পিরোজপুরের শাঁখাশিল্প by এ কে এম ফয়সাল
পিরোজপুর শহরের রাজারহাট এলাকায় নিজ কারখানায় শাঁখায় নকশা তুলছেন শিবনারায়ণ দত্ত নামের এক কারিগর। সম্প্রতি ছবিটি তোলা l প্রথম আলো |
সামুদ্রিক
শঙ্খ দিয়ে তৈরি হাতের অলংকার শাঁখা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের প্রধান
অনুষঙ্গ। হিন্দু নারীদের সধবার প্রতীক এই শাঁখা। পিরোজপুর শহরে রয়েছে
ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্প। বর্তমানে শাঁখাসহ শঙ্খের তৈরি অলংকারের ব্যবহার কমে
যাওয়ায় এ শিল্প প্রায় ধ্বংসের পথে। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে
কয়েকজন শাঁখারি এখনো এ পেশা ধরে রেখেছেন।
পিরোজপুর শহরের রাজারহাট এলাকার শিবনারায়ণ দত্তের (৭০) পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় শাঁখা তৈরি করে আসছেন। তাঁর পরিবারের আরও দুই সদস্য এ পেশায় রয়েছেন।
শিবনারায়ণ দত্ত বলছিলেন, একসময় আশপাশের এলাকা থেকেও লোকজন এখানে শাঁখা কিনতে আসতেন। এখন শাঁখা তৈরির কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা, দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে হাজার বছরের পুরোনো এ শিল্পকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন শাঁখাশিল্পীরা। ফলে ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পে বর্তমানে বিরাজ করছে চরম দুর্দিন। জীবন-জীবিকার তাগিদে নয়, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁরা এ শিল্পকে ধরে রেখেছেন বলে জানালেন তিনি। পিরোজপুরের রায়েরকাঠি রাজপরিবারের গৌতম রায় চৌধুরী বলেন, পিরোজপুরের শাঁখাশিল্পের রয়েছে চার শ বছরের ঐতিহ্য। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এ শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুর শহরের রাজারহাট এলাকার শিবনারায়ণ দত্তের (৭০) পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় শাঁখা তৈরি করে আসছেন। তাঁর পরিবারের আরও দুই সদস্য এ পেশায় রয়েছেন।
শিবনারায়ণ দত্ত বলছিলেন, একসময় আশপাশের এলাকা থেকেও লোকজন এখানে শাঁখা কিনতে আসতেন। এখন শাঁখা তৈরির কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা, দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে হাজার বছরের পুরোনো এ শিল্পকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন শাঁখাশিল্পীরা। ফলে ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পে বর্তমানে বিরাজ করছে চরম দুর্দিন। জীবন-জীবিকার তাগিদে নয়, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁরা এ শিল্পকে ধরে রেখেছেন বলে জানালেন তিনি। পিরোজপুরের রায়েরকাঠি রাজপরিবারের গৌতম রায় চৌধুরী বলেন, পিরোজপুরের শাঁখাশিল্পের রয়েছে চার শ বছরের ঐতিহ্য। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এ শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুরে তৈরি হওয়া কিছু শাঁখা |
শাঁখাশিল্পীরা
জানান, শাঁখাশিল্পের প্রধান উপকরণ সমুদ্রের বিশেষ কয়েক প্রজাতির শঙ্খ আসে
শ্রীলঙ্কা থেকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার কয়েকজন এই শঙ্খ আমদানি করে
থাকেন। ঢাকার শাঁখারীবাজার, খুলনার ধর্মসভা সড়ক ও দোলখোলার শঙ্খের
মোকাম থেকে শঙ্খ কিনে এনে নিজস্ব কারখানায় অলংকার তৈরি করেন শিল্পীরা।
ঢাকার শাঁখারীবাজার শঙ্খের অলংকার কেনাবেচার প্রধান কেন্দ্র হলেও
চট্টগ্রাম, খুলনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে শঙ্খব্যবসার প্রচলন আছে। হিন্দু
সম্প্রদায়ের বিয়ে, পূজা-পার্বণ উপলক্ষে শাঁখার অলংকার ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মুসলিম নারীরাও শখের বসে শঙ্খের অলংকার পরেন। ভালো আকৃতির একটি শঙ্খ দিয়ে
দুই থেকে তিন জোড়া শাঁখা তৈরি হয়। ছয় শ থেকে সাত শ টাকা করে একটি শঙ্খের
দাম। শঙ্খ বিশেষ ধরনের করাত দিয়ে গোলাকার করে কেটে বিভিন্ন আকারের বলয়
তৈরি করা হয়। এরপর সেটিকে শিলে ঘষে মসৃণ করা হয় এবং বিভিন্ন নকশা আঁকা হয়।
প্রতিটি শাঁখার জোড়া অংশ নিখুঁতভাবে লাগিয়ে তাতে ফুল, লতা, মাছ, পাখির
নকশা তোলা হয়। এসব শাঁখা প্রতি জোড়া ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি
হয়। পাশাপাশি গলার হার চার হাজার ও আংটি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এ
ছাড়া সোনা দিয়ে বাঁধাই করা শাঁখা পাওয়া যায়। এগুলোর দাম সোনার পরিমাণের
ওপর নির্ভর করে।
পিরোজপুর শহরের মা শঙ্খ ভান্ডারের মালিক সুমন কুমার দত্ত বলেন, তিন দশক আগেও পিরোজপুর শহরে আটটি শাঁখা তৈরির কারখানা ছিল। এখন আছে মাত্র দুটি। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শাঁখাশিল্প একদিন অস্তিত্ব হারাবে। শাঁখাশিল্পীরা চান, তাঁদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হোক। শঙ্খ আমদানি শুল্কমুক্ত করা হোক, আর দেওয়া হোক সরকারি সহযোগিতা।
শিব নারায়ণ দত্ত বললেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এ শিল্পের জৌলুশ ধরে রাখতে দেশের প্রত্যেক শাঁখাশিল্পী পরিবারকে ১০০টি করে শঙ্খ দিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো সরকার এ শিল্পের দিকে নজর দেয়নি। এ বিষয়ে পিরোজপুর-১ আসনের (সদর) সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাঁখাশিল্প টিকিয়ে রাখতে আমি সংসদে কথা বলব। এ শিল্পের জন্য সরকারি সহায়তা যাতে পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করব।’
পিরোজপুর শহরের মা শঙ্খ ভান্ডারের মালিক সুমন কুমার দত্ত বলেন, তিন দশক আগেও পিরোজপুর শহরে আটটি শাঁখা তৈরির কারখানা ছিল। এখন আছে মাত্র দুটি। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শাঁখাশিল্প একদিন অস্তিত্ব হারাবে। শাঁখাশিল্পীরা চান, তাঁদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হোক। শঙ্খ আমদানি শুল্কমুক্ত করা হোক, আর দেওয়া হোক সরকারি সহযোগিতা।
শিব নারায়ণ দত্ত বললেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এ শিল্পের জৌলুশ ধরে রাখতে দেশের প্রত্যেক শাঁখাশিল্পী পরিবারকে ১০০টি করে শঙ্খ দিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো সরকার এ শিল্পের দিকে নজর দেয়নি। এ বিষয়ে পিরোজপুর-১ আসনের (সদর) সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাঁখাশিল্প টিকিয়ে রাখতে আমি সংসদে কথা বলব। এ শিল্পের জন্য সরকারি সহায়তা যাতে পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করব।’
No comments