বছরে ৫০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি by ইফতেখার মাহমুদ
প্রতিবছর
দেশে ইঁদুরের কারণে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি
মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের হিসাবে ইঁদুরের
কারণে ৫১৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য সার্ভিস শাখার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি খাদ্যগুদাম, পাউরুটি ও বিস্কুট তৈরির কারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রির দোকানে বিপুল পরিমাণে খাদ্য ইঁদুর নষ্ট করছে। তবে তার কোনো হিসাব সরকারিভাবে করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী ইঁদুরের উৎপাত নিয়ে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রুত এবং বংশবিস্তারকারী এলাকা হচ্ছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণের এলাকাগুলো ইঁদুরের বংশবিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল। ফসলের মাঠ ছাড়াও এই অববাহিকায় অবস্থিত হাট-বাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতেও ইঁদুরের দাপট বেশি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের পরিচালক খন্দকার হোমায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইঁদুর মোকাবিলায় আমাদের সরকার শুধু ফসলের ক্ষতির বিষয়টিকে দেখতে বলেছে। তবে আমরা সারা দেশে ইঁদুর নিধনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’
ইঁদুর নিধনের জন্য একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা হিসেবে কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ। তারা আগস্টে দেশব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে থাকে। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৬টি ইঁদুর মারা হয়। এর ফলে দেড় লাখ টন ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যার বাজারমূল্য ২২২ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র (ইরি) ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১১টি দেশকে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের অর্ধেক জমির ফসল ইঁদুরের আক্রমণের শিকার হয়। ইরির আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান-গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে।
ইরির হিসাবে, ফসলের মোট ক্ষতির বিবেচনায় ইঁদুরের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এর পরেই আছে লাওস। দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান ইঁদুরের পেটে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে ইঁদুরের কারণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ, গম ৪ থেকে ১২ ভাগ, গোল আলু ৫ থেকে ৭ ভাগ, আনারস ৬ থেকে ৯ ভাগ নষ্ট হয়। ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচনালাও নষ্ট করে থাকে। সেটা ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে।
ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে, তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে।
ইঁদুরের ইতিবৃত্ত
* এশিয়ায় বছরে ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে ইঁদুর। বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের
* ইঁদুরের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এরপরই লাওস। দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান ইঁদুরের পেটে যায়
* বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৬টি ইঁদুর মারা হয়। এর ফলে দেড় লাখ টন ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যার বাজারমূল্য ২২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান-গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে।
সূত্র: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ইরি
ইঁদুর নির্মূলের প্রাকৃতিক পদ্ধতি
সাধারণত বিষ প্রয়োগ করে ইঁদুর নিধন করা হয়ে থাকে। তবে ইঁদুর যেহেতু নোংরা স্থান পছন্দ করে, সেহেতু ফসলের মাঠ, বাঁধ, বাড়িঘরসহ ইঁদুরের বংশবিস্তারের সব স্থান পরিষ্কার রাখলে এর বংশবৃদ্ধি কমে আসে। এ ছাড়া ফাঁদ পেতেও ইঁদুর নিধন করা যায়।
ইঁদুরের আরও যত ক্ষতি
* ইঁদুর প্রতিদিন তার ওজনের ১০ ভাগ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আবার সমপরিমাণে খাদ্য কেটে নষ্ট করে।
* ইঁদুরের মলমূত্র ও লোম খাদ্যের সঙ্গে মিশে মোট ৩০ ধরনের রোগ ছড়ায়।
* ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট্ট বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিভাগের হিসাবে ইঁদুর দেশের প্রতিটি মুরগির খামারে বছরে ১৮ হাজার টাকার ক্ষতি করে।
* প্রতিবছর ৫০ হাজার টন গুদামজাত খাদ্য নষ্ট করে থাকে।
* একেকটি ইঁদুর দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত বাঁচে। এরা প্রতি মাসেই বাচ্চা দিতে পারে। প্রতিবারে এরা ছয় থেকে আটটি বাচ্চা দেয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার দুই দিনের মাথায় এরা আবারও গর্ভধারণ করতে পারে।
* দেশে ১৮ প্রজাতির ইঁদুর দেখা যায়। ফসলের ক্ষতিসাধনকারী একেকটি কালো ইঁদুরের ওজন ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর বড় কালো ইঁদুরের ওজন আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য সার্ভিস শাখার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি খাদ্যগুদাম, পাউরুটি ও বিস্কুট তৈরির কারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রির দোকানে বিপুল পরিমাণে খাদ্য ইঁদুর নষ্ট করছে। তবে তার কোনো হিসাব সরকারিভাবে করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী ইঁদুরের উৎপাত নিয়ে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রুত এবং বংশবিস্তারকারী এলাকা হচ্ছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণের এলাকাগুলো ইঁদুরের বংশবিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল। ফসলের মাঠ ছাড়াও এই অববাহিকায় অবস্থিত হাট-বাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতেও ইঁদুরের দাপট বেশি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের পরিচালক খন্দকার হোমায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইঁদুর মোকাবিলায় আমাদের সরকার শুধু ফসলের ক্ষতির বিষয়টিকে দেখতে বলেছে। তবে আমরা সারা দেশে ইঁদুর নিধনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’
ইঁদুর নিধনের জন্য একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা হিসেবে কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ। তারা আগস্টে দেশব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে থাকে। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৬টি ইঁদুর মারা হয়। এর ফলে দেড় লাখ টন ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যার বাজারমূল্য ২২২ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র (ইরি) ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১১টি দেশকে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের অর্ধেক জমির ফসল ইঁদুরের আক্রমণের শিকার হয়। ইরির আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান-গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে।
ইরির হিসাবে, ফসলের মোট ক্ষতির বিবেচনায় ইঁদুরের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এর পরেই আছে লাওস। দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান ইঁদুরের পেটে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে ইঁদুরের কারণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ, গম ৪ থেকে ১২ ভাগ, গোল আলু ৫ থেকে ৭ ভাগ, আনারস ৬ থেকে ৯ ভাগ নষ্ট হয়। ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচনালাও নষ্ট করে থাকে। সেটা ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে।
ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে, তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে।
ইঁদুরের ইতিবৃত্ত
* এশিয়ায় বছরে ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে ইঁদুর। বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের
* ইঁদুরের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। এরপরই লাওস। দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান ইঁদুরের পেটে যায়
* বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৬টি ইঁদুর মারা হয়। এর ফলে দেড় লাখ টন ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। যার বাজারমূল্য ২২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান-গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে।
সূত্র: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ইরি
ইঁদুর নির্মূলের প্রাকৃতিক পদ্ধতি
সাধারণত বিষ প্রয়োগ করে ইঁদুর নিধন করা হয়ে থাকে। তবে ইঁদুর যেহেতু নোংরা স্থান পছন্দ করে, সেহেতু ফসলের মাঠ, বাঁধ, বাড়িঘরসহ ইঁদুরের বংশবিস্তারের সব স্থান পরিষ্কার রাখলে এর বংশবৃদ্ধি কমে আসে। এ ছাড়া ফাঁদ পেতেও ইঁদুর নিধন করা যায়।
ইঁদুরের আরও যত ক্ষতি
* ইঁদুর প্রতিদিন তার ওজনের ১০ ভাগ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আবার সমপরিমাণে খাদ্য কেটে নষ্ট করে।
* ইঁদুরের মলমূত্র ও লোম খাদ্যের সঙ্গে মিশে মোট ৩০ ধরনের রোগ ছড়ায়।
* ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট্ট বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিভাগের হিসাবে ইঁদুর দেশের প্রতিটি মুরগির খামারে বছরে ১৮ হাজার টাকার ক্ষতি করে।
* প্রতিবছর ৫০ হাজার টন গুদামজাত খাদ্য নষ্ট করে থাকে।
* একেকটি ইঁদুর দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত বাঁচে। এরা প্রতি মাসেই বাচ্চা দিতে পারে। প্রতিবারে এরা ছয় থেকে আটটি বাচ্চা দেয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার দুই দিনের মাথায় এরা আবারও গর্ভধারণ করতে পারে।
* দেশে ১৮ প্রজাতির ইঁদুর দেখা যায়। ফসলের ক্ষতিসাধনকারী একেকটি কালো ইঁদুরের ওজন ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর বড় কালো ইঁদুরের ওজন আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
No comments