমুল আগ্রহ ও আকর্ষণ যেন জাহিদের বাড়ির দিকে। বাটিটা সুলতান শক্ত করে ধরল। বাটির ভেতর থেকেও অদৃশ্য কেউ যেন তাকে টানছে জাহিদের একলা দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটির দিকে। ওই তো, তাকালেই দেখা যাচ্ছে রোদে চকমক সার্কাসের তাঁবুর মতো বাড়ি। সুলতান বাটি ছেড়ে দিতে চাইল। নাহ, সে বাটি ছেড়েও দিতে পারছে না। অদৃশ্য জগতের কেউ যেন শক্ত করে চেপে ধরে আছে তার হাত। হ্যাঁচকা এক টানে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো তার, কোনোমতে ঠিক রাখল ভারসাম্য। টান বাড়ছে। দু-পা এগোতে বাধ্য হলো সে। রাবারের চটি জুতো খুলে গেল এক পাটি। অন্য পাটিও খুলে ফেলল সুলতান। যেভাবেই হোক, বাটি আটকাতে হবে তাকে। যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। কিন্তু জাহিদকে চোর প্রমাণ হতে দেবে না সে। ভাঙা শামুকে পা কেটে গেল তার। কাটুক। ফালি ফালি হয়ে যাক। তবু সামনে এগোবে না আর এক পা-ও। অন্য কোথাও ঘুরিয়ে নিতে হবে বাটি। কিন্তু নেবেই বা কোথায়! আটকে রাখতেই বা পারবে কি? সুলতান বাটিটার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। তার কান বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল অদ্ভুত এ দৃশ্য।
No comments