অবরোধে চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে
অবরোধ ও বিভিন্ন জেলায় হরতালের কারণে দেশের সার্বিক চিকিৎসা সেবার চরম অবনতি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভয়াবহ মূল্য দিতে হচ্ছে রোগীদের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত সেবা নিতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকেই আসতে পারছেন না ঢাকায়। আবার এখান থেকেও গিয়ে অনেক চিকিৎসক বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে চেম্বার করতে পারছেন না। অবরোধ-হরতালের কারণে জরুরি প্রয়োজনেও অনেকে যেতে পারছেন না চিকিৎসকের কাছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথের হাজারও দুর্গতি মাড়িয়ে কেউ কেউ ঢাকায় আসতে সক্ষম হলেও বাড়ি ফিতে গিয়ে পোহাতে হচ্ছে চরম বিড়ম্বনা। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোর বেশির ভাগ চেম্বারে চিকিৎসক না বসায় বন্ধ রয়েছে বিশেষজ্ঞ সেবা। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। এদিকে মফস্বলের তুলনায় রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসা এখনও তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকলেও হাসপাতালের রোগীরা ঢাকাকেন্দ্রিক। রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং হলি ফ্যামেলি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খুব কম রোগীই দেখা গেছে ঢাকার বাইরের। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল-বারডেমেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। এ দু’টি হসপাতালে বিকালের বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চেম্বারেও অন্য সময়ের মতো রোগীর চাপ দেখা যায়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অবরোধে চিকিৎসা সেবা এখনও অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। ঝুঁকি থাকলেও চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসতে পারছেন। কিন্তু জেলা উপজেলা শহরে তা হচ্ছে না। পরিবহন সমস্যা ও নিরাপত্তার কারণে রোগীরাও যেতে পারছেন না। ঢাকার সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকায় জেলা উপজেলা থেকে রাজধানীতে আসতে পারছেন না রোগীরা। যানবাহন না থাকায় রোগীরা আসতে পারছেন না সেবা নিতে। আসলেও সেবা পাচ্ছেন না তারা। বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসকরা যেতে পারছেন না। ফলে ভেঙে পড়েছে হাসপাতালগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা। এ কারণে হাসপাতালগুলোতে অপারেশনসহ জরুরি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও নানারকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে রোগীর জীবন। হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শুভ্রত ঘোষ বলেন, ঝুঁকি থাকলেও আমরা দায়িত্বে অবহেলা করছি না। হাসপাতালে প্রায় আগের মতোই রোগীরা আসছেন। তবে স্বীকার করতে হবে যে, ঢাকার বাইরের রোগী আগের মতো আসতে পারছেন না। তাদের সংখ্যা কম। গতকাল রাজশাহী থেকে এক বীরাঙ্গনা ঢাকায় এসে চিকিৎসা নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবরোধের কারণে তিনি ঢাকা আসার বিষয়টি বাতিল করেছেন। এদিকে, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে এরই মধ্যে অতি জরুরি নাইট্রাস, অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইড সরবরাহ কমে আসছে। হ্রাস পেয়েছে অন্যান্য জরুরি উপকরণও। ফলে অপারেশনের জন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। কার্বন-ডাই অক্সাইড লিকুইড ও সিলিন্ডার সরবরাহ অব্যাহত রাখা না গেলে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ হাসপাতালে ল্যাপারোস্কপি অপারেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গতকাল বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের রহিমা খাতুন। অবরোধের আগে তিনি ভর্তি হন এখানে। গতকাল ছাড়া পেয়ে তার ছেলে ও নিকটত্মীয়রা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কিভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন। ছেলে আমির আলী বলেন, রোববার তিনি এসেছেন ঢাকায়। আসতে তাকে পথে কয়েকটি গাড়ি পাল্টাতে হয়েছে। তার উপর রয়েছে হামলার ঝুঁকি। মাকে নিয়ে ট্রেনে যেতে চাইলেও শিডিউল বিপর্যয় ও রাস্তার দুর্গতির কথা ভেবে তা বাদ দিয়েছেন। এখন যাবেন গাড়ি যোগে। কিন্তু আদৌ যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে চিন্তিত। চলমান অবরোধে এরকম অনিশ্চিত যাত্রা করেছেন অনেক রোগী। ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও রোগীদের উপস্থিতি কম। সন্ধ্যার পর প্রাইভেট চেম্বারে আগের তুলনায় রোগীও নেই। ল্যাবএইডের এক চিকিৎসক এ প্রতিবেদককে আগের তুলনায় রোগী কমে আসার কথা স্বীকার করে জানান, অবরোধের কারণেই এরকম হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে রোগী আসতে পারছেন না। জরুরি হলেও ঝুঁকি নিয়ে তারা আসতে চাইছেন না। তিনি বলেন, ঢাকা থেকেও অনেক চিকিৎসক প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় গিয়ে রোগী দেখেন। ঢাকায় না এসেও অনেক রোগী এই সেবা পান। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা সেই সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামলার ভয়ে বাইরে যেতে চাইছে না। আবার কেউ যেতে রাজি হলে দাবি করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি দাবি করা হচ্ছে।
No comments