বক্স কালভার্টই জলাবদ্ধতার কারণ by অরূপ দত্ত
বক্স কালভার্টের ঢাকনা সরিয়ে এক্সাভেটর দিয়ে কঠিন বর্জ্য অপসারণ করছে ঢাকা ওয়াসা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে নতুন রাস্তা থেকে ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো |
ঢাকা
মহানগরের জলাবদ্ধতা কমাতে তিনটি স্থানে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্ট
নির্মাণ করা হয়েছিল। নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ না করায় এসব কালভার্টের ভেতরে
পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য জমে নিষ্কাশনব্যবস্থা প্রায় রুদ্ধ। ফলে জলাবদ্ধতা
দূর করার বদলে এসব এখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টিরই কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু
অনেক জায়গায় কালভার্টের উন্মুক্ত ঢাকনা দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে নতুন রাস্তায় ঢাকা ওয়াসার কালভার্ট। ওপরে নতুন রাস্তা। কালভার্টের ‘পট হোল’ (আরসিসির তৈরি গর্ত) থেকে ওঠানো বিশাল আকৃতির ঢাকনা রাস্তাতেই রাখা। গর্তের মুখ হা করে আছে। যেকোনো মুহূর্তে যানবাহন ও পথচারী পড়ে যেতে পারে এই গর্তে। গত মঙ্গলবার দুপুরে এ অবস্থা দেখা যায়।
দক্ষিণ কমলাপুর কাঁচাবাজারের পাশে গড়ে ওঠা বস্তিতে থাকে ১১ বছরের বালক অনিক। টেনিস বলে ক্রিকেট খেলছিল। রাস্তায় গর্তে পড়ে যেতে পারে—সাবধান করতেই সে বলল, ‘পইড়া যামু কি, পড়তে পড়তে বাইচ্চা গেছি। রফিক্কা (খেলার সাথি রফিক) পইড়া ব্যাতা পাইছে। তাও খেলে।’ স্থানীয় মোটর গ্যারেজের কর্মী স্বপন জানান, রাতে আলো কম থাকায় গর্তে যাত্রীসহ রিকশা উল্টে পড়ার দৃশ্য দেখেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে এমন গর্ত অন্তত পাঁচটি জায়গায়। এখানে ভেতরের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য কালভার্টের ঢাকনা ওঠানো হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। আবর্জনা রাখা হয় রাস্তার ওপরই। ১১ জুনের ভারী বৃষ্টিতে সে আবর্জনাই আবার কালভার্টের ভেতরে গড়িয়ে পড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এলাকার পাঁচজন দোকানি ও বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি খোলা গর্তের পাশে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্তূপাকার করে রাখা হয় বর্জ্য। বস্তিবাসী লোকজন ব্যবহৃত পলিথিন ফেলেন বক্সের ভেতরে। এ ছাড়া এখন কালভার্টের ঢাকনা খোলা থাকায় যার যেমন ইচ্ছা আবর্জনা ওই গর্তে ফেলে।
একই অবস্থা সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ অন্য স্থানেও।
ঢাকার জলাবদ্ধতা কমাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ২০ কোটি টাকায় ২০০০ সালে নির্মিত হয়েছিল সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট। এটি রমনা মৎস্য ভবন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ। পরে কালভার্টের ওপর প্রায় দেড় শ কোটি টাকায় রাস্তা তৈরি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টে কয়েক শ টন পলিথিন বর্জ্য রয়েছে। এই পলিথিনে বক্সের ১২ ফুট গভীরতার মধ্যে প্রায় আট ফুটই প্রলেপ পড়ে বন্ধ হয়ে আছে। পলিথিন জমাট বেঁধে পাথরের মতো শক্ত প্রলেপ পড়েছে।
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, বক্স থেকে তোলার পর পলিথিন ও আবর্জনা ভেজা থাকে। শুকানোর জন্য ঠিকাদার স্তূপ করে রাখে। তবে এখন কোথাও আবর্জনা দেখা যাবে না। বক্সের ভেতরের শক্ত বর্জ্যের প্রলেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার এক্সকাভেটর ব্যবহার করে কিছু বর্জ্য তোলা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় বিশেষ ধরনের খননযন্ত্রে সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের শক্ত প্রলেপ পড়া অংশ ভাঙার ব্যবস্থা হচ্ছে।
ধোলাই খাল বক্স কালভার্ট: ধোলাই খাল ভরাট করে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কালভার্ট নির্মাণ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০০৫ সালে। এর ওপর তৈরি হয় রাস্তা। বক্স কালভার্ট ও রাস্তা তৈরিতে মোট ব্যয় হয় ৮৮ কোটি টাকা। ওই কালভার্ট চালুর পরও এলাকায় জলাবদ্ধতা কমেনি। বিশেষ করে ধুপখোলা মোড়, গেন্ডারিয়া, লোহারপুল প্রভৃতি এলাকায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নির্মাণের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কালভার্ট পরিষ্কারে বছরে গড়ে দুই কোটি টাকা করে খরচ হতো। এখন বছরে গড়ে ২৫ লাখ টাকা করে খরচ হচ্ছে। কারণ, সেখানেও সব বর্জ্য ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন রকিব আহমেদের কাছে বক্স কালভার্টগুলোর বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে।’ তবে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, তা তিনি জানাননি। তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করেন বলে দাবি করেন তিনি।
গতকাল বুধবার সকালে ধোলাই খাল-সংলগ্ন দয়াগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের মতো গর্তের ঢাকনা সেখানে তোলা নেই। চায়ের দোকানি আজিজুল করিম জানান, ঢাকনা ওঠানোর পর আবার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবাগ বক্স কালভার্ট: পরিবাগ খালের ওপর তৈরি হয়েছিল আধা কিলোমিটারের বক্স কালভার্ট। ভেতরে আবর্জনা জমে থাকা ছাড়াও এখানে সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক নগর বিশেষজ্ঞ মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পান্থপথ বক্স কালভার্ট দিয়ে শুধু বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, পরিবাগ এলাকার সব পয়োনালা এই কালভার্টের সঙ্গে যুক্ত করা। কালভার্টের আবর্জনা ও পানির গন্তব্য এখন হাতিরঝিল।
ঢাকা ওয়াসা পানির আলাদা লাইন না করে ময়লা যাওয়ার কালভার্টের সঙ্গেই যুক্ত করে দেয়। পান্থপথ বক্স কালভার্টই হাতিরঝিলের পানি দূষিত করার জন্য মূলত দায়ী বলে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে একটি বৈদ্যুতিক ছাকনি (মেকানিক্যাল স্ক্রিন) স্থাপিত হয়েছিল শুধু ভাসমান কঠিন বর্জ্য ছেঁকে নেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে নতুন রাস্তায় ঢাকা ওয়াসার কালভার্ট। ওপরে নতুন রাস্তা। কালভার্টের ‘পট হোল’ (আরসিসির তৈরি গর্ত) থেকে ওঠানো বিশাল আকৃতির ঢাকনা রাস্তাতেই রাখা। গর্তের মুখ হা করে আছে। যেকোনো মুহূর্তে যানবাহন ও পথচারী পড়ে যেতে পারে এই গর্তে। গত মঙ্গলবার দুপুরে এ অবস্থা দেখা যায়।
দক্ষিণ কমলাপুর কাঁচাবাজারের পাশে গড়ে ওঠা বস্তিতে থাকে ১১ বছরের বালক অনিক। টেনিস বলে ক্রিকেট খেলছিল। রাস্তায় গর্তে পড়ে যেতে পারে—সাবধান করতেই সে বলল, ‘পইড়া যামু কি, পড়তে পড়তে বাইচ্চা গেছি। রফিক্কা (খেলার সাথি রফিক) পইড়া ব্যাতা পাইছে। তাও খেলে।’ স্থানীয় মোটর গ্যারেজের কর্মী স্বপন জানান, রাতে আলো কম থাকায় গর্তে যাত্রীসহ রিকশা উল্টে পড়ার দৃশ্য দেখেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে এমন গর্ত অন্তত পাঁচটি জায়গায়। এখানে ভেতরের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য কালভার্টের ঢাকনা ওঠানো হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। আবর্জনা রাখা হয় রাস্তার ওপরই। ১১ জুনের ভারী বৃষ্টিতে সে আবর্জনাই আবার কালভার্টের ভেতরে গড়িয়ে পড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এলাকার পাঁচজন দোকানি ও বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি খোলা গর্তের পাশে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্তূপাকার করে রাখা হয় বর্জ্য। বস্তিবাসী লোকজন ব্যবহৃত পলিথিন ফেলেন বক্সের ভেতরে। এ ছাড়া এখন কালভার্টের ঢাকনা খোলা থাকায় যার যেমন ইচ্ছা আবর্জনা ওই গর্তে ফেলে।
একই অবস্থা সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ অন্য স্থানেও।
ঢাকার জলাবদ্ধতা কমাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ২০ কোটি টাকায় ২০০০ সালে নির্মিত হয়েছিল সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট। এটি রমনা মৎস্য ভবন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ। পরে কালভার্টের ওপর প্রায় দেড় শ কোটি টাকায় রাস্তা তৈরি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টে কয়েক শ টন পলিথিন বর্জ্য রয়েছে। এই পলিথিনে বক্সের ১২ ফুট গভীরতার মধ্যে প্রায় আট ফুটই প্রলেপ পড়ে বন্ধ হয়ে আছে। পলিথিন জমাট বেঁধে পাথরের মতো শক্ত প্রলেপ পড়েছে।
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, বক্স থেকে তোলার পর পলিথিন ও আবর্জনা ভেজা থাকে। শুকানোর জন্য ঠিকাদার স্তূপ করে রাখে। তবে এখন কোথাও আবর্জনা দেখা যাবে না। বক্সের ভেতরের শক্ত বর্জ্যের প্রলেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার এক্সকাভেটর ব্যবহার করে কিছু বর্জ্য তোলা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় বিশেষ ধরনের খননযন্ত্রে সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের শক্ত প্রলেপ পড়া অংশ ভাঙার ব্যবস্থা হচ্ছে।
ধোলাই খাল বক্স কালভার্ট: ধোলাই খাল ভরাট করে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কালভার্ট নির্মাণ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০০৫ সালে। এর ওপর তৈরি হয় রাস্তা। বক্স কালভার্ট ও রাস্তা তৈরিতে মোট ব্যয় হয় ৮৮ কোটি টাকা। ওই কালভার্ট চালুর পরও এলাকায় জলাবদ্ধতা কমেনি। বিশেষ করে ধুপখোলা মোড়, গেন্ডারিয়া, লোহারপুল প্রভৃতি এলাকায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নির্মাণের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কালভার্ট পরিষ্কারে বছরে গড়ে দুই কোটি টাকা করে খরচ হতো। এখন বছরে গড়ে ২৫ লাখ টাকা করে খরচ হচ্ছে। কারণ, সেখানেও সব বর্জ্য ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন রকিব আহমেদের কাছে বক্স কালভার্টগুলোর বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে।’ তবে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, তা তিনি জানাননি। তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করেন বলে দাবি করেন তিনি।
গতকাল বুধবার সকালে ধোলাই খাল-সংলগ্ন দয়াগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের মতো গর্তের ঢাকনা সেখানে তোলা নেই। চায়ের দোকানি আজিজুল করিম জানান, ঢাকনা ওঠানোর পর আবার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবাগ বক্স কালভার্ট: পরিবাগ খালের ওপর তৈরি হয়েছিল আধা কিলোমিটারের বক্স কালভার্ট। ভেতরে আবর্জনা জমে থাকা ছাড়াও এখানে সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক নগর বিশেষজ্ঞ মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পান্থপথ বক্স কালভার্ট দিয়ে শুধু বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, পরিবাগ এলাকার সব পয়োনালা এই কালভার্টের সঙ্গে যুক্ত করা। কালভার্টের আবর্জনা ও পানির গন্তব্য এখন হাতিরঝিল।
ঢাকা ওয়াসা পানির আলাদা লাইন না করে ময়লা যাওয়ার কালভার্টের সঙ্গেই যুক্ত করে দেয়। পান্থপথ বক্স কালভার্টই হাতিরঝিলের পানি দূষিত করার জন্য মূলত দায়ী বলে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে একটি বৈদ্যুতিক ছাকনি (মেকানিক্যাল স্ক্রিন) স্থাপিত হয়েছিল শুধু ভাসমান কঠিন বর্জ্য ছেঁকে নেওয়ার জন্য।
No comments