সচেতনতা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ দুই-ই জরুরি by আফতাব চৌধুরী
আফতাব চৌধুরী |
মাদকাসক্তি
একটি অন্যতম জীবনবিধ্বংসী নেশা যা আসক্ত ব্যক্তিকে দৈহিক, মানসিক, নৈতিক,
অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মাদকদ্রব্য যে কোনো
পরিমাণেই হোক তা মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিসাধন করে এবং মাদকাসক্তির ফলে মানুষ
মারাও যেতে পারে। আজ বিশ্বের অনেক দেশই মাদকাসক্তির এমন চরম সংকটের
মুখোমুখি হয়েছে যা সে সব দেশের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো দুর্বল করে দিচ্ছে,
ঠেলে দিচ্ছে ক্রমশ অবলুপ্তির পথে। ফলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান
নৈরাজ্য, হানাহানি ও অস্থিতিশীলতা যেমন স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে
তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শান্তি স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যগুলো : হেরোইন, প্যাথিডিন, মরফিন, ক্রুড আফিম, কোকেন, মারিজুয়ানা, গাঁজা, ভাং, চরস, হাশিম, এলএসডি প্রভৃতি মাদকদ্রব্য বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ঘুমের বিভিন্ন রকমের ওষুধও এক ধরনের মাদক বিশেষ। সম্প্রতি কোকেনের সঙ্গে বভাকাম মিশিয়ে এক ধরনের মাদকদ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে, যা ‘বাজুকো’ নামে পরিচিত। পশ্চিমা দুনিয়ায়, বিশেষত ইউরাপে এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর কোনো কিছুই কারণবিহীন ঘটে না তেমনি মাদকাসক্তির পেছনেও রয়েছে অনেক কারণ। সেসব কারণকে নিম্নলিখিত উপায়ে চিহ্নিত করা যায়।
মাদকাসক্তির কারণ : ধর্মবিমুখতা ও ভ্রান্ত জীবন দর্শন। অপসংস্কৃতি ও অসৎসঙ্গের প্রভাব প্রধানত বেকারত্বজনিত কারণে হতাশা। কলহ, বিচ্ছেদ ও বিরহ। ব্যক্তিত্ব ও নৈতিক দৃঢ়তার অভাব। অত্যাধুনিক সাজগোজের প্রবণতা ও স্মার্ট হওয়া সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা। পিতামাতা বা অভিভাবক কর্তৃক অতিরিক্ত শাসন বা অবহেলা। কৌতূহল নিবারণের ইচ্ছা এবং আকাক্সক্ষা। মানসিক ব্যাধি। মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা। অবসাদগ্রস্ততা ও সুস্থ বিনোদনের অভাব। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকাসক্তি রোধ করা। প্রাথমিক পর্যায়ের মাদকাসক্তি চিহ্নিতকরণ এবং কেউ এই মরণ নেশায় আক্রান্ত হলে যথেষ্ট ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করা।
মাদকদ্রব্যের উৎস : বর্তমান বিশ্বে গাঁজা, চরসের চাইতে অধিক ব্যবহৃত হচ্ছে প্যাথিডিন, মরফিন ও কোকেন জাতীয় মাদকদ্রব্য। তবে বাংলাদেশে ফেনসিডিলের ব্যবহারই হচ্ছে বর্তমানে বেশি। ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট,’ ‘গোল্ডেন ওয়েজ’ এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল-এশিয়ার এই তিনটি এলাকা মাদকদ্রব্যের প্রধান উৎসস্থল। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের অন্তর্গত মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওসের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে মূলত পপি উৎপন্ন হয়। আর পপি থেকেই আফিম পাওয়া যায়। তাছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্কের সীমানাজুড়ে ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্টে’র পরিসীমা। এর মধ্যে আফগানিস্তানে সিংহভাগ পপি উৎপাদিত হয়ে থাকে।
গোল্ডেন ওয়েজ অঞ্চলটি ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, গুয়েতেমালা, জ্যামাইকা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ঘানা, নাইজেরিয়া, কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে প্রধানত মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয়। কোকেনের উৎপত্তি স্থল মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, পেরু, ব্রাজিল ও বলিভিয়া।’ মেস্কিকো, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, সাইপ্রাস, অস্ট্রেলিয়া, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ এলাকায় হেরোইন উৎপাদিত হচ্ছে। জ্যামাইকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, মরক্কো ও জর্দান হাশিস উৎপাদনের জন্য বিশেষ পরিচিত।
মাদকদ্রব্য সেবনের ক্ষতিকর দিক : স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তন যথা স্বাভাবিক চেতনা লোপ, স্মৃতি বৈকল্য, ভ্রম ইত্যাদি। বুদ্ধিবৃদ্ধি ও চিন্তাশক্তির ক্রমাবনতি। অবসাদ, উদ্যমহীনতা, বিষন্নতা এবং জগৎ সম্পর্কে ক্রমশ উদাসীনতা ও নিরুৎসাহিতা। সামাজিক ও মানসিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। চরম স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক নির্দয় হয়ে পড়া। সব দায়িত্ব ও কর্তব্য হতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে নির্লিপ্ত, নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের আকাক্সক্ষা। মানসিক একাগ্রতা, স্থিতিশীলতা ও ধৈর্যের আশংকাজনক হ্রাস। কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীল চিন্তার আংশিক অথবা সার্বিক অবনতি। খিটখিটে মেজাজ, আচরণে রুক্ষতা, অস্বাভাবিক ব্যবহার। বিভিন্ন প্রকার জটিল মানসিক ব্যাধির প্রকোপবৃদ্ধি। শরীরে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস। যৌন ক্ষমতা হ্রাস এবং এ ব্যাপারে স্বাভাবিক আগ্রহের অভাব। আকস্মিকভাবে অচেতন হয়ে পড়া। অত্যধিক মাত্রায় মাদক সেবনের ফলে শক বা অ্যালর্জি প্রতিক্রিয়াজনিত শ্বাসরোধ হয়ে আকস্মিক মৃত্যু। নেশার টাকার জোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া, সমাজে গঠনমূলক ভূমিকার পরিবর্তে দেশ ও জাতি বিধ্বংসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
চিকিৎসা ও পুনর্বাসন : মাদকাসক্তির চিকিৎসার পদ্ধতি তিনটি ধাপে বিভক্ত। যেমন মোটিভেশন, বিভিন্ন ডকুমেন্টরি ফিল্ম ও নাটকে মাদক ব্যবহারকারীর চরম অবনতির বাস্তবচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যম। ওষুধ ব্যবহারে সংশোধন ও পুনর্বাসন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যগুলো : হেরোইন, প্যাথিডিন, মরফিন, ক্রুড আফিম, কোকেন, মারিজুয়ানা, গাঁজা, ভাং, চরস, হাশিম, এলএসডি প্রভৃতি মাদকদ্রব্য বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ঘুমের বিভিন্ন রকমের ওষুধও এক ধরনের মাদক বিশেষ। সম্প্রতি কোকেনের সঙ্গে বভাকাম মিশিয়ে এক ধরনের মাদকদ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে, যা ‘বাজুকো’ নামে পরিচিত। পশ্চিমা দুনিয়ায়, বিশেষত ইউরাপে এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর কোনো কিছুই কারণবিহীন ঘটে না তেমনি মাদকাসক্তির পেছনেও রয়েছে অনেক কারণ। সেসব কারণকে নিম্নলিখিত উপায়ে চিহ্নিত করা যায়।
মাদকাসক্তির কারণ : ধর্মবিমুখতা ও ভ্রান্ত জীবন দর্শন। অপসংস্কৃতি ও অসৎসঙ্গের প্রভাব প্রধানত বেকারত্বজনিত কারণে হতাশা। কলহ, বিচ্ছেদ ও বিরহ। ব্যক্তিত্ব ও নৈতিক দৃঢ়তার অভাব। অত্যাধুনিক সাজগোজের প্রবণতা ও স্মার্ট হওয়া সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা। পিতামাতা বা অভিভাবক কর্তৃক অতিরিক্ত শাসন বা অবহেলা। কৌতূহল নিবারণের ইচ্ছা এবং আকাক্সক্ষা। মানসিক ব্যাধি। মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা। অবসাদগ্রস্ততা ও সুস্থ বিনোদনের অভাব। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকাসক্তি রোধ করা। প্রাথমিক পর্যায়ের মাদকাসক্তি চিহ্নিতকরণ এবং কেউ এই মরণ নেশায় আক্রান্ত হলে যথেষ্ট ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করা।
মাদকদ্রব্যের উৎস : বর্তমান বিশ্বে গাঁজা, চরসের চাইতে অধিক ব্যবহৃত হচ্ছে প্যাথিডিন, মরফিন ও কোকেন জাতীয় মাদকদ্রব্য। তবে বাংলাদেশে ফেনসিডিলের ব্যবহারই হচ্ছে বর্তমানে বেশি। ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট,’ ‘গোল্ডেন ওয়েজ’ এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল-এশিয়ার এই তিনটি এলাকা মাদকদ্রব্যের প্রধান উৎসস্থল। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের অন্তর্গত মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওসের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে মূলত পপি উৎপন্ন হয়। আর পপি থেকেই আফিম পাওয়া যায়। তাছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্কের সীমানাজুড়ে ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্টে’র পরিসীমা। এর মধ্যে আফগানিস্তানে সিংহভাগ পপি উৎপাদিত হয়ে থাকে।
গোল্ডেন ওয়েজ অঞ্চলটি ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, গুয়েতেমালা, জ্যামাইকা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ঘানা, নাইজেরিয়া, কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে প্রধানত মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয়। কোকেনের উৎপত্তি স্থল মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, পেরু, ব্রাজিল ও বলিভিয়া।’ মেস্কিকো, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, সাইপ্রাস, অস্ট্রেলিয়া, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ এলাকায় হেরোইন উৎপাদিত হচ্ছে। জ্যামাইকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, মরক্কো ও জর্দান হাশিস উৎপাদনের জন্য বিশেষ পরিচিত।
মাদকদ্রব্য সেবনের ক্ষতিকর দিক : স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তন যথা স্বাভাবিক চেতনা লোপ, স্মৃতি বৈকল্য, ভ্রম ইত্যাদি। বুদ্ধিবৃদ্ধি ও চিন্তাশক্তির ক্রমাবনতি। অবসাদ, উদ্যমহীনতা, বিষন্নতা এবং জগৎ সম্পর্কে ক্রমশ উদাসীনতা ও নিরুৎসাহিতা। সামাজিক ও মানসিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। চরম স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক নির্দয় হয়ে পড়া। সব দায়িত্ব ও কর্তব্য হতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে নির্লিপ্ত, নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের আকাক্সক্ষা। মানসিক একাগ্রতা, স্থিতিশীলতা ও ধৈর্যের আশংকাজনক হ্রাস। কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীল চিন্তার আংশিক অথবা সার্বিক অবনতি। খিটখিটে মেজাজ, আচরণে রুক্ষতা, অস্বাভাবিক ব্যবহার। বিভিন্ন প্রকার জটিল মানসিক ব্যাধির প্রকোপবৃদ্ধি। শরীরে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস। যৌন ক্ষমতা হ্রাস এবং এ ব্যাপারে স্বাভাবিক আগ্রহের অভাব। আকস্মিকভাবে অচেতন হয়ে পড়া। অত্যধিক মাত্রায় মাদক সেবনের ফলে শক বা অ্যালর্জি প্রতিক্রিয়াজনিত শ্বাসরোধ হয়ে আকস্মিক মৃত্যু। নেশার টাকার জোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া, সমাজে গঠনমূলক ভূমিকার পরিবর্তে দেশ ও জাতি বিধ্বংসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
চিকিৎসা ও পুনর্বাসন : মাদকাসক্তির চিকিৎসার পদ্ধতি তিনটি ধাপে বিভক্ত। যেমন মোটিভেশন, বিভিন্ন ডকুমেন্টরি ফিল্ম ও নাটকে মাদক ব্যবহারকারীর চরম অবনতির বাস্তবচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যম। ওষুধ ব্যবহারে সংশোধন ও পুনর্বাসন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
No comments