জাবি’র নীলজলে বিদেশী রানীরা by নূর আলম
লাল
শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যে ভিড় করেছে বিদেশী নারীরা। তারা আবারও রানীর সাজে
সেজেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল জলে। শুরু করেছে জলকেলি। লাল
শাপলার আড়ালে-আবডালে খেলছে তারা লুকোচুরি খেলা। প্রাণের খেলা। আর এই রূপের
টানে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সুদূর সাইবেরিয়া, ভারতের হিমালয় অঞ্চল ও
চীনদেশ থেকে নানা প্রজাতির পাখি এসে ভিড় জমিয়েছে ক্যাম্পাসে। আর কেনইবা
আসবে না। পাখিদের এমন অভয়ারণ্য বাংলাদেশের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া দুরূহ
ব্যাপার। তাছাড়া পাখিরা নিজেদের আবাসস্থল হিসেবে লেকের শান্ত পানিতে ফুটে
থাকা লাল পদ্মকমলের মাঝে জলকেলিতে মেতে উঠেছে। নিশ্চিন্ত মনে পাখিরা জাবির
আকাশে একটু থেমে থেমে একঝাঁক উড়ছে তো আর একটু থেমে আরেক ঝাঁক পানিতে নামছে।
আর এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে
ছুটে আসছে পাখিপ্রেমী, সৌখিন বা পেশাদার আলোকচিত্রী ও দর্শনার্থীরা।
পরিযায়ী পাখির আগমনে গত কয়েকদিন ধরে কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে এ ক্যাম্পাস।
হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা অতিথি পাখির সৌন্দর্যে মুগ্ধ পাখি
প্রেমিকরা। তাদের কিচিরমিচির, ডানা ঝাপটে বেড়ানো, সাঁতার কাটা, রোদে বসে
শরীর শুকানো ও রক্তিম শাপলা ফোটা জলাশয়গুলোতে ঝাঁক বেঁধে পাখিদের ওড়াউড়ির
নজরকাড়া দৃশ্য যেন এখনও শেষ হচ্ছে না। প্রতিদিন পড়ন্ত বিকালে দর্শনার্থীদের
পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে পাখির অভয়ারণ্য খ্যাত এ ক্যাম্পাস। পাখি দেখতে এসে
মেডিক্যাল কলেজপড়ুয়া অন্তু বলেন, পাখি আমার খুব প্রিয়। তাই আমি প্রতিবছর
এখানে পাখি দেখতে আসি। এবার আমু্ম, খালাম্মু, ছোট ভাই ও বড় বোনদের সঙ্গে
এসেছি পাখি দেখতে। সাধারণত ৩০-৩৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এদের বেশির ভাগই
হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাসকারী পাখি। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার,
গার্গেনি, ছোট জিরিয়া ও পাতারি অন্যতম। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ,
জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি, পাতারি, মুরগ্যাধি,
কোম্বডাক, পাতারি হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা প্রভৃতি পাখি নজর কাড়ে সবার। এরা
ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে আসে। গবেষণায় দেখে
গেছে, এ দেশে ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ৭৬টি প্রজাতির পাখি ছিল।
পরবর্তীতে নব্বয়ের দশকে পাখি সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ১৮৯টি প্রজাতির
পাখি এখন দেখা যায়। বর্তমান এ ক্যাম্পাসে ছোট-বড় মিলে ১২-১৪টি লেক রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল
সংলগ্ন দুটি লেকে অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি। অতিথি পাখির জন্য লেকগুলোকে
অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাখির বসার জন্য লেকগুলোয়
মাছ চাষ বন্ধ করে শাপলা ফুল বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লেকের চারদিকে
কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে এবং পাখি সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করে ক্যাম্পাসের
বিভিন্ন পয়েন্ট ও লেকের পাশে ব্যানার এবং ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট
স্থানগুলোতে যানবাহনের ভেপু, বাঁশি, পটকা, মাইক ব্যবহার, মিছিল ও
বিরক্তিকর আড্ডা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অতিথি পাখি মূলত বাংলাদেশে আসে
নভেম্বর-জানুয়ারিতে। আবার গরমের অভাস পেলে মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় আপন
ঠিকানায়। পাখি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক মোহাম্মদ
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, শীতপ্রধান দেশের পাখিরা তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পাড়ি
জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ
এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে। এ দেশে আসা পাখিদের একটা বড় অংশ
আসে আমাদের ক্যাম্পাসে। এ ক্যাম্পাসের উপযোগী পরিবেশ আর বৈচিত্র্যময়
জলবায়ুর কারণেই অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
No comments