অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান খালেদার
সরকারের
পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি না মানা
পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবরোধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল
দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক
বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। পৃথক বিবৃতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও
একই আহ্বান জানিয়েছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের জাতীয় বীর আখ্যায়িত
করে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের ও ক্ষতিগ্রস্তদের
পরিবারকে যথাযোগ্যভাবে পুনর্বাসনের ঘোষণা এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য
ধৈর্য ধরে সাময়িক কষ্ট স্বীকারের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার তরফে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, অবৈধ আওয়ামী সরকারের সীমাহীন
নির্যাতন সত্ত্বেও সারা দেশে অবরোধ আন্দোলন সফল করার জন্য সকল স্তরের
নেতাকর্মী-সমর্থকদের অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয়
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি না মানা
পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবরোধ আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য বিএনপি’র চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত ২৪
ঘণ্টায় পুলিশ এবং সরকারের নিজস্ব গুণ্ডাবাহিনী ২০দলীয় জোটের ২ জন কর্মীকে
হত্যা করেছে। প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীর
বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে সরকার বিএনপি
কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, হাবিবুর রহমান
হাবিব, শামীমুর রহমান শামীম, বেলাল আহমেদ এবং ২০দলীয় জোটের শরিক জাতীয়
পার্টি (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকনসহ দুই শতাধিক
নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এছাড়া, পুলিশ বাহিনী
দলের শীর্ষ নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে অবৈধভাবে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে।
২০দলীয় জোট সরকারের এরূপ অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা
জানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণতন্ত্র
পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার
পর তাদেরকে গণতন্ত্র অভিযাত্রার অগ্রসৈনিক হিসেবে ‘জাতীয় বীর’ খেতাবে ভূষিত
করা হবে। তাদের যথাযথ আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে
চাকরিসহ পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া, কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ৫ জন ছাত্রদল
নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অবিলম্বে তাদের
উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন,
১২ই জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী
শেখ হাসিনা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান
তারেক রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে নানা মিথ্যাচার করেছেন। তার এরূপ
বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য
প্রদানে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
অবরোধ অব্যাহত থাকবে: বিএনপি স্থায়ী কমিটি
এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটি অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, সচেতন দেশবাসীসহ সকলেই জানেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে গায়ের জোরে জনপ্রতিনিধিত্বহীন বর্তমান সরকার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে আছে। এমন একটি সরকারের আদেশ-নির্দেশ ও কর্তৃত্ব মেনে চলতে জনগণের এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না। তা সত্ত্বেও তারা অন্যায় ও অবৈধভাবে দলীয়করণকৃত রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠাগুলোকে দেশবাসীকে দমন ও জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে চরমভাবে অপব্যবহার করছে। এতে জনগণ চরম ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে, অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে সারা দেশ। স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, অতিষ্ঠ জনগণের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আমরা কঠোর আন্দোলনের কোন কর্মসূচি না নিয়ে একটি বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব বারংবার দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য আলোচনার মাধ্যমে একটি ফয়সালার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সে ধরনের উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে তাদের আগেকার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে চাতুরি, প্রতারণা, অপকৌশল ও অপপ্রচারণার আশ্রয় নিয়ে চলেছে। পরিহাস, অশ্লীল আক্রমণাত্মক ভাষা ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তারা সমঝোতার আহ্বানকে নাকচ করে এসেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও ভোটারবর্জিত কলঙ্কিত নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে তারা যে গুরুতর ভুল ও অন্যায় করেছে তার খেসারত দিতে বা শোধরাতে তারা রাজি নয়। তাদের কথা ও কাজে এর দায় তারা আমাদের ওপর চাপাতে চায়। এর খেসারত তারা জনগণের ওপর চাপাতে চায়। জনগণ তাদের নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করায় ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বসা সরকার জনগণকে আরও দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে চায়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গত এক বছরে কোন আন্দোলন না করলেও এই জনসম্মতিহীন সরকারের জুলুম-পীড়ন, হামলা-মামলা, গুম-খুন, গ্রেপ্তার-মিথ্যাচার থেমে থাকেনি। সব ধরনের নিষ্ঠুর অনৈতিক ও অরাজনৈতিক পন্থায় তারা আমাদেরকে নির্মূল করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিস্তরঙ্গ পরিবেশেও তারা দেশ-জাতির কল্যাণে কোন ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দলীয়করণ, সন্ত্রাস, উৎপীড়ন, ভিন্নমত দমন ও কুৎসা রটনাতেই তাদের অধিকাংশ সময় কেটেছে। তাদের নিত্যকার কথা ও কাজে ‘বিএনপি, ২০ দল, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ফোবিয়া’ বা আতঙ্কই ফুটে উঠেছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, দেশবাসী দেখেছেন- সম্প্রতি খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা মামলায় স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার গাড়িবহর ও সমবেত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। সংবাদমাধ্যমে তার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। তাদের কাউকে ধরা হয়নি। উল্টো মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রমসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলেন, গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থলে ছাত্রলীগকে দিয়ে পাল্টা সমাবেশ ডাকিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে তাকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমন চরম উস্কানির মুখেও পরম ধৈর্য ও সংযম বজায় রেখে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটি সমঝোতার উদ্দেশ্যে সংলাপের সূচনার ভিত্তি হিসেবে সাত দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। কিন্তু ক্ষমতার মোহে অন্ধ বলদর্পী শাসকমহল সমঝোতা ও সংলাপের সকল সম্ভাবনা তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেয়। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচনী প্রহসনের দিন ৫ই জানুয়ারি আমরা ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য ঢাকায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাইলে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তারা বলেন, ক্ষমতাসীনরা সারা দেশের সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করে ফেলে। বিএনপির সদর দপ্তর থেকে সবাইকে বের করে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তালা ঝোলানো হয়। দেশবাসী দেখেছে, ৫ই জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সভায় যোগ দিতে গেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জন্য এ সন্ত্রাসীরা এক নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, খালেদা জিয়াকে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশ বেষ্টনী ও বালু, ইট ও ময়লাবাহী ট্রাকবহর দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। গত ১১ দিন ধরে সেখানেই তাকে বেআইনিভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা এ নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার করে চলেছে। শুধু তাই নয়, ৫ই জানুয়ারি অপরাহ্ণে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টনে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অফিস ফটকে তার গতিরোধ করে। কার্যালয়ের অভ্যন্তরে তার গাড়ির ওপর কয়েক দফা নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষাক্ত পেপার স্প্রে ছোড়ে। এতে দেশনেত্রী নিজে, মহিলাসহ উপস্থিত নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও অফিসের কর্মচারীরা অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিএনপির স্থায়ী কমিটি বলেন, এ দুঃসহ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। সেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তারা বলেন, অবরোধ কর্মসূচিকে সফল করতে সারা দেশে নেতাকর্মীরা মিছিল-মিটিং করছেন। তাদের ওপর বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের অনুগত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। গুলিতে ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী অনেক নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। চলছে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার। নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলনে যারা শহীদ হচ্ছেন তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যারা আহত ও নির্যাতীত হচ্ছেন তাদের প্রতি আমাদের অফুরন্ত সহানুভূতি। দেশে গণতন্ত্র ফিরলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসিত করবো ইনশাআল্লাহ। তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ এ অবরোধ কর্মসূচিকে ব্যর্থ করতে ক্ষমতাসীনরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাত সৃষ্টির পাশাপাশি অপপ্রচারণা জোরদার করেছে। ইতিমধ্যে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার বাসা ও অফিসে বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বোমা নিক্ষেপ এবং ১২ই জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশের পাশে ককটেল নিক্ষেপকালে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হলেও তাদের সরকারি নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাইকোর্টে রাখা বোমা ও গুলি ভরা পিস্তুলও উদ্ধার করা হয়েছে। এদের কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে, সুপরিকল্পিতভাবে ক্ষমতাসীনরাই সন্ত্রাস, নাশকতা ও অন্তর্ঘাত চালিয়ে তার দায় আন্দোলনরত বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশবাসী দেখছেন- গণতন্ত্রে আস্থাহীন ও একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসী বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ইতিমধ্যে নানামুখী ভীতিপ্রদর্শন ও কঠোর সেন্সরশিপ প্রয়োগের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হরণ করেছে। ফলে দেশের প্রকৃত চিত্র ও জনগণের আন্দোলনের সঠিক খবর প্রচার করতে সংবাদমাধ্যম ব্যর্থ হচ্ছে। তারা একতরফা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছে। কিন্তু এর জবাব আমাদের কোন নেতা দিলেই তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিবরণ সরাসরি সম্প্রচার করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কেউ ক্ষমতাসীন অপকর্ম তুলে ধরলে বা অপপ্রচারণার জবাব দিলে তাকেও সাজানো মামলায় আটক করা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্যপুষ্ট চরম পক্ষপাতদুষ্ট কিছু প্রচারমাধ্যমকে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণার বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা নানা কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিরোধী দলের চরিত্রহনন ও জনগণের আন্দোলনবিরোধী প্রচারণা অহর্নিশ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিভ্রান্তি, অপপ্রচার ও জুলুম-পীড়ন উপেক্ষা করে জনগণকে সঙ্গী করে আমাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। তাদের এ ত্যাগ বৃথা যাবে না। বিএনপি নীতিনির্ধারক ফোরাম বলেন, এবারের আন্দোলন শুধু বিএনপি বা ২০ দলের নয়। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি দল ও শক্তিসহ দেশবাসীর। এ আন্দোলনের একপক্ষে আছেন ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ আর অন্যপক্ষে জবরদস্তি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার। কাঙ্ক্ষিত ও যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার জন্য আমরা দেশবাসী, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। বিবৃতিতে বলা হয়, মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ সহানুভূতিশীল ও সজাগ। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা যেভাবে রক্ত ঝরিয়েছে, গুম করেছে, জাতীয় অর্থনীতির বিনাশ করেছে, সব প্রথা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, লুণ্ঠন করেছে, মানুষকে নির্যাতন ও অপমান করেছে তার অবসানকল্পে ধৈর্য ধরে সাময়িক কষ্ট স্বীকারের জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে উদ্ধত শাসকদের অস্ত্রের ভাষা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসী যত দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামবেন, জনগণের বিজয় ততই ত্বরান্বিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল।
অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ খালেদার: এদিকে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল দুপুরে অবরুদ্ধ গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মহিলাদলের সিনিয়র সহসভাপতি রাবেয়া সিরাজ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ‘খালেদা জিয়া কার্যালয় বের হওয়ার চেষ্টা করবেন কিনা?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া সিরাজ বলেন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে যেভাবে জলকামান এবং পুলিশের ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে, তাতে কি আপনাদের মনে হয়- খালেদা জিয়ার বের হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে? আমরা আমাদের নেত্রীর সঙ্গে দেখা করবো, তাতেও তিন-চার জায়গায় বাধার সৃষ্টি করা হয়। নাম এন্ট্রি করে ঢুকতে হয়। এরপরও কি আপনাদের কাছে মনে হয় এগুলো উপেক্ষা করে তার বের হওয়ার চেষ্টা করা উচিত? একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের চারদিকে ব্যারিকেড তৈরি করে যেভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনাদের কোন কৌতূহল জাগে না? উনি সত্যিকার অর্থেই অবরুদ্ধ এটিই শেষ কথা। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাবেয়া সিরাজ বলেন, ওনার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। তার মনোবল দৃঢ় রয়েছে। এর আগে দুপুর ১টার দিকে শুকনো খাবার নিয়ে রাবেয়া সিরাজের নেতৃত্বে মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী গুলশান কার্যালয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর তারা কার্র্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহিলা দল নেত্রী ইয়াসমিন আরা হক, রহিমা সিকদার, ফারজানা রহমান হুসনা, রোকসানা খানম, সাবিনা ইয়াসমিন, রাশিদা ওয়াহিদ, সাদিয়া হক সাথী ও মুক্তা বেগম। এদিকে রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ৭ দফা দাবি আদায় ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
অবরোধ অব্যাহত থাকবে: বিএনপি স্থায়ী কমিটি
এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটি অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, সচেতন দেশবাসীসহ সকলেই জানেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে গায়ের জোরে জনপ্রতিনিধিত্বহীন বর্তমান সরকার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে আছে। এমন একটি সরকারের আদেশ-নির্দেশ ও কর্তৃত্ব মেনে চলতে জনগণের এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না। তা সত্ত্বেও তারা অন্যায় ও অবৈধভাবে দলীয়করণকৃত রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠাগুলোকে দেশবাসীকে দমন ও জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে চরমভাবে অপব্যবহার করছে। এতে জনগণ চরম ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে, অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে সারা দেশ। স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, অতিষ্ঠ জনগণের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা সত্ত্বেও আমরা কঠোর আন্দোলনের কোন কর্মসূচি না নিয়ে একটি বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব বারংবার দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য আলোচনার মাধ্যমে একটি ফয়সালার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সে ধরনের উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে তাদের আগেকার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে চাতুরি, প্রতারণা, অপকৌশল ও অপপ্রচারণার আশ্রয় নিয়ে চলেছে। পরিহাস, অশ্লীল আক্রমণাত্মক ভাষা ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তারা সমঝোতার আহ্বানকে নাকচ করে এসেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও ভোটারবর্জিত কলঙ্কিত নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে তারা যে গুরুতর ভুল ও অন্যায় করেছে তার খেসারত দিতে বা শোধরাতে তারা রাজি নয়। তাদের কথা ও কাজে এর দায় তারা আমাদের ওপর চাপাতে চায়। এর খেসারত তারা জনগণের ওপর চাপাতে চায়। জনগণ তাদের নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করায় ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বসা সরকার জনগণকে আরও দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে চায়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গত এক বছরে কোন আন্দোলন না করলেও এই জনসম্মতিহীন সরকারের জুলুম-পীড়ন, হামলা-মামলা, গুম-খুন, গ্রেপ্তার-মিথ্যাচার থেমে থাকেনি। সব ধরনের নিষ্ঠুর অনৈতিক ও অরাজনৈতিক পন্থায় তারা আমাদেরকে নির্মূল করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিস্তরঙ্গ পরিবেশেও তারা দেশ-জাতির কল্যাণে কোন ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দলীয়করণ, সন্ত্রাস, উৎপীড়ন, ভিন্নমত দমন ও কুৎসা রটনাতেই তাদের অধিকাংশ সময় কেটেছে। তাদের নিত্যকার কথা ও কাজে ‘বিএনপি, ২০ দল, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ফোবিয়া’ বা আতঙ্কই ফুটে উঠেছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, দেশবাসী দেখেছেন- সম্প্রতি খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা মামলায় স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার গাড়িবহর ও সমবেত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। সংবাদমাধ্যমে তার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। তাদের কাউকে ধরা হয়নি। উল্টো মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রমসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলেন, গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থলে ছাত্রলীগকে দিয়ে পাল্টা সমাবেশ ডাকিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে তাকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমন চরম উস্কানির মুখেও পরম ধৈর্য ও সংযম বজায় রেখে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটি সমঝোতার উদ্দেশ্যে সংলাপের সূচনার ভিত্তি হিসেবে সাত দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। কিন্তু ক্ষমতার মোহে অন্ধ বলদর্পী শাসকমহল সমঝোতা ও সংলাপের সকল সম্ভাবনা তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেয়। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচনী প্রহসনের দিন ৫ই জানুয়ারি আমরা ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য ঢাকায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাইলে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তারা বলেন, ক্ষমতাসীনরা সারা দেশের সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করে ফেলে। বিএনপির সদর দপ্তর থেকে সবাইকে বের করে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তালা ঝোলানো হয়। দেশবাসী দেখেছে, ৫ই জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সভায় যোগ দিতে গেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জন্য এ সন্ত্রাসীরা এক নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, খালেদা জিয়াকে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশ বেষ্টনী ও বালু, ইট ও ময়লাবাহী ট্রাকবহর দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। গত ১১ দিন ধরে সেখানেই তাকে বেআইনিভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা এ নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার করে চলেছে। শুধু তাই নয়, ৫ই জানুয়ারি অপরাহ্ণে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টনে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অফিস ফটকে তার গতিরোধ করে। কার্যালয়ের অভ্যন্তরে তার গাড়ির ওপর কয়েক দফা নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষাক্ত পেপার স্প্রে ছোড়ে। এতে দেশনেত্রী নিজে, মহিলাসহ উপস্থিত নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও অফিসের কর্মচারীরা অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিএনপির স্থায়ী কমিটি বলেন, এ দুঃসহ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। সেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তারা বলেন, অবরোধ কর্মসূচিকে সফল করতে সারা দেশে নেতাকর্মীরা মিছিল-মিটিং করছেন। তাদের ওপর বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের অনুগত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। গুলিতে ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী অনেক নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। চলছে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার। নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলনে যারা শহীদ হচ্ছেন তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যারা আহত ও নির্যাতীত হচ্ছেন তাদের প্রতি আমাদের অফুরন্ত সহানুভূতি। দেশে গণতন্ত্র ফিরলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসিত করবো ইনশাআল্লাহ। তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ এ অবরোধ কর্মসূচিকে ব্যর্থ করতে ক্ষমতাসীনরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাত সৃষ্টির পাশাপাশি অপপ্রচারণা জোরদার করেছে। ইতিমধ্যে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার বাসা ও অফিসে বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বোমা নিক্ষেপ এবং ১২ই জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশের পাশে ককটেল নিক্ষেপকালে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হলেও তাদের সরকারি নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাইকোর্টে রাখা বোমা ও গুলি ভরা পিস্তুলও উদ্ধার করা হয়েছে। এদের কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে, সুপরিকল্পিতভাবে ক্ষমতাসীনরাই সন্ত্রাস, নাশকতা ও অন্তর্ঘাত চালিয়ে তার দায় আন্দোলনরত বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশবাসী দেখছেন- গণতন্ত্রে আস্থাহীন ও একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসী বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ইতিমধ্যে নানামুখী ভীতিপ্রদর্শন ও কঠোর সেন্সরশিপ প্রয়োগের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হরণ করেছে। ফলে দেশের প্রকৃত চিত্র ও জনগণের আন্দোলনের সঠিক খবর প্রচার করতে সংবাদমাধ্যম ব্যর্থ হচ্ছে। তারা একতরফা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছে। কিন্তু এর জবাব আমাদের কোন নেতা দিলেই তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিবরণ সরাসরি সম্প্রচার করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কেউ ক্ষমতাসীন অপকর্ম তুলে ধরলে বা অপপ্রচারণার জবাব দিলে তাকেও সাজানো মামলায় আটক করা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্যপুষ্ট চরম পক্ষপাতদুষ্ট কিছু প্রচারমাধ্যমকে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণার বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা নানা কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিরোধী দলের চরিত্রহনন ও জনগণের আন্দোলনবিরোধী প্রচারণা অহর্নিশ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিভ্রান্তি, অপপ্রচার ও জুলুম-পীড়ন উপেক্ষা করে জনগণকে সঙ্গী করে আমাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। তাদের এ ত্যাগ বৃথা যাবে না। বিএনপি নীতিনির্ধারক ফোরাম বলেন, এবারের আন্দোলন শুধু বিএনপি বা ২০ দলের নয়। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি দল ও শক্তিসহ দেশবাসীর। এ আন্দোলনের একপক্ষে আছেন ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ আর অন্যপক্ষে জবরদস্তি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার। কাঙ্ক্ষিত ও যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার জন্য আমরা দেশবাসী, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। বিবৃতিতে বলা হয়, মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ সহানুভূতিশীল ও সজাগ। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা যেভাবে রক্ত ঝরিয়েছে, গুম করেছে, জাতীয় অর্থনীতির বিনাশ করেছে, সব প্রথা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, লুণ্ঠন করেছে, মানুষকে নির্যাতন ও অপমান করেছে তার অবসানকল্পে ধৈর্য ধরে সাময়িক কষ্ট স্বীকারের জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে উদ্ধত শাসকদের অস্ত্রের ভাষা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসী যত দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামবেন, জনগণের বিজয় ততই ত্বরান্বিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল।
অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ খালেদার: এদিকে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল দুপুরে অবরুদ্ধ গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মহিলাদলের সিনিয়র সহসভাপতি রাবেয়া সিরাজ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ‘খালেদা জিয়া কার্যালয় বের হওয়ার চেষ্টা করবেন কিনা?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া সিরাজ বলেন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে যেভাবে জলকামান এবং পুলিশের ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে, তাতে কি আপনাদের মনে হয়- খালেদা জিয়ার বের হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে? আমরা আমাদের নেত্রীর সঙ্গে দেখা করবো, তাতেও তিন-চার জায়গায় বাধার সৃষ্টি করা হয়। নাম এন্ট্রি করে ঢুকতে হয়। এরপরও কি আপনাদের কাছে মনে হয় এগুলো উপেক্ষা করে তার বের হওয়ার চেষ্টা করা উচিত? একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের চারদিকে ব্যারিকেড তৈরি করে যেভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনাদের কোন কৌতূহল জাগে না? উনি সত্যিকার অর্থেই অবরুদ্ধ এটিই শেষ কথা। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাবেয়া সিরাজ বলেন, ওনার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। তার মনোবল দৃঢ় রয়েছে। এর আগে দুপুর ১টার দিকে শুকনো খাবার নিয়ে রাবেয়া সিরাজের নেতৃত্বে মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী গুলশান কার্যালয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর তারা কার্র্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহিলা দল নেত্রী ইয়াসমিন আরা হক, রহিমা সিকদার, ফারজানা রহমান হুসনা, রোকসানা খানম, সাবিনা ইয়াসমিন, রাশিদা ওয়াহিদ, সাদিয়া হক সাথী ও মুক্তা বেগম। এদিকে রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ৭ দফা দাবি আদায় ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
No comments