বৃষ্টির রাতে যারা ঘুমাতে পারে না by রাফাত জামিল
‘একা
মানুষ, পোলা-মাইয়া দুইডা লইয়া থাকি। কই আর? ফুটপাতেই ঘুমাই। সেদিন যেরম
হইলো, বিছনা পাইতা অগো দুইডারে লইয়া ঘুমাইছি। ঝরঝর কইরা বৃষ্টি আইলো। কি
করুম! তাড়াতাড়ি উডলাম, বিছনাপত্র বগলে নিলাম, ওগোরে কোলে লইলাম, দৌড় দিয়া
বাস টার্মিনালে গেলাম। যাইয়া দেখি শোওনেরও জায়গা নাই। সারাডা রাইত খাড়াইয়া
কাডাইছি।’
বৃষ্টির রাতে আশ্রয়হীনভাবে দুর্ভোগ পোহানোর অভিজ্ঞতা এভাবে বর্ণনা করলেন রাজধানী ঢাকার গাবতলী বাসস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল নারী সুফিয়া বেগম।
ঢাকা শহরে প্রচুর ছিন্নমূল মানুষদের জীবটাই এমন। কারও স্থায়ী নিবাস নেই, জীবনযাপনও খুব বিচিত্র। আজ এ কাজ তো কাল সে কাজ। আজ এখানে তো কাল ওখানে—এভাবেই কাটাতে হচ্ছে জীবন।
বৃষ্টির রাতে আশ্রয়হীনভাবে দুর্ভোগ পোহানোর অভিজ্ঞতা এভাবে বর্ণনা করলেন রাজধানী ঢাকার গাবতলী বাসস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল নারী সুফিয়া বেগম।
ঢাকা শহরে প্রচুর ছিন্নমূল মানুষদের জীবটাই এমন। কারও স্থায়ী নিবাস নেই, জীবনযাপনও খুব বিচিত্র। আজ এ কাজ তো কাল সে কাজ। আজ এখানে তো কাল ওখানে—এভাবেই কাটাতে হচ্ছে জীবন।
বৃষ্টিতে ফুটপাতে প্লাস্টিকের ঢালু ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়েছে ছিন্নমূল মানুষ। ছবিটি ৩১ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পলাশী মোড়-সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জাহিদুল করিম |
কর্মক্লান্ত
দিন শেষে ছিন্নমূল মানুষের অধিকাংশেরই ঘুমানোর স্থান ফুটপাত, পদচারী সেতু
বা রাস্তার বিভিন্ন যাত্রী ছাউনি। এখন বর্ষার সময় বলে ফুটপাতে ঘুমানো এসব
মানুষের সমস্যা খুব প্রকট। বলা নেই কওয়া নেই বৃষ্টি নামছে, বিছানাপত্র
গুছিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। সেখানে দাঁড়িয়েই বৃষ্টি থামার অপেক্ষা
করছেন। বৃষ্টি থামলে আবার ঘুমাতে যাবেন—এই আশায় প্রহর গোনা!
ফার্মগেট এলাকায় চার সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন রহিম মিয়া। ছিন্নমূল এই পরিবারটির প্রধান বলেন, ‘প্লাস্টিক পলিথিন বিছাইয়া কি আর বৃষ্টির রাতে ঘুমান যায়? বৃষ্টি হইলেই বিছানার নিচের ইট ভিজা ওঠে। তহন আর কী করার? উইঠা প্লাস্টিক জরাইয়া বইসা থাকন লাগে।’
ঢাকায় রাতের বৃষ্টিতে গত কয়েক দিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিস্নাত অবস্থায় ছোট্ট শিশু মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ ভেজা কংক্রিটের ওপর প্লাস্টিক বাব পলিথিন বিছিয়ে আরেকটি পলিথিন মুড়ি দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ঘুমানোর চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও চোখে পড়ে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো একচালা পলিথিনের ঘর, যার পুরোটাই পলিথিনে মোড়া। এ সময় প্লাস্টিক পলিথিন জড়িয়ে জবুথবু অবস্থায় বৃষ্টির মধ্যে অনেকের ফুটপাতে বসে থাকার দৃশ্যও চোখে পড়ে।
কলাবাগানের বিভিন্ন ফুটপাতে রাত কাটান বৃদ্ধা সুরমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি আইলে সবডি পোটলায় ভইরা কোনো এক দোকানের ছাউনির নিচে গিয়া দাঁড়াই। সেইহানে শোওনের জায়গা পাইলে শুইয়া পড়ি, নইলে বইসা থাকি। মাঝেমইধ্যে কোনহানে যাই না, প্লাস্টিক মুড়ি দিয়া ঘুমাই যাই। সকালে উইডা দেহি সবডি ভিজা গেছে। তাতে কী, ঘুম তো হয়!’
ফার্মগেট এলাকায় চার সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন রহিম মিয়া। ছিন্নমূল এই পরিবারটির প্রধান বলেন, ‘প্লাস্টিক পলিথিন বিছাইয়া কি আর বৃষ্টির রাতে ঘুমান যায়? বৃষ্টি হইলেই বিছানার নিচের ইট ভিজা ওঠে। তহন আর কী করার? উইঠা প্লাস্টিক জরাইয়া বইসা থাকন লাগে।’
ঢাকায় রাতের বৃষ্টিতে গত কয়েক দিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিস্নাত অবস্থায় ছোট্ট শিশু মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ ভেজা কংক্রিটের ওপর প্লাস্টিক বাব পলিথিন বিছিয়ে আরেকটি পলিথিন মুড়ি দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ঘুমানোর চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও চোখে পড়ে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো একচালা পলিথিনের ঘর, যার পুরোটাই পলিথিনে মোড়া। এ সময় প্লাস্টিক পলিথিন জড়িয়ে জবুথবু অবস্থায় বৃষ্টির মধ্যে অনেকের ফুটপাতে বসে থাকার দৃশ্যও চোখে পড়ে।
কলাবাগানের বিভিন্ন ফুটপাতে রাত কাটান বৃদ্ধা সুরমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি আইলে সবডি পোটলায় ভইরা কোনো এক দোকানের ছাউনির নিচে গিয়া দাঁড়াই। সেইহানে শোওনের জায়গা পাইলে শুইয়া পড়ি, নইলে বইসা থাকি। মাঝেমইধ্যে কোনহানে যাই না, প্লাস্টিক মুড়ি দিয়া ঘুমাই যাই। সকালে উইডা দেহি সবডি ভিজা গেছে। তাতে কী, ঘুম তো হয়!’
বৃষ্টির দুর্ভোগ সয়ে ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের শিশু। ছবিটি ৩১ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পলাশী মোড়-সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জাহিদুল করিম |
রেল-বাসস্টেশন,
লঞ্চঘাট ও ট্রাক স্টেশনের আশপাশে থাকা ছিন্নমূল মানুষেরা বৃষ্টি নামলেই সব
গুছিয়ে দ্রুত ছুটে যান সেখানে। তখন ওই সব জায়গাগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় হয়।
অনেক সময় এসব স্থানে থাকাকে কেন্দ্র করে ছোটখাট ঝগড়াও হয়ে যায় তাদের মধ্যে।
কখনো আবার এসব স্থানের নিরাপত্তারক্ষী ও নৈশপ্রহরীরা তাঁদের ঢুকতে দেন না।
তখন বৃষ্টিভেজা হয়েই কাটে তাদের সারাটা রাত।
বৃষ্টির রাত যেন কাটতেই চায় না! সারা রাত নির্ঘুম থাকেন প্রায় সবাই। রাত ফুরালে শুরু হয় দিনের কর্মব্যস্ততা। সারা দিন পথে পথে ঘুরে কেউ কাগজ বা বোতল কুড়ায়, কেউ ঠিকে কাজ করে। নারীরা অনেকে বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন দোকানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। পুরুষের পাশাপাশি বাচ্চারাও গাড়ি ধোয়া-মোছা, ফুল বিক্রি এবং ফেরিওয়ালার কাজ করে।
শহরের প্রায় সব এলাকায় কমবেশি ছিন্নমূল মানুষ চোখে পড়ে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই থাকে রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, ট্রাক স্টেশন, লঞ্চঘাট ও আশপাশের এলাকায়। যাত্রীছাউনি, পদচারী সেতু, শপিংমল, বাজার, উড়াল সড়ক ও দোকানের ছাউনির নিচে, ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানেও অনেক উদ্বাস্তু পরিবারকে থকতে দেখা যায়।
বৃষ্টির রাত যেন কাটতেই চায় না! সারা রাত নির্ঘুম থাকেন প্রায় সবাই। রাত ফুরালে শুরু হয় দিনের কর্মব্যস্ততা। সারা দিন পথে পথে ঘুরে কেউ কাগজ বা বোতল কুড়ায়, কেউ ঠিকে কাজ করে। নারীরা অনেকে বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন দোকানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। পুরুষের পাশাপাশি বাচ্চারাও গাড়ি ধোয়া-মোছা, ফুল বিক্রি এবং ফেরিওয়ালার কাজ করে।
শহরের প্রায় সব এলাকায় কমবেশি ছিন্নমূল মানুষ চোখে পড়ে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই থাকে রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, ট্রাক স্টেশন, লঞ্চঘাট ও আশপাশের এলাকায়। যাত্রীছাউনি, পদচারী সেতু, শপিংমল, বাজার, উড়াল সড়ক ও দোকানের ছাউনির নিচে, ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানেও অনেক উদ্বাস্তু পরিবারকে থকতে দেখা যায়।
No comments