চাঁপাই নবাবগঞ্জের আমবাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি by মো. তারেক রহমান
রোগবালাই
ও পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় এ বছর থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে বাণিজ্যিক
ভিত্তিতে শুরু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। চাঁপাই নবাবগঞ্জ
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নতুন এই প্রযুক্তি
ব্যবহার করে গতবছর ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় এবার তা আমচাষিদের জন্য উন্মুক্ত
করে দেয়া হয়েছে। জেলার আমচাষিদের মাঝে সরবারহের জন্য এরই মধ্যে চীন থেকে
বিশেষ ধরনের এই ব্যাগ আমদানি করেছে চাঁপাই নবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি
প্রতিষ্ঠান। আম গবেষকরা বলছেন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আম উৎপাদনে
একদিকে যেমন ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে
বিদেশের বাজারেও সুমিষ্ট আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাই নবাবগঞ্জের আম রপ্তানির
দ্বার উন্মোচিত হবে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর আম বাগান
রয়েছে। কিন্তু আমে মাছি, পোকা বা ফ্রুট ফ্লাইয়ের আক্রমণ রোধে বর্তমানে
কীটনাশক ব্যবহারের হার অনেক বেড়ে গেছে। অধিক ফলন পেতে ভাল-মন্দ বিচার না
করেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি
হচ্ছে, অন্যদিকে আমের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। এই অবস্থায় মাছি পোকার আক্রমণসহ
বিভিন্ন পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় গতবছর নতুন এক প্রযুক্তি
নিয়ে গবেষণা করেন চাঁপাই নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের
বিজ্ঞানী ড. সরফ উদ্দিন। বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হওয়া ফ্রুট ব্যাগ পদ্ধতি
ব্যবহার করে বাংলাদেশে তার সম্ভাবনা যাচায় করেন তিনি। গতবছর চাঁপাই
নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ১৮টি জাতের আম গাছে এই
প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সাফল্য পান। ড. সরফ উদ্দীন জানান, ফ্রুট
ব্যাগিং প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। তিনি
বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা
ফলকে আবৃত করাকে বুঝায় এবং এরপর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো
থাকে ব্যাগটি। এই ব্যাগ বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের হয়ে থাকে।
তবে আমের জন্য দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রঙিন আমের জন্য সাদা রঙ
এর এবং অন্যসব জাতের আমের জন্য বাদামী রঙের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। তিনি আরও
জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাগিং করা আম দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। এই
প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আম সংরক্ষণ করতে ফরমালিন নামক বিষাক্ত
রাসায়নিকের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও ফলকে বাইরের বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পাখির
আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা
করা সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা গেলে কোন সেপ্র ছাড়াই ক্ষতিকর পোকার
হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি। ফ্রুট ব্যাগিং
প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে ফল বিজ্ঞানী ড. সরফ জানান, আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং
করার উপযুক্ত সময় ৩৫-৪০ দিন বয়সের আমে। তবে এর পরেও ব্যাগিং করা যায়।
ব্যাগিং করার আগে আমগাছে ২/৩ বার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক সেপ্র করা যেতে পরে।
ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবে না। এছাড়া ব্যাগিং করার আগেই মরা মুকুল বা
পুষ্পমঞ্জুরির অংশবিশেষ, পত্র, উপ-পত্র ছিঁড়ে ফেলতে হবে এবং আমটি ব্যাগের
মাঝ বরাবর থাকবে। ব্যাগের উপরের প্রান্তটি ভালভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে যেন
পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করতে না পারে। তিনি বলেন, গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা পাওয়ায় এবার তা আমচাষিদের ব্যবহারের জন্য
উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদন না হওয়ায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহরের
একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ ধরনের এই ব্যাগটি চীন থেকে সরাসরি আমদানি করে
কৃষকদের মাঝে সরবারহ করছেন। প্রতিটি ব্যাগ ৩/৪ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে
ব্যাগিং করা আমে কোন ধরনের দাগ থাকবে না। এছাড়া সবধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের
আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করা যাবে। এছাড়া যে কোন জাতের আমকে রঙিন করা সম্ভব
হওয়ায় বিদেশে রফতানি উপযোগী আম উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই প্রযুক্তি সারা দেশে
ছড়িয়ে দিতে পারলে এ আম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কারণ ইউরোপে এ ধরনের
আমের চাহিদা রয়েছে।
No comments