স্পর্শের আলোয় ঘুচল আঁধার
গাড়ির ইঞ্জিন মেরামত করছেন আসিফ। ছবি: এএফপি |
খেলনা
বা বেতার যন্ত্রের যন্ত্রাংশ সব আলাদা করে আবার জোড়া লাগানো আসিফ
প্যাটেলের জন্য সহজ কথা নয়। কারণ, তাঁর চোখের আলো নেই। জন্ম থেকে তিনি
দৃষ্টিহীন। যা কিছু করেন, সবই স্পর্শের অনুভূতি থেকে। এই স্পর্শই তাঁর
চোখের আলো। এই আলোই তাঁকে দেখিয়েছে সাফল্যের সিঁড়ি। যে সিঁড়িতে আরোহণ
করে আসিফ উদাহরণ হয়েছেন বিরল ঘটনার।
আসিফ (৪৪) পাকিস্তানের করাচি নগরের লাসবেলা এলাকার একজন নামকরা মেকানিক। যে দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে, সেখানে আসিফের এ সাফল্য এককথায় বিরল।
আসিফের ছোট মেরামতের প্রতিষ্ঠানটিতে আরও সাতজন কাজ করেন। লোকজন সেখানে তাঁদের গাড়িগুলোকে মেরামত করতে বিশ্বস্ত মেকানিক আসিফের হাতে রেখে যান।
চোখের সামনে অসিফ পুরোনো একটি টয়োটা গাড়ির ইঞ্জিনের ওপরের ঢাকনাটি খোলেন। এরপর হাত দিয়ে গাড়ির ইঞ্জিনের ত্রুটি শনাক্ত করে তা ঠিক করে ফেলেন। তিনি বলেন, শৈশব থেকে তিনি যন্ত্রের তৈরি বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলতেন। শুরুতে প্রায়ই ভেঙে ফেলতেন। তাঁর কথা, ‘যখন বাবা খেলনা গাড়িগুলো নিয়ে আসতেন, আমি সেগুলো খুলতাম। সেগুলো আবার আগের মতো জোড়া লাগাতাম। দেখতাম, সেগুলো কীভাবে কাজ করে।’
ফ্রেড হ্যালোস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, পাকিস্তানে প্রায় ২০ লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকের বেশি মানুষের চোখে ছানি পড়েছে, যা চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য। কিন্তু সেখানে অন্যান্য প্রতিবন্ধীর তুলনায় দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক ব্যবধান। অনেক ব্যক্তিকে জীবিকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। বাধা রয়েছে নানা সামাজিক কুসংস্কারের। দেশটির রাস্তাঘাটে অন্ধ ব্যক্তিদের নিরাপদ চলাচলের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন ব্যবস্থা করা হয়নি। অনেকে আবার পরিবার থেকে বিতাড়িত। কিন্তু আসিফকে তাঁর পরিবার দূরে ঠেলে দেয়নি, বরং উৎসাহিত করেছে।
নিজের স্পর্শের প্রখর শক্তিই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি—এমনটা জানিয়ে আসিফ বলেন, ‘স্পর্শ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্পর্শের মাধ্যমেই জিনিসটি কী ও কেমন, তা বুঝে ফেলি।’
১৫ বছর বয়সে আসিফ স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেন। এরপর একটি অটো-গ্যারেজে কাজ শুরু করেন। শুরুতে সেখানে গাড়ির বিভিন্ন প্লেটগুলো আটকানো তাঁর কাজ ছিল। এ কাজে তাঁর আত্মবিশ্বাস দেখে সেখানকার লোকজন অবাক হয়ে যায়। একদিন গাড়ির ইঞ্জিনের গিয়ার বক্স খোলার প্রস্তাব পেলেন। সানন্দে সায় দিলেন আসিফ। গাড়ির নিচে ঢুকে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে গিয়ার বক্সটিকে খুলে নিয়ে আসেন।
এতে আসিফের ওপর তাঁর মনিবের আস্থা বেড়ে গেল। একের পর এক অন্যান্য দায়িত্বও পেতে লাগলেন। বাড়তে লাগল অভিজ্ঞতার ঝুলি। এভাবে একপর্যায়ে দক্ষ মেকানিক হয়ে উঠলেন তিনি।
আসিফ বলেন, তিনি আসলে একজন দক্ষ মেকানিকই হতে চেয়েছেন। মেকানিকের কাজ সমস্যা খুঁজে বের করা। যন্ত্রাংশ চেষ্টা করলেই জুড়ে দেওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত কাজটি হলো সমস্যা চিহ্নিত করা।
আসিফের মেরামত কারখানা থেকে নিয়মিত সেবা নেন ফাহাদ ইউনিস। তিনি পেশায় আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী। আসিফের মেরামত কারখানার সেবায় মুগ্ধ ফাহাদ বললেন, ‘শুধু ভালো কাজের জন্য লোকজন এখানে আসে। তিনি গাড়ির ইঞ্জিনের যেকোনো ত্রুটি ধরতে পারেন। আমাদের ছোট-বড় সব গাড়ি মেরামতের জন্য তাঁর কাছে দেওয়া হয়।’
আসিফ বলেন, ‘আমি যদি কখনো নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করতাম, তাহলে এখন আমি যা করছি, তা কখনো করা সম্ভব হতো না। যদি জন্ম থেকে আপনার কিছু না থাকে, আপনি কিছু হারিয়েছেন—এমনটা কখনোই মনে হবে না। বরং থাকা জিনিস হারালে অনেক বেশি কষ্ট।’ এএফপি অবলম্বনে
আসিফ (৪৪) পাকিস্তানের করাচি নগরের লাসবেলা এলাকার একজন নামকরা মেকানিক। যে দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে, সেখানে আসিফের এ সাফল্য এককথায় বিরল।
আসিফের ছোট মেরামতের প্রতিষ্ঠানটিতে আরও সাতজন কাজ করেন। লোকজন সেখানে তাঁদের গাড়িগুলোকে মেরামত করতে বিশ্বস্ত মেকানিক আসিফের হাতে রেখে যান।
চোখের সামনে অসিফ পুরোনো একটি টয়োটা গাড়ির ইঞ্জিনের ওপরের ঢাকনাটি খোলেন। এরপর হাত দিয়ে গাড়ির ইঞ্জিনের ত্রুটি শনাক্ত করে তা ঠিক করে ফেলেন। তিনি বলেন, শৈশব থেকে তিনি যন্ত্রের তৈরি বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলতেন। শুরুতে প্রায়ই ভেঙে ফেলতেন। তাঁর কথা, ‘যখন বাবা খেলনা গাড়িগুলো নিয়ে আসতেন, আমি সেগুলো খুলতাম। সেগুলো আবার আগের মতো জোড়া লাগাতাম। দেখতাম, সেগুলো কীভাবে কাজ করে।’
ফ্রেড হ্যালোস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, পাকিস্তানে প্রায় ২০ লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকের বেশি মানুষের চোখে ছানি পড়েছে, যা চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য। কিন্তু সেখানে অন্যান্য প্রতিবন্ধীর তুলনায় দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক ব্যবধান। অনেক ব্যক্তিকে জীবিকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। বাধা রয়েছে নানা সামাজিক কুসংস্কারের। দেশটির রাস্তাঘাটে অন্ধ ব্যক্তিদের নিরাপদ চলাচলের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন ব্যবস্থা করা হয়নি। অনেকে আবার পরিবার থেকে বিতাড়িত। কিন্তু আসিফকে তাঁর পরিবার দূরে ঠেলে দেয়নি, বরং উৎসাহিত করেছে।
নিজের স্পর্শের প্রখর শক্তিই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি—এমনটা জানিয়ে আসিফ বলেন, ‘স্পর্শ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্পর্শের মাধ্যমেই জিনিসটি কী ও কেমন, তা বুঝে ফেলি।’
১৫ বছর বয়সে আসিফ স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেন। এরপর একটি অটো-গ্যারেজে কাজ শুরু করেন। শুরুতে সেখানে গাড়ির বিভিন্ন প্লেটগুলো আটকানো তাঁর কাজ ছিল। এ কাজে তাঁর আত্মবিশ্বাস দেখে সেখানকার লোকজন অবাক হয়ে যায়। একদিন গাড়ির ইঞ্জিনের গিয়ার বক্স খোলার প্রস্তাব পেলেন। সানন্দে সায় দিলেন আসিফ। গাড়ির নিচে ঢুকে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে গিয়ার বক্সটিকে খুলে নিয়ে আসেন।
এতে আসিফের ওপর তাঁর মনিবের আস্থা বেড়ে গেল। একের পর এক অন্যান্য দায়িত্বও পেতে লাগলেন। বাড়তে লাগল অভিজ্ঞতার ঝুলি। এভাবে একপর্যায়ে দক্ষ মেকানিক হয়ে উঠলেন তিনি।
আসিফ বলেন, তিনি আসলে একজন দক্ষ মেকানিকই হতে চেয়েছেন। মেকানিকের কাজ সমস্যা খুঁজে বের করা। যন্ত্রাংশ চেষ্টা করলেই জুড়ে দেওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত কাজটি হলো সমস্যা চিহ্নিত করা।
আসিফের মেরামত কারখানা থেকে নিয়মিত সেবা নেন ফাহাদ ইউনিস। তিনি পেশায় আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী। আসিফের মেরামত কারখানার সেবায় মুগ্ধ ফাহাদ বললেন, ‘শুধু ভালো কাজের জন্য লোকজন এখানে আসে। তিনি গাড়ির ইঞ্জিনের যেকোনো ত্রুটি ধরতে পারেন। আমাদের ছোট-বড় সব গাড়ি মেরামতের জন্য তাঁর কাছে দেওয়া হয়।’
আসিফ বলেন, ‘আমি যদি কখনো নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করতাম, তাহলে এখন আমি যা করছি, তা কখনো করা সম্ভব হতো না। যদি জন্ম থেকে আপনার কিছু না থাকে, আপনি কিছু হারিয়েছেন—এমনটা কখনোই মনে হবে না। বরং থাকা জিনিস হারালে অনেক বেশি কষ্ট।’ এএফপি অবলম্বনে
No comments