সাগরে ভাসমানদের বেশির ভাগই বাংলাদেশী
সমুদ্রে
আটকে পড়া শরণার্থীর বেশির ভাগ ‘বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিক’। অস্ট্রেলিয়াকে এমন
বার্তা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ এ
কথা জানিয়েছেন। দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকাকে জুলি বিশপ বলেন, ইন্দোনেশিয়ার
ধারণা সাগরে আটকে আছে প্রায় ৭০০০ মানুষ। এর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোহিঙ্গা আর
বাকিরা বাংলাদেশী। অর্থাৎ বাংলাদেশী রয়েছেন ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। ইন্দোনেশিয়ার
ভাষ্য অনুযায়ী, এসব বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশী বা শরণার্থী নন তারা অবৈধ
শ্রমিক। তাদের মালয়েশিয়ায় চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে অথবা তারা চাকরি
খুঁজছেন। জুলি বিশপ আরও জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার বহুপাক্ষিকবিষয়ক
মহাপরিচালক হাসান কলেইব তাকে বলেছেন, একটি নৌকার ৬০০ আরোহীর মধ্যে
বাংলাদেশী ছিল ৪০০ জন। আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট তার
দেশে কিছু শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে ইন্দোনেশিয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
কিছু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীকে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। জবাবে
অ্যাবট জানিয়েছেন, যে পদক্ষেপ আরও মানুষকে নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায়
প্রবৃত্ত হতে অনুপ্রাণিত করতে পারে, তেমন পদক্ষেপ হবে বিভ্রান্তিমূলক।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ী আশ্রয় দেয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
মানব পাচার সমস্যায় সহায়তা করার পরিবর্তে আরও বাড়াতে পারে বলে তিনি
মন্তব্য করেন। অ্যাবটের এ অবস্থানকে সমর্থন করেছেন দেশটির অভিবাসন মন্ত্রী
পিটার ডাটন। তার দেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায় (আইওএম) সব থেকে বেশি
অনুদান দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ পরিস্থিতিতে পড়তে পারি না।
বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশি উদার মনা মানবিক কার্যক্রম আমাদের রয়েছে।
কিন্তু তাই বলে বিশ্বজুড়ে যারা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে তেমন লাখ লাখ মানুষকে
আমরা নিতে পারব তা নয়।
বৃটেনে বাংলাদেশী মানব পাচার সিন্ডিকেট
এবার বৃটেনে আবিষ্কৃত হলো অবৈধ মানব পাচার সিন্ডিকেট। আর এ চক্রের মূল হোতা এক বাংলাদেশী দম্পতি। শহিদুল ও আনোয়ারা ইসলাম দম্পতি বহুদিন ধরে বৃটেনের ল্যাঙ্কাশায়ারের একটি ঘরে অবৈধভাবে মানব পাচারের কার্যক্রম চালাতেন। এর আগে স্থানীয় কর্মকর্তারা ওই দম্পতির ঘরের ছাদে স্যুটকেসের স্তূপের ভেতরে এক বাংলাদেশীকে খুঁজে পান। এছাড়া তাদের বাসায় জাল পাসপোর্ট ও জাতীয় বীমা সম্পর্কিত কয়েকশ’ নথিপত্র পাওয়া যায়। ফলে পুলিশের দাবি, ওই দম্পতি বৃটেনে মানবপাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। অবৈধভাবে মানবপাচারে জড়িত থাকায় বৃটেনের একটি আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের ল্যাঙ্কাশায়ার টেলিগ্রাফ। শহিদুল ও আনোয়ারা ইসলামের লিয়ামিংটন এভিনিউর বাসায় ২০১৪ সালের এপ্রিলে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তখন তাদের ঘরের ছাদে এক বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীকে পাওয়া যায়। তার নাম শফিক মিয়া। শফিক মিয়ার ছয় মাসের ভিসার মেয়াদ এর অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে তাকে আশ্রয় দিয়ে আসছিলেন শহিদুল-আনোয়ারা দম্পতি। অভিবাসন কর্মকর্তা ইয়ান মরিসন আদালতকে জানিয়েছেন, নকল পাসপোর্ট ও জাতীয় বীমা নথির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ২৭০টি নথি সে সময় উদ্ধার করা হয় ওই ঘর থেকে। এক তদন্তে দেখা যায়, সেখানে উদ্ধারকৃত অন্তত দুটি ছবিযুক্ত পাসপোর্টের বৈধতা বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া উদ্ধারকৃত বেশ কয়েকটি পাসপোর্ট বাংলাদেশীদের। একই তদন্তে, এ কাজে বোল্টনের একটি রেস্তরাঁয় কাজ করা আবদুল শহীদের সংশ্লিষ্টতাও ধরা পড়েছে। অবৈধ অভিবাসনে সাহায্য ছাড়াও উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিজের কাছে পরিচয়মূলক নথিপত্র রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন শহিদুল। তার স্ত্রী আনোয়ারাও অনুপ্রবেশে সাহায্য ও অযৌক্তিক কারণে বিভিন্ন নথি নিজের কাছে রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এছাড়া আবদুল শহীদ ও তার ভাইপো মোহাম্মদ উদ্দিনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিচয়মূলক নথিপত্র রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। আগামী ২৬শে জুন তাদের সাজার রায় দেয়া হবে। অভিযুক্ত দম্পতি বাংলাদেশের কোন জেলার অধিবাসী সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
অভিবাসীদের বাঁচাতে আবারও বান কি মুনের আহ্বান
আন্দামান সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের জীবন বাঁচাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। এদিকে সম্প্রতি উদ্ধার করা অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। শুক্রবার সমুদ্র থেকে মিয়ানমার দুটি নৌকা থেকে উদ্ধার করে ২০৮ জনকে। মিয়ানমার সরকারের দাবি, তারা সবাই বাংলাদেশী। তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে। তবে উদ্ধার করা ওই অভিবাসীরা যে বাংলাদেশী সে বিষয়ে অন্য কোন মাধ্যম থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, দমনপীড়ন ও দরিদ্রতা থেকে মুক্তির আশায় অভিবাসন প্রত্যাশী দুই সহস্রাধিক মানুষ এখনও বঙ্গোপসাগরে আটকে আছেন। অনেকের জীবন এখন নিষ্ঠুর পাচারকারীদের করুণার ওপর নির্ভরশীল। এর বেশির ভাগই মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম। দেশটিতে তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। উপরন্তু ‘বাঙালি’ বা ‘বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এদিকে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির আশায় ভয়াল যাত্রায় অংশ নিয়েছেন। এ মাসের শুরুতে থাইল্যান্ডে পাচারকারীদের এক ক্যাম্পে গণকবর উদ্ধারের পর দেশটি ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এতে করে পাচারকারীরা সমুদ্রপথে খাবার পানি ছাড়া অভিবাসীদের নৌকায় পরিত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া শুরু করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি অভিবাসীকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকে উপকূলে পৌঁছেছেন সাঁতরে। মিয়ানমারে ব্যাপক দমনপীড়ন ও অধিকারহীন হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে পাড়ি দিচ্ছে অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রতিবেশী দেশের আশায়। তারা যাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়, এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ। একই সঙ্গে সাগরে আটকেপড়াদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এমতবস্থায় শুক্রবার দেশটির নৌবাহিনী জানায়, তারা তাদের প্রথম উদ্ধার অভিযানে দুটি নৌকা থেকে ২ শতাধিক অভিবাসীকে উদ্ধার করে। নৌকার খোল থেকে ঠাঁসাঠাঁসি করে থাকা হাড্ডিসার এসব মানুষকে উদ্ধারের পর জাতিসংঘের সহযোগিতায় সহায়তা দেয়া হয়। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধারকৃত ২০৮ জনের প্রত্যেকেই বাংলাদেশী এবং দ্রুতই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এএফপি জানিয়েছে, অভিবাসীরা প্রকৃতপক্ষে কোন দেশের নাগরিক তা তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। গতকাল মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পরিচালক জ হ্যতে বলেন, আমরা তাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছি। এরপর তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। উদ্ধারকৃতদের বিষয়ে বাংলাদেশী সীমান্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে, এখনও আটকে থাকা হাজার হাজার অভিবাসীদের নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। মওসুমি বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সময় এসে যাওয়ার কারণে তাদের জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, এসব অভিবাসীকে খুঁজে বের করে তাদের জীবন বাঁচানো ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাওয়া উচিত। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে সফরকালে তিনি এ কথা বলেন। আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে এ সংকট মোকাবিলায় সংকটের ‘মূল কারণগুলো’ সমাধা করতে আঞ্চলিক দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, শুক্রবার সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারকে। মার্কিন পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পাওয়ার একটা রাস্তা থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পেছনে কোন প্রকার স্বীকৃতি না থাকার ফলে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্ঠি হয় সেটা অন্যতম কারণ। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বর্তমান অভিবাসন সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমনপীড়ন। মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না দেশটি। কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসলেও মিয়ানমার তাদেরকে ‘বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী’ বলে প্রত্যাখ্যান করছে। রোহিঙ্গারা দেশটিতে প্রতিনিয়ত বৈষম্য আর দমনপীড়নের শিকার হয়। ২০১২ সালে স্থানীয় নিবাসীদের সঙ্গে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অসংখ্য রোহিঙ্গা নিহত হয়। এতে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন অনেকে, যারা এখন অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছেন। নৌকায় করে দলে দলে দেশত্যাগের পেছনে ওই ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। আর তাদের দুর্দশার সুযোগ লুফে নিয়ে পাচারকারীরা ফেঁদে বসেছে ভয়াবহ আর রমরমা মানব পাচার ব্যবসা।
উদ্ধার করা বাংলাদেশীদের ঠাঁই হতে পারে পেনাংয়ে
উদ্ধার করা বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাস হতে পারে মালয়েশিয়ার পেনাং। দেশটির সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পেনাংকে সম্ভাব্য এলাকা হিসেবে বিবেচনা করছেন। অস্ট্রেলিয়ার একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার আইজিপি খালিদ আবু বকর বলেছেন, অভিবাসীদের স্থানান্তরের জন্য সহজ লোকেশন হচ্ছে পেনাং। তাই তাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে আবাসিক সুবিধা দিতে এ স্থানটিই বেশি উপযোগী। মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে পেনাং রাজ্য। এর কিছু অংশ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এবং বাকিটা একই নামে দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রথমে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাদের জলসীমায় থাকা কয়েক হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দিতে সম্মত হয়। বুধবার কুয়ালালামপুর তাদের ঠাঁই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের জলসীমা থেকে অভিবাসীদের নৌযান এখনও উদ্ধার করতে পারে নি মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক নৌবাহিনী ও মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন অভিবাসীদের উদ্ধার করতে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডকে এ ক্ষেত্রে দুই লাখ ডলার দেয়ার ঘোষণা নিয়েছে সিঙ্গাপুর।
বৃটেনে বাংলাদেশী মানব পাচার সিন্ডিকেট
এবার বৃটেনে আবিষ্কৃত হলো অবৈধ মানব পাচার সিন্ডিকেট। আর এ চক্রের মূল হোতা এক বাংলাদেশী দম্পতি। শহিদুল ও আনোয়ারা ইসলাম দম্পতি বহুদিন ধরে বৃটেনের ল্যাঙ্কাশায়ারের একটি ঘরে অবৈধভাবে মানব পাচারের কার্যক্রম চালাতেন। এর আগে স্থানীয় কর্মকর্তারা ওই দম্পতির ঘরের ছাদে স্যুটকেসের স্তূপের ভেতরে এক বাংলাদেশীকে খুঁজে পান। এছাড়া তাদের বাসায় জাল পাসপোর্ট ও জাতীয় বীমা সম্পর্কিত কয়েকশ’ নথিপত্র পাওয়া যায়। ফলে পুলিশের দাবি, ওই দম্পতি বৃটেনে মানবপাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। অবৈধভাবে মানবপাচারে জড়িত থাকায় বৃটেনের একটি আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের ল্যাঙ্কাশায়ার টেলিগ্রাফ। শহিদুল ও আনোয়ারা ইসলামের লিয়ামিংটন এভিনিউর বাসায় ২০১৪ সালের এপ্রিলে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তখন তাদের ঘরের ছাদে এক বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীকে পাওয়া যায়। তার নাম শফিক মিয়া। শফিক মিয়ার ছয় মাসের ভিসার মেয়াদ এর অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে তাকে আশ্রয় দিয়ে আসছিলেন শহিদুল-আনোয়ারা দম্পতি। অভিবাসন কর্মকর্তা ইয়ান মরিসন আদালতকে জানিয়েছেন, নকল পাসপোর্ট ও জাতীয় বীমা নথির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ২৭০টি নথি সে সময় উদ্ধার করা হয় ওই ঘর থেকে। এক তদন্তে দেখা যায়, সেখানে উদ্ধারকৃত অন্তত দুটি ছবিযুক্ত পাসপোর্টের বৈধতা বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া উদ্ধারকৃত বেশ কয়েকটি পাসপোর্ট বাংলাদেশীদের। একই তদন্তে, এ কাজে বোল্টনের একটি রেস্তরাঁয় কাজ করা আবদুল শহীদের সংশ্লিষ্টতাও ধরা পড়েছে। অবৈধ অভিবাসনে সাহায্য ছাড়াও উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিজের কাছে পরিচয়মূলক নথিপত্র রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন শহিদুল। তার স্ত্রী আনোয়ারাও অনুপ্রবেশে সাহায্য ও অযৌক্তিক কারণে বিভিন্ন নথি নিজের কাছে রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এছাড়া আবদুল শহীদ ও তার ভাইপো মোহাম্মদ উদ্দিনকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিচয়মূলক নথিপত্র রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। আগামী ২৬শে জুন তাদের সাজার রায় দেয়া হবে। অভিযুক্ত দম্পতি বাংলাদেশের কোন জেলার অধিবাসী সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
অভিবাসীদের বাঁচাতে আবারও বান কি মুনের আহ্বান
আন্দামান সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের জীবন বাঁচাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। এদিকে সম্প্রতি উদ্ধার করা অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। শুক্রবার সমুদ্র থেকে মিয়ানমার দুটি নৌকা থেকে উদ্ধার করে ২০৮ জনকে। মিয়ানমার সরকারের দাবি, তারা সবাই বাংলাদেশী। তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে। তবে উদ্ধার করা ওই অভিবাসীরা যে বাংলাদেশী সে বিষয়ে অন্য কোন মাধ্যম থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, দমনপীড়ন ও দরিদ্রতা থেকে মুক্তির আশায় অভিবাসন প্রত্যাশী দুই সহস্রাধিক মানুষ এখনও বঙ্গোপসাগরে আটকে আছেন। অনেকের জীবন এখন নিষ্ঠুর পাচারকারীদের করুণার ওপর নির্ভরশীল। এর বেশির ভাগই মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম। দেশটিতে তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। উপরন্তু ‘বাঙালি’ বা ‘বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এদিকে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির আশায় ভয়াল যাত্রায় অংশ নিয়েছেন। এ মাসের শুরুতে থাইল্যান্ডে পাচারকারীদের এক ক্যাম্পে গণকবর উদ্ধারের পর দেশটি ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এতে করে পাচারকারীরা সমুদ্রপথে খাবার পানি ছাড়া অভিবাসীদের নৌকায় পরিত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া শুরু করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি অভিবাসীকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকে উপকূলে পৌঁছেছেন সাঁতরে। মিয়ানমারে ব্যাপক দমনপীড়ন ও অধিকারহীন হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে পাড়ি দিচ্ছে অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রতিবেশী দেশের আশায়। তারা যাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়, এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ। একই সঙ্গে সাগরে আটকেপড়াদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এমতবস্থায় শুক্রবার দেশটির নৌবাহিনী জানায়, তারা তাদের প্রথম উদ্ধার অভিযানে দুটি নৌকা থেকে ২ শতাধিক অভিবাসীকে উদ্ধার করে। নৌকার খোল থেকে ঠাঁসাঠাঁসি করে থাকা হাড্ডিসার এসব মানুষকে উদ্ধারের পর জাতিসংঘের সহযোগিতায় সহায়তা দেয়া হয়। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধারকৃত ২০৮ জনের প্রত্যেকেই বাংলাদেশী এবং দ্রুতই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এএফপি জানিয়েছে, অভিবাসীরা প্রকৃতপক্ষে কোন দেশের নাগরিক তা তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। গতকাল মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পরিচালক জ হ্যতে বলেন, আমরা তাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছি। এরপর তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। উদ্ধারকৃতদের বিষয়ে বাংলাদেশী সীমান্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে, এখনও আটকে থাকা হাজার হাজার অভিবাসীদের নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। মওসুমি বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সময় এসে যাওয়ার কারণে তাদের জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, এসব অভিবাসীকে খুঁজে বের করে তাদের জীবন বাঁচানো ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাওয়া উচিত। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে সফরকালে তিনি এ কথা বলেন। আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে এ সংকট মোকাবিলায় সংকটের ‘মূল কারণগুলো’ সমাধা করতে আঞ্চলিক দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, শুক্রবার সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারকে। মার্কিন পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পাওয়ার একটা রাস্তা থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পেছনে কোন প্রকার স্বীকৃতি না থাকার ফলে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্ঠি হয় সেটা অন্যতম কারণ। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বর্তমান অভিবাসন সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমনপীড়ন। মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না দেশটি। কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসলেও মিয়ানমার তাদেরকে ‘বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী’ বলে প্রত্যাখ্যান করছে। রোহিঙ্গারা দেশটিতে প্রতিনিয়ত বৈষম্য আর দমনপীড়নের শিকার হয়। ২০১২ সালে স্থানীয় নিবাসীদের সঙ্গে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অসংখ্য রোহিঙ্গা নিহত হয়। এতে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন অনেকে, যারা এখন অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছেন। নৌকায় করে দলে দলে দেশত্যাগের পেছনে ওই ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। আর তাদের দুর্দশার সুযোগ লুফে নিয়ে পাচারকারীরা ফেঁদে বসেছে ভয়াবহ আর রমরমা মানব পাচার ব্যবসা।
উদ্ধার করা বাংলাদেশীদের ঠাঁই হতে পারে পেনাংয়ে
উদ্ধার করা বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাস হতে পারে মালয়েশিয়ার পেনাং। দেশটির সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পেনাংকে সম্ভাব্য এলাকা হিসেবে বিবেচনা করছেন। অস্ট্রেলিয়ার একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার আইজিপি খালিদ আবু বকর বলেছেন, অভিবাসীদের স্থানান্তরের জন্য সহজ লোকেশন হচ্ছে পেনাং। তাই তাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে আবাসিক সুবিধা দিতে এ স্থানটিই বেশি উপযোগী। মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে পেনাং রাজ্য। এর কিছু অংশ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এবং বাকিটা একই নামে দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রথমে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাদের জলসীমায় থাকা কয়েক হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দিতে সম্মত হয়। বুধবার কুয়ালালামপুর তাদের ঠাঁই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের জলসীমা থেকে অভিবাসীদের নৌযান এখনও উদ্ধার করতে পারে নি মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক নৌবাহিনী ও মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন অভিবাসীদের উদ্ধার করতে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডকে এ ক্ষেত্রে দুই লাখ ডলার দেয়ার ঘোষণা নিয়েছে সিঙ্গাপুর।
No comments