অ্যাম্বুলেন্সের কান্না কি আপনি শুনছেন? by সাজেদুল হক ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
যানবাহনের
লম্বা সারি। যেদিকে চোখ যায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি। এর মধ্যে আটকা পড়ে আছে
অ্যাম্বুলেন্স। বাজিয়ে চলছে হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করা সাইরেন। ভেতরে মুমূর্ষু
রোগী। যন্ত্রণায় কাতর। কাউকে হয়তো দেয়া হচ্ছে অক্সিজেন। পাশে থাকা স্বজনদের
উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কখন ছুটবে জ্যাম। কখন প্রিয়জনকে নিয়ে যেতে পারবেন
হাসপাতালে। ঠিক সময়ে নিতে পারবেন তো। নাকি চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাবেন প্রিয়
মানুষটি।
রাজধানী ঢাকায় এ দৃশ্য একেবারেই নিয়মিত। গত কিছুদিনে তা রূপ ধারণ করেছে ভয়াবহ। ভিআইপি মুভমেন্ট থাকলে তো কথাই নেই। একটা সময় ছিল, অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই চমকে তাকাতেন মানুষ। অন্য যানবাহনের চালকরা যেভাবেই হোক জায়গা দিতেন অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার জন্য। সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেন মানুষও। এখন আর সেই দিন নেই। সময় আর পরিস্থিতির অসহায় শিকার যেন অ্যাম্বুলেন্সগুলো আর তার মধ্যে থাকা রোগীরা। যানজট এমনই যে, পাশের গাড়ির চালকরা চাইলেও পথ দিতে পারেন না অ্যাম্বুলেন্সটিকে। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন রাও থাকে না কারও। একটি অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে আছে এটাই যেন স্বাভাবিক। অ্যাম্বুলেন্স আর তার ভেতরে থাকা মানুষদের অসহায় কান্নায় যেন কারই কিছু যায় আসে না। কি মর্মন্তুদ এক দৃশ্য। ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে কত মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় নেমে আসে, তারও কোন ইয়ত্তা নেই।
যানজটের সমস্যা বাংলাদেশে একেবারে নতুন নয়। বিশেষ করে প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এ ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চেনা ছবি। মাঝেমধ্যেই নানা প্রতিশ্রুতি শোনা যায়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও তা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর পরিস্থিতির একচুলও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। বরং গত কয়েক দিনে যানজটের মাত্রা বেড়েছে বহু গুণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টায় রাস্তায় আটকে থাকছেন মানুষ। ভোগান্তির যেন শেষ নেই তাদের। হাঁফিয়ে উঠছেন নারী-শিশুরা। বয়স্কদের ভোগান্তিই সবচেয়ে বেশি। পাবলিক টয়লেটের অভাবের কারণেও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারছেন না কর্মজীবীরা। শিক্ষার্থীরা হিমশিম খাচ্ছেন ক্লাসে পৌঁছাতে। মানুষের এ দুর্যোগে কারওই যেন করার কিছু নেই। সবকিছু যেন চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে। ফ্লাইওভার যানজট সমস্যার কোন সমাধানই করতে পারেনি। ফ্লাইওভারের গোড়ায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর কারণেও যানজটের তৈরি হচ্ছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয় মাঝেমধ্যেই। তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু উদ্যোগের মধ্যেই থেকে যায়। কোন দিন সকালবেলা হয়তো উচ্ছেদ করা হয় ফুটপাথ, বিকালবেলাই আবার দখল হয়ে যায় তা। প্রভাবশালীদের মদত থাকার কারণে সিটি করপোরেশন এ ক্ষেত্রে অনেকটাই অসহায়। প্রভাবশালী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য মিলে গড়ে তুলেছে এক অশুভ ঐক্য।
রাজধানীর যানজট নিয়ে চলতি বছরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ এক গবেষণা করে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটে ঢাকা সিটিতে বছরে আর্থিক হিসেবে ৩২ হাজার কোটি টাকার কর্মঘণ্টার ক্ষতি হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন ৮৭ কোটি ৬৭ লাখ ১২ হাজার টাকা আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ক্ষতি হয় ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। পুরকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান জানান, ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে কোন পরিবহন মিলে মোট ২২ মিলিয়ন ট্রিপ দেয়া হয়। ট্রিপের গড় দূরত্ব ৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার। প্রতি ট্রিপে ৩০ মিনিট করে দেরি ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। তিনি জানান, তাদের গবেষণায় রাজধানীর মগবাজার থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত নেটওয়ার্ক ধরা হয়েছে। এতে পিক-আওয়ারে অর্থাৎ বিকাল সোয়া ৬টা থেকে সোয়া ৭টা পর্যন্ত এ নেটওয়ার্কে প্রতি ঘণ্টায় রাস্তায় দেরি হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় আট লাখ টাকা। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগের ম্যানুয়ালের রেট অনুযায়ী এ হিসাব করা হয়েছে। আর দেরি হওয়ার বিষয়টি হলো মডেলের আউটপুট। বাস সম্পর্কিত লেভেল অব সার্ভিস মডেল অনুযায়ী এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে গণপরিবহনের বিভিন্ন রুটের দুই হাজার যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয়। তাদের গবেষণার ২৩টি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীদের ৮৬ শতাংশ তাদের বাসযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা খারাপ উল্লেখ করে তা উন্নত করার কথা বলেছেন। ৭৬ শতাংশ যাত্রী মনে করেন টিকিটিং সিস্টেমকে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। ১৮ শতাংশ যাত্রী বলেছেন, বাসাযাত্রার সময়ানুবর্তিতা এবং বাসের ওপর নির্ভরতা। এ ২৩টির মধ্যে এ তিনটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন যাত্রীরা। তাদের মডেলও তা সমর্থন করেছে। ড. মো. হাদিউজ্জামান আরও জানান, তাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ঢাকা শহরে গণপরিবহন আরও বাড়াতে হবে।
পথচারীদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যানজটের দুর্ভোগ কমাতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ। শুরু হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। কিন্তু এতেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হবে বলে মনে করছেন না আরবান ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঢাকা শহরের গোড়াপত্তনই ঘটেছে অপরিকল্পিতভাবে। সম্প্রসারণও হয়েছে একইভাবে। সেখানে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ফ্লাইওভার, কিংবা একটি মেট্রোরেল দিয়ে পুরো শহরের যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। গণপরিবহনের সংখ্যা না বেড়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়াকেও বিশেষজ্ঞরা যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
রাজধানী ঢাকায় এ দৃশ্য একেবারেই নিয়মিত। গত কিছুদিনে তা রূপ ধারণ করেছে ভয়াবহ। ভিআইপি মুভমেন্ট থাকলে তো কথাই নেই। একটা সময় ছিল, অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই চমকে তাকাতেন মানুষ। অন্য যানবাহনের চালকরা যেভাবেই হোক জায়গা দিতেন অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার জন্য। সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেন মানুষও। এখন আর সেই দিন নেই। সময় আর পরিস্থিতির অসহায় শিকার যেন অ্যাম্বুলেন্সগুলো আর তার মধ্যে থাকা রোগীরা। যানজট এমনই যে, পাশের গাড়ির চালকরা চাইলেও পথ দিতে পারেন না অ্যাম্বুলেন্সটিকে। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন রাও থাকে না কারও। একটি অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে আছে এটাই যেন স্বাভাবিক। অ্যাম্বুলেন্স আর তার ভেতরে থাকা মানুষদের অসহায় কান্নায় যেন কারই কিছু যায় আসে না। কি মর্মন্তুদ এক দৃশ্য। ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে কত মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় নেমে আসে, তারও কোন ইয়ত্তা নেই।
যানজটের সমস্যা বাংলাদেশে একেবারে নতুন নয়। বিশেষ করে প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এ ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চেনা ছবি। মাঝেমধ্যেই নানা প্রতিশ্রুতি শোনা যায়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও তা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর পরিস্থিতির একচুলও ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। বরং গত কয়েক দিনে যানজটের মাত্রা বেড়েছে বহু গুণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টায় রাস্তায় আটকে থাকছেন মানুষ। ভোগান্তির যেন শেষ নেই তাদের। হাঁফিয়ে উঠছেন নারী-শিশুরা। বয়স্কদের ভোগান্তিই সবচেয়ে বেশি। পাবলিক টয়লেটের অভাবের কারণেও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারছেন না কর্মজীবীরা। শিক্ষার্থীরা হিমশিম খাচ্ছেন ক্লাসে পৌঁছাতে। মানুষের এ দুর্যোগে কারওই যেন করার কিছু নেই। সবকিছু যেন চলছে আল্লাহর ওয়াস্তে। ফ্লাইওভার যানজট সমস্যার কোন সমাধানই করতে পারেনি। ফ্লাইওভারের গোড়ায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর কারণেও যানজটের তৈরি হচ্ছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয় মাঝেমধ্যেই। তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু উদ্যোগের মধ্যেই থেকে যায়। কোন দিন সকালবেলা হয়তো উচ্ছেদ করা হয় ফুটপাথ, বিকালবেলাই আবার দখল হয়ে যায় তা। প্রভাবশালীদের মদত থাকার কারণে সিটি করপোরেশন এ ক্ষেত্রে অনেকটাই অসহায়। প্রভাবশালী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য মিলে গড়ে তুলেছে এক অশুভ ঐক্য।
রাজধানীর যানজট নিয়ে চলতি বছরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ এক গবেষণা করে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটে ঢাকা সিটিতে বছরে আর্থিক হিসেবে ৩২ হাজার কোটি টাকার কর্মঘণ্টার ক্ষতি হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন ৮৭ কোটি ৬৭ লাখ ১২ হাজার টাকা আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ক্ষতি হয় ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। পুরকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান জানান, ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে কোন পরিবহন মিলে মোট ২২ মিলিয়ন ট্রিপ দেয়া হয়। ট্রিপের গড় দূরত্ব ৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার। প্রতি ট্রিপে ৩০ মিনিট করে দেরি ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। তিনি জানান, তাদের গবেষণায় রাজধানীর মগবাজার থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত নেটওয়ার্ক ধরা হয়েছে। এতে পিক-আওয়ারে অর্থাৎ বিকাল সোয়া ৬টা থেকে সোয়া ৭টা পর্যন্ত এ নেটওয়ার্কে প্রতি ঘণ্টায় রাস্তায় দেরি হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় আট লাখ টাকা। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগের ম্যানুয়ালের রেট অনুযায়ী এ হিসাব করা হয়েছে। আর দেরি হওয়ার বিষয়টি হলো মডেলের আউটপুট। বাস সম্পর্কিত লেভেল অব সার্ভিস মডেল অনুযায়ী এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে গণপরিবহনের বিভিন্ন রুটের দুই হাজার যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয়। তাদের গবেষণার ২৩টি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীদের ৮৬ শতাংশ তাদের বাসযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা খারাপ উল্লেখ করে তা উন্নত করার কথা বলেছেন। ৭৬ শতাংশ যাত্রী মনে করেন টিকিটিং সিস্টেমকে আরও উন্নত করা প্রয়োজন। ১৮ শতাংশ যাত্রী বলেছেন, বাসাযাত্রার সময়ানুবর্তিতা এবং বাসের ওপর নির্ভরতা। এ ২৩টির মধ্যে এ তিনটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন যাত্রীরা। তাদের মডেলও তা সমর্থন করেছে। ড. মো. হাদিউজ্জামান আরও জানান, তাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ঢাকা শহরে গণপরিবহন আরও বাড়াতে হবে।
পথচারীদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যানজটের দুর্ভোগ কমাতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ। শুরু হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। কিন্তু এতেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হবে বলে মনে করছেন না আরবান ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঢাকা শহরের গোড়াপত্তনই ঘটেছে অপরিকল্পিতভাবে। সম্প্রসারণও হয়েছে একইভাবে। সেখানে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ফ্লাইওভার, কিংবা একটি মেট্রোরেল দিয়ে পুরো শহরের যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। গণপরিবহনের সংখ্যা না বেড়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়াকেও বিশেষজ্ঞরা যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
No comments